রাজশাহী মহানগরীতে তিন শ্রেণীর নারী চক্র প্রেমের ফাঁদ পেতে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এরমধ্যে একশ্রেণী হচ্ছে, স্বামী পরিত্যক্তা, অপর শ্রেণী কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া কিছু ছাত্রী এবং তৃতীয় শ্রেণীটি দরিদ্র পরিবারে কিছু যুবতী নারী। এদের সকলের টার্গেট বিত্তশালী ও বিবাহিত নারী আসক্ত কিছু পূরষদের। তবে এ সকল ঘটনার আড়ালে মুল হোতা হিসাবে সহযোগীতা করছে এক শ্রেণীর অসাধু পুরুষ চক্র।
পুলিশ ও অনুসন্ধানে জানা যায়, শিৰিত কিছু ছাত্রী বিত্তশালীদের সঙ্গে বিভিন্ন মাধ্যম দিয়ে সখ্যতা গড়ে তোলেন। মডার্ণ পোশাক-আশাক, মিষ্টি ভাষী ও সুদর্শনী হওয়ায় এক শ্রেণীর নারী আসক্ত বৃত্তশালীরা অল্প দিনের মধ্যেই তাদের প্রেমে পড়ে যান। এরপর আন্তরিকতা থেকে ‘বিশেষ সর্ম্পক’ গড়ে উঠে। এ ধরণের ঘটনা মহানগরীতে প্রায় ঘটছে। এদের মূল টার্গেট হচ্ছে বৃত্তশালী ও বিবাহিত পুরম্নষরা। এরপর থেকে চাইনিজ, ফাস্টফুড, দামী-দামী পোশাক, উন্নতমানের কসমেটিকস সামগ্রী বিভিন্ন প্রয়োজন দেখিয়ে মোটা অংকের অর্থ আদায় করতে থাকে।
অনুসন্ধান, ভুক্তভোগী ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মধ্যবিত্ত পরিবারের স্বামী পরিত্যক্তা শিক্ষিত কিছু নারী পরিবারের অগোচরে নারী আসক্ত কিছু বিবাহিত পুরুষদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে প্রতারণা করছে। এরা দেখতে সুদর্শনী, তবে কারো সাথে এরা দৈহিক কোন সম্পর্ক ঘটান না। তবে প্রেমের নাটক করে চাইনিজ ফাষ্টফুডে খাওয়া-দাওয়া, দামী পোশাক-আশাক, উন্নতমানের কসমেটিকস সামগ্রী ক্রয় সহ নগদ অর্থ নিয়ে থাকে।
জানা গেছে, এ সম্পর্ক ৬ মাস থেকে এক বছরের বেশী তারা স্থায়ী করেন না। এ সকল নারীদের পরিবার সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পরিবারের লোকজন অত্যানৱ ভদ্র, উক্ত নারীদের বিয়েও হয়েছিল বিত্তশালী পরিবারে এবং কারো কারো দু’টি বা একটি সনৱান রয়েছে। কিন্তু কোন কারণে ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ায় পিতৃলয়ে অবস্থান করছে। কিন্তু জনসমাজে লোকলজ্জার কারণে তারা স্বামী ছাড়াছাড়ির বিষয়টি কাউকে জানাতে চান না এবং স্বামী বিদেশে আছেন বলে কাটিয়ে দেন। এ সকল প্রতারণার শিকার প্রেমিকরা মান-সম্মান ও লোকলজ্জার ভয়ে কারো কাছে মুখ খুলেন না। তবে এ ধরণের ঘটনায় দেখা গেছে আড়ালে কোন না কোন পুরম্নষের হাত রয়েছে।
এদিকে পুলিশ সূত্রে জানা যায়, নগরীতে দরিদ্র পরিবারের কিছু নারী দেহ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এদের বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে যাতায়াত রয়েছে। এদের মধ্যে কেউ কেউ লোকাল মডেলিং এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান করে থাকেন। এছাড়াও কিছু কিছু কলেজ ছাত্রীর সর্ম্পকে জানা গেছে, এরা দেখতে সুদর্শনী এবং দরিদ্র। এরা কলেজে একাধিক বন্ধু পাতায় এবং তাদের সঙ্গে চুটিয়ে প্রেম ও শারীরিক মেলামেশা করে থাকেন এবং আর্থিক বিষয়টি বন্ধুরা পুরণ করে। এ ধরণের ঘটনা নগরীতে প্রায় ঘটতে দেখা গেছে। সমপ্রতি বন্ধুর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক করতে গিয়ে এরকম একটি জুটি থানায় ধরা পড়ে। তিনি নগরীর একটি ছাত্রি নিবাসে থাকেন এবং স্বনামধন্য একটি কলেজের অনার্স ১ম বর্ষের ছাত্রী। অবশেষে পুলিশ মানবিক কারনে তাঁর অভিভাবককে সতর্ক করে পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেয়।
অপরদিকে, কিছু সুদর্শনী নারীকে অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন ধরনের ঠিকাদারী ও ফাইল সই করার কাছে ব্যবহার করছে কিছু বিত্তশালী আবাসিক হোটেল ব্যবসায়ী এবং মহানগরীর স্বনামধণ্য কিছু অসাধু ঠিকাদার। বেশীর ভাগ ৰেত্রেই দেখা গেছে এ সকল ঘটনার আড়ালে মুল খল নায়ক হচ্ছে কোন না কোন পুরম্নষ। রাজশাহীতে ২০১৪ থেকে ২০১৫ মার্চ-এর গতকাল পর্যন্ত পুরুষ কর্তৃক নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছে ২০১ জন। এরমধ্যে নারী হত্যার ঘটনা ঘটে ১৯টি, আত্মহত্যা ৪৮টি, আত্মহত্যার চেষ্টা ২২টি, যৌন নির্যাতন ২৯টি, ধর্ষণ ১০টি, নির্যাতন ৪৮টি, হত্যার চেষ্টা ৬টি, নিখোঁজ ৭টি ও অপহরণের ঘটনার শিকার হয়েছে ১২ জন নারী।
এ ব্যাপারে মহাগরনগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার (আরএমিপ পুলিশ কমিশনারের মুখপাত্র) ইফতেখায়ের আলম এর সত্যতা স্বীকার করে জানান, এ ধরণের ঘটনা প্রায় ঘটছে। এ ব্যাপারে মানুষের সচেতন হওয়া উচিত। এছাড়াও তিনি জানান, যারা এ ধরনের ঘটনায় ধরা পড়ে তাদের অনেককেই মানবিক কারণে পরিবারের অভিভাবককে ডেকে সতর্ক করে পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দিতে হয়। এছাড়াও যারা পেশাগতভাবে দেহ ব্যবসা ও অন্যান্য অপরাধের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরম্নদ্ধে পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা অব্যাহত রেখেছে। সূত্র : প্রথমবার্তা
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৫:৩৯