somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গ্রিক মিথ : সোনালি মেষচর্মের উপাখ্যান

২৫ শে অক্টোবর, ২০১০ রাত ৮:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গ্রিক পুরাণকথায় সোনালি মেষচর্মের উপাখ্যানটি সুপরিচিত । উপাখ্যানটি প্রধানত দুটি অংশে বিভক্ত। প্রথম অংশে আমরা দেখতে পাই একজন ঈর্ষাকাতর সৎ মায়ের তার সৎ সন্তানদের প্রতি বিষদৃষ্টি এবং দেবতা হার্মেসের মহানুভবতা - যিনি নিষ্পাপ সন্তানদের বাঁচানোর জন্য একটি ডানাওয়ালা সোনালি লোমের মেষ পাঠিয়েছিলেন । সোনালি মেষচর্মের উপাখ্যানের দ্বিতীয় অংশটিও কম আকর্ষনীয় নয়। এই অংশে আমরা দেখতে পাই বীর জেসন কে; ... জেসন তার বীরের দল নিয়ে আর্গো জাহাজে করে এশিয়ার কোলচিস রাজ্যে পৌঁছে যাদুকরী মিডিয়ার সহায়তায় সোনালি মেষচর্মটি উদ্ধার করেন।





প্রাচীন গ্রিসের মানচিত্র। গ্রিক পুরাণকথায় যুগে যুগে মানুষের গভীর আগ্রহ ...

প্রাচীন গ্রিসে আথ্যামাস নামে একজন রাজা ছিলেন। রাজা আথ্যামাস-এর স্ত্রীর নাম ছিল নেফহিলি; ফ্রিক্সাস এবং হেলি নামে এদের দুটি সন্তান ছিল। রাজা আথ্যামাস স্ত্রীর ওপর আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন এবং থিবস-এর রাজা ক্যাডমাস-এর কন্যা ইনোকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর ফ্রিক্সাস এবং হেলি কে সহ্য করতে পারত না ইনো । সন্তানের বিপদ আঁচ করে নেফহিলি দেবতা হার্মিস-এর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করলেন। দেবলোকের সংবাদবহনকারী দেবতা হলেন হার্মিস । রোমান পুরাণে ইনিই মার্কারি নামে পরিচিত। ...যাক হার্মিস তখন ক্রিসোমাললাস নামে ডানাওয়ালা একটি মেষ পাঠান- যার লোম ছিল সোনালি রঙের । ফ্রিক্সাস এবং হেলি কে পিঠে নিয়ে ক্রিসোমাললাস আকাশে উড়ল এবং পুব দিকে যেতে লাগল। যেখানে ইউরোপ ও এশিয়া বিভক্ত হয়েছে ঠিক সেখানে হেলি পড়ে যায়। তারপর থেকে ওই জায়গার নাম হয় হেলাসপন্ট।



হেলাসপন্ট- এর মানচিত্র।


ফ্রিক্সাস নিরাপদে কৃষ্ণ সাগরের পূর্ব তীরের কোলচিস রাজ্যে অবতরন করে।



শিল্পীর তুলিতে ক্রিসোমাললাস এর পিঠে ফ্রিক্সাস

কোলচিস রাজ্যের রাজা ছিলেন ঈটিজ। রাজা ঈটিজ ফ্রিক্সাস কে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানায়। কৃতজ্ঞতাস্বরূপ ফ্রিক্সাস ক্রিসোমাললাস কে জিউসের উপাসনালয়ে বলি দেয় এবং সোনালি চামড়াটি ঈটিজ কে উপহার দেয় । ঈটিজ একটি ড্রাগনের (ড্রাগন কখনোই ঘুমায় না) পাহারায় পবিত্র কুঞ্জে সোনালি মেষচর্মটি রাখে ।
এদিকে আরেকটি বিস্ময়কর ঘটনা ঘটছিল। গ্রিসের থেসালি রাজ্যের আয়োলকাস নগরের রাজা ছিলেন ঈসন। তিনি প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছিলেন। ঈসন এর ভাই পেলিয়াস ঈসন কে সিংহাসনচ্যূত করেছিল। জেসন নামে ঈসন-এর এক ছেলে ছিল; বিপদ আঁচ করতে পেরে জেসন কে দূরে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন ঈসন ।



থেসালির মানচিত্র

পরিনত বয়েসে জেসন থেসালি ফিরে এসে পেলিয়াস-এর কাছে রাজ্য দাবী করে বসে । পেলিয়াস বলে, জান তো জেসন কোলচিস রাজ্যে স্বর্ণলোমের চামড়া রয়েছে?
জানি।
পেলিয়াস বিশ্বাস করত না যে জেসন সোনালি মেষচর্মটি উদ্ধার করে আনতে পারবে । কাজেই পেলিয়াস বলল, আগে কোলচিস থেকে সোনালি লোম নিয়ে এসো। তার পরে সিংহাসন পাবে।
অসম সাহসী জেসন রাজি হল। তারপর সাহসী বীরদের জড়ো করে আয়োলকাস বন্দরে এল। এই বীররা ‘আর্গোনটস’ নামে পরিচিত। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন সংগীতের দেবতা অর্ফিউস এবং বীর হারকিউলিস। জেসন শক্তপোক্ত গড়নের একটি জাহাজ নির্মান করল। জাহাজটি ‘আর্গো’ নামে পরিচিত।



আর্গো জাহাজ

অর্ফিউস বীণা বাজাল। আয়োলকাস বন্দর থেকে আর্গো যাত্রা করে। আর্গো জাহাজটি তিনটি রুক্ষ দ্বীপের পাশ দিয়ে যায়। সে দ্বীপ তিনটির নাম: সাইরেনাম। ওখানে বাস করে সাইরেনরা। সাইরেনরা অতি মধুর সুরে গান করে। সে সুরের ঐন্দ্রজালিক মায়ায় আচ্ছন্ন হয়ে জাহাজ সাইরেনাম এর পাথুরে উপকূলে ধাক্কা খেয়ে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। যাক। আর্গো জাহাজটি ভেসে চলেছে সাইরেনাম এর পাশ দিয়ে।

অর্ফিউস শুনল সাইরেনদের সুরেলা গান
সেই গানের চেয়েও শ্রুতিমধুর বীণা বাজাল অর্ফিউস
আর আসন্ন ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পেল আর্গো ...



কৃষ্ণসাগরের মানচিত্র। রামায়ণ যেমন আর্যদের দক্ষিণমুখী অগ্রযাত্রার বিবরণ, তেমনি সোনালি মেষচর্মের উপাখ্যান গ্রিক আর্যদের পূর্বমুখি স¤প্রসারণের বিবরণ বলেই মনে হয় ...

বহু ঝঞ্ছাময় পথ পাড়ি দিয়ে কোলচিস পৌঁছায় আর্গো। কোলচিস রাজ্যের রাজা ঈটিজ জেসনকে অভ্যর্থনা জানায়। জেসন রাজার কাছে বহু পথ পাড়ি দিয়ে কোলচিস আসার অভিপ্রায় ব্যক্ত করে। রাজা বললেন, তুমি সোনালি মেষচর্ম চাও?
হ্যাঁ।
ঠিক আছে, পাবে। তবে একটা শর্ত আছে।
কি শর্ত?
আমার একটি ষাঁড় আছে, যেটি পা ব্রোঞ্জের এবং ওটির নিঃশ্বাসে আগুন ছড়ায়। তোমাকে ষাঁড়টিকে লাঙ্গলে জুতে দিতে হবে।
জেসন রাজী হল।



‘জেসন অ্যান্ড দি আর্গনাটস’ নামে ছবির পোস্টার।

রাজা ঈটিজ-এর কন্যার নাম ছিল মিডিয়া। কোলচিস -এ একটি উপাসনালয়ের নারীপুরোহিত মিডিয়া জাদুবিদ্যা জানত । মিডিয়া জেসনকে দেখামাত্রই দেবী হেরার ইচ্ছেয় জেসনের প্রেমে পড়ে যায়। জেসন অবশ্য দেবী হেরার ব্যাপারটা জানত না।



মিডিয়া জেসনকে বলল, আমি তোমায় সাহায্য করব। তার বদলে তুমি আমাকে কি দেবে?
জেসন বলে, আমি সারাজীবন তোমাকে ভালোবাসব।
আমাকে তোমার দেশে নিয়ে যাবে? মিডিয়া জিজ্ঞেস করল।
হ্যাঁ। আমি তোমাকে গ্রিসে নিয়ে যাব। জেসন বলল।
সত্যি?
সত্যি।
মিডিয়া জেসনের শরীরে জাদুকরি মলম মাখিয়ে দিল। যে কারণে সেই ব্রোঞ্জের পাওয়ালা নিঃশ্বাসে আগুন ছড়ানো ষাঁড়টিকে লাঙ্গলে জুতে দিতে পারল জেসন।
মনক্ষুন্ন রাজা ঈটিজ এবার বললেন, জান তো জেসন, অনেক দিন আগে থিবসের রাজা ক্যাডমাস একটি ড্রাগন হত্যা করেছিল।
জানি। জেসন বলল।
তোমাকে এখন মাটিতে সেই ড্রাগনের দাঁত পুঁততে হবে।
জেসন রাজী হল।
রাজা ঈটিজ জানত ড্রাগনের দাঁত পুঁততেই সশস্ত্র সৈন্যরা মাটি ফুঁড়ে বেরুবে। তারপর তারা জেসনকে আক্রমন করবে।



মিডিয়া জেসনকে যাদুকরী সব অস্ত্র দেয় এবং জেসন সশস্ত্র সৈন্য দের ধ্বংস করে।




মনে থাকার কথা সেই পবিত্র কুঞ্জে স্বর্ণলোম পাহারারত ড্রাগনটি কখনোই ঘুমায় না। মিডিয়া মায়াবলে ড্রাগনকেও ঘুম পাড়িয়ে দিল। জেসন সোনালি মেষচর্ম নিয়ে আর্গো জাহাজে ওঠে । সঙ্গে মিডিয়া। রাজা ঈটিজ পিছু নেয় । মিডিয়া তার ছোট ভাই এপসিরটুস কে সঙ্গে নিয়ে ছিল। পিতাকে বিভ্রান্ত করার জন্য ছোট ভাই এপসিরটুস কে হত্যা করে সাগরে ফেলে দেয় মিডিয়া। শোকার্ত রাজা ঈটিজ ছেলের ছিন্নভিন্ন মৃতদেহ জড়ো করতে থাকে।
এই ফাঁকে আর্গো ধরা ছোঁয়ার বাইরে চলে যায়।



জেসন এবং মিডিয়ার প্রেমে রক্ত লেগেছিল। জেসনকে সাহায্য করার জন্য ছোট ভাই এপসিরটুস কে হত্যা করে সাগরে ফেলে দিয়েছিল মিডিয়া। এর পরিনতি শুভ হয়নি।

ছবি ও তথ্য: ইন্টারনেট
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×