somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পরম্পরা

১৫ ই মে, ২০০৯ রাত ১১:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঝিঁঝিঁর ডাক শোনা যায় আলো পুরো পড়ে না যেতেই। শীতকালের বেলা ছোট। তাই কনকের মনটা খারাপ হয়ে যায়। সেজদা 'বসুমতী'র একটা পুরনো সংখ্যা নিয়ে এসেছে লাইব্রেরি থেকে। লুকিয়ে সেটাই দেখে। রান্নাঘরের পিছনে কিছুটা জংলা মত। পরিষ্কার করা হয় না। বিড়ালগুলো গুচ্চের কাটাকুটি এনে ফেলে। এখান থেকে কারো নজরে পড়বে না। কনক অনেকদিন ধরেই জায়গাটা বেছে নিয়েছে। মা খুব রাগ করে এসব বই ধরলে। অথচ কনক পড়তে ভালবাসে। সুর করে শ্লোক পড়ে, রামায়ণের। কত পাতা সে না দেখে আউড়ে যেতে পারে। কিন্তু ওভাবে পড়তে নেই । চান করে আসন নিয়ে বসতে হয়। এগুলো তো সাধারণ পদ্য না।


সামনের বছর কনক ক্লাশ ফাইভে উঠবে। তখন জলপাণি পাবে পরীক্ষায় বসলে। মেয়েদের স্কুল আছে রাঢ়ুলিতে। আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র দেবের মায়ের নামে । কনক সব খবর রাখে। তাঁর নাম ভুবনমোহিনী দেবী। খুব বিদূষী নারী, আর খুব সাহসী। ইংরেজদের রুখে দিয়েছিল। প্রফুল্লদেব মহাশয়ও বিরাট পন্ডিত। কিন্তু স্কুল কনকদের গ্রাম থেকে পাঁচক্রোশ। সেখানে কি রোজ হেঁটে যাওয়া যায়? কনক মনে মনে মধুসূদনকে বলে যেন ওদের বাড়িটা একটু করে এগিয়ে যায়, রাঢ়ুলির দিকে । কথামৃতে ঠাকুর বলেছেন সেই বালকের কথা--বললে মধুসূদন সব শোনে।


রাঢ়ুলির স্কুল! যেখানে মেয়েরা উচু উচু ক্লাশে পড়ে, কত কি জানে, স্কুলের আগে গান গায়, সেলাই শেখে । ঝাঁন্সি ব্রিগেডের নামও জানে কনক। যেখানে মেয়েরা দেশের নামে দস্তখত করে। কালি না, হাত কেটে রক্ত দিয়ে লেখা। উরিব্বাস কি সাহস। কনক কিন্তু শুধু পড়তে চায় এত এত বই। বিহারীলাল বাবুর পদ্য, ছোট ছোট কথিকা .. সবকিছু। যা পায় হাতের নাগালে । আচার্যদেব সেবার সভায় এসে কি কি বললেন, সেজদারা হাতে করে লিখে বিলি করেছিল। কনক দাদার টেবিলে পেয়ে তাও পড়েছে। কতবার পড়েছে ! কতকগুলো শব্দ মোটে চেনা ছিল, বাকিটা কিছুই বোঝেনি। তবু পড়ে। খুঁজে খুঁজে পড়ে। দুপুরে মা অতসী জেঠিমার কাছে যায়, পিসী জপ করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ে । মশা কামড়ায় খুব এখানে বসলে। তারপরও, এ জায়গাটাই আপাতত নিরাপদ। শীতকাল বলে সাপের ভয় কম। বেলা ছোট, তাও এটুকু সুবিধা আছে।


বসুমতীতে কনকের মন ভারি আটকায়। ছাপার অক্ষর, ফুল ফুল নকশার উপর কি সব নামী লেখকদের কথা থাকে .........। কনকের স্বপ্নজগতের মানুষ এরা। সবাই কলকাতার লেখক, সেখান থেকে বসুমতী আসে। আচ্ছা প্রকাশক লোকটা কে? কি তার কাজ ? সেজদা বলেছে ছাপার মেশিনে কালি থাকে। তাতে একদিক থেকে সাদা কাগজ দিলে অন্য দিক থেকে লেখা লেখা বইয়ের পাতা চলে আসে। সারারাত কাজ চলে। কারা যেন বসে আঠা লাগায়। তারপর লিস্টি মিলিয়ে চলে যায় শহরের বড়বড় মানুষদের বাসায়, কলেজে, সারাদেশের লাইব্রেরীতে । কনকদের মত গ্রামের লাইব্রেরিতে আসে সবার পরে।

লাইব্রেরীর বই ছোটদের হাতে আসে না, বড়রা পড়েন। জ্যাঠামশায়রা রোজ বই নিয়ে কথা বলেন। আসেন হেডমাস্টার, যোগীনাথ সেন তারপর অবিনাশ মাস্টারবাবু। প্রতিদিন সন্ধ্যায় যান ওনারা। তর্ক ও হয় খুব, কনক শুনেছে। সেজদা বলে আগে ছেলেদের যাওয়া বারণ ছিল, অবিনাশ স্যার আসার পর ওদের পড়ার জন্য খাতা খুলেছে। আর চাইলে লাইব্রেরীর দোচালা ঘরের বাইরে আসন বিছিয়েও পড়তে পারে। অবিনাশ মাস্টার মশায়কে সেজদারা অবিনাশ স্যার বলে কিন্তু উনি পড়ান কনকদের স্কুলে। উনি নাকি গান্ধীদেবের ভক্ত । গান্ধীদেব কে কনক জানে না , কিন্তু সেজদার কাছে ছবি দেখে অবাক। কেমন রোগা একটা মানুষ, কিন্তু নাকি অনেক সাহস তার। উনি খুব বড় মানুষ তাই কনক তাকে গান্ধীদেব বলে, দাদা বলেন গান্ধীজি।


চলবে..

(সদ্যপ্রয়াত পিতামহীকে নিয়ে স্মৃতিচারণের প্রচেষ্টায়----
ব্যাপারটা আমার জন্য সহজসাধ্য নয়। ঐতিহাসিক তথ্য সাথে গ্রামীণ জীবনের পটভূমি---যেকোন সাহায্য ও উপদেশ পেলে কৃতার্থ হব

শুরু করলাম যদি কখনো শেষ হয় .... )
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মে, ২০০৯ সকাল ১০:৩২
৯৪টি মন্তব্য ৯২টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×