somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ওয়ালেটঃ মানবতা ও ভালোবাসার ছোঁয়ায় রচিত একটি হৃদয়স্পর্শী উপন্যাস

২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



Love and compassion are necessities, not luxuries. Without them humanity cannot survive.
তিব্বতের ধর্মীয় নেতা দালাই লামার উপরোক্ত উদ্ধৃতির সার্থক প্রতিফলন ঘটেছে ব্লগার ও লেখক মাটিরময়না'র প্রথম উপন্যাস ‘ওয়ালেট’ এ। মানবতা ও ভালোবাসার ছোঁয়ায় রচিত একটা হৃদয়স্পর্শী উপন্যাস। সাধারণ চোখে ওয়ালেট মানে শুধুই একটা মানিব্যাগ। যার মধ্যে টাকা পয়সা, ব্যাংক কার্ড, ভিজিটিং কার্ড, চিরকুট, প্রিয় কোন মুখের ছবি ইত্যাদি স্থান পায়। কিন্তু মাটিরময়না'র দূরদৃষ্টি আরও বহুদূর প্রসারিত হয়েছে। যেখানে ওয়ালেট এবং জীবনকে এক সুতোয় গেঁথে দিয়েছে সে। তার উপলব্ধির অন্তর্নিহিত তাৎপর্য অনুধাবন করা যায় উপন্যাসের নিচের কথাগুলোতে।

“জীবন বড়ই অদ্ভুত! পুরো জীবনটাই যেন একটা ওয়ালেট। একেকটা খোপে একেকটা জীবন। এক খোপে আমি, অন্য খোপগুলোতে আছে জহির আব্বাস, আলমসহ হাজারো কোটি মানুষ। কিন্তু কী আশ্চর্যের ব্যাপার, আমরা পাশাপাশি খোপে থেকেও জানি না অন্য খোপের অবস্থা। আমি শুধু আমার খোপে থেকে দেখতে চেয়েছিলাম অন্য খোপের বেঁচে থাকা, ভাগ করে নিতে চেয়েছি সামান্য কিছু সুখ দুঃখ।”

অ্যামেরিকার বিখ্যাত লেখক Nicholas Sparks এর A Walk to Remember বইয়ে লিখেছেন, “Love is always patient and kind. It is never jealous. Love is never boastful or conceited. It is never rude or selfish. It does not take offense and is not resentful. Love takes no pleasure in other people’s sins, but delights in the truth. It is always ready to excuse, to trust, to hope, and to endure whatever comes.” বইয়ে উদ্ধৃত করা ওপরের শাশ্বত কথাগুলোরই অনুরণন অনুভব করা যায় উপন্যাসটির জহির আব্বাস এবং মমতা বেগমের প্রেমের ইতিকথায়। মমতা বেগমের স্বল্প উপস্থিতি জহির আব্বাসের সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার কারণে পাঠক হয়তো মমতা বেগমকে খোঁজার চেষ্টাই করবে না। তবে সহজে প্রশ্ন জাগতে পারে মানবতার অবস্থানটা তাহলে কোথায়। এর উত্তর নিপুন ভাবে ‘হিমেল’ চরিত্রে সেঁটে দিয়েছেন উপন্যাসিক অত্যন্ত দক্ষভাবে। পুরো উপন্যাস জুড়ে সেটা দৃঢ়ভাবে দৃশ্যপটে ভেসে উঠবে বিভিন্ন ঘটনাচক্রের মধ্য দিয়ে। যা আবর্তিত হয়েছে কুঁড়ে পাওয়া একটা ওয়ালেট এর ভিতর সযত্নে রাখা একটা চিরকুটকে ঘিরে।

চরিত্রের আধিক্য যেমন নেই, তেমনি বাহুল্য কোন চরিত্রও উপন্যাসটিতে স্থান পায়নি। ফলে হিমেল, জহির আব্বাস, মমতা এবং রূপা চরিত্রের পাশেও রিকশাওয়ালা আলম, ঈগলমানব তানভীর ইসলাম ও সোবহান মিস্ত্রী, বই দোকানদার ফরিদ, ওল্ড এইজ হোমের কর্মচারী করিম উল্লাহ, দুবাই ফেরত চা দোকানদার কফিল মিয়াঁ এবং হিমেলে'র মামা ইউনুস আহমেদ এর উপস্থিতি একটুও ম্লান হয়ে রূপায়িত হয় নাই। মানবতা আর ভালোবাসার ছোঁয়ায় ওল্ড এইজ হোমের করিম উল্লাহকে এবং ঈগলমানব তানভীর ইসলামকে শুদ্ধ মানুষ হয়ে উঠতে যেমন দেখা যাবে, তেমনি রিকশাওয়ালা আলমকে অশ্রুসিক্ত নয়নেও আবিষ্কার করা যাবে।

প্রেমের জন্য ইতিহাসের পাতায় বিখ্যাত হয়ে আছেন William Shakespeare এর কালজয়ী ট্র্যাজেডি “Romeo and Juliet” এর Romeo এবং Juliet, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ অনিন্দ্য সুন্দরী মিসরীয় ক্লিওপেট্রা এবং তাঁর প্রধান সেনাপতি মার্ক এন্টোনি, ইংরেজ কিং আর্থার এর স্ত্রী রাণী গুইনেভারা এবং ইংরেজ রাজ্যের একজন বীর নাইট স্যার ল্যাঞ্ছলট, কালজয়ী গ্রীকলেখক হোমারের জগৎবিখ্যাত এপিক “ইলিয়াড” এর প্যারিস এবং হেলেন, আরব্য উপন্যাসের লায়লা এবং মজনু, পার্সিয়ান প্রেম কাহিনী শিরি-ফরহাদ, রামায়ণের রাম-সীতা, শরৎচন্দ্রের দেবদাস-পার্বতী, রবি ঠাকুরের ‘শেষের কবিতা’র অমিত-লাবণ্য সহ আরও অনেক নাম। এখানে সবাই নিজ নিজ প্রেমের কারণেই মহিমান্বিত। কিন্তু ‘ওয়ালেট’ এর হিমেল নিজের প্রেম রুপাকে উপেক্ষা করে পঁয়ত্রিশ বছর বিচ্ছিন থাকা জহির আব্বাস আর মমতা বেগমের প্রেমকে যুগলবন্দী করেছে। হিমেলে'র এই মানবিকতাকে আমি কীভাবে বিশেষায়িত করবো জানি না। Nicholas Sparks এর একটা উক্তিতে বিশেষণ খুঁজে না পেলেও হিমেলে'র ভালোবাসার মর্মোদ্ধার করা যায় সহজেই। তিনি বলেছেন, “Love is like the wind, you can't see it but you can feel it.”

প্রমিত চলতি রীতিতে লেখা উপন্যাসটিতে কিছু সংলাপে আঞ্চলিক কথ্য রীতির সংমিশ্রণ আলাদা একটা প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। উপলব্ধি ও চিন্তার বিকাশে মূর্ত এবং বিমূর্ত ভাবের সন্নিবেশ পাঠককে মোহমুগ্ধ করে রাখবে বলে আমার বিশ্বাস। কথক এখানে নামপুরুষ বলে লেখক কথনে অনেক স্বাধীনতা পেয়েছেন, যা পাঠকের জন্য বেশ উপভোগ্য হয়ে উঠেছে। কাহিনী বিন্যাসে লেখকের মুন্সিয়ানা পাঠককে মন্ত্রমুগ্ধের মতো পাঠে ধরে রাখবে। শেষ না করে উঠার যেন কোন উপায় থাকবে না। বাক্য গঠনে সাবলীলতা মাধুর্য ছড়িয়ে রেখেছে পুরো উপন্যাস জুড়ে। শব্দ চয়নে প্রাঞ্জলতা তাতে যেন আবির মাখিয়ে দিয়েছে। উপন্যাসের টুইস্টগুলো খুব সূক্ষ্মভাবে ধরা দিয়েছে। মনোযোগী পাঠে নিঃসন্দেহে সেগুলো পাঠকের দৃষ্টিগোচর হবে। তবে ক্লাইম্যাক্স টের পেতে কোন ধরণের বেগ পেতে হবে না। রবি ঠাকুরের গানের বা কবিতার অংশ বিশেষগুলো মাঝে মাঝেই আমাদের উদাসীন করে দিতে পারে। ভাবনার বিস্তৃতিকে প্রভাবিত করতে পারে। চাতুর্যপূর্ণ বুদ্ধিমত্তায় মাঝে মাঝেই কিছু লাফটারের ডেলিভারি দিয়েছে। ফলে পঠনে কোন একগুঁয়েমির শিকার হতে হবে না বলেই আমার বিশ্বাস।

শব্দের সাথে খেলাচ্ছলেই একদিন কবিতার বৃত্তে আবদ্ধ হয়ে পড়েছিল মাটিরময়না। কিন্তু সৃজনশীলতা যার মননে, তাকে কি কেউ বৃত্তবন্দী করে রাখতে পারে? তাই সহজেই কবিতার বৃত্ত ভেঙে বেড়িয়ে এসে পাঠকের হাতে তুলে দিচ্ছেন তার প্রথম উপন্যাস ‘ওয়ালেট’। কী এমন মন যাদু ছিল ওয়ালেটের ভিতরের ঐ চিরকুটটাতে, যাকে ঘিরে একটা উপন্যাসের সৃষ্টি হল? কিংব ঈগলমানবই কী? জানতে আগ্রহীদের অবশ্যই উপন্যাসটিতে চোখ বুলাতে হবে। আশা করছি পাঠকের ক্ষুধা নিবৃত করতে সক্ষম হবে।

বইটি সম্বন্ধে সংক্ষেপেঃ
বইয়ের নামঃ ওয়ালেট
লেখকঃ মাটিরময়না
প্রচ্ছদঃ মোস্তাফিজ কারিগর
প্রকাশকঃ এক রঙা এক ঘুড়ি
প্রাপ্তিস্থানঃ লিটল ম্যাগ চত্বরে এক রঙা এক ঘুড়ির স্টল এবং মূল মেলায় শ্রাবণ প্রকাশনীর স্টল
মূল্যঃ এখনো নির্ধারণ করা হয় নাই
বইয়ের ধরণঃ উপন্যাস
ব্লগ লিংকঃ মাটিরময়না

সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ২:১৪
৩১টি মন্তব্য ৩১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×