The most painful goodbyes are the ones that are never said and the never explained.
I am deeply sorry for your loss
Dear,
Mahamudul Hasan Chowdhury (Maidul)
প্রিয় মাইদুল,
এ চিঠি, এ লেখা তোর ঠিকানায় কোনদিন পৌছাবে না । তুই বিলিয়ন বছরের পৃথিবীর হারিয়ে যাওয়া মানুষদের সাথে মিশে গেলি । যেখান থেকে কেউ ফেরেনা । তুইও আর ফিরবি না । তোর হাইস্কুল মাঠের আড্ডা, মাদ্রাসা মাঠের আড্ডা, কলেজের পুুকুরে গোসল, ক্রিকেট, ফুটবল খেলা সব আজ স্মৃতি । ঢাকাতে তোর বড় বোনের বাসাতে, তোর আব্বুর কাছে, তোর ভাইয়ার কাছে আর ফিরবিনা তোর ল্যাপটপে আর তোর হাতের আংগুল পড়বেনা । বেতন পেয়ে তোর আব্বুকে টাকা পাঠাবি না । এমআইটিতে পিএইচডি করছে তোর ধীমান দাদা আমাকে ফোন দিয়েছিল । সে দুদিন আগে তোর সাথে কথা বলেছে । তুই এমআইটির কোন এক কনফারেন্সে বা ট্রেনিং এ আসার ইচ্ছা । তোর ঢাকার আপুর বাসাতে হাওরে যাবার আগে ভাত খেয়ে এসছিস সেটাও জানলাম । কিশোরগন্জের হাওর থেকে ফিরে তুই তোর কর্মস্থল ফুলবাড়ী, দিনাজপুরের অফিসে জয়েন করতি । কত কাজ করবার স্বপ্ন ছিল তোর, সেটা আর হলনা ।
সবাই বলছে তুই মারা গেছিস । আমি বলছি তোকে হত্যা করা হয়েছে । তোর নৌকা হাওরের পানিতে হেলে পড়া পল্লী বিদুৎের খুটির তারের সাথে লাগে । তোর পাচজন বন্ধু সেনচলেস হয় । তুই মারা যাস । পল্লী বিদুৎ নামক প্রতিষ্ঠানের গাফিলতিতে তোর মৃতু হল । হেলে পড়া খুটিতে বিদুৎের সন্চালন ছিল এটা পল্লী বিদুৎের বাবুরা চিহ্নিত করে একটা ব্যবস্থা নিতে পারতেন । কমছে কম একটা লাল পতাকা লাগিয়ে বিপদজনক হিসেবে চিহ্নিত করতে পারতেন । শুনলাম তোর মৃতুর সে একই জায়গাতে এর আগেও মারা গেছে । তবুও কতৃপখ্খের টনক নড়েনি । এদেশে লন্চে এক সাথে চারশ, পাচশ, একহাজার মানুষ মারা গেলে কারও কিছু যায় আসেনা । মৃত পরিবার কে একটি করে ছাগল কখনো দশ হাজার টাকা সন্মানী প্রদান করা হয় । তারপর বলা হয় আল্লার মাল আল্লাহ নিয়া গেছে । মাল থাকে মাটিতে আল্লাহ থাকেন আকাশে ।
কেউ কেউ বলছে হাওরে সন্ধার পরে থাকা নিষেধ । কিশোরগন্জের প্রশাসনের এমন আইন নাকি করা আছে । আমার প্রশ্ন এই আইন করা প্রশাসন কেন জানল না ওখানে একটা মৃতুর ফাদ আছে ? শুনি আমাদের দেশের এই প্রশাসন সবচেয়ে নাকি ভাল জানে কি করে তিনহাজার টাকার পর্দা তিনকোটি টাকায় কেনা যাবে ?
তুই যদি কোন মন্ত্রী হতি আজ তুই বেচে থাকতি । কিশোরগন্জের সরকারী হাসপাতালে তোর ময়না তদন্ত হতনা । তোর উদ্ধার অভিযান করতে তিনঘন্টা লাগত না । এয়ারএমবুলেন্স আসত । বিদেশের ডাক্তার আসত তারপর তোর চিকিৎসা হত সিংগাপুরের মাউন্টএলিজাবেদে । তোর মৃতু নিয়ে কথা বলতে, একজন জানতে চাইল তোরা নৌকায় কতজন ছিল ?
উওরে বল্লাম প্রায় ১৫ থেকে ১৭ জন । ওনি উওরে বল্ল আপনি সোবহান আল্লাহ বলেন । ১৫ বা ১৭ জনে মাত্র একজন মারা গেছে । পুরো পনের বা সতের জন মারা যায়নি ।
জানাশুনা সবাই তোর জান্নাত পাবার বিষয়ে দোয়া করছে । কেউ আমিন আমিন বলছে । আবার অনেকেই তোর মৃতুর সান্তনা পেয়েছে তুই নৌকাতে ছিলি ।
বাংলা বিখ্যাত প্রবাদ আছে যার মরন যেখানে নৌকা ভাড়া করে যায় সেখানে ।
তুই নৌকা ভাড়া করে মৃতুর কাছে গিয়েছিলি । হিসাব একদম বরাবর । এতে কারও কোন গাফিলতি নাই । মাঝে খবরে দেখলাম এক অন্ধ ব্যাক্তি ফুটপাত দিয়ে হাটতে গিয়ে ম্যানহোলে পড়ে মারা গেছে । তারপর সেই যে জিহাদ ছোট্ট ছেলেটা ঢাকাতে খোলা পাইপের মধ্যে পড়ে মারা গেল কতৃপখ্খ, সহ কতিপয় মানুষজন তখনো একই কথা বলছে মরন থাকলে সেখানে মরন হবেই ।
যদি উওরে বলিস পাইপের ভিতরে, লন্চে, বা তোর মত কিশোরগন্জের হাওরে বিদুৎের তার পেচিয়ে তো কোন মন্ত্রীর ছেলে, মেয়ে মরেনা কেন ?
তাহলে বলা হবে তুই নাস্তিক । তুই উন্নয়ন ব্যাহত করছিস । তুই মোসাদ, সিআইয়ের বাংলাদেশ শাখার এজেন্ট ।
আমার ফেসবুকের কত বন্ধুকে দেখেছি এই কিশোরগন্জের মিঠা মইন নিকলি হাওরের ছবি দিয়ে লিখেছে বাংলার সুইজারল্যান্ড । কিন্তু এই সুইজারল্যান্ডে যে কত কত মৃতুফাদ আছে সেখানে কত নিরীহ মাইদুলদের প্রান সংহার হয় তা কেউ লেখেনি । জানিনা তোর বন্ধুরা যারা সেই নৌকা থেকে বেচে ফিরেছে তারা একটি হত্যা মামলা দায়ের করবে কি না ? মামলা দায়ের হোক বা না হোক এটা তোকে হত্যা করা হয়েছে ।
পৃথিবীর কোন সভ্য দেশ হলে এটার বিচার হত
।