somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পুঁজিবাজার নিয়ে কিছু কথা

০৭ ই জুন, ২০১০ রাত ১২:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমেরিকার ম্যানহাটন সিটির ওয়ালস্ট্রীট অপেক্ষাকৃত একটি সরুগলি। সেই গলিতেই বিশ্বের সবচেয়ে নামী-দামী শেয়ার মার্কেট ডাউজোনস, নাসডাক এর অবস্থান। দৈনিক হাজার কোটি ডলারের লেনদেন হয় সেখানে। নিউইয়র্ক শহরসহ বিশ্বের অনেক ধনাঢ্য ব্যক্তিরই বিনিয়োগ আছে এই ওয়ালস্ট্রীটের শেয়ার মার্কেটে। অনেকে ব্যাংকক, সিঙ্গাপুর বসেই আমেরিকার ঐ শেয়ার মার্কেটে লেনদেন করেন, যাদের অনেকেই আবার বাংলাদেশী। শেয়ার মার্কেট যেদিন চাঙা হয় তখন তাকে বলা হয় ষাঁড়ের লড়াই আর পতন হলে বলা হয় ভল্লুকের জ্বর। ওয়ালস্ট্রীট সংলগ্ন পাশের বড় রাস্তার একটি বিশালাকায় কালো ষাঁড়ের যুদ্ধংদেহী মূর্তি আছে। কিছুদিন আগে আমি সেই ষাঁড়ের সামনে দাঁড়িয়ে একটি ছবি উঠেয়েছিলাম আর আমাদের মতিঝিলের মধুমিতার সামনের স্টক এক্সচেঞ্জ ভবনের কথা কল্পনা করেছিলাম। মনের পর্দায় ভেসে উঠেছিল শাপলা চত্বর পর্যন্ত রাস্তায় মানুষের ভীড়ে ঠাসা ৯৬ এর কার্ব মার্কেটের কথা। আমাদের পুঁজিবাজারে সেই ৯৬ এর অবস্থা এখন আর নেই। এখন পুঁজিবাজার অনেক ম্যাচিউরড হয়েছে। এখন রাস্তায় শেয়ার বেচা-কেনা হয় না। ইলেকট্রনিক শেয়ারসমূহ এখন ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্নস্থানে সুসজ্জিত অফিস কক্ষে লেন দেন করা হয়। পুঁজিবাজার সম্প্রসারণের সাথে সাথে ব্রোকারদের হাউজগুলো নিত্যনতুন শাখা খুলে হাজার কোটি টাকার ট্রেড করছে। এ কাজে মার্চেন্টাইজ ব্যাংকগুলোও এগিয়ে এসেছে। প্রায় সবগুলি ব্যাংকই শেয়ার লেনদেনের আলাদা লাইসেন্স গ্রহণ করে ব্যাংকিং এর পাশাপাশি আলাদা ব্যবসা শুরু করেছে। এভাবে আজ প্রায় ত্রিশ লাখ বিনিয়োগকারী শেয়ার ব্যবসায়ে সম্পৃক্ত হয়েছেন। ইতিমধ্যেই একদিনে দুই হাজার তিনশত কোটি টাকার লেনদেন সম্পন্ন হয়েছে এই ব্যবসায়ে। সুতরাং এই ব্যবসা এখন আর হেলাফেলার বিষয় নয়। ওয়ালস্ট্রীট, হংকং, সিঙ্গাপুর, লন্ডন, মুম্বাই এইসব শেয়ার মার্কেটের লেনদেনের কথা শুনে আমরা যারা চোখ কপালে তুলতাম, সেদিন শেষ। এখন আমাদের নিজেদের মার্কেটেই রমরমা অবস্থা। শিক্ষক, ছাত্র, আমলা, কর্মচারী, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, সাংবাদিক, গৃহবধূসহ ছোট-বড় ব্যবসায়ী পর্যন্ত আজ শেয়ার বাজারে ঢুকে পড়েছেন।

কারণ সবাই ইচ্ছে করলেই শিল্প উদ্যোক্তা হতে পারেন না। তবে শেয়ারবাজারের মাধ্যমে শিল্পে বিনিয়োগ করতে পারেন। শেয়ারমার্কেট জনগণকে সেই সুযোগই করে দেয়। অনেকে অবশ্য নাক সিটকিয়ে এটাকে ফটকা ব্যবসা বলে থাকেন। তাদের উদ্দেশ্যে সাবধান বাণী উচ্চারণ করে বলা যায়, আপনারা যারা ব্যবসার নামে ব্যাংকের টাকা মেরে দিয়েছেন, যারা বড় বড় পদে বসে পদের অপব্যবহার করে টাকা কামাচ্ছেন আসলে ফটকাবাজ তারাই। আজ ১৫/২০ কোটি লোকের দেশে একটি অংশ যদি যেসব শিল্প প্রতিষ্ঠান বাজারে শেয়ার ছাড়ে, সেই শেয়ারে বিনিয়োগ করে প্রাণ সঞ্চালন করেন সেক্ষেত্রে তাকে বাঁকা চোখে দেখার মানসিকতা ত্যাগই সুস্থ দৃষ্টিভঙ্গির লক্ষণ হবে। সেই সাথে ডিএসই/ এস ই সি কেও সঠিক ভূমিকা পালন করতে হবে। ডিএস ইতে নির্বাচিত প্রতিনিধিসহ অন্যান্য যেসব প্রতিনিধি আছেন তারা যেন নেতা বনে গিয়েছেন এমনটি ভেবে রাজনৈতিক নেতাদের মত শুধু বুলি না আওড়ান সেদিকেও খেয়াল রাখা দরকার। মনে রাখতে হবে ডিএসই সম্বন্ধে বিনিয়োগকারীদের অনেক অভিযোগ আছে। তাদের ওয়েবসাইড ভুল তথ্যে ভরা। এছাড়া তা আপডেটেডও নয়। অনেক কোম্পানির ঠিকানা টেলিফোন নম্বরেও ১০ বছর আগের তথ্য দেয়া। ডিসেম্বর/০৯ পার হয়ে ৫ মাস আরো অতিবাহিত হলেও ২০০৮ পর্যন্ত তথ্য দিয়ে ডিএসই চুপচাপ বসে আছেন। অভিযোগ পাওয়া যায় ট্রেড চলাকালীন ডিএসই-এর সার্ভারগুলো সঠিক আচরণও করে না। ক্রয়-বিক্রয়ের কমান্ড দিলে অনেক সময়ই তাতে ERRORশো করে ফলে তাৎক্ষণিক মূল্য পরিবর্তন বা অর্ডার দেয়া যায় না। ফোন করে অভিযোগ দিলে এক/আধ ঘণ্টা পরে ঠিক হলেও ইতিমধ্যে ক্ষতি যা হবার হয়ে যায়। এক্ষেত্রে অনুসন্ধান করে জানা যায় একটিমাত্র কোম্পানীকে ডিএসসি সফটওয়্যার ডেভেলাপমেন্ট/রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দিয়ে বসে থাকায় কোম্পানিটি মনোপলিষ্ট হওয়ায় এমনটি হচ্ছে। তাছাড়া ডিএসইর নির্বাচন অনেকটা রাজনৈতিক নেতা নির্বাচনের মত হয়ে উঠায় সেখানে যোগ্য বা স্কিলড ব্যক্তি নির্বাচিত না হতে পারাও ডিএসইর পিছিয়ে পড়ার অন্যতম কারণ। প্রযুক্তিগত দিক হতে ডিএসই সিএসই অপেক্ষা অনেকটাই পিছিয়ে আছে। এমতাবস্থায় দিনরাত রাজনৈতিক নেতাদের মত গলাবাজি ধান্দাবাজি না করে ডিএসই নেতারা নিবেদিতপ্রাণ হলে সংস্থাটির উন্নয়ন হতো বলে অভিজ্ঞ মহলের ধারণা।

আরেকটি কথা। বছরের পর বছর ধরে পুঁজিবাজার সম্প্রসারিত হয়ে একটি কাঙিক্ষত স্থানে পৌঁছালেও সেই তুলনায় মূল নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসইসি লোকবলসহ মেধাগত দিক হতে অনেকটা দুর্বল। সেখানে একজন চেয়ারম্যানসহ কয়েকজন সদস্য থাকলেও সবই কর্মোদ্যমী বা উপযুক্ত কর্মক্ষম কিনা সে বিষয়েও অনেকের সন্দেহ আছে। কারণ ঐ সংস্থাটির অনেক সিদ্ধান্তই লেজেগোবরে। উদাহরণস্বরূপ, এসইসি কখনো মার্মিন লোন ১:২, ১:১.৫, ১:১ এর নির্দেশ জারি করেন। কোন ব্যক্তি যখন ১:২ এর সময় শেয়ার ক্রয় করেন এবং ২/৪ দিনের মাথায় যখন তা ১:১ হয়ে যায় সেক্ষেত্রে বিনিয়োগকারী সমূহ ক্ষতির সম্মুখীন হন। কারণ ১:২ এর সময় ক্রয় ক্ষমতা বেড়ে যাওয়ায় মূল্যও বেড়ে যায়। আর ১:১ এর সময় ক্রয় ক্ষমতা কমে যাওয়ায় মূল্য কমে যায়। এসইসির সকাল-বিকাল এহেন সিদ্ধান্ত পরিবর্তনকে বিনিয়োগকারীদের গাছে তুলে দিয়ে মই টান দেওয়ার মত কর্মকান্ড বলে অনেকে মন্তব্য করেন।

আবার আর এক শ্রেণীর মাতব্বর, শেয়ার বাজার সম্বন্ধে যাদের কিঞ্চিৎ ধারণা আছে বা নেই, তারাও সরকারের শীর্ষ মহলকে বিভিন্ন সময়ে বুদ্ধি পরামর্শ দিয়ে বিভ্রান্ত করছেন। তারা BO হিসাব খোলামাত্রই যেকোন বিনিয়োগকারীকে TINঘ নাম্বারের মাধ্যমে আয়করের আওতায় আনতে বলছেন। আবার শতকরা হারে নির্ধারিত আয়কর আরোপের কথাও বলছেন। তারা হয়তো জানেনও না সরকার এক্ষেত্রে সকলের কাছেই আয়কর পাচ্ছেন এবং তা সরাসরি বিনিয়োগকারীদের অর্থ হতেই পাচ্ছেন। যেমন-কোন বিনিয়োগকারী ডিভিডেন্ট পেলে সরাসরি ঐ ডিভিডেন্ট হতে ১০% আয়কর কেটে বাদবাকি টাকা দেওয়া হচ্ছে। আবার দৈনিক দেড়/দুই হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ হলে ঐ লেনদেনের উপরে যে শত শত কোটি টাকার কমিশন ব্রোকার হাউজগুলি পেয়ে থাকে ঐ কমিশনের একটি অংশও সরকার আয়কর হিসাবে পেয়ে থাকেন। আর ঐ কমিশনের টাকা সরাসরিই বিনিয়োগকারীদর টাকা। অতএব নতুন করে কর বসিয়ে পুঁজিবাজারকে নিরুৎসাহিত করার কোন কারণ আছে বলে মনে হয় না। এছাড়া যেসব ছাত্র, গৃহিনী বা বেকার যুবক ১০/২০ হাজার টাকা নিয়ে পুঁজিবাজারে প্রবেশ করেছেন এমন হাজার হাজার ব্যক্তিকে বাধ্যতামূলক TIN নাম্বার গ্রহণে বাধ্য করলে আয়কর দফতরের ফাইল বাড়ানো ছাড়া আর কি কাজ হবে সেটাও ভেবে দেখা দরকার। পরে শুধু শুধু আয়কর দফতরের লোকেরা ঐসব বেকার ছাত্র যুবকের পিছনে দৌড়াদৌড়ি করলে তাও এক ধরনের শ্রমের অপচয় বলেই বিবেচিত হতে পারে। তার চেয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে শেয়ার ব্যবসা করে যেসব ব্যক্তি টিকে থেকে পুঁজি গড়তে পারবেন তাদের কিছুটা সময় দিয়ে একটা যুৎসই সময়ে তাদেরকে আয়করের আওতায় আনাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ আগেই বলা হয়েছে লেনদেনকারীদের শতকরা একশত ভাগই সরকারকে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে আয়কর দিয়ে আসছেন। এমতাবস্থায় আশাকরি বিষয়গুলো সংশ্লিষ্ট সকলে গভীরভাবে ভেবে দেখবেন এবং পুঁজিবাজারের সার্বিক কল্যাণে নিজেরা নিবেদিত হবেন। যদি তা সম্ভব হয় তাহলে কে জানে একদিন বিদেশী পুঁজিবাজারের মত আমাদের পুঁজিবাজারও আন্তর্জাতিকমানের হয়ে উঠবে এবং বিদেশীরা আমাদের পুঁজিবাজারে বেশী বেশী বিনিয়োগে আগ্রহী হয়ে উঠবেন। আমরা আশা করবো তেমনটিই যেন হয়। কোন হঠকারী সিদ্ধান্তে পুঁজিবাজারকে যেন গলাটিপে ধরা না হয় সেই কামনাই রইলো।

সুত্র: ইত্তেফাক।

মুহাম্মদ ইসমাইল হোসেন
মুক্তিযোদ্ধা, কলামিস্ট।
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জেনারেল রাও ফরমান আলী ছিল ইন্ডিয়ান 'র'-এর এজেন্ট

লিখেছেন ধূসর সন্ধ্যা, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২২



জেনারেল রাও ফরমান আলী ছিল ইন্ডিয়ান 'র'-এর একজন এজেন্ট। এই তথ্য কেউ জানতো না। তার ফ্যামিলিও জানতো না। ১৯৪১ সালে বর্ডার ক্রস করে সে ঢুকেছিল পাকিস্তান। তারপর আস্তে আস্তে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×