somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জিযিবেল

২৭ শে মে, ২০১০ বিকাল ৫:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


জিযিবেল (Jezebel) ... ফিনিসিয় রাজকুমারী। সময়কাল? খ্রিস্টপূর্ব নবম শতক। হিব্রু বাইবেলে জিযিবেল এর কথা ঘৃনাভরে উল্লেখ রয়েছে। তার কারণ, জিযিবেল ছিলেন ইজরাইলের রাজা আহাব এর স্ত্রী। তা সত্ত্বেও ইসরাইলি ধর্ম মেনে নিতে পারেন নি জিযিবেল - আমৃত্যু ছিলেন ফিনিসিয় ধর্মের প্রতি অনুরক্ত । তাঁর ধর্মবোধ এতই প্রবল ছিল যে তাঁকে মৃত্যুর দিকে টেনে নিয়ে গিয়েছিল ...






ফিনিসিয় মানচিত্র। জিযিবেল ছিলেন খ্রিস্টপূর্ব ৯ শতকের ফিনিসিয় একজন রাজকুমারী। ফিনিসিয় সভ্যতা ছিল মূলত নাগরিক সভ্যতা, যে কারণে, অনুমিত হয়, যথেস্ট পরিশীলিত ছিলেন জিযিবেল। যদিও পৌত্তলিক ছিলেন। একেশ্বরবাদকে মনেপ্রাণে ঘৃনা করতেন!




দেবতা বাল।

ফিনিসিয়দের আরাধ্য দেবতার নাম ছিল Baal. ‘জিযিবেল’ নামের অর্থ : ‘হোয়ার ইজ দ্য প্রিন্স?’ এই প্রিন্স হলেন বাল। বাল যখন পাতালে প্রবেশ করেন পৃথিবী তখন উষর হয়ে ওঠে। তখন ফিনিসিয় প্রার্থনাকারীগন সববেত কন্ঠে আহাজারী করে, ‘জিযিবেল’ ... ‘জিযিবেল’ ... ‘হোয়ার ইজ দ্য প্রিন্স?’ ‘হোয়ার ইজ দ্য প্রিন্স?’ হিব্রুভাষীদের রানী হলেও বাল-এর ওপর প্রবল বিশ্বাস ছিল জিযিবেল এর। কথিত আছে, বাল এর উপসনালয়ে শিশুবলি হত। ভাবলে আশ্চর্য হতে হয়-কেবল ধর্মবিশ্বাসের জন্য নিষ্ঠুর প্রথা মেনে নিয়েছিলেন জিযিবেল। এবং তা কিতাবধারী হিব্রুভাষীদের সমাজে প্রচলনের চেষ্টা করেছেন!



হিব্রু বাইবেলে জিযিবেল অশুভ শক্তির প্রতীক।


জিযিবেল এর বাবার নাম এথবার। তাঁকে বলা হত সিদোনিওদের রাজা। কারণ, ফিনিসিয় নগরী টায়ার ও সিদোন ছিল ফিনিসিয় সাম্রাজ্যে অংশ ছিল। সিদোন থেকেই ওই নাম।



সিদোন এর মানচিত্র। প্রাচীন ফিনিসিয় রাজ্যই বর্তমানকালের লেবানন ।



প্রাচীন ইসরাইল-এর মানচিত্র। খ্রিস্টপূর্ব নবম শতকে রাজ্যটি দুটি খন্ডে বিভক্ত ছিল। উত্তরের রাজ্যের নাম ইসরাইল; দক্ষিণের নাম জুদাহ। উত্তরের ইসরাইলের রাজার নাম ছিল আহাব। তাঁর সময়কাল ৮৭৪ থেকে ৮৫৩ খ্রিস্টপূর্ব।

রাজনৈতিক কারণেই এথবার এর সঙ্গে ইসরাইলের রাজা আহাব এর কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। যার ফলশ্রুতিতে রাজা আহাব এর সঙ্গে রাজা এথবার এর কন্যা জিযিবেল এর বিবাহ সম্পন্ন হয়। ফলে, হিব্রু সাম্রাজ্যে ফিনিসিয় প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। বিশেষত ধর্মের ক্ষেত্রে। ইসরাইলী নগরগুলিতে ফিনিসিয় উপাসনালয় গড়ে উঠতে থাকে।




জিযিবেল -এর সিল। জিযিবেল স্বামীর সঙ্গে ইসরাইল রাজ্য শাসন করেছেন।

বিয়ের পর দুটো কারণে দুর্যোগ ঘনিয়ে ওঠে। (এক) তখন একবার বলেছি যে হিব্রুদের রানী হলেও বাল-এর ওপর প্রবল বিশ্বাস ছিল। পক্ষন্তরে হিব্রুভাষীরা উপসনা করত সর্বশক্তিমান ইয়াওয়ের। (দুই) রাজ্য পরিচালনার বিষয়ে জিযিবেল এর ধারণার সঙ্গে ইসরাইলীদের ধারণা পার্থক্য ছিল। জিযিবেল ফিনিসিয়ার একচ্ছত্র অধিপতির কন্যা। বিশ্বাস করতেন, ‘জোর যার মুলুক তার।’ যা ইচ্ছে করার অধিকার রয়েছে রাজার। উদাহরণসরূপ বলা যায়। রাজা আহাব এর প্রাসাদটি ছিল জিযরিল নামে একটি জায়গায়। প্রাসাদের পাশেই একটি দ্রাক্ষাকুঞ্জ ছিল: মালিক নাবোথ। আঙুর বাগানটি আহাব কিনতে চাইলেন। নাবোথ বিক্রি করতে রাজী নন। জিযিবেল নাবোথ কে হত্যা করে দ্রাক্ষাকুঞ্জের মালিকানা স্বামীকে দেন।



জিযিবেল এর এই রকম রুক্ষ আগ্রাসী ছবিই ইউরোপের খ্রিস্টান জগতে আঁকা হয়েছে বেশি

আমি যে সময়ে কথা বলছি সেই সময়ে ইসরাইলে ঐশি পথপ্রর্দকের নাম ছিল এলিজা। ইনিই ইসলামী বিশ্বের হযরত ইলিয়াস আলাইহিস সালাম নামে পরিচিত। পয়গম্বর এলিজার জেহু নামে একজন অনুচর ছিল। সে পরবর্তীকালে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখে। যা হোক। পয়গম্বর এলিজার নেতৃত্বে একেশ্বরবাদী ইয়াওয়ে আন্দোলন দানা বাঁধে। ওদিকে রানী জিযিবেল এর অনুগতের সংখ্যাও কম ছিল না। ফলত দুটি স¤প্রদায়ের মধ্যে অনিবার্য হয়ে ওঠে সংঘাত । স্বভাবতই জিযিবেল বাল এর পক্ষ নেয়। রাজা আহাব মধ্যপন্থা অবলম্বন করতে চাইলেন। পয়গম্বর এলিজা পক্ষ নেন ইয়াওয়ের।



মুখোমুখি রাজা আহাব, জিযিবেল ও পয়গম্বর এলিজা

পয়গম্বর এলিজার নির্দেশে জেহু আহাব পরিবারের বিরুদ্ধে অভ্যূত্থান ঘটায়। তাদের সপরিবারে হত্যা করে। মৃত্যুর সময় জিযিবেল দেবতা বাল এর ধর্মীয় পোশাক পরে ছিলেন বলে কথিত আছে । জেহু প্রাসাদের খোজাদের রানীকে জানালা দিয়ে ছুঁড়ে হত্যা করতে নির্দেশ দেয় যাতে রাস্তার কুকুরেরা উৎসব করতে পারে!



শিল্পী গুস্তাফ ডোর এর আঁকা জিযিবেল এর মৃত্যু



জিযিবেল এর মৃত্যু। আরেকটি ভার্সান।

জিযিবেল এর বিরুদ্ধে পয়গম্বর এলিজার বিজয় আব্রাহামিক ধর্মের বিশাল বিজয় বলে চিহ্নিত করা যায়। নয়তো এক ফিনিসিয় রাজকুমারীর প্রভাবে ইব্রাহিমের ধর্মটি হয়তো বিলুপ্ত না হলেও বিকৃত হয়ে যেত!মাঝে-মাঝে মনে হয় এমনই কাম্য-কেননা ফিনিসিয় দেবতা বাল এর উপসনালয়ে শিশুবলির কথা মনে হলে শিউরে উঠি! ওল্ড টেস্টামেন্টের "টেন কমান্ডমেন্টস" অনেক মানবিক ...

জিযিবেল এর ওপর আল মুজাহিদ এর এই লেখাটি পড়তে পারেন ...
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মে, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:৫৬
৩০টি মন্তব্য ৩০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস শুধু দেশের রাজধানী মুখস্ত করার পরীক্ষা নয়।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:১৪

"আমার বিসিএস এক্সামের সিট পরেছিলো ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এ, প্রিপারেশন তো ভালোনা, পড়াশুনাও করিনাই, ৭০০ টাকা খরচ করে এপ্লাই করেছি এই ভেবে এক্সাম দিতে যাওয়া। আমার সামনের সিটেই এক মেয়ে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×