somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পাতা, প্রিয়তম পাতা !

০৩ রা মে, ২০০৮ রাত ১২:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


পরীক্ষা ভীতি আমার কোন কালেই ছিল না । শৈশবের স্বাভাবিক পরীক্ষা ভীতি রূপান্তরিত হত কিছু অনৈর্বক্ত্যিক আনন্দে । সুদীর্ঘ এক মাস পড়ার বই ছুঁতে হবে না, প্রতিদিন কাক ডাকা ভোরে উঠে সেই বিচ্ছিরি একঘেয়ে দৈনিক পরিপাটি নিয়ম করে স্কুলে যাওয়া নেই, ঠাকুরমার ঝুলি টাইপ বইগুলোতে মজার মজার রূপকথার রাজ্যে ঘুরে বেড়াতে গিয়ে বাবা মা কারোর চোখ রাঙ্গানো বিদ্ঘুটে পাথরে হোচট খাওয়া নেই । এরকম আরো কিছু প্রভাবশালী অজেয় শাসকের অনুপস্থিতির পাশাপাশি একটা উপস্থিতির আনন্দ ছিল প্রবলতম, পরীক্ষা শেষ হলে মামার বাড়িতে যাওয়া !

আয় ছেলেরা আয় মেয়েরা
ফুল তুলিতে যাই,
ফুলের মালা গলায় দিয়ে
মামার বাড়ী যাই ।


ফুলের মালা ছিলনা, ধোঁয়াটে শহরের গলি ঘুপচিতে ছেলে মেয়ে নিয়ে দল বেধে ফুলের মালা তোলার সুযোগও ছিল না । তবে আমি মালা পরতাম শৈশবীয় উচ্ছন্নতার, আগত অবাধ স্বাধীনতার উত্তেজনাকর বায়ু পেটে গুড়গুড় তুলতো । অবশেষে এক শুভদিনে, বাসায় থেকে যাওয়া পাড়ার দুর্ভাগা বন্ধুদের দুঃখের অতিশয্যে, আমার আনন্দ অতিশয্যায় রেখে, ট্রেনে চেপে দিতাম ছুট মামাবাড়ি । আমার সেই অতি অলৌকিক মামাবাড়ি ।

খুব ভালবাসতেন মামা, আমাকে । সারাদিন ন্যাওটার মত লেগে থাকতামও । সারাদিন নিত্যনতুন গপ্প - বাড়ীর পাশের ঝিলের পাড়ে ঝোপের ধারে এক কুজো ভূত সন্ধ্যা নামলে হামলে পরে মাছেদের উপর, মাঝরাতে প্যাঁচার(স্থানীয় নাম "বুত্তুম") ঘোলা চোখের অতিপ্রাকৃতিক আবহের দর্শক কিভাবে হতেন আমার দুঃসাহসী মামা, সেইসব গপ্প !

মামা কবি ছিলেন । ইংরেজীতে কবিতা লিখতেন । আমাকে অনুসংগ করেও একটি কবিতা লিখেছিলেন ।

Shihab my nephew's a true lover
Of toys like plane, cart, and revolver;
He poses himself to be an aviator,
Sometimes with his revolver as fighter.
He acts as if a qualified engineer
In driving screws and knots with his screw driver.
He is, while in bed, a good listener
Of the story of dread and fear.
He asks me to tell cock and bull story
Of nocturnal buttum bird and fairy.
He wants to know how buttums hoot
At night from boughs of jack fruit.
I tell him what the buttum's hoots mean,
They mean to eat jack fruit and pumpkin.
He does burst into cry and laughter
While i gave him it's dreadful picture.
The tale makes him hold me fast by twining round,
And its fear sooths him from his motion unbound.
As i love him from my very heart's core
Should he not pray for me while i'm nomore,
Should he not remember his uncle, a bard
While he recites the poem of "Buttum Bird"?



গপ্পো ও কবিতার পাশাপাশি নানাবিধ প্রশ্রয়সূচক আনন্দদায়ক কাজ ও হতো । মামার সাথে বাজারে যেতে চাইলে, মায়ের নিষেধ, ভেংগে গুড়িয়ে দিতে আমি যখন কান্না জুড়ে দিতাম, তখন আমার কান্না থামিয়ে দিতেন মামা । বাজারে যেতাম, মফস্বলের বাজারের সবচেয়ে বড় মাছটি কিনে নিয়ে বীরের বেশে বাসায় ফিরে আসতাম ।

তবে যে স্মৃতিটি চিরদিন অক্ষয় অমলিন হয়ে থাকবে, সেটি হলো শীতের সকালের কুয়াশাভেদী মামা ভাগিনার শুদ্ধ প্রাতঃভ্রমণ । হবিগঞ্জ ছোট শহর, প্রায় সারা শহরই ঘুরতে পারতাম এক সকালে । খ্রীষ্টান পাড়ার ছোট ছোট ঘরের সারির মধ্যে দিয়ে হেটে যাওয়ার পায়ের শব্দ এখনো পাই । কুয়াশায় ঢাকা শ্বশানঘাটের প্যানোরোমিক ছবি এখনও খুব বেশি স্পষ্ট । মাঝে মাঝে পথ চলতে চলতে গাছের নিচে পরে থাকা শুকনো পাতার স্তুপে আমি থমকে যেতাম । ছোট্ট দুই হাতে পাতা কুড়াতাম, দু একটি । কবি মামা তখন বিড়বিড় করে কি যেন বলতেন । তখন কিছু বুঝতাম না । কিন্তু এখন স্মৃতির আবহ ও কবি মামার মনঃস্তত্বের কোমল বিশ্লেষণে বুঝতে পারি, হয়তো তিনি বিড়বিড় করতেন -

প্রিয়তম পাতারা ঝড়ে যাবে মনেও রাখবে না
আমি কে ছিলাম, কী ছিলাম - কেন আমি
সংসারী না হয়ে খুব রাগ করে হয়েছি সন্ন্যাসী
হয়েছি হিরন দাহ, হয়েছি বিজন ব্যথ্যা, হয়েছি আগুন !


শহরের প্রায় বাইরে মামাদের পারিবারিক গোরস্থান আছে, হাটতে হাটতে সেখানেও যেতাম প্রায়ই । গোরস্থান দেখাতেন আমাকে, কবরে শুয়ে থাকা নানা নানির জন্য দোয়া করতে বলতেন ।

আজ, সেই গোরস্থানেই শুয়ে আছেন তিনি । আমি মামার বাড়িতে গেলে সেখানে গিয়ে এখন তাকে দেখি ।


[ মামা, আমি তোমার "Buttum Bird" কবিতা পড়তে পড়তে এখনো তোমাকে ভেবে বিষন্ন হই ।]
৩০টি মন্তব্য ২২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×