somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশে একাত্তরের যুদ্ধপরাধীদের বিচার না হওয়ার অন্যতম কারণ: ওয়াহাবী কানেকশন।

১৮ ই ডিসেম্বর, ২০০৮ দুপুর ১২:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এই সশস্ত্র ব্যাক্তিটির একটি অসম্ভব রক্তাক্ত অভিলাষ রয়েছে। বিশ্বময় একটি শান্তিরধর্ম প্রতিষ্ঠা করা। সে অভিলাষ চরিতার্থ করবার জন্য যত রক্ত ঝরে ঝরুক। এই লোকটি জানে না পৃথিবীতে অন্তত কমবেশি ৭৬টি সংস্কৃতি রয়েছে। এবং সে তার একটির অর্ন্তগত। এবং ৭৬টি সংস্কৃতি ধ্বংস করে শান্তির ধর্ম প্রতিষ্ঠা কোনওদিনই সম্ভব নয়। আশৈশব মধ্যযুগীয় প্রাচীন পুঁথিপুস্তক পাঠ করার ফলে এই সশস্ত্র ব্যাক্তিটির পৃথিবী সম্পর্কে কোনও স্বচ্ছ ধারনাই গড়ে ওঠেনি। এই লোকটি এক অন্ধ আবেগের বশবর্তী হয়ে বেঁচে আছে। যে কারণে এরা ধর্মান্ধ বলে চিহ্ণিত। এরা জানে না একজন সুন্নি মুসলমানের কাছে তার ধর্মটি যেমন সত্য; একজন ফিলিস্তনী ম্যারোনাইট খ্রিস্টানের কাছেও তার ধর্মটি তেমনই সত্য।

সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদের ৩০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে একটি মরুময় গ্রামে। গ্রামের নাম ইউআআনা। প্রদেশের নাম নাজদ। ১৭০৩ সালে ঐ ইউআআনা গ্রামেই বনু তামিম গোত্রে কট্টরপন্থি ধর্মতাত্ত্বিক আবদুল ওয়াহাব-এর জন্ম। আবদুল ছেলেবেলা থেকেই বাবার কাছে ইসলামী জ্ঞান অর্জন করেন ওয়াহাব। ওয়াহাব-এর পরিবারটি ছিল হাম্বলী মাজহাব (মাজহাব মানে স্বুল অভ থটস্)-এর অনুসারী। ওই সময়ে নাজদ প্রদেশে ইবনে হাম্বলীর ব্যাখ্যা জনপ্রিয় ছিল। কঠোর শাস্ত্রভিত্তিক বলে হাম্বলীর ব্যাখ্যা ইষৎ কট্টর। হাম্বলী মাজহাবকে কট্টর বলার কারণ আছে। হাম্বলী ছাড়াও অন্য মাজহাবগুলি হল মালেকী, হানিফি ও সাফায়ি। এই মাযহাবগুলিতে আত্মরতি বৈধ। একমাত্র হাম্বলী মাজহাবে তে আত্মরতি নিষিদ্ধ। বাংলাদেশে হানিফি মাজহাবের প্রাধান্য।
যাক। তখনকার দিনে ইরাকের বসরা নগরটি ছিল ইসলামী জ্ঞানচর্চার অন্যতম কেন্দ্র। তরুন বয়েছে ওয়াহাব বসরায় গেলেন। মুসলিম পন্ডিতদের সান্নিধ্যে পড়ালেখা করেন। ওখানে সবাই তার মতো কট্টরপন্থি ছিল না। অনেকেই ছিলেন উদার সূফিসাধক। এরা ছিল ওয়াহাবের দুচোখের বিষ। ওয়াহাব উদারপন্থিদের সঙ্গে তর্ক করে আলোচিত হন। হাম্বলী ছাড়াও কট্টরপন্থি সালাফি মতবাদে উজ্জীবিত হন ওয়াহাব। যে কারণে তার মতবাদকে সালাফি মতবাদও বলা হয়।এক কথায় সালাফি মতবাদ হল ইসলামের আদি ও অকৃত্রিম ধ্যানধারনার ধারক।
বসরায় থাকতেই ইসলামী বিশ্বে এক আমূল সংস্কারের চিন্তা করেছিলেন ওয়াহাব। যথাসময়ে জন্মস্থান নাজদ প্রদেশের ইউআআনা গ্রামে ফিরে এলেন। আমরা অনেকেই জানি- যায়াদ ইবন আল খাত্তাব ছিলেন ইসলামের নবীর একজন প্রখ্যাত সাহাবা এবং ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা ওমরের ভাই। যায়াদ ইবন আল খাত্তাব-এর কবরটি ছিল নাজদ প্রদেশে। স্থানীয়রা কবরটি জিয়ারত করত। কবর উপাসনার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালেন ওয়াহাব। নাজদ প্রদেশের তৎকালীন শাসক ছিলেন ওসমান ইবনে মুয়ামার। ওসমান ইবনে মুয়ামার ওয়াহাবের শিষ্যত্ব বরণ করেছিলেন। যায়াদ ইবন আল খাত্তাব-এর কবরটি মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে ওসমান ইবনে মুয়ামারকে রাজী করান ওয়াহাব।
এটি ছিল তার প্রথম পদক্ষেপ।
ওয়াহাবের ২য় পদক্ষেপটি ছিল পরকিয়াকারীণিকে পাথর ছুঁড়ে হত্যা করা। ইসলামের নির্দেশ থাকলেও যে অপকর্মটি ওই সময়ে করা হত না। আসলে ইসলাম ৭ম শতক থেকেই কট্টরপন্থি ও উদারপন্থিতে বিভক্ত। যে কারণে ওয়াহাবের সংস্কার অনেকেই পছন্দ করেননি। যেমন বনি খালিদ গোত্রের প্রভাবশালী নেতা সুলাইমান ইবন মুহাম্মাদ ইবন ঘুরাইয়ার। তিনি ওসমান ইবনে মুয়ামারবে নির্দেশ দিলেন-ওয়াহাবকে হত্যা কর। ওসমান ইবনে মুয়ামার তা পারেননি। বরং ওয়াহাবকে হিজরতের নির্দেশ দিলেন।
তখন ১৭৪০ সাল। নাজদ প্রদেশের প্রতিবেশী দিরিয়া অঞ্চল। তার শাসক ছিলেন মুহাম্মাদ ইবন সাউদ। (সাউদ লক্ষ করুন) এঁর দু-ভাই ইউআআনায় ওয়াহাবের ছাত্র ছিলেন। তারাই
মুহাম্মাদ ইবন সাউদকে রাজী করালেন ওয়াহাবকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য, ওয়াহেব মতবাদ গ্রহন করার জন্য। মুহাম্মাদ ইবন সাউদ-এর স্ত্রী নাকি দেওরদের মুখে ওয়াহাবের ব্যাখ্যাবয়ানে রীতিমত ম্গ্ধু। ওই মহিলাই স্বামীকে ওয়াহাবী হতে রাজী করালেন।
যাক। ওয়াহাব দিরিয়া পৌঁছলেন। পৌঁছার পর মুহাম্মাদ ইবন সাউদ-এর সঙ্গে এক চুক্তি হল তার। চুক্তি অনুযায়ী মুহাম্মাদ ইবন সাউদ ওয়াহাবের শিক্ষা মেনে নিবে। এবং তা প্রচার করবে।
মুহাম্মাদ ইবন সাউদ তাই করেছিলেন।
আবদুল ওয়াহাব, ১৭৯২ মুহাম্মাদ ইবন সাউদ-এর ছত্রছায়া থেকে মারা যান।
তারপর ১৪০ বছর ধরে যুদ্ধ করে মুহাম্মাদ ইবন সাউদ এবং তার উত্তরসূরীরা আরব উপদ্বীপের অধিকাংশ অঞ্চল দখল করে নেয়। ১৯২২ সালের পর যা হয়ে ওঠে কিংডম অভ সৌদি আরাবিয়া। যার রাষ্ট্রীয় আর্দশ হয়ে ওঠে কট্টরপন্থি ওয়াহাবীবাদ।
ওয়াহাবিরা সালাফিপন্থী নামেও পরিচিত।
ওয়াহাবীবাদের প্রভাব আজও এই একুশ শতকেও অপ্রতিরোধ্য।
প্রথমে বলি মিশরের কথা। সৌদি ওয়াহিবারা যে সব সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলিকে বিপুল অর্থ দিয়ে সাহায্য করে তার অন্যতম হচ্ছে মিশরের মুসলিম ব্রাদারহুড। এই বিশাক্ত সংগঠনটির প্রতিষ্ঠা ১৯২৮ সালে। প্রতিষ্ঠাতা হাসান আল-বাননা। বলাবাহুর‌্য কট্টরপন্থি লোক ছিলেন বাননা। এর শিষ্যরা সবাই বিশ্বজুড়ে নাকি ওয়াহাবীবাদ কায়েমের জন্য মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার শপথ নিয়েছিল।পঞ্চাশ ও ষাট দশকে এদের এক তাত্ত্বিক নেতা ছিলেন সৈয়দ কুতুব। সৈয়দ কুতুব আমেরিকায় কলরাডোতে পড়তে গিয়েছিলেন । ফ্রি সেক্স আমেরিকান সমাজ তার ঘৃনার উদ্রেক ঘটিয়েছিল। এমন কী সঙ্গীতও ঘৃনা করতেন সৈয়দ কুতুব। বিশেষ করে জ্যাজ । জ্যাজ নাকি যৌনগন্ধী! সমুদ্রপাড়ে বিকিনি পরা মেয়েদের দেখে মাথা গরম হয়ে গেল কুতুবের। এদের পাথর ছুঁড়ে মারতে না - পেরে শরীর ভরতি রি রি ঘৃনা নিয়ে মিশরে ফিরে এলেন। তারপর ইসলামের নামে মধ্যযুগীয় আচারপ্রথা কায়েমের জন্য মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হলেন।
পাশ্চাত্যপন্থি মিশর সরকার এই কট্টরপন্থিকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছিল।
সৈয়দ কুতুবই ছিলেন আলকায়দার স্বপ্নদ্রষ্টা।
সৈয়দ কুতুবের পথে তারপর হাঁটল ওসামা বিন লাদেন। আইমান আল জাওয়াহিরি। এঁকে কান্ডকারখানা আমরা কমবেশি জানি বলেই বিস্তরিত লিখব না।
আমাদের এই নিবন্ধের বিষয়: বাংলাদেশে একাত্তরের যুদ্ধপরাধীদের বিচার না হওয়ার অন্যতম কারণ: ওহাবী কানেকশন।
সে প্রসঙ্গে বরং আসি।
১৯০৩। ২৫ সেপ্টেম্বর। তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের হায়দারাবাদের আওরঙ্গাবাদ। ঐ আওরঙ্গাবাদ-এ জন্ম হল এক খুনে কট্টরপন্থির। আবুল আলা মাওদূদী। অনেকেই এর নামের আগে মাওলানা বসায়। আমি সূফি রুমির জীবনী পড়েছি: জানি যে মাওলানা পবিত্র শব্দ। কাজেই এর আগে মাওলানা না বসালেই ভালো।
প্রথম জীবনে সাংবাদিকতা করেছেন মাওদূদী। সেই সময়ই সালাফি-হাম্বলী ও ওয়াহাবী মতবাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন । প্রচুর লিখেছেন। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ: তাহফিমুল কোরান। এটি কোরানের তফসির। (আধুনিক প্রকাশনীর ১৯ খন্ডে বাংলা অনুবাদ পাওয়া যায়।) প্রচুর লিখলেও এই লোকটি জানতেন না যে পৃথিবীতে কমবেশি ৭৬টি সংস্কৃতি রয়েছে। সে তার একটির অর্ন্তগত। এবং ৭৬টি সংস্কৃতি ধ্বংস করে শান্তির ধর্ম প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। প্রাচীন পুঁথিপুস্তক পড়ার কারণে পৃথিবী সম্পর্কে মওদূদীর কোনও স্বচ্ছ ধারনা গড়ে ওঠেনি। যে কারণে ধর্মান্ধ হয়ে ওঠাই ছিল অনিবার্য।এক অন্ধ আবেগের বশবর্তী হয়ে জীবনভর চলেছেন। মওদূদী কি জানতেন না যে একজন শিয়া মুসলমানের কাছে তার ধর্মটি যেমন সত্য একজন আহমেদীয় মুসলিম জামাতের সদস্যের কাছেও তার ধর্মটি তেমনি সত্য । এই সহজ কথাটা মওদূদীর জানা থাকলে তিনি পাকিস্থানী সৈন্যদের আহমদীয় মুসলিম জামাতের সদস্যদের হত্যা করতে প্ররোচিত করতেন না। দেশবিভাগের পর পশ্চিম পাকিস্থানের প্রভাবশালী ব্যাক্তিতে পরিনত হয়েছিলেন মওদূদী। তারই প্রভাবে ১৯৫০ সালে পাকিস্থানী সৈন্যরা ট্যাঙ্কের চাকার নিচে পাঞ্জাবে আমেদীয় প্রধান গ্রামগুলি মাটি মিশিয়ে দিয়েছিল। ঘুমন্ত অবস্থায় হাজার হাজার নিষ্পাপ নিরীহ শিশুকে মৃত্যুকে বরণ করতে হয়েছিল। (এ প্রসঙ্গে বিস্তারিত পড়ুন তারিক আলী রচিত “ক্ল্যাশ অভ ফান্ডামেন্টালিজম।”)
তাই তখন বলছিলাম যে মওদূদী খুনি। আর তার পূর্বাঞ্চলীয় শিষ্যরা খুন করেছিল পুর্ব বাংলায়। ১৯৭১ সালে।
১৯৪১ সালে রাজনৈতিক দল গঠনের সিদ্ধান্ত নিলেন মওদূদী। দলটির নাম রাখলেন- জামাত ই ইসলাম। দলটির প্রথম লক্ষ ছিল ব্রিটিশ ভারতে ইসলামী মূল্যবোধের প্রসার ও জাগরন। পরে অবশ্য ভারত বিভাগ হলে মওদূদী ও তার দল ১৯৪৭ সাল থেকে পাকিস্থানকে সমর্থন করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়। (যে কারণে আজও জামায়াতের মতিয়ূর রহমান নিজমী বলেন-পাকিস্থান আল্লার ঘর!)
আমরা জানি দেশবিভাগের পর পূর্ববঙ্গের আপামর বাঙালি মুসলমান মেনে নিয়েছিল পাকিস্থান, তারা বৃহৎ ভারতে বিলীন হয়ে যেতে চায়নি। কিছু শর্তের অধীন, মানে নিজস্ব বৈশিষ্ট্য অক্ষুন্ন রেখেই পূর্ববঙ্গের আপামর বাঙালি মুসলমান পাকিস্থান রাষ্ট্রর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল। (এটি জাতীয় অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাকের মত) সেই নিজস্ব বৈশিষ্ট্যর ওপর ক্রমে ক্রমে আঘাত এলে প্রথমে ১৯৫২ তারপর ১৯৬৯ তারপর ১৯৭১ সালে পূর্ববঙ্গের সেই আপামর বাঙালি মুসলমানই অখন্ড পাকিস্থান জন্য হয়ে উঠল হুমকি। আসলে পশ্চিম পাকিস্থানের কাছে পূর্ব পাকিস্থান ছিল ঔপনিবেশ, পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী ইসলামী ব্রাদারহুডের কথা ভুলে পূর্বপাকিস্থানকে উপনিবেশ বানিয়েছিল। পূর্বপাস্থিানের বাঙালীর প্রবল অন্দোলনের মুখে উপনিবেশ হাত ছাড়া হতে থাকলে অর্থনৈতিক স্বার্থের কথা ভেবেই পাকিস্থানী অখন্ডতায় রক্ষায় পশ্চিম পাকিস্থানী শাসকগোষ্ঠীর নির্দেশে রক্তলোলুপ দুধর্ষ পাকিস্থানী সেনাবাহিনী ঝঁপিয়ে পড়ে নিরীহ ও নিরস্ত্র পূর্ব বাংলার মুক্তিকামী জনগনের ওপর। মওদূদীপন্থি জামায়াত ই ইসলামীর গর্ভদ সদস্যরা তথাকথিত আল্লার ঘর বাঁচাতে পাকিস্থানী সেনাবাহিনীকে সাহায্য (রাজাকার শব্দটি আরবী। অর্থ রাজাকার) করার জন্য একেক জন কসাই ও জল্লাদ হয়ে ওঠে।
যে কারণে তৎকালীন জামাত নেতারা মানবতার কাছে বিশ্ব জনমতের কাছে যুদ্ধাপরাধী।
আসলে সৈয়দ কুতুব-মওদূদী-লাদেন সবাই একই সূত্রে গাথা।
এদের প্রেরণার মূলে সালাফি-হাম্বলীপন্থি রক্ষণশীল কট্টরপন্থি আবদুল ওয়াহাবীব।এবং এদের পৃষ্টপোষক সালাফি/ওয়াহাবী সৌদি রাজতন্ত্র।
আমরা যুদ্ধাপরাধীর বিচার করতে চাই। অথচ, আমরা
এ প্রসঙ্গে ওয়াহাবী কানেকশানের কথা উল্লেখ করি না। বাংলাদেশে যুদ্ধপরাধীদের বিচারের একটি বড় অন্তরায় সৌদি আরব। বাংলাদেশে যুদ্ধপরাধীরা জামায়াত ই ইসলামীর সদস্যরা সালাফি-হাম্বলী-ওয়াহাবী চক্রের অনুসারী। সৌদি আরবও ওই সালাফি-হাম্বলী-ওয়াহাবী চক্রের মূল পান্ডা। তারা বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে দেবে না। বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার মানে সৌদি আরবের বিরুদ্ধে যাওয়া। আপাতত তা সম্ভব নয়। কেননা, বাংলাদেশ দরিদ্র বলেই জ্বালানীসহ অর্থনৈতিক ভাবে সৌদি আরবের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। বাংলাদেশের বিশাল অঙ্কের রেমিন্টেস আসে ও দেশ থেকেই। তা ছাড়া বাংলাদেশের প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো সৌদি সরকারের প্রতি নতজানু। মুসলিম উম্মার নামে এরা সৌদি সরকারকে খুশি রাখতে চায়। ৭৫ এর পর যুদ্ধাপরাধী জামাত নেতা গোলাম আযমকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে এনে নিরাপত্তা দিলেন উগ্র ডানপন্থি নেতা জিয়াউর রহমান। জাতীয় পার্টির পান্ডা জেনারেল এরশাদ সৌদি সরকারকে খুশি করার জন্য বাংলাদেশের সংবিধান লঙ্ঘন করে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করলেন। সামান্য সর্দি কাশী হলে বাংলাদেশের প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলের প্রধান প্রধান সৌদি আরব দৌঁড়ায়। ঘন ঘন ওমরা করে। সুটকেসে সম্পদ পাচার করে। এদের গাজীপুরের বালাখানার নাম “খোয়াব।” টেকনাফের জনযানের নাম কেয়ারি-সিন্ধাবাদ। এদের মগজে মগজের কোষে কোষে সৌদি তোষামোদ।
এবং শেখ হাসিনাও কি এক্ষেত্রে ব্যাতিক্রম? তিনি বলেছেন যে তিনি (২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে) নির্বাচিত হলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবেন। আসলে এটি একটি নির্বাচনী ফাঁকা বুলি মাত্র। তার পক্ষেও সৌদি রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে যাওয়া সম্ভব হবে না।
আপনাদের মনে থাকার কথা। জোট সরকারের আমলে যুদ্ধাপরাধী জামাত নেতা মতিয়ুর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে দূনীর্তির অভিযোগ গঠন করার সঙ্গে সঙ্গেই সৌদি আরব ও কুয়েতে বাংলাদেশি শ্রমিকদের ওপর নির্যাতন শুরু করে। তাদের ছাঁটাই করে। এভাবে ওয়াহাবীদের স্পর্শ না করতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে সতর্ক করে দেয়।
বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার যেহেতু সৌদি সরকারের ওপর অধিকাংশ নির্ভরশীল। সে কারণে আমরা আশাবাদী দৃষ্টিতে ভবিষ্যতের দিকে তাকাতে পারি। সৌদি আরবে সালাফি ওয়াহাবীদের ধ্বংস করে সৌদি আরবে প্রগতিশীল গনতান্ত্রিক শক্তির উত্থান ঘটলেই বাংলাদেশে ওয়াহাবী যুদ্ধপরাধীদের বিচারের সম্ভবনা সৃষ্টি হতে পারে। কাজেই, সৌদি আরবে হাম্বলীপন্থি সালাফি-ওয়াহাবীদের ধ্বংস চাই!
এমন কথা উচ্চারণে আমাদের বুক কেঁপে ওঠার কথা না। আমরা ভুলে যাইনি ১৯৭১ আমাদের অগ্রজরা পাক বর্বরদের বিরুদ্ধে কীভাবে রুখে করেছিল।
সবশেষে বলছি-
প্রথম থেকেই ইসলাম কট্টরপন্থি ও উদারপন্থি-এ দুধারায় বিভক্ত হয়েছিল। এবং বাংলার মাটি কট্টরপন্থি ইসলামের জন্য সহনীয় নয় বলেই প্রমাণিত। আমরা জানি, উদারপন্থি ইসলামের অন্যতম ধারা সূফিবাদ। সাত শ বছর আগেই মরমী বাংলা মরমী সুফী মতবাদকে মনেপ্রাণে গ্রহন করেছে। তার কারণ-
সারা বাংলার মানুষ প্রকৃতিগত কারণেই মিস্টিক। সমাজতন্ত্রীদের ও বাঙালির এই মরমীপ্রবণতাটি মেনে নিতে হবে। ওয়াহাবী জামাতীরা এ দেশে ঠাঁই পাবে না -কারণ- ওয়াহীবা কোনও প্রকার রহস্যবাদের ধার ধারে না। তখন আমি মওদূদীকৃত
কোরানের তফসির তাহফিমুল কোরান-এর কথা উল্লেখ করেছি। আমরা জানি, কোরানে সুরা ফিল নামে একটি সুরা রয়েছে। যে সুরায় অলৌকিক আবাবিল পাখির কথা রয়েছে। যে পাখি কঙ্কর রেখে আগ্রাসী আবরাহা বাহিনীকে ধ্বংস করেছিল। বাংলাদেশের মানুষ অলৌকিক আবাবিল পাখির। মওদূদীর ব্যাখ্যা একেবারেই অন্যরকম। আবদুল ওয়াহাবের মাজার ভাঙ্গার ঘটনাটি স্মরণ করুন। কাজেই জামায়াত ই ইসলাম মিষ্টিক নয়। যে কারণে এরা বাংলাদেশে অস্পৃশ্য: এদের উত্থান সালাফি-ইবনে হাম্বল>আবদুল ওয়াহাব> সৈয়দ কুতুব> আবুল আলা মাওদূদী ...
আর বাংলাদেশে ইসলামের ক্রমবিকাশ- বুদ্ধ>সুফিবাদ> হজরত শাহ্ জালাল ...বাংলার মাঠেপ্রান্তরে লক্ষ লক্ষ সূফি মিস্টিক বাউল আজও ঘুরে বেড়াচ্ছে। কাজেই এই ক্ষুদ্র যুদ্ধাপরাধী রক্ষণশীল কট্টরপন্থি গোষ্ঠীর আপাতত আবহমান কোনও ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছি না। এরা দু-বার অন্যের ঘাড়ে জেঁকে বসে ক্ষমতার স্বাদ পেয়েছিল। (১) ১৯৭১ সালে। পাকিস্থানী সেনাবাহিনীর ঘারে চেপে বসে। (২) ২০০১ সালে ফ্যাসিবাদী উগ্র ডানপন্থিদের ঘাড়ে এরা চড়ে বসেছিল ৪ দলীয় জোট নামে।
ওয়াহাবীবাদের পাকিস্থানী সংস্করনকে গ্রহন করতে হলে রাতারাতি আবহমান বাংলার হাজার বছরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ভুলে যেতে হবে। সমাজ বিজ্ঞানীদের মতে যা সম্ভব নয়।
আর যুদ্ধাপরাধীর বিচার?
রক্ষণশীল কট্টরপন্থিদের উৎস সৌদি রাজতন্ত্রে ধ্বংস কামনা করে সমগ্র আরব উপদ্বীপে উদারপন্থি গনতান্ত্রিক গ্রগতিশীল আরব শক্তির মানবিক উত্থানের জন্য অপেক্ষায় থাকা।

তথ্য উৎস:

আবদুল ওয়াহাব,সৈয়দ কুতুব, মওদূদী প্রসঙ্গে উইকিপিডিয়ার নানা প্রবন্ধ।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:২০
৮৬টি মন্তব্য ৩৩টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নেতানিয়াহুও গনহত্যার দায়ে ঘৃণিত নায়ক হিসাবেই ইতিহাসে স্থান করে নিবে

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:৩৮

গত উইকেন্ডে খোদ ইজরাইলে হাজার হাজার ইজরাইলি জনতা নেতানিয়াহুর সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে।
দেখুন, https://www.youtube.com/shorts/HlFc6IxFeRA
ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করার উদ্দেশ্যে নেতানিয়াহুর এই হত্যাযজ্ঞ ইজরায়েলকে কতটা নিরাপদ করবে জনসাধারণ আজ সন্দিহান। বরং এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:৩১


আশেপাশের কেউই টের পাইনি
খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে ।

প্রথমবার যখন খুন হলাম
সেই কি কষ্ট!
সেই কষ্ট একবারের জন্যও ভুলতে পারিনি এখনো।

ছয় বছর বয়সে মহল্লায় চড়ুইভাতি খেলতে গিয়ে প্রায় দ্বিগুন... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাম গাছ (জামুন কা পেড়)

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

মূল: কৃষণ চন্দর
অনুবাদ: কাজী সায়েমুজ্জামান

গত রাতে ভয়াবহ ঝড় হয়েছে। সেই ঝড়ে সচিবালয়ের লনে একটি জাম গাছ পড়ে গেছে। সকালে মালী দেখলো এক লোক গাছের নিচে চাপা পড়ে আছে।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×