somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কুষ্ঠরোগী, অন্ধ ও টেকোর কাহিনী

৩০ শে অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৩:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বনী ইসরাঈলের মাঝে তিনজন ব্যক্তি ছিল- কুষ্ঠরোগী, টেকো ও অন্ধ।
মহান আল্লাহ তাদেরকে পরীক্ষা করতে চাইলেন এবং তাদের নিকট
একজন ফেরেশতা পাঠালেন। অতঃপর কুষ্ঠরোগীর কাছে এসে তিনি
বললেন, ‘তোমার সবচেয়ে পসন্দের জিনিস কোনটি’? সে বলল, ‘সুন্দর রং
ও সুন্দর চামড়া। কেননা মানুষ আমাকে ঘৃণা করে’। ফেরেশতা তার শরীরে
হাত বুলালেন। এতে তার রোগ দূর হল এবং তাকে সুন্দর বর্ণ ও সুন্দর
চামড়া দান করা হল। অতঃপর তিনি প্রশ্ন করলেন, ‘তোমার নিকট কোন্
সম্পদ সবচেয়ে বেশী পসন্দনীয়? সে বলল, উট অথবা গরু’। এ ব্যাপারে
বর্ণনাকারীর সন্দেহ রয়েছে যে, কুষ্ঠরোগী বা টেকো দু’জনের একজন
বলেছিল উট আর অপরজন বলেছিল গরু। তাকে তখন দশ মাসের
গর্ভবতী একটি উটনী দেয়া হল। ফেরেশতা বললেন, ‘আল্লাহ এতে
তোমায় বরকত দিন’। তারপর তিনি টেকো ব্যক্তির কাছে গিয়ে প্রশ্ন
করলেন, ‘তোমার সবচেয়ে পসন্দের জিনিস কোনটি’? সে বলল, ‘সুন্দর চুল
এবং এই টাক হ’তে মুক্তি, লোকেরা যার কারণে আমাকে ঘৃণা করে’।
বর্ণনাকারী বলেন, তিনি তার মাথায় হাত বুলালেন। এতে তার টাক ভাল
হয়ে গেল এবং তাকে সুন্দর চুল দান করা হল। এরপর ফেরেশতা
বললেন, ‘কোন্ মাল তোমার নিকট অধিক প্রিয়’? সে বলল, গরু।
বর্ণনাকারী বলেন, তখন তাকে একটি গর্ভবতী গাভী দেয়া হল। ফেরেশতা
বললেন, আল্লাহ এতে তোমাকে বরকত দিন। তারপর ফেরেশতা অন্ধ
ব্যক্তির কাছে এসে প্রশ্ন করলেন, ‘তোমার অধিক পসন্দের জিনিস
কোনটি’? সে বলল, ‘আল্লাহ আমার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিন, আমি যাতে
মানুষকে দেখতে পারি’। ফেরেশতা তার চোখ স্পর্শ করলেন। এতে তার
চোখের দৃষ্টি আল্লাহ ফিরিয়ে দিলেন। এরপর ফেরেশতা প্রশ্ন করলেন,
‘কোন্ মাল তোমার নিকট অধিক প্রিয়’? সে বলল, ছাগল। তাকে তখন
এমন ছাগী দেয়া হল, যা অধিকসংখ্যক বাচ্চা দেয়। তারপর উট, গাভী ও
ছাগলের বাচ্চা হল। ফলে একজনের উটে ময়দান ভরে গেল, অপরজনের
গরুতে মাঠ পূর্ণ হয়ে গেল এবং আর একজনের ছাগলে উপত্যকা ভরে
গেল। তারপর ফেরেশতা কুষ্ঠরোগীর কাছে তাঁর প্রম রূপ ধারণ করে
এসে বললেন, ‘আমি একজন মিসকীন। সফরে আমার সবকিছু নিঃশেষ হয়ে গেছে । আজ আল্লাহ ব্যতীত কেউ নেই, যার সাহায্যে আমি আমার
গন্তব্যে পৌঁছতে পারি, তারপর তোমার সহায়তায়। যে আল্লাহ তোমাকে
সুন্দর বর্ণ, সুন্দর ত্বক ও সম্পদ দিয়েছেন, সে আল্লাহ নামে তোমার
নিকট আমি একটা উট চাচ্ছি, যার সাহায্যে আমি গন্তব্যে পৌঁছতে পারি’।
সে বলল, ‘(আমার উপর) অনেকের অধিকার রয়েছে’। ফেরেশতা বললেন,
‘তোমাকে বোধ হয় আমি চিনি। তুমি কি কুষ্ঠরোগী ছিলে না? লোকেরা
তোমাকে কি ঘৃণা করত না? তুমি না নিঃস্ব ছিলে? অতঃপর আল্লাহ
তোমাকে সম্পদ দিয়েছেন’। সে বলল, ‘এই সম্পদ তো আমি উত্তরাধিকার
সূত্রে পূর্বপুরুষ থেকে পেয়েছি’। তিনি বললেন, ‘তুমি যদি মিথ্যাবাদী হও,
তাহলে তোমাকে যেন আল্লাজ আগের মতো করে দেন’।
এরপর তিনি টেকো ব্যক্তির কাছে তাঁর প্রথম রূপ ধারণ করে এসে প্রথম
লোকটিকে যা বলেছিলেন তা বললেন এবং সেও একই উত্তর দিল, যা
পূর্বের লোকটি দিয়েছিল। ফেরেশতা একেও বললেন, ‘তুমি যদি মিথ্যাবাদী
হয়ে থাক, তাহলে আল্লাহ যেন তোমাকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে দেন’।
এরপর ফেরেশতা অন্ধ ব্যক্তির কাছে তাঁর আগের রূপ ধারণ করে এসে
বললেন, ‘আমি একজন মিসকীন মুসাফির। আমার সবকিছু সফরে নিঃশেষ
হয়ে গেছে। এখন গন্তব্যে পৌঁছতে আল্লাহ ব্যতীত আর কোন উপায় নেই,
তারপর তোমার সহায়তায়। সেই আল্লাহ নামে তোমার কাছে একটি
ছাগল সাহায্য চাচ্ছি, যিনি তোমাকে তোমার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিয়েছেন’।
এ ছাগলটি দিয়ে আমি বাড়ি পৌঁছতে পারব। লোকটি বলল, ‘আমি অন্ধ
ছিলাম। আল্লাহ আমার দৃষ্টিশক্তি ফেরত দিয়েছেন। আমি দরিদ্র ছিলাম,
আল্লাহ আমাকে ধনী করেছেন। কাজেই তোমার যত ইচ্ছা মাল তুমি নিয়ে
যাও। আল্লাহ শপথ! মহান আল্লাহ ওয়াস্তে আজ তুমি যা কিছু নিবে, তার
জন্য আমি আজ তোমার নিকট কোন প্রশংসাই দাবী করব না’। ফেরেশতা
বললেন, ‘তোমার সম্পদ তোমার কাছেই রাখ। তোমাদেরকে শুধুমাত্র
পরীক্ষা করা হয়েছে। তোমার প্রতি আল্লাহ তা‘আলা সন্তুষ্ট এবং তোমার
অপর দু’জন সাথীর প্রতি অসন্তুষ্ট হয়েছেন’।

[আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, বুখারী হা/৩৪৬৪ ‘নবীদের কাহিনী’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৫১;
মুসলিম হা/২৯৬৪, মিশকাত হা/১৮৭৮ ‘যাকাত’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৫]

গল্পের মধ্যে শিক্ষা -
সর্বদা আল্লাহর নেয়মতের শোকর-গুযার হতে হবে।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×