মার্কো পোলো
আর কদিন পরেই মধ্যযুগীয় পর্যটক মার্কো পোলোর জন্মদিন। মার্কো পোলোর জন্মতারিখ ১৫ সেপ্টেম্বর । আমরা জানি মার্কো পোলো এশিয়া ঘুরে লিখেছেন, ‘মার্কো পোলোর ভ্রমনকাহিনী।’ বড় বিস্ফোরক সে বই। যুগে যুগে পঠিত হয়েছে-এখনও হচ্ছে। মার্কো পোলো পরবর্তী যুগের পর্যটকদের অনুপ্রাণিত করেছে-এমন কী খ্রিস্টফার কলম্বাসকেও। ‘মার্কো পোলোর ভ্রমনকাহিনী’ বইটি লেখার ১৭৫ বছর পর কলম্বার আটলানটিক সমুদ্র পাড়ি দেবার পরিকল্পনা করেন। তিনি ভেবেছিলেন তিনি মার্কো পোলো বর্ণিত জাভা, সুমাত্রা ও অন্যান্য পূর্ব ভারতীয় দীপপুঞ্জে পৌঁছেছিলেন। আসলে তা কিন্তু নয়। তার বদলে কলম্বাস ক্যারিবিয় সমুদ্রের হাইতি ও কিউবা আবিস্কার করেছিলেন। কাজেই আমেরিকা আবিস্কারের পিছনেও মার্কো পোলোর অবদানকে ভেবে দেখতেই হবে।
মার্কো পোলো ভ্রমন করেছিলেন -প্রায় ৫,০০০ মাইল। এই পথে ছিল বৃষ্টি, তুষার আর ফুঁসে-ওঠা নদীর হুমকী । মার্কো পোলো সিল্ক রোড ধরেই চিনে গিয়েছিলেন। এসব কারণেই চিনে পৌঁছতে চার বছর লেগেছিল। যাত্রাপথে অসুখবিসুখ ছিল। বাদশাখান নামে একটি জায়গায় প্রায় এক বছর অসুস্থ্য হয়ে পড়েছিলেন মার্কো। ম্যালেরিয়া হয়েছিল সম্ভবত।
ভেনিস; ইতালি।
মার্কো পোলোর জন্ম ১৫ সেপ্টেম্বর ১২৫৪ ভেনিসে। বাবার নাম নিকোলো পোলো।ইনি ছিলেন ধনী ব্যবসায়ী ও পর্যটক। নিকোলো পোলো তার ভাই ম্যাটিও পোলোর সঙ্গে এরই মধ্যে একবার প্রাচ্যের চিন রাজ্য ঘুরে এসেছেন। চিনসহ সমগ্র মধ্য এশিয়া ও পারস্যে সে সময় মঙ্গোল রাজত্ব। চিনের সম্রাট কুবলাই খান ছিলেন মঙ্গোল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা চেঙ্গিস খানের পৌত্র। নিকোলো পোলো তার ভাই ম্যাটিও পোলোর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ন অমায়িক ব্যবহার করেছিলেন কুবলাই খান । বিদায়কালে আবার চিনে আসতে নিমন্ত্রন করেছিলেন। নিকোলো পোলো তার ভাই ম্যাটিও পোলো কথা দিয়েছিলেন।
তারা তিনজন
মার্কো পোলোর বয়স যখন ১৭ বছর-তখন তিনজন প্রাচ্যযাত্রা করে। চার বছরের ভ্রমন শুরু হল। প্রথমে ভেনিস থেকে সমুদ্রেপথে সিরিয়া। সেখান থেকে কখনও পায়ে হেঁটে কখনও উটে কি খচ্চরের পিঠে চেপে দক্ষিণঅভিমুখে তাবরিজ পৌঁছল দলটি। তাবরিজ থেকে রওনা হয়ে য়াজদ ও কেরমান শহর পেরিয়ে হিন্দুকুশ পাহাড়ের উত্তরে রেশমপথে উঠে এল দলটি। এরপর ভয়ানক গোবি মরুভূমি পেরিয়ে কুবলাই খানের গ্রীষ্মকালীন বিলাস বহুল প্রাসাদ -জানাদু। যে প্রাসাদটি রোমাঞ্চকর প্রাচ্যের প্রতীক- যুগে যুগে ইউরোপীয় শিল্পীদের কৌতূহলের বিষয়। সে প্রাসাদ সম্বন্ধে ইংরেজ কবি সামুয়েল টেইলর কোলরিজ (১৭৭২-১৮৩৪) ‘কুবলাই খান’ কবিতায় লিখেছেন-
In Xanadu did Kubla Khan
A stately pleasure-dome decree
Where Alph, the sacred river, ran
Down to a sunless sea
...
I would build that dome in air,
That sunny dome, those caves of ice!
And all who heard should see them there,
And all should cry, Beware! Beware!
His flashing eyes, his floating hair!
Weave a circle round him thrice,
And close your eyes with holy dread,
For he on honey-dew hath fed,
And drunk the milk of Paradise.
কুবলাই খান মার্কো পোলোকে স্বাগত জানাচ্ছেন
আমি আগেই বলেছি কুবলাই খান নিকোলো পোলো তার ভাই ম্যাটিও পোলোর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ন অমায়িক ব্যবহার করেছিলেন। তরুন মার্কো পোলোকে দেখে কুবলাই খান অত্যন্ত খুশি হলেন। অবিলম্বে মার্কো পোলোকে রাজ্যের কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ দিলেন সম্রাট।
কুবলাই খান। হাসিখুশি এক আমুদে সম্রাট
মার্কো পোলো চিন সম্রাটের প্রতিনিধি হিসেবে চিন সাম্রাজ্যের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গেলেন। তিনি প্রথম ইউরোপীয় যিনি এশিয়ার দুর্গম অঞ্চলে প্রথম পা রেখেছেন। কত যে এশিয় ট্রাইব দেখেছেন মার্কো।
চিনের গহন প্রদেশ
মার্কো পোলোর রাজকীয় চাকরির উন্নতি হল। এমন কী একটি চৈনিক প্রদেশের গর্ভনরও হলেন তিনি। চৈনিক জীবনযাত্রার কত কিছুই না খেয়াল করলেন। কিন্তু চিনেরা যে ঘন ঘন চা খেত-সেই বিষয়টিই উল্লেখ করতে বেমালুম ভুলে গেছেন। মেয়েদের কথা কিন্তু উল্লেখ করতে ভুলেন নি। সেপ্টেম্বর মাসে জন্ম তো!
মার্কো পোলোর রোমান্স নিয়ে অনেক চলচ্চিত্র হয়েছে। তারই একটি দৃশ্য। মার্কো পোলো হ্যান্ডসামই ছিল তা হলে? আর আমাদের মঙ্গোলয়েড নায়িকা!
যা হোক। মার্কো পোলোরা ইটালি ফিরতে চাইলেন। অনেক দিন হয় দেশ ছেড়েছেন। সম্রাট কিন্তু রাজী হলেন না-হাসিখুশি আর আমুদে হলে যা হয় আর কী। কী করা যায়। সম্রাট বুড়ো হয়েছেন। এখন ক্ষমতা বদল হলে অরাজকতা দেখা দেবে। তখন কে রক্ষা করবে? তা ছাড়া প্রচুর ধনদৌলত আয় হয়েছে। সেসবের বিনিয়োগ জরুরি।
মানচিত্রে মঙ্গোল সাম্রাজ্য
১২৯২ সালে সুযোগ এল। পারস্য থেকে দূত এল। পারস্যের সম্রাট ইল খান বিয়ে করতে চান কুবলাই খানের মেয়েকে। কুবলাই খানের মেয়ের নাম কোকাচিন। এর সঙ্গে মার্কোর গাঢ় সর্ম্পক অনুমান করা যায়! কুবলাই খান রাজী। ইল খান সম্পর্কে কুবলাই খান ভাতিজা। আমি তখন বলেছি- চিনসহ সমগ্র মধ্য এশিয়া ও পারস্যে সে সময় মঙ্গোল রাজত্ব। চিনের সম্রাট কুবলাই খান ছিলেন মঙ্গোল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা চেঙ্গিস খানের পৌত্র।
মঙ্গোলদের অর্ন্তদ্বন্ধের কারণে স্থলপথ সে সময় অবরুদ্ধ ছিল। সমুদ্রপথের কথা ভাবা হল। পোলো পরিবার ভ্রমনবিষয়ে অভিজ্ঞ-তারাই কনেকে পারস্যে পৌঁছে দেবে। সম্রাট জাহাজ তৈরি করতে বললেন। সেইসঙ্গে সম্রাট পোপ ও স্পেন, ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডের রাজাকে শুভেচ্ছা জানালেন।
এই জাহাজকে বলে চাইনিজ জাঙ্ক
জাহাজ ভাসল চিন সমুদ্রে। এই ঘটনাটি বিশ্বের ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। কেননা, আমি লিখেছি- ‘মার্কো পোলোর ভ্রমনকাহিনী’ বইটি লেখার ১৭৫ বছর পর কলম্বার আটলানটিক সমুদ্র পাড়ি দেবার পরিকল্পনা করেন। তিনি ভেবেছিলেন তিনি মার্কো পোলো বর্ণিত জাভা, সুমাত্রা ও অন্যান্য পূর্ব ভারতীয় দীপপুঞ্জে পৌঁছেছিলেন। আসলে তা কিন্তু নয়। তার বদলে কলম্বাস ক্যারিবিয় সমুদ্রের হাইতি ও কিউবা আবিস্কার করেছিলেন। কাজেই আমেরিকা আবিস্কারের পিছনেও মার্কো পোলোর অবদানকে ভেবে দেখতেই হবে।
মার্কো পোলো; বৃদ্ধ বয়েসে
যা হোক। দলটি মাল্লাকা প্রণালী হয়ে প্রথমে পশ্চিমে ভারত সাগর তারপর পারস্য উপসাগর পৌঁছল। তাবরিজ-এ অবতরণ করল।
পোলোদের প্রায় ৯ মাস পারস্যে কাটল। তারপর তারা ইতালি রওনা হল। ১২৯৫ সালে ভেনিস পৌঁছল।অনেক কিছুই বদলে গেছে। জেনোয়ার সঙ্গে ভেনিসের যুদ্ধ। মার্কো পোলো জন্মভূমির পক্ষ নিলেন। মার্কো পোলো কে বন্দি করা হল হল। ভাগ্যিস! জেলে বসেই তো ভ্রমনকাহিনী লিখলেন। নৈলে লিখতেন কিনা সন্দেহ!
মার্কো পোলোর মৃত্যু ১৩২৪ সালে।
ভেনিসে মার্কো পোলোর সমাধি
আবারও বলি, আসছে ১৫ সেপ্টেম্বর মার্কো পোলোর জন্মদিন।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১:১৩