somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রাচীন মিশরের সূর্যদেবতা: ‘রা’ ...

০১ লা এপ্রিল, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রাচীন মিশরের সূর্যদেবতা রা। রা ছিলেন প্রধান দেবতা এবং দেবতাদের অধিপতি। রা-এর শরীর মানুষের হলেও মুখটি বাজপাখির, ... মাথায় একটি সূর্যচাকতি যা ঘিরে পবিত্র গোখরা সাপ । যে কারণে প্রাচীন মিশরের ফারাও তুতানখামুন-এর কপালে গোখরা সাপ শোভা পেত ... প্রাচীন মিশরবাসী বিশ্বাস করত রা-এর ক্ষমতা লুকিয়ে আছে তাঁর পবিত্র নামে। এই গুপ্ত নাম কেবল রা-ই জানেন। এ ভাবে প্রাচীন মিশর পরবর্তী সেমেটিক ধর্মসমূহকে বিপুলভাবে প্রভাবিত করেছিল ...




প্রাচীন মিশরের মানচিত্র। নীল নদ, পিরামিড ও মমির দেশ মিশর। যে দেশটি সম্পর্কে আজও মানুষের আগ্রহের যেন শেষ নেই। প্রাচীন মিশরের মমিভিত্তিক পরকালবাদী অভিনব ধর্মটি আজও আমাদের মনে গভীর বিস্ময়ের সৃষ্টি করে ... সেই সঙ্গে প্রাচীন মিশরীয় দেবদেবীগনও কম রহস্যময় নয় ...



রা-এর শরীরটি মানুষের হলেও মুখটি বাজপাখির।
কেন?
কারণ রা ছিলেন প্রধান দেবতা এবং দেবতাদের অধিপতি। তাঁর অবস্থান অনেক উচ্চে মনে করা হত। উড়ন্ত বাজপাখি যেমন মাটির অনেক ওপরে বিচরণ করে, ঠিক তেমনি ...



বাজপাখি। রা এর প্রতীক।

প্রাচীন মিশরে এমন একটি ধারণা প্রচলিত ছিল যে-সূর্যদেব রা মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছেন। উদিত সূর্য ছিল সেই সৃষ্টির প্রতীক। প্রাত্যহিক সূর্যের আবর্তন যেন নবজন্মের কথাই মনে করিয়ে দেয়। যে কারণে রা-কে মনে করা হত জীবনের উৎস এবং পরম শক্তির আধার। রা-এর একজন ঘনিষ্ট সহযোগী ছিলেন ন্যায়বিচারের দেবী মাত । মাত ছিলেন শৃঙ্খলা ও সত্যের প্রতীক।



রা-এর নৌকা।

নৌকায় চড়ে আকাশপথে ভেসে বেড়ান রা। সেই নৌকার নাম Barque of Millions of Years ... প্রাচীন মিশরের মানুষ এমনই কল্পনা করেছে। প্রতিদিন দিনের শেষে রা-এর জীবনপ্রদীপ যেত নিভে। অবশ্য তাঁর পাতালদেশে রাত্রিকালীন ভ্রমন অব্যাহত থাকত, এবং চাঁদকে তিনি রেখে যেতেন আলো বিলাতে। নৌকাটিকে পাতালদেশের ১২ টি দরজা অতিক্রম করতে হত। ১২ টি দরজা মানে রাত্রির ১২ ঘন্টা। অবশ্য পরের দিন ভোরে রা আবার জন্ম নিতেন।




মিশরের অধিবাসীরা বিশ্বাস করত রাতের বেলা আকাশদেবী নুট রা-কে গিলে খেত। এবং ভোরে পুর্নজন্ম হত। রা কে বলা হত Re-Horakhty ... এর মানে দিগন্তের হোরাস। হোরাস ছিলেন প্রাচীন মিশরের আরেক সূর্যদেবতা।

অবশ্য রা-এর দিবাকালীন যাত্রা সব সময় নিরাপদ ছিল না। কেননা, দিনের বেলায় প্রধান শক্রর সঙ্গে যুদ্ধ বেঁধে যেত। সেই প্রধান শক্র ছিল সাপ। সেই সাপের নাম আপেপ। অন্য হিংসুটে দেবতারা সাহায্য করত আপেপ কে। এরা হলেন-সেথ এবং বাসতেত।



আপেপ।

দেবতা রা-এর কপালে সূর্যচাকতি যা ঘিরে পবিত্র সাপ-গোখরা। এর কারণ সহজেই অনুমান করা যায়। দেবতাদের অধিপতি সূর্যদেবতা সাপকে ডরাবেন কেন-সাপ তো আমি কপালে রাখি!



ফারাও তুতানখামুন এর কপালে গোখরা। প্রাচীন মিশরের শাসকশ্রেণি- অর্থাৎ ফারাও দের সঙ্গে রা-এর সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত ঘনিষ্ট। এর অন্যতম কারণ হল- রা মহাবিশ্বের শাসক, ফারাও বিশ্বের। কাজেই দুজনের বৈশিষ্ট্য অভিন্ন। যে কারণে মর্তে রা-এর মিরর ইমেজ ছিলেন ফারাও । এই কারণেই প্রাচীন মিশরে ফারাও কে মানব-ঈশ্বর মনে করা হত।



প্রাচীন মিশরের প্রধান দেবতা রা-এর ক্ষমতা এক বিচিত্র উপায়ে রূপান্তরিত হয়েছিল।

এবার সে প্রসঙ্গে আসি।
বৃদ্ধ বয়েসে রা একবার সংঙ্কুচিত হয়ে যান। আইসিস তখন রা-এর লালা সংগ্রহ করে সেই লালাকে সাপে পরিনত করেন। (আইসিস ছিলেন মিশরীয় মাতৃদেবী। ওসিরিস এর বোন এবং স্ত্রী এবং হোরাস এর মা ...) রা যেখানে ঘুম থেকে ওঠে সেখানে সাপটিকে লুকিয়ে রাখেন আইসিস । রা পা দিলে সাপ রা-কে ছোবল। রা প্রচন্ড যন্ত্রনায় চিৎকার করে ওঠেন। মর্মান্তিক চিৎকার শুনে দেবতারা সব ছুটে আসেন। কিন্তু কেউই রা-এর ব্যথা কমাতে পারে না। তখন চতুর আইসিস বললেন, তুমি তোমার গুপ্ত নামের অর্থ আমাকে বল। তাহলে আমি তোমায় যাদুবলে সারিয়ে তুলব ... রা-এর ইচ্ছে ছিল না গুপ্ত নামের অর্থ বলার কিন্তু খুব যন্ত্রনা হচ্ছিল। নিরূপায় হয়ে রা তাঁর গুপ্ত নামের অর্থ বললেন। সে অর্থ জানতে পেরে আইসিস তাঁকে মন্ত্রবলে সারিয়ে তোলেন।
এর পর থেকে রা-র ঐশ্বরিক ক্ষমতা আইসিস এর হাতে চলে যায়।



আইসিস। বলা হয়েছে ...generally depicted wearing a cow's horns bearing a golden disk representing the sun. রা-র ঐশ্বরিক ক্ষমতা আইসিস এর হাতে চলে যায় বলেই সোনালি চাকতি আইসিসের মাথায় শোভা পায় ...প্রাচীন মিথ এমনই বিস্ময়কর।

রা-এর এরকম শক্তির রূপান্তর প্রাচীন মিশরে আরও একবার ঘটেছিল। যেমন আমুন ছিলেন মেমফিস এর (প্রাচীন মিশরের একটি স্থানের নাম) স্থানীয় উর্বরতার দেবতা। কালক্রমে সূর্যদেব রা এর সঙ্গে মিশে আমুন-রা হয়ে উঠেছিলেন আমুন ।



রা-এর প্রশংসা করে অজস্র গীত রচনা করা হয়েছিল প্রাচীন মিশরে।
পিরামিডের দেওয়ালে সেসব প্রশংসা-গীত লেখা রয়েছে। তারই একটি তে বলা হয়েছে -

প্রণতি তোমায়, যে তুমি রা রূপে উদিত হও দিগন্তে
হে, অনঢ় এবং অপরিবর্তনীয় বিধানের কর্তা
প্রতিটি চক্ষু আকাশপথে ভাসমান তোমায় দেখে
অবশ্য তুমি তাহাদের দৃষ্টি হইতে রহ অদৃশ
তাহাদের সাক্ষাৎ দান কর উষালগ্নে
সম্মানিত রা ভাসমান আলোর নৌকায় যায় ভেসে
রক্তিম এবং হলুদ রশ্মি ছড়ায় দিগদিগন্তরে
যে আলোককে জানা যায় না, এমনই অপার্থিব (সে আলোক)
যে তুমি দুর্নিবার অতিক্রম করো আকাশের আলোকময় পথ ...
দেবতাদের জন্মভূমি যে আলোকের প্লাবনে যায় ভেসে

ছবি: ইন্টারনেট।

তথ্যসূত্র:

http://www.egyptartsite.com/ra.html

http://www.touregypt.net/featurestories/re.htm

http://www.thenileandegypt.com/deities.html


সর্বশেষ এডিট : ০১ লা এপ্রিল, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:১২
৩১টি মন্তব্য ৩১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×