প্রথমে একটি পুরোনো কৌতুক শোনাই।
এক কুখ্যাত ডাকাত মৃত্যুপথযাত্রী। অন্তিম মুহুর্তে তার পুত্রকে ডেকে বললো, বাবা সারা জীবন আমি অনেক পাপ করেছি। মানুষের উপর বর্বর আক্রমন করেছি। আমাকে সবাই খারাপ লোক বলেই জানে। মৃত্যুকালে আমার শেষ ইচ্ছে, তুমি জীবনে এমন কাজ করবে যেন অন্তত মৃতুর পর লোকে আমাকে ভালো বলে।
পিতৃভক্ত পুত্র পিতার শেষ ইচ্ছে পলনে বদ্ধপরিকর। পিতার মৃত্যুর পর পরই সে ডাকাত দলের নেতৃত্ব হাতে তুলে নেয়। এর পর বিপুল বিক্রমে চারদিকে ডাকাতি শুরু করে। ডাকাতির পর ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া, নিরীহ মানুষ হত্যা করা থেকে শুরু করে ধর্ষণ, অপহরণ হেন অপকর্ম নেই যে করে না।
গ্রামের লোকজন তখন বলতে শুরু করলো, এর চেয়েতো এর বাপটাই ভালো ছিলো। ডাকাতি করতো, তিšতু আমরা জানে বেঁচে যেতাম।
এবার আসি মূল প্রসঙ্গে।
সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর (র্যাব-পুলিশ) তথাকথিত ‘ক্রস ফায়ার’ গল্পে যখন মানুষ অতিষ্ট, এই অন্যায় বিচারবহির্ভুত হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে মুখর, তখন দেশজুড়ে শুরু হলো ‘গুপ্ত হত্যা’। সাদা পোশাকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে অপহরণ করে তুলে নিয়ে একের পর এক হত্যা শুরু হলো। সরকার বলছে এ বিষয়ে তারা কিছুই জানে না। এই গুপ্ত হত্যা সাধারন মানুষকে কতোটা আতঙ্কিত করে তুলেছে, তা আমাদের মন্ত্রী-আমলারা বুঝবেন না। কারণ সন্ত্রাসের এই জনপদে তারা নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা উপভোগ করেন।
আমার মতো সাধারন মানুষের আতঙ্কটা অনেক বেশি কারন আমি জানিনা, আজ অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পথে কোনো একটি সাদা মাইক্রোবাসে ঘাতক আমার জন্য অপেক্ষা করছে কিনা; মাথায় কালো কাপড়ের পট্টি বেঁধে মারধোর করে আমাকে তুলে নিয়ে যাবে কিনা; পরে কোথাও পথের পাশে করোটিতে গুলিবিদ্ধ আরেকটি লাশ উদ্ধারের সংবাদ পত্রিকায় ছাপা হবে কিনা। এবং কাউকেই এই হত্যার জন্য অভিযুক্ত করা যাবে না।
‘ক্রস ফায়ার’ আমলে অন্তত একটা বিষয় পরিষ্কার ছিলো, গ্রেপ্তার হওয়া লোকটি র্যাব বা পুলিশের গুলিতেই মারা গেছে। এতে কিছুটা হলেও সরকারের ও প্রশাসনের দায় থাকতো। অন্তত মানবাধিকার সংস্থাগুলো বিবৃতি-টিবৃতি দিতো, তথাকথিত সুশীলেরা কলাম লিখে পত্রিকার পাতা ভরাতেন.. ..কিন্তু এখন? এই গুপ্ত হত্যার দায় কেউ নিচ্ছে না, এবং এটি থামানোর ব্যপারেও কারো মাথা ব্যথা নেই।
কয়েক দিন ধওর বিষয়টি নিয়ে ভাবছি আর আতঙ্কের পাশাপাশি আমার মনে একটু কূট সন্দেহ উঁকি দিচ্ছে। এই গুপ্ত হত্যা ‘ক্রস ফায়ারকে’ জনপ্রিয় করার জন্য কোনো হীন কৌশল নয়তো? অন্তত মানুষ যেন ভাবে, এর চেয়ে ক্রস ফায়ারইতো অনেক ভালো ছিলো! ঠিক যেভাবে উপরে বলা কৌতুকটিতে ডাকাতের ছেলে তার পিতাকে মহান করে তুলেছে!