somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বৃষ্টির শব্দ থেকে, অতঃপর আলোতে অথবা অন্ধকারে ...

১১ ই মে, ২০০৮ রাত ৯:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মেয়েটি, ছেলেটির হাত ধরে ঐ দূরে রাস্তার পাশে পার্থিব সমস্ত লাল মেখে দাঁড়িয়ে থাকা কৃষ্ণচূড়ার গল্প শোনাতো । ছেলেটি লাল বুঝতে পারতো না । মেয়েটি তখন বলতো লাল, রক্তের মতো । ছেলেটি তবুও বুঝতো না । একদিন ভরা বিকেলে মেয়েটি এসে বলল আকাশে আগুন লেগে ছাই হয়ে গিয়েছে মেঘগুলো । খুব ঝড় বৃষ্টি হবে আজ ! ছেলেটি মনে মনে ভাবছিল ছাই দেখতে কেমন ! মুখে বলতে হয়নি, মেয়েটি উত্তর বলে দিয়েছিল - "তুমি সারাক্ষণ যা দেখো, তার থেকে অনেক ফিকে রঙ হলো ছাই রঙ ।" ছেলেটি অনুভব করার চেষ্টা করলো ছাই রঙ । অনুভব অতিক্রম করে ছেলেটি ছাই রঙ দেখতে চেয়েছিল, ছেলটি ছাই-রাঙা-মেঘ দেখতে চেয়েছিল সেদিন । খুব ঝুম করে বৃষ্টি নেমছিল একটু দমকা হাওয়ার পরে । ছেলেটি বৃষ্টি দেখতে পেত না । শুধু বৃষ্টির পড়ার শব্দ শুনতো । মেয়েটি, ছেলেটিকে বৃষ্টির শব্দের ছবি দেখাতো । একটি ছবি সেদিন এঁকেছিল মেয়েটি, অবাস্তব ভর করা চারু-সাধিকার মতো সে গড়গড় করে বলতে থাকলো বৃষ্টি আর কৃষ্ণচূড়ার ছবি, জানালার পাশে দাঁড়িয়ে ।

- কৃষ্ণচূড়া ফুল গুলো যেন শ্বাস নিচ্ছে উত্তেজনার, বৃষ্টির যাচিত সংগমে মায়াবী উত্তেজনায় ঘেমে যাচ্ছে ফুলগুলো , তারপর চকিত হাওয়া এসে তাকে নেড়েচেড়ে দিচ্ছে ঘাম, টুপ করে ঘাম পড়ছে মাটিতে, তাতেও খুব একটা লাভ হচ্ছে না, আবার জমছে অলীকের আলো মাখা ঘাম । প্রিয়, আমি কৃষ্ণচূড়া ফুল হতে চাই, তুমি কি বৃষ্টি হবে?

এভাবে মেয়েটি অনুবাদ করছিল বৃষ্টি ও ভালোবাসা । হাত বাড়িয়ে কয়েক ফোঁটা বৃষ্টি নিয়ে নেয় সে ! ভিজিয়ে দেবে অন্ধ প্রমিকের মুখ, ভিজিয়ে দিবে তার যতসব খরা পদ্য ।

হাতে বৃষ্টির জল নিয়ে জানালা থেকে মুখ ফিরিয়ে মেয়েটি পেছন ফিরে দেখেছিল, ছেলেটির চোখে জলবিন্দুরা রেখায় রেখায় কতটা উজ্বল ! মেয়েটি হাত বাড়িয়ে ছেলেটির চোখ মুছে দিল । বৃষ্টির জল, কান্নার জল মিলে মিশে একাকার । মেয়টির হাতে কিছু কান্না লেগে গেল । বৃষ্টি যেমন ছোঁয় কৃষ্ণচূড়া ফুল !

মেয়েটি বলে উঠলো,
-দুঃখ করোনা প্রিয়, তুমি একদিন দেখতে পাবে শব্দের দৃশ্যগুলো, অলীক অথবা লীক !

কয়েক মাস থেকেই ছেলেটি চেষ্টা করছিল কর্ণিয়া ট্রান্সপ্লান্টের । একটি দাতব্য চক্ষু হাঁসপাতালে দরখাস্ত করে রেখেছিল, মেয়েটির চাপাচাপিতে । একদিন হঠাৎ পিয়ন এসে চিঠি দিয়ে গেল । কর্ণিয়া পাওয়া গেছে । ছেলেটি আনন্দে দিশেহারা ! সে দেখতে পাবে ! মেয়েটিকে জানালো আপ্লুত হয়ে ।

আরো একমাস পরে অপারেশন হলো । সফল অপারেশন । কিন্তু অপারেশনের পর ছেলেটি খুব অবাক হলো, মেয়েটি ওর আশে পাশে নেই । কয়েক দিন ধরে কেউ ওর খোঁজ পাচ্ছে না । ছেলেটি অস্থির হলো মেয়েটির নিরূদ্দেশে ।

কিছুদিন পরে চোখের বাধন খুলে দিল ডাক্তাররা । ছেলেটি দেখতে পেল । খুব আনন্দে দেখতে লাগলো চারপাশ, সুন্দর, যত রং আছে, মেঘ আছে, বৃষ্টির পতন যত আছে, যত লাল আছে, যত রংগীন আছে, যত আলো-অন্ধকার আছে । কিন্তু এতো দৃশ্যের মাঝেও কি যেন নেই,মেয়েটি নেই !

দিন কয়েক পরের ঘটনা, হঠাৎ একটি মেয়ে এসে দাড়ালো ছেলেটির পাশে । চোখে সানগ্লাস পরা । হাতে শাদা ছড়ি । মেয়েটি অন্ধ । ছেলেটি জিজ্ঞেস করলো
- কে তুমি?
- বৃষ্টি, আমি তোমার কৃষ্ণচূড়া ফুল !

ছেলেটি হতবিহবল হয়ে গেল । অনেক্ষণ চুপ থেকে বললো,
- তুমি অন্ধ ?????
- হুম । আমি অন্ধ । আমার অন্ধকারে কোন সমস্যা নেই, তুমি তো আছো ! আমার আলো !
- কিন্তু তুমি কখনও বলোনি তুমি অন্ধ ! আমার সাথে কথা বলার সময় তুমি কখনো বুঝতে দাওনি যে তুমি অন্ধ ! তুমি আমার সাথে প্রতারনা করেছো । কেন করলে , এমন ?


মেয়েটি নীরব । ছেলেটি ও নীরব । স্বস্তিহীন নীরবতা ভাংগলো মেয়েটি
- কি, তুমি আমার আলো হবে না ?
- দূর হও, তুমি । মিথ্যেবাদী, প্রতারক !


ছেলেটির মুখ বিকৃত, রাগে কাঁপছিল ।

মেয়েটি বসে ছিল । উঠে দাড়ালো, পেছন ফিরে হাটতে শুরু করলো । তার চোখে জল, পৃথিবীর পবিত্রতম জল । মুছে দেবার কেউ নেই , দরকারও নেই মুছে দেবার ।

যেতে যেতে মেয়েটি শব্দহীন ভাবে বলেছিলো,
- আমার চোখদুটোর যত্ন নিও, প্রিয় !

কেউ শোনেনি ।


[কাল রাতে একটি অসাধারন sms পেয়েছিলাম ।

john was a blind man who used to hate evry1 except his GF.He alws said 2 his gf tht i'l marry u if i could see u!suddenly 1day som1 donated eyes 2 him and John was soked 2 found that his gf is also blind.Thn his gf asked wil u marry me?He simply refused her.His gf told not a single word just smiled and went away with a letter,saying darling take care of my eyes!!!
গল্পটির অণুপ্রাণ এই sms টি ।]

[গতকাল রাতে গল্পটি পোষ্ট করেছিলাম । ফ্লাডিং শুরু হওয়াতে সরিয়ে নিয়েছিলাম ।]
২৫টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×