somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

'৭১ সালে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধে অভিযুক্তরা

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১০ রাত ২:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৯৭১ সালে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী সরাসরি কোনো রাজনৈতিক দলের সমর্থক না হলেও মাওলানা হিসেবে পিরোজপুর এলাকায় ‘পাঁচ তহবিল’ নামে একটি সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন। যাদের প্রধান কাজ ছিল মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিকামী বাঙালি এবং হিন্দুদের বাড়িঘর দখল এবং তাদের সম্পত্তি লুট করা। লুণ্ঠনকৃত সম্পদ গনিমতের মাল হিসেবে নিজে ভোগ করেছেন এবং পাড়েরহাটে লুটের মাল বিক্রির জন্য দোকানও খুলে ছিলেন। এছাড়াও তিনি লুটের আসবাবপত্র দিয়ে শ্বশুরকে ঘরও তুলে দিয়ে ছিলেন।

বর্তমানে জামায়াতের নির্বাহী সদস্য আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী পিরোজপুর জেলার তৎকালীন ইন্দুরকানীর (জিয়ানগর) সাউথখালী গ্রামে ১৯৪০ সালের ২ ফেব্র“য়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মরহুম ইউসুফ আলী শিকদারের ছেলেকে ‘দেউল্লা’ নামে সকলে চিনত। সংসার চালানোর জন্য পাড়েরহাটে তার একটি ছোট মুদি দোকান থাকলেও তিনি মূলত তাবিজ বিক্রি করতেন বলে স্থানীয় জনগণ, মুক্তিযোদ্ধা, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যসহ মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখা বিভিন্ন বই থেকে জানা গেছে।

জানা যায়, ১৯৭১ সালের ৬ মে পিরোজপুর থানার সামনে থেকে সাঈদীর সহযোগীরা লেখক হুমায়ূন আহমেদের বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদকে ধরে নিয়ে যায় বালেশ্বর নদীর পাড়ে। সেখান থেকে তিনি আর ফিরে আসেননি। ৭ মে আবার তাদের বাসায় সাঈদীর নেতৃত্বে লুটপাট হয়। পাকিস্তান বাহিনীর ক্যাপ্টেন আজিজের সঙ্গে তার সম্পর্ক থাকায় বিভিন্ন সময় জোর করে নারীদের পাঠানো হতো পাকিস্তানি ক্যাম্পে। ‘পাঁচ তহবিলে’র সদস্যরা হলেন, দানেশ মোল্লা, মোছলেম মাওলানা, আব্দুল করিম, আজাহার তালুকদার ও সেকান্দার।

মুক্তিযুদ্ধের সময়ে সাঈদীর অপকর্ম সম্পর্কে মানিক পশারী বলেন, একাত্তরে সালের ৮ মে সাঈদী আমার চোখের সামনে ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। টাকা-পয়সা সব কিছু লুটে নিয়েছে। এসময় তিনি তার ঘরের পোড়া অংশ এবং টিনের গায়ে লেগে থাকা গুলির চিহ্ন দেখান। তারা যখন এই কাণ্ড ঘটিয়েছে তখন সাঈদী নিজে দাঁড়িয়ে থেকে এই তাণ্ডবে উৎসাহ দিয়েছেন।

মুক্তিযোদ্ধা মাহাবুবুল আলম জানান, ১৯৭১ সালে এরা পাড়েরহাট বন্দরের ব্যবসায়ী বেনিমাধব সাহা, নগরবাসী সাহা, তারক সাহা এবং উমিতপুর গ্রামের হিন্দু পাড়ার চিত্তরঞ্জন তালুকদার, রবি তালুকদারসহ আরো অনেকের বাড়ি লুট করেছিল। এরাই বিনা বালীকে একাত্তরের ৪ জুন নারকেল গাছের সঙ্গে বেঁধে হত্যা করেছে।

পিরোজপুর জেলা সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার গৌতমনারায়ণ রায়চৌধুরী বলেন, বিএনপি আমলে সাঈদী যুদ্ধাপরাধী নয় মর্মে স্বাক্ষর অভিযান শুরু করেছিল। আমি তখন মাইকিংয়ের ব্যবস্থা করেছিলাম যাতে কেউ স্বাক্ষর না করে। এ বিষয়ে পিরোজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা একেএমএ আউয়াল বলেন, সাঈদী যে যুদ্ধাপরাধী এর অনেক প্রমাণ আছে। জিয়ানগরের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, যুদ্ধকালীন সময় এই সাঈদী ছিল দেলোয়ার শিকদার।

মানিক পশারী পিরোজপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রফিকুল ইসলামের আদালতে হত্যা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের অভিযোগ এনে ১৩৫/০৯ নং ধারা ৩০২, ৩৮০, ৪৩৬ ও ৩৪ নং মামলা দায়ের করেছেন। এই মামলার প্রধান আসামি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। অন্য তিন আসামি হলেন, মো. মহসীন, মমিন হাওলাদার ও হাকিম ক্বারী। মামলার এজাহারে বলা হয়, বাদুরার ইব্রাহিম হাওলাদারকে ধরে হানাদার ক্যাম্পে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা অভিযোগ রয়েছে। এদিকে জিয়ানগর থানায় অনুরূপ আর একটি মামলা দায়ের করেছেন মুক্তিযোদ্ধা মো. মাহাবুবুল হাওলাদার। এই মামলার প্রধান আসামিও দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। অন্য তিনজন হলেনÑ তার সহযোগী হিসেবে উল্লেখিত মো. হাবীবুর রহমান মুনসি, মো. মোস্তফা হাসান সাঈদী ও মাওলানা মোসলেউদ্দিন।

১৯৭১ সালের ১৯ ডিসেম্বর দেলোয়ার শিকদার পিরোজপুর থেকে পালিয়ে যান। ১৯৮৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত তিনি পলাতক ছিলেন।

বি.দ্র: একাত্তরের যুদ্ধাপরাধ এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, একাত্তরের ঘাতক দালালদের অতীত বর্তমান গ্রন্থ এবং স্থানীয় জনগণ, মুক্তিযোদ্ধা ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সঙ্গে আলাচ চারিতার মাধ্যমে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।



সূর্যমনি ও বাড়ইবাড়ি গণহত্যার নায়ক আব্দুল জব্বার ইঞ্জিনিয়ার

মহাজোটের শরীক এরশাদের জাতীয় পার্টির সহসভাপতি আব্দুল জব্বার ইঞ্জিনিয়ার ১৯৭১ সালে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া থানার শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন । মুক্তিযুদ্ধের সময় ৬ সেপ্টেম্বর তারই নির্দেশে তার মামাশশুর রাজাকার কমান্ডার বর্তমানে টিকিকাটা ইউপি চেয়ারম্যান ইস্কান্দার মৃধা, মুকুল বাদশা, রুহুল মৃধা ও আনসার খলিফার নেতৃত্বে ২৫/৩০ জনের রাজাকার বাহিনী উপজেলার আঙ্গুলকাটা গ্রামের মিত্র বাড়িতে অভিযান চালায়। এ সময়ে তারা ৩৭ জনকে ধরে সূর্যমনি বেড়িবাধে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে। এতে ঘটনা স্হলেই ২৫ জন নিহত হন।

১৯৬৬ সালে যশোর বোর্ডের এস.এস.সি. পরীক্ষায় প্রথম স্হান অধিকারী ছাত্র গনপতি হালদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিরেন, ভিপি আনোয়ারুল কাদির, জিয়াউজ্জামান, গোলাম মোস্তফা, অমল, শ্যাম ব্যাপারী ও আব্দুল মালেক হত্যার মুল পরিকল্পনাকারী ছিলেন জব্বার ইঞ্জিনিয়ার। এলাকায় বসেই তিনি রাজাকার বাহিনী সংগঠিত করার নেতৃত্ব দেন। তার নির্দেশেই মঠবাড়িয়ায় মেধাবী ছাত্র ও হিন্দুদের হত্যাসহ সব ধরনের লুটপাটের ঘটনা ঘটে। স্হানীয় মানুষ, মুক্তিযোদ্ধা ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার সূত্রে এসব কথা জানা গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্হনীয় জাতীয় পার্টির এক নেতা জানান, জব্বার ইঞ্জিনিয়ার বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় তার বড় মেয়ের বাসায় আছেন। সেখানে তার বড় ছেলে নাসিরউদ্দিনও থাকেন।

উপজেলার সাপলেজা ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা শামসুল হক জানান, ’৭১ সালে সাপলেজা কাচারীবাড়ির এক জনসভায় জব্বার ইঞ্জিনিয়ার উদ্ধত কন্ঠে বলেছিলেন ‘মুক্তিযোদ্ধা ও হিন্দুদের স্হান এই পাকিস্তানের মাটিতে হবে না, হিন্দুদের সম্পদ সব গনিমতের মাল, সব কিছু মুসলমানদের ভোগ করা জায়েজ।’

মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও শরণ খোলা থানার কমান্ডিং অফিসার মুজিবুল হক মজনু বলেন, জব্বার ইঞ্জিনিয়ার সুন্দরবন উপকুল এলাকার রাজাকারদের রিং লিডার ছিলেন। তিনি এ অঞ্চলের মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক শহীদ সওগাতুল আলম ছগিরের গ্রামের বাড়িতে অগ্নি সংযোগ ও লুটপাট করে। ‘তিনি আমার গ্রামের বাড়িও লুটপাট করেছে। আমার মাকে রাইফেল দিয়ে পিটিয়েছে।’

জানা যায়, যুদ্ধাপরাধী আব্দুল জব্বার ইঞ্জিনিয়ার ১৯৬৫ সালে আইয়ুব খানের মৌলিক গণতন্ত্রের নির্বাচনে তৎকালীন চেয়ারম্যান মেম্বারদের ভোটে এম পি নির্বাচিত হন। ’৭০-এর নির্বাচনে তৎকালীন মুসলিম লীগের প্রার্থী হিসেবে মঠবাড়িয়া-বামনা-পাথরঘাটা আসনে নির্বাচন করেন। দেশ স্বাধীন হবার পর তিনি আত্মগোপনে চলে যান। ‘৭৫-এর রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর আবার তিনি প্রকাশ্য রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। ১৯৮৬ সালে এরশাদের জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে পিরোজপুর-৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ’৮৮ সালের ভোট বিহীন নির্বাচনে পুনরায় তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। ওই সময় তিনি পিরোজপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হন। ’৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর তার বির"দ্ধে টিন ও চাল আত্মসাতের মামলা হয়। এরপর মামলা থেকে বাচতে বিএনপিতে যোগ দিলেও ২০০১ সালে পুনরায় তিনি জাতীয় পার্টিতে ফিরে এসে কেন্দ্রীয় রাজনীতি শুর" করেন ও জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

মুক্তিযুদ্ধে নিহত বিনোদবিহারী বিশ্বাসের ছেলে যজ্ঞেস বিশ্বাস ১৯৭২ সালে জব্বার ইঞ্জিনিয়ারকে প্রধান আসামী করে স্হানীয় দুই শতাধিক রাজাকারের বির"দ্ধে হত্যা, লুট, অগ্নি সংযোগ ও নির্যাতনের অভিযোগে বাদি হয়ে মঠবাড়িয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। কিন্তু ’৭৫-এর পট পরিবর্তনের পর এখানে স্বাধীনতা বিরোধীদের উত্থানের কারণে মামলা দুটি ধামাচাপাসহ সব নথিপত্র গায়েব হয়ে যায়।


‘স্বাধীন বাংলা’ চেক পোস্ট খুলে নির্যাতন চালাত কামার"জ্জামান বাহিনী

তরিকুল ইসলাম সুমন:

স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার আলবদর বাহিনীর প্রধান সংগঠক ছিলেন মুহাম্মদ কামার"জ্জামান। তার নেতৃত্বে ওই সময় সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করতে সীমান্ত এলাকায় ‘স্বাধীন বাংলা’ নামে একটি চেক পোস্ট খোলা হয়। এ চেকপোস্ট দিয়ে যারা ঢুকতেন তাদের নির্যাতন ও হত্যা করত কামার"জ্জামানের বাহিনী। ৩১ বালুচ রেজিমেন্টের পাক বাহিনীর প্রধান সুলতান মাহমুদের মনোরঞ্জন ও তার নির্দেশে স্বাধীনতাকামী মানুষকে হত্যা করত এই বাহিনী। স্হানীয় মানুষ, মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষাবিদদের সঙ্গে কথা বলে ও মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক প্রকাশিত নানা বই থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। কামার"জ্জামান বর্তমানে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল।

জানা যায়, ১৯৭১ সালের ২২ এপ্রিল মোমেনশাহী (ময়মনসিংহ) জেলার ইসলামী ছাত্র সংঘের সভাপতি মুহাম্মদ আশরাফ হোসেনের নেতৃত্বে আলবদর বাহিনী গঠন করা হয়। এ সংঘের সাংগঠনিক প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মুহম্মদ কামার"জ্জামান। পরীক্ষামূলকভাবে পুরো ময়মনসিংহ জেলায় ইসলামী ছাত্র সংঘের কর্মীদের আলবদর বাহিনী হিসেবে সংগঠিত করে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ দেয়া হত। ১৯৭১ সালের ১৬ আগস্ট দৈনিক সংগ্রামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোমেনশাহী আলবদর বাহিনীর উদ্যোগে মিছিল, সমাবেশ এবং সিম্পোজিয়াম অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন আলবদর বাহিনীর প্রধান সংগঠক মুহাম্মদ কামার"জ্জামান। শেরপুর থানার বাজিতথিলা ইউনিয়নের মুদিপাড়ার কৃষক পরিবারের সন্তান মুহাম্মদ কামার"জ্জামান। ১৯৭৭ সালে ইসলামী ছাত্র সংঘের নাম পরিবর্তন করে ছাত্র শিবির করা হয়। প্রথম কমিটিতেই তিনি সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব পান। পরে ছাত্র শিবিরের সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন তিনি।

সাবেক আওয়ামীলীগ নেতা জিয়াউল হক জানান, একাত্তরের ২২ আগস্ট বিকাল পাঁচটায় কামাড়িচরের নিজ বাড়ি থেকে আলবদরের নির্যাতন সেলে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তিনি কামার"জ্জামানকে দেখেছেন। একই সেলে শেরপুর কলেজের প্রভাষক সৈয়দ আব্দুল হান্নানকে ধরে নিয়ে খালি গায়ে মাথা ন্যাড়া করে শরীরে চুন মেখে চাবুক দিয়ে পিটিয়ে পুরো শেরপুর শহরে ঘুরিয়েছিলেন।

শেরপুর জেলা ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাধারন সম্পাদক মোশারফ হোসেন তালুকদার জানান, তার বড় ভাই গোলাম মোস্তফাকে একাত্তরের ২৪ আগষ্ট কামার"জ্জামানের আলবদর বাহিনী রাস্তা থেকে প্রথমে ধরে নিয়ে যায় শহরের সুরেন্দ্র মোহনের (আলবদর বাহিনীর টর্চার ক্যাম্প) বাড়িতে। সেখানে দিনব্যাপি হাতে পায়ের রগ কেটে রাত আটটার দিকে শেরী ব্রীজ এলাকায় নিয়ে গুলি করে হত্যা করে। এছাড়া কামার"জ্জামানের নির্দেশেই ওই সময় স্হানীয় জি.কে স্কুলের ছাত্র ও কৃতি ফুটবল খেলোয়াড় কাজল এবং কায়ছারকেও হত্যা করা হয় বলে তিনি জানান।

শেরপুরের বহুল আলোচিত আত্মস্বীকৃত রাজাকার মোহন মুন্সি (মুক্তিযুদ্ধের সময় কামার"জ্জামানের দেহরক্ষী হিসেবে পরিচিত) সম্প্রতি স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সকল অপকর্মের কথা স্বীকার করে বলেছেন, জীবন বাঁচাতে তিনি এসব কাজ করেছিলেন। সেই সঙ্গে তিনি কামার"জ্জামানের বিচার দাবী করে মুক্তিযোদ্ধার স্বপক্ষের শক্তির সঙ্গে যোগ দিয়ে যুদ্ধাপরাধীরদের বিচার চেয়ে হয় বিভিন্ন আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন। অন্যদিকে কামারুজ্জামানের সহযোগি আব্দুল বারীর একটি রোজনামচা থেকে পাকিস্তানি ক্যম্পে জোর করে পাঠানো নারী ও মুক্তিকামী মানুষ হত্যার বিবরণ জানা গেছে।

এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে কামার"জ্জামানের পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, একাত্তরে তিনি এলাকাতেই ছিলেন না। স্হানীয় জামায়েত নেতাদের দাবি, কামার"জ্জামান নয় কামরান নামে এক রাজাকারের ভুত কামার"জ্জামানের ঘাড়ে এসে ভর করেছে। বর্তমানে ওই রাজাকার কামরান বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। তবে এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধের ছাত্র সংগঠক আমজাদ হোসেন জানান, আলবদর কামরানের কথা বলে কামার"জ্জামানের অপকর্ম ঢাকার চেষ্টা চালানো হয়েছে।

কামারুজ্জামানের হত্যাযজ্ঞের বিষয়ে শেরপুরের মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল ওয়াদুদ ওদু জানান, শুধু শেরপুরেই নয় তৎকালীন বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলায় গণহত্যা, লুট, বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগ এবং পাকবাহিনীকে সার্বিক সহযোগিতা করেছে কামারুজ্জামানের বাহিনী। এছাড়া সদর উপজেলার সূর্যদী, নালিতাবাড়ি উপজেলার সোহাগপুর, ঝিনাইগাতি উপজেলার জগৎপুরসহ অসংখ্য স্হানে গণহত্যা ও লুটতরাজের মূল নায়ক ছিলেন এ কামারুজ্জামান।

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীনের পরে কামার"জ্জামান অনেকদিন পালিয়ে ছিলেন। প্রাথমিকভাবে তার অবস্হান সম্পর্কে কিছু জানা না গেলেও পরে জানা গিয়েছিল। তিনি সিলেটের হযরত শাহজালাল (রা.) এর দরবারে ছিলেন। এ বিষয়ে তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও আছে।


রাজাকার আল-বদর আল-শামসদের সংগঠিত করতেন সালাহউদ্দিন

’৭১-এ ফজলুল কাদের চৌধুরী ও সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী চট্টগ্রামের আলোচিত নাম। সম্পর্কে এরা পিতা-পুত্র। ফকা চৌধুরী ও সাকা চৌধুরী হিসেবে এরা সমধিক পরিচিত। ফজলুল কাদের চৌধুরী পাকিস্তানের মন্ত্রী ছিলেন। ’৭১ সালে ফজলুল কাদের চৌধুরী নিজে ও তার পরিবারের সদস্যরা মুক্তিযুদ্ধের সরাসরি বিপক্ষে অবস্হান নিয়ে চট্টগ্রামে সাধারণ মানুষের ওপর ব্যাপক নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ চালান বলে অভিযোগ রয়েছে।

এ পরিবারের সদস্যদের ইন্ধনে চট্টগ্রামের রাউজানের কৃতীসন্তান নতুনচন্দ্র সিংহসহ অসংখ্য লোককে হত্যা ও পাশবিক নির্যাতন চালানো হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। বর্তমান সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করায় চট্টগ্রামের নতুনচন্দ্র সিংহের পরিবার আশা করছেন হয়তো এবার তারা এ হত্যার বিচার পাবেন। চট্টগ্রামের মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহফুজুর রহমান তার মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক এক বইতে লিখেছেন, চট্টগ্রামের রাউজানে ফজলুল কাদের চৌধুরীর বাহিনীর সদস্যদের হাতে নতুনচন্দ্র সিংহসহ অসংখ্য লোককে প্রাণ দিতে হয়। এরা হিন্দুদের ঘরবাড়ি নির্বিচারে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করেন।

জানা যায়, ’৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় চট্টগ্রামের রাউজানে যারা শহীদ হয়েছেন তারা হলেন, নতুনচন্দ্র সিংহ, পংকজ বড়-য়া, বাদশা মিয়া, সুবেদার আবুল বশর, সুবেদার আবুল কাশেম, আবদুল মান্নান, শফিকুল আলম, বিকাশ বড়-য়া, জাফর আলম চৌধুরী, সুবেদার নুর"ল আমিন, মুসা খান, শামসুল আলম, র"হুল আমিনসহ আরো অনেকে। এছাড়া তৎকালীন নগর আওয়ামী লীগ নেতা মোজাফফর আহমেদ, ফজলুল হক সওদাগর, মুক্তিযোদ্ধা ওমর ফার"ক, দয়াল হরি বিশ্বাসসহ আরো অসংখ্য লোককে হত্যার পেছনে ফকা চৌধুরী ও সাকা চৌধুরীর ইন্ধন রয়েছে বলে চট্টগ্রামের সর্বমহলে জনশ্র"তি রয়েছে। বিভিন্ন মামলার নথি থেকেও এসব তথ্য পাওয়া যায়। এছাড়া দৈনিক জনকণ্ঠে প্রকাশিত ‘সেই রাজাকার’ রিপোর্টেও উল্লেখিত তথ্য রয়েছে।

সূত্র মতে, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ’৭২ সালের জানুয়ারি মাসে নতুনচন্দ্র সিংহের পুত্র সত্যরঞ্জন সিংহ তার পিতাকে হত্যার দায়ে ফকা চৌধুরী ও সাকা চৌধুরীকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ৪১(১)৭২। ফজলুল হক সওদাগরকে গুডস হিলে নির্যাতনের অভিযোগেও দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থানায় মামলা দায়ের করা হয়।

চট্টগ্রামের বেশ ক’জন মুক্তিযোদ্ধা একই সুরে অভিযোগ করে বলেন, চট্টগ্রামের রাউজান ও নগরীতে সেই সময় সাকা চৌধুরী রাজাকার, আল-বদর, আল-শামসদের সংগঠিত করতে অন্যতম ভূমিকা পালন করেন এবং হত্যা ও নির্যাতন চালান। নগরীর সেই আলোচিত গুডস হিলে সাধারণ লোকদের ধরে নির্যাতন চালানো হতো বলেও অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে সম্প্রতি সন্দেহভাজন ৩৬ জন যুদ্ধাপরাধীর যে নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে সেই তালিকায় ফজলুল কাদের চৌধুরীর দুই পুত্র সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নাম রয়েছে। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী বিএনপির স্হায়ী কমিটির সদস্য ও গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী উত্তর জেলা বিএনপির সভাপতি পদে রয়েছেন। এ দু’সহোদর বর্তমানে কড়া গোয়েন্দা নজরদারিতে রয়েছেন বলেও সূত্র জানায়।


সুত্র: আমাদের সময়।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১০ রাত ২:৩১
১১টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জেনারেল রাও ফরমান আলী ছিল ইন্ডিয়ান 'র'-এর এজেন্ট

লিখেছেন ধূসর সন্ধ্যা, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২২



জেনারেল রাও ফরমান আলী ছিল ইন্ডিয়ান 'র'-এর একজন এজেন্ট। এই তথ্য কেউ জানতো না। তার ফ্যামিলিও জানতো না। ১৯৪১ সালে বর্ডার ক্রস করে সে ঢুকেছিল পাকিস্তান। তারপর আস্তে আস্তে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×