প্রচন্ড চীৎকারের সাথে ঘুমটা ভেঙ্গে গেল অন্তুর। সারা গা ঘামে ভিজে জবজবে। মাথার উপরে পূর্ন গতিতে ঘুরছে বৈদুতিন পাখা! তবু ঘেমে নেয়ে এক সা’।
বেশ ক’ মাস হলো ঘটনাগুলো ঘটছে। সে যেন আর নিজের মাঝে নিজে থাকে না। বিশেষ করে ঘুমিয়ে পড়লে। স্বপ্নের সিকুয়াল হয় কিনা জানা নেই। তবে তার জীবনে যেন তাই ঘটছে। আগের রাতে দেখা স্বপ্নের শেষে থেকেই পরের রাতে স্বপ্ন শুরু হয়।
প্রথম প্রথম বেশ মজা লাগছিল। কিন্তু যত দিন যাচ্ছে কেমন যেন এক অদৃশ জগতে ক্রমশ জড়িয়ে যাচ্ছে মনে হলো। তাই এখন এড়াতে চায়। কিন্তু পারে না। এই যেমন গতকালই প্রায় হন্তদন্ত হয়ে দৌড়ে এলো আমার রুমে। বসতে বলেই আগে এক গ্লাস ঠান্ডা পানি দিলাম। ধীরে সুস্থে খেয়ে নে। পরে শুনছি। অন্তু এক নি:শ্বাসে ঢক ঢক করে খেয়ে নিল জল । নিরবে চেয়ে রইলাম। খানিকটা সুস্থির হয়েই বলা শুরু করলো -
একটা নৌকা। অনেক উঁচু। নীচে তাকালে ভয় করে এতটা গভীর। অথচ নদী বা সাগর যাই হোক সুগভীর তলদেশ পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে। নৌকাটার কিনার থেকে ভয় পেয়ে সরে আসি । তখনই এক অদ্ভুত দর্শন জীবের সাথে দেখা। কেমন বিভৎস! এটাই কি শয়তান! ইন্দ্রিয়গুলো আপনাতেই সতর্ক হয়ে ওঠে। গায়ের রোম গুলো কাটা দিয়ে ওঠে।
ঠিক তখনই ঝাপিয়ে পড়ে শয়তানটা।
এ এক অসম অদ্ভুত যুদ্ধ। কোত্থেকে যেন হাতে একটা তরবারী চলে আসে। প্রাণপণে লড়ে যাই। কিন্তু শয়তানটা ভারী অদ্ভুত ক্ষমতাধর। মাথা কেটে ফেললে আবার মাথা তুলে লাগিয়ে নেয়। ঠিক হয়ে যায়! দম আটকে আসা অসম লড়াই চলছে।
নৌকোটার কিনারে একবার বাগে পেয়ে গেলাম। শরীরের সমস্ত শক্তি এক করে দিলাম কোপ। পুরো দেহটা দ্বি-খন্ডিত হয়ে নীচে পড়ছে। যাক বাবা! বাঁচা গেল ভেবে স্বস্তির নি:শ্বাস ফেলার আগেই দেখি নৌকার কিনারে শুন্যে দাড়িয়ে ভাসমান শয়তান, বিটকেলে হাসি হাসছে!
হঠাৎ একটা আলোর ঝলকানিতে যেন সব অদ্ভুত ভাবে বদলে গেল! চেতনার জগতে বিস্ময়কর আলোড়নের সাথে সাথে অবাক হয়ে দেখি নিজের দেহের ভেতরে নিজের হাত ঢুকে যাচ্ছে! একদম পেটের গভীরে গিয়ে নিজের নাভিমূলটা যেন ছিড়ে নিয়ে আসতে চাইছে।
অদ্ভুত ভয় আর আতংক মনে। কিন্তু সবচে অবাক বিষয় পুরো ঘটনায় কোন ব্যাথার অনুভব নেই । এক সময় নিজেই চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে দেখি আমার হাতেই ঝুলছে আমার নাভিমূল! নৌকার কিনারায় পাটাতনে শোয়াতেই শয়তানের চেহারা বিস্ময়কর ভাবে বদলে যেতে লাগলো।
আমি কি করতে যাচ্ছি সে যেন বুঝে ফেলেছে। তার চেহারায় আতংক। যেন শক্তিহীন আকুলতা চোখে। না না । তুমি এটা করো না।
ঠিক তখনই গায়ে যেন অসুরের বল এলো। চকচকে ধারালো তরবারীটা একহাতে তুলে ধরে এক কোপে কেটে দিলাম নাভিমূল! সংগে সংগে ঘটলো অবাক ঘটনা। শয়তান নীচে পড়ছে তো পড়ছেই ! পড়তে পড়তে পড়তে... একদম অতলে যেন হারিয়ে গেল!
সারা দেহ আবার আগের অবস্থায় ফিরে এলো। আহ! কি প্রশান্তি- অনুভবের সাথে সাথে দু’চোখ বিস্ময়ে বড় হয়ে গেল। কল কল শব্দে জোয়ারের জলে ভরে উঠছে শুকনো সাগর! পলকে থই থই জলে ভাসতে লাগলো নৌকা!
প্রশান্তির শীতল এক মৃদু মন্দ বাতাস জুড়িয়ে দিলো গা। পালে সেই হালকা বাতাস লাগতেই গতি বাড়ছে তরতর করে। এক অদ্ভুত জগতে ঢুকে যাচ্ছি। দুই দিকেই যেন দুয়ার খোলা। মহাবিশ্বের বহুমাত্রিকতার বহু দুয়ারের সারি যেন।
দুই দুয়ারীর মাঝ দিয়ে বয়ে চলছে -দেহের এ নৌকা খানি।
(স্বপ্ন সংহিতা - ছোট গল্প সিরিজ । প্রতি পর্বে ভিন্ন ভিন্ন ছোট গল্প থাকবে।
স্বপ্নের কথকতা। স্বপ্ন। ভাবনা। সব মিলিয়ে চলবে সিরিজ যদি পাঠক পছন্দ করেন।)
ছবি কৃতজ্ঞতা: গুগল
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১:১০