somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সদরুল

২৮ শে জুন, ২০২১ সকাল ৯:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কিছু কিছু টিনের চালের ঢেউয়ের শেষ অংশ গুলোতে জং ধরেছে । টিনগুলো কতকাল রোদ বৃষ্টিকে আগলে রেখেছে কে তার খবর রেখেছে । ঘেরা দেয়া কাঠের বেড়া গুলোর দু একটি খুলে পড়ে গেছে । চৌকাঠের নীচের ইটের গাথুনীতে গুলোতে মসৃন গর্ত হয়েছে । নড়বড়ে দুটো দরজা কোনরকমে আটকে আছে । এক সময়ের ব্যস্ত ঘরটা এখন পতিত ঘর হয়েছে । লম্বালম্বি ঘরটার একদিকে এক খানা চকি বিছানো । ঘরটির সামনে বড় উঠান বা খুলি। অগ্রহায়ন মাসে ধানের কাটামারি শুরু হয় । কাটামারীর ধানের আটি গুলোকে পুন্জ আকারে গোল গোল করে বিশাল উঠানে রাখা হয় । মিয়ার বাড়ীর ছোট ছোট বাচ্চা কাচ্চারা এই পুন্জের উপর চড়ে দিনে রাতে লাফ ঝাফ করে ।কাটামারির সময় কামলা কিষানরা এই ঘরে বসে জিড়ায়, বিড়ি টানে, দুপুরের খাবার খায় । হঠাৎ বৃষ্টি এলে ছাগল ভেড়া মুরগী ঘরটাতে উঠে সামান্য স্বস্তি খোজে । ভাদ্র মাসের রাতের গরমে বাড়ীর কিষানরা মাঝে মাঝে ওই বিছানো চকিতে বিছানা পাতে ।


এক সময়ের ঘরটি যেন কালের সাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে আছে । ঘরটিকে সবাই বলে খানকা ঘর। বাড়ীতে অজানা অচেনা আগুন্তুক এলে তাকে এই খানকা ঘরে থাকতে দেয়া হত । শেষ কবে আগুন্তুক এসেছিল তা বোধহয় আর কারও মনে হয় । পাতিলের ভাতে যখন টান পড়েছে, এক ঘর ভেংগে পাচ ঘর হয়েছে তখন আগুন্তুক আসাও কমে গেছে । আগুন্তুকের জন্য ভাগ হওয়া পাচ ঘরের কোন রাধুনী গরম ভাত তরকারী রান্না করে খাওয়াবে । পাতিল আলাদা, জীবন আলাদা ।

এই খানকা ঘরেই বিচার বসেছে । বাশটাতে বহুদিনের মাকড়ষাড় জাল ছিল সাথে জমে থাকা কতকালের ধুলোবালি ময়লা, দড়ি বাধতে গিয়ে বাশ খানিকটা পরিস্কার হয়েছে । বাশে হাত উচু করে হাত বাধা সাইদার । শাড়ীর আচল যেন খশে না পড়ে, তাই একজন বৃদ্ধা মহিলা আচল টাকে ঘুরিয়ে সা্ইদার কোমরে ঢুকিয়ে দিয়েছে । বিচারের জন্য গ্রামের গন্যমান্যরা উপস্থিত । বেশির ভাগ ছোট ছোট বাচ্চাদের কে থাকতে দেয়া হচ্ছেনা এই বিচারে । সদরুল এক চিপায় ঢুকে বসে পড়ল । সেই চিপা দিয়ে মাথা বের করে হা করে তাকিয়ে থাকল । ধলাবাবুর কথা মনে হতেই সদরুল ইতি উতি তাকিয়ে ধলাবাবুকে খুজছিল । কেননা ধলা বাবুই বলেছিল খানকাত বিচার বসছে হাট দেখিয়া আসি ।

সদরুলের এবারে চোখ পড়ল সাইদার উপরে । সাইদার হাত উচু করে বাধা । নিশ্বাসের সাথে বুক উঠা নামা করছে । অনন্তকাল ধরে সাইদা যেন মাটির দিকে তাকিয়ে আছে । সাইদা কে সদরুল বুবু বলে ডাকে । সাইদার ভাই জাবেদ আলী সদুরুলের খেলার সাথী । সদরুল কারও কাছে জানার ইচ্ছা কেন তাকে বাধা হয়েছে কিন্তু বলতে সাহস হচ্ছে না । যদি কেউ আবার বলে এই ছল যাও এটে থাকিয়া । তুই কি বুঝিস ইগলা বিচারের । সাইদা এবার ঘাড় কাত করে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদতে শুরু করল । সদরুলের বড় মেয়েদের কান্না দেখতে ভাল লাগে । কেন ভাল লাগে সদরুল জানেনা । শরীরে শিড় শিড়ানী অনুভুত হয় ।

জাবেদ আলীর বাড়ী পাশেই । জাবেদ আলীর বাড়িতে বহুবার গেছে সদরুল । দুটো বেড়ার ঘর । একটাতে রান্না হয় । আর একটাতে গরু ছাগল জাবেদ আলী ওর মা বোন সবাই থাকে । জাবেদ আলীর আম্মা সদরুলের নানীদের ফাই ফরমায়েশ খাটে সাথে সাইদাও থাকে । কাটামারির সময় সারাদিন কাজ করে । সে্ই জাবেদ আলীর বোনকে এভাবে কেন বাশের সাথে টাংগিয়ে রাখা হবে সদরুলের মাথায় ঢুকল না । এরমাঝে একজন মুরুব্বি উঠে দাড়িয়ে বল্ল তাহালে এই নটি মাগির কি করবেন আপনারা ? এক কি গ্রাম ছাড়া করবেন ? এই তো গ্রাম নষ্ট করবে । গ্রামের সগ যুবক ছেলে পেলেক নষ্ট করবে ।

কোথা থেকে জাবেদ আলীর মা এসে সেই দাড়ানো মুরুব্বির পা ধরল । এবারের মত ওক এলা মাফ করে দেও । দাড়ানো মুরুব্বি এই পাও ছাড় পাও ছাড় বলে চিৎকার দিলে জাবেদ আলীর আম্মা পা ছেড়ে দিল । ছেড়ে দিয়ে বলল -
মুই দায়িত্ব নিতিচো । সাইদা আর খারাপ কাম করবা নয় । এরপরে করলে তোমরা যেই শাস্তি দিবা সেটাই হবি সেটাই মানি নেম ।
দাড়ানো মুরুব্বি বসে থাকা মুরুব্বিদের বললেন তাহলে আপনারা কি কন ?
বসে থাকা মুরুব্বিরা একজন বলল ওর পাছাত আগে শপাত শপাত করে হাকাও ।
বলা মাত্র একজন সাইদার পাছায় ডাল দিয়ে শপাং শপাং করে মারতে লাগল ।
সাইদা ও মা রে ও বাবারে বলে চিৎকার করতে লাগল । সাথে তার পশ্চাদদেশ এদিক সেদিক ঘোরাতে লাগল ।

বসে থাকা মুরুব্বীদের একজন হাতের ইশারা দিয়ে মার থামাতে বলে উপরের সাইদা হাতের দড়ি খুলে দিতে বল্ল । তারপর বল্ল তুই মাটিতে ছ্যাপ ফেলা তারপর সেই ছ্যাপ চাট । সাথে নাক ছ্যাছরা দে । সাইদার হাত খূলে দেয়া মাত্র সাইদা হাত দিয়ে তার পশ্চাদদেশে নাড়তে লাগল । তারপর মাটিতে থু থু ফেলে আবার সেটা নিজেই চেটে খেল । তারপর মাটিতে সিজদা দেবার মত করে নাক নাক ছ্যাছরা দিল । বসে থাকা মুরুব্বিদের একজন বল্ল আবার যদি শুনি তোর এই আকাম কুকাম তাহলে তোর চামড়া ছিলে লবন লাগাবো সাথে গ্রাম ছাড়া করবো হারামজাদী । সাইদাকে নিয়ে সাইদার আম্মা চলে গেল । আস্তে আস্তে মুরুব্বিরা চলে গেল সাথে বিচার শেষ হল ।

সদরুলের মনে হল জাবেদ আলীর সাথে দেখা করা দরকার বিষয়টা বোঝার জন্য । জাবেদ আলীর বোন সাইদা কি খারাপ কাজ করছে এটা জানার জন্য । এরিমাঝে কোথা থেকে ধলাবাবু এসে খবর দিল ইটের ভাটাত হাট ওটে বলে মরা ছল বাড়াছে । সদরুল ধলাবাবু মিলে ইটের ভাটার দিকে দৌড় । দৌড় শুরু করতেই এল ঝম ঝম বৃষ্টি ।
ইটের ভাটাতে সদরুল ধলাবাবুর আগেই আরও সবাই এসেছে । কেউ কেউ কাচা কন্চি দিয়ে মৃত নবজাতকের উপরের মাটি সরাচ্ছে । সদরুল একটা লাঠী দিয়ে পুরো মাটি সরাতেই বৃষ্টির তোড়ে মৃত নবজাতকের মুখের মাটি সরে গেল । বড় রাস্তার পাশে পতিত ইটের ভাটাতে কেউ কেন নবজাতক মৃত শিশুকে ফেলে যাবে কে জানে ?
পুরো গ্রাম চাউর হল মৃত নবজাতকের খবর । আরও বিভিন্ন মানুষজন চলে এল ।
কেউ কেউ বলতে লাগল মানষের বেবেক নাইও মানষের সীমারের কলজা । মানষের পাপের ভয় না্ই । একজন মুরুব্বী সদরুল, ধলাবাবু, হাছিুনর, হান্নান, চ্যাংটু, সহ সবার দিকে তাকিয়ে বল্ল এ ছলেরা তোরা নদীত যায়া সাবান দিয়া গাও পাও ধুয়া বাড়ীত ঢোকেন ।

চলবে
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুন, ২০২১ সকাল ৯:৫৯
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×