somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে গ্রিক দেবী হেরা

১২ ই জুলাই, ২০১০ সকাল ১০:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


একটা সময় ছিল - যখন মানবসভ্যতার অদিতম স্তরে বিশ্বজগতের সৃষ্টিকর্তাকে নারীরূপে কল্পনা করা হয়েছিল। সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে সে ধারণা অবশ্য বদলে যায়। প্রাচীন জনপদের জনসমাজে পুরুষ দেবতা প্রধান হয়ে ওঠে। গ্রিক দেবী হেরা ও দেবতা জিউসের ক্রমবিকাশে আমরা এ ধারনার প্রতিফলন লক্ষ করি।




প্রাচীন গুহার দেওয়ালে আঁকা নারী

নারী চিরকালই মাতৃত্বের প্রতীক, রহস্যেরও প্রতীক। হাজার বছর আগে গুহাবাসী মানুষ গুহার গায়ে নারীদেহ এঁকেছিল। সে ছবিতে ফুটে উঠে ছে গর্ভবতী নারী কি সন্তান লালন পালনের দৃশ্য। আদিম যুগে সন্তানের জন্মদানকে ভাবা হত মহাশক্তির দ্বারা সংঘটিত এক আশ্চর্য ঘটনা। যে মহাশক্তি নতুন জীবন আনে, আনে বসন্ত ঋতু। আদিম মানুষ সঙ্গত কারণেই সেই শক্তিকে আরাধনা করার কথা ভেবেছিল। এবং কল্পনা করেছিল মহাশক্তিরূপীনি একজন নারীকে।



গ্রিক জগৎ

সুপ্রাচীন গ্রিসের মানুষ এ রকম নারীকেন্দ্রিক ধ্যানধারনা পোষন করেছিল। তৎকালীন গ্রিক গ্রামীন জনসমাজে শিল্প ছিল, ছিল প্রাথমিক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান । এবং গ্রিকরা এক মহাশক্তির আরাধনা করত। সেই মহাশক্তি কখনও গ্রিকদের কাছে পাখি, সরীসৃপ কি ধরনী (পৃথিবী) রূপে প্রতীয়মান হত। তবে সেই মহাশক্তি গ্রিকদের কাছে নারীরূপেই প্রতিভাত হয়েছিল। কেননা কেবল নারীরই রয়েছে জন্মদান করার বিস্ময়কর ক্ষমতা, নতুন জীবন বহন করার ক্ষমতা। পরবর্তীকালে জন্মদানের প্রক্রিয়ায় পুরুষের ভূমিকা জানার পরই মানবসমাজে পুরুষ দেবতার উদ্ভব হয়েছিল। তবে এক বৃহৎমাতার (গ্রেট মাদার) আরাধনা চলছিল -বিশেষ করে ভূমধ্যসাগরের ক্রিটদ্বীপে।
এই বৃহৎমাতাই গ্রিক উপকথার হেরা।




আর্যদের অভিপ্রয়ান বা মাইগ্রেশন

সুপ্রাচীন গ্রিসের মানুষ গ্রামে বাস করত । তখনও প্রস্তরনির্মিত নগরদূর্গ গড়ে ওঠেনি। দীর্ঘকাল তারা সুখে শান্তিতে দিনাতিপাত করেছে। এরপর হঠাৎই পরিস্থিতি হয়ে এল উত্তাল । গ্রিসের পূর্বে এশিয়া। এশিয়া থেকে আর্য আক্রমনকারীরা গ্রিক মূলভূমিতে হানা দিল।



আর্যদের অভিপ্রয়ান বা মাইগ্রেশন


আর্যরা সঙ্গে করে নিয়ে এল ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা। যে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা থেকে আজকে ইতালিয় স্পেনিশ এবং ইংরেজি ভাষার উদ্ভব।
আর্যরা এক আকাশ দেবতাও নিয়ে এল।
এই আকাশদেবতাই গ্রিক উপকথার জিউস ...


এরপর থেকে মহাশক্তির রূপ গেল বদলে। গ্রিক উপকথাও হয়ে উঠল পুরুষকেন্দ্রিক। এবং বলা হল আর্যদের আকাশ দেবতার মস্তক থেকে দেবী এথেনার (এথেন্স নগরের রক্ষাকর্ত্রী দেবী) জন্ম হয়েছে। এর মানে দেবীরা আকাশ-দেবতার অধীন! মনে রাখতে হবে ‘এথেনা’ শব্দটি আর্যপূর্ব। যা হোক। আর্যদের আকাশ দেবতা স্থানীয় দেবীকে বিবাহ করলেন। (আমরা জানি গ্রিক উপকথায় হেরা হলেন দেবতা জিউস এর স্ত্রী) ... তবে আকাশ দেবতার বহুবিহার (অবাধ যৌনাচার) অব্যাহত থাকে। যা হেরার ক্রোধের কারণ হয়ে ওঠে।



ইতিহাসের এক বিশেষ পর্বে সৃষ্টিকর্তারূপী নারী হয়ে গেলেন উর্বরা শক্তির দেবী

সর্বত্রই এখন জিউস এর জয়জয়াকার। এখন আর দেবীকে মহাশক্তি বলা হচ্ছে না, বলা হচ্ছে উর্বরা শক্তির দেবী। বাংলায় কালী তার অবস্থান অক্ষুন্ন রাখতে পারলেও দেবী দূর্গারও সে হাল হয়েছে। পুরুষকেন্দ্রিক নতুন প্রবাহে ধর্মেরও অধোগতি হল। এথেনা আর্যপূর্ব দেবী ছিলেন, যার প্রতীক ছিল পাখি ... এখন হলেন যুদ্ধের দেবী!

যা হোক। এখন দেখি হেরা সম্বন্ধে গ্রিক উপকথা কি বলে।
হেরা বিবাহের দেবী। (অতীতে ছিলেন একক মহাদেবী) ...আগেই বলেছি, হেরা জিউস-এর স্ত্রী এবং সেকারণেই অলিম্পিয়াসন দেবদেবীর রাণী, জিউস যেহেতু দেবরাজ।



জিউস ও হেরা

হেরা নানা কারণে বিতর্কিত।
হেরা গ্রিক বীর হেরাক্লেসকে ঘৃনা করেন। কেননা হেরাক্লেস ও এক মরণশীল নারীর পুত্র। হেরাক্লেস যখন শিশু তখন হেরা নবজাতকের বিছানায় সাপ ছেড়ে দিয়েছিল! আগেই একবার বলেছি আকাশ দেবতার বহুবিহার (অবাধ যৌনাচার) অব্যাহত থাকে। যা হেরার ক্রোধের কারণ হয়ে ওঠে। হেরাক্লেস যখন অ্যামাজন নারীদের বিরুদ্ধে অভিযানে বেরুল তখন হেরা অ্যামাজন নারীদের হেরাক্লেস এর বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলেছিল। অবশ্য যখন জেসন গোল্ডেন ফ্লিস ( ভেড়ার সোনালি রঙের রোম)-এর সন্ধানে গেল- তখন হেরা সাহায্য করেছিল। জেসন এর প্রতি হেরার এই বদান্যতার কারণ জানতে পারিনি।
যাই হোক। আমরা দেখলাম হেরার ক্ষমতা খর্ব হলেও হেরার আরাধনা গ্রিসে অনেক পুরনো।

তথ্য ও ছবি: ইন্টারনেট।

সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুলাই, ২০১০ দুপুর ১২:২৬
২০টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগ লিখেছি: কথাটার পরে ভাসছে ১১ বছর ১১ মাস... কথাটা

লিখেছেন আবু ছােলহ, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৮

ব্লগ লিখেছি: কথাটার পরে ভাসছে ১১ বছর ১১ মাস... কথাটা

গুগল থেকে নেয়া ছবি।

সামুতে মাল্টি নিক নিয়ে অনেকেই কথা বলেন। অনেকের কাছে মাল্টি যন্ত্রণারও কারণ। শুধু যন্ত্রণা নয়, নরক যন্ত্রণাও... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×