বাংলাদেশ ক্রিকেট দল যেমন খেলায় জেতার অভ্যাস তৈরি করে দেয়ায় এখন আর হার সহ্য করতে পারিনা, তেমনি সিনেমা হলে ডিজিটাল ছবি দেখে দেখে এখন আর ঘোলা পর্দায় প্রদশর্নীও সহ্য হয়না।
ইফতেখার চৌধুরীর 'রাজত্ব' ছবির কথা বলছি।
তিনবন্ধু গিয়েছিলাম সাভার সেনা অডিটোরিয়ামে মুক্তিপ্রাপ্ত নতুন ছবি 'রাজত্ব' দেখতে।
শুরুতেই ঘোলা প্রিন্ট দেখে হলের একদল উত্তেজিত দর্শক চিল্লাচিল্লির এক পর্যায়ে চেয়ার ছোঁড়াছুড়ি আরম্ভ করে দেয়। এতেই হল কর্তৃপক্ষ সিনেমা বন্ধ করে পুনরায় ঝকঝকে প্রিন্টের ডিজিটাল সিনেমা চালাতে বাধ্য হল।
খুব সংক্ষেপে সিনেমাটির কাহিনী জেনে আসি-
সম্রাট(শাকিব খান) তার মাকে মোটর সাইকেলে করে গ্রামের বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে ঢাকায় ফেরার পথে মোটর সাইকেলটি হঠাত্ নষ্ট হয়ে যায় । রাস্তার পাশেই একটি বাড়িতে গিয়ে মোটর সাইকেলটি একরাতের জন্য রাখার অনুরোধ করে । বাড়ির মালিক প্রবীর মিত্র সহজেই অনুমতি দেন। প্রবীর মিত্রের দুই মেয়ে । বড় মেয়ে রিয়ানা (ববি) ডাক্তারী পড়ছে । ছোট মেয়ে তুলনা অনার্সের ছাত্রী। সেইরাতেই পারিবারিকভাবে তুলনার জন্মদিন পালন করা হয় যেখানে অনাকাঙ্খিত গেস্ট থাকে সম্রাট । বাইক রেখে সম্রাট ঢাকায় চলে যায়।
পরদিন বাইক ফেরত নিতে এলে শাকিব মুখোমুখি হয় একটি ভিন্ন দৃশ্যপটের।
প্রবীর মিত্র এবং ববি বাইকের কথা পুরোপুরি অস্বীকার করেন এবং সম্রাটকে চিনতেই পারে না। সম্রাট পুলিশ দিয়ে তল্লাশী করেও বাইকটির কোন খোঁজ পায় না । বাইকটি ছিল তার বাবার একমাত্র স্মৃতি । তাই বাইক উদ্ধার করার জন্য সে একই সঙ্গে ববির সঙ্গে প্রেম করার চেষ্টা করে আবার বিভিন্ন বাইক চোরদের আস্তানাতেও হানা দিতে থাকে । এরপর একে একে বের হয়ে আসে কিছু নির্মম সত্য.......
অসংগতি এবং ভাল না লাগা অংশ:
১| সিনেমাটির কাহিনী একটু ব্যতিক্রম হলেও শুরুটা এবং শেষটা সেই পুরোনো বাংলা সিনেমাকেই মনে করিয়ে দেয়।
২| রাত বারোটায় ববি এবং তুলনার নিজের বাড়িতে লিপিস্টিক দিয়ে সেজে থাকাটা একটু বেমানানই লেগেছে।
৩| একই সিকোয়েন্সে একবার দেখা যায় শাকিবের মুখে খোচা খোচা দাঁড়ি পরমুহুর্তে ক্লিন শেভড।
৪| অশ্লীলতামুক্ত ছবির যুগে ক্লোজ শটে নায়িকার শরীর প্রদর্শনী খুবই ওড লেগেছে ।
৫| আইটেম সং একটাই যথেষ্ট ছিল। দুইটার কোন প্রয়োজনই ছিল না ।
৬| কোন গানেই চোখে পড়ার মত কোন লোকেশন পাইনি । খুব কম বাজেটের সিনেমা মনে হয়েছে ।
৭| শহরের নামকরা চাঁদাবাজ টেন পার্সেন্ট সম্রাটের অন্তরালে শাকিব আসলে একজন CID পুলিশ। সিনেমার শেষ দিকে তার আসল পরিচয় প্রকাশ পাবার পরও কারও তেমন কোন প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়নি ।
৮| শাকিবের আসল পরিচয়টা খুব সাধারণভাবে উপস্হাপন করা হয়েছে ।
৯| ববির অভিনয় এবং এক্সপ্রেশন দেখলে বোঝাই যায় সে অভিনয় করছে।
১০| একশন গুলো সাধারণ । আগের মতই । মনে রাখার মত কোন দৃশ্য চোখে পড়েনি।
ভাল দিক-
১| গানগুলোর মধ্যে 'তুমি ছাড়া কে আছে আমার' গানটি হৃদয়স্পর্শী ।
২| শাকিবের অভিনয় বরাবরের মতই ভাল হয়েছে দু একজায়গায় ছাড়া।
৩| শুরুর দিকে শাকিবের মায়ের সাথে গুলি খাওয়া এবং বিয়ে করার নাটক করতে গিয়ে প্রতিবার ধরা খাওয়ার কনটেন্টগুলো অনেক মজার ছিল ।
৪| মাটি বাবার মাটি খাওয়া , এক ঘুসিতে মাটির ভেতর ঢুকিয়ে দেয়া এবং মারমুখী একশন নিয়ে দৌঁড়ে এসে শাকিবের পা চেপে ধরা অনেক কৌতুকপূর্ণ লেগেছে ।
শ্রেষ্ট ডায়লগ: নীতিবান ডাক্তার মোমিন কখনও ঘুষ খান না । তাকে টাকা দিয়ে কেনা যায় না । আমির সিরাজী যখন তার সঙ্গে দেখা করতে যান তখন তিনি বলেন, "কি করবেন আপনি ? আমাকে মেরে ফেলবেন ? আমার পরিবারকে জিম্মি করে আমাকে দিয়ে ভুল রিপোর্ট লেখাবেন ? কিন্তু আফসোস আপনি পারবেন না । কারণ তিনকূলে আমার কেউ নেই । আমি বিয়েই করিনি । :v :v "
আবার এই ডাক্তারকেই ঘুষের টাকার পরিমান বাড়াতে বাড়াতে যখন শেষ পর্যন্ত ভুল রিপোর্ট লেখাতে রাজি করিয়ে ফেলেন তখন আমির সিরাজী বলেন, "দেশটা আর পাল্টালো না ।"
আমার রেটিং: ৬/১০
বি:দ্র: সিনেমা নিয়ে এটা আমার প্রথম লেখা। এটা আসলে রিভিউ না । জাস্ট রিভিউ এর স্টাইলটা ফলো করেছি।