বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে ব্যাঙেরছাতার মত সারিসারি গড়ে ওঠছে ভণ্ডবাবার মাজার। গাঁজার কলকিটানা আর নারীর আড্ডা নিয়ে বেশ জমিয়ে ওঠেছে বাবার রমরমা ব্যবসা। কিছুদিন যেতে না যেতেই এক বাবা থেকে আরেক বাবার ওরশ। এক বাবার মাজারের নাম বলতে গে' হাসি পাচ্ছে__"গঙ্গা শাহ গায়েবী মাজার" এও নাকি সত্যি যে, গঙ্গা থেকে মাজার ভেসে ওঠেছে। বলে রাখি, মাজার এটি আরবি শব্দ। যার সাধাসিধে অর্থ__ বড় কোন ব্যক্তির সমাধিস্থ কবরের দর্শন। দর্শনীয় কবরকে "মাজার" বলা হয়। তা কী করে গায়েবী হতে পারে? আমার বোধগম্য নয়।
এই তো সেদিন খুব ধুমধাড়াক্কার সাথে পালিত হল বার্ষিকী পবিত্র (?) ওরশ। সেটা ছিল মোতালেব শাহ'র। এর পাশেই আরেকটি মাজার ওরশের অপেক্ষায়। এখন যে মাজারের গল্প বলছি সেটা আগেই বলেছি। এই ভণ্ডবাবাদের ওরশকে উপলক্ষ্য করে চলছে নানান শরীয়ত বিরোধী কার্যকলাপ। বেশধারী অনেক পাগলের আমদানি দৃষ্টি এড়ায় না। বেশিরভাগই কিনে আনা হয় মজমা জমানোর জন্যে। ভেতরে ভেতরে চলে নারীপুরুষের অবাধ মেলামেশা। ওসব ওরশে রকমারি দোকান নিয়ে মেলাও বসে। আসে সার্কাস, যাদু, 3d, 5d movies। পার্শ্ববর্তী এলাকার তরুণতরুণীরা আসে দলে দলে। ঘরে বসে থাকে না আবালবৃদ্ধবনিতাও। ছুটে আসে ববার রঙ্গতামাশা দেখতে। পাগলগুলার রঙ, ঢঙ, ওঠাবসা দেখলে যে কেউ রুচিসম্মত ব্যক্তি কাছে ঘেঁষতে ঘেন্না করবে। কিন্তু কিছু বোকার দল দ্বীনের বোঝ না থাকায় ওদের পিছুপিছু ঘোরে। ভণ্ডবাবাদের মাজারে মাজারে গিয়ে টাকা ঢালে। আরো আফসোসের কথা হল, বন্ধ্যা, নিঃসন্তান নারীরা বাবা নামে ভণ্ড, দুশ্চরিত্রবান, মানুষের কাছে যায় সন্তান চাইতে। ছিঃছিঃ অমন নোংরা, বিচ্ছিরি, অপরিষ্কার লোকটার কাছে কী রুচি নিয়ে যায় তারা? একমাত্র আল্লাহই পারেন সন্তান দিতে। দেবার মালিক তিনিই। মানুষ কখনো দিতে পারে না সন্তান। তাছাড়া মাজারে শুয়ে আছে তো একজন মরা মানুষ।
মাজারে অনেক পাগলিনীও থাকে। এরা প্রাকৃতিক প্রয়োজন পুরা করে কোথায়? এত বড় মাজার। বিশাল ওরশ। মাজারে কোথাও করা হয় নি পেষাব পায়খানা করবার কোন সুব্যবস্থা। আর গোসল তো এরা করেই না।
কৌতূহলবশত সেদিন রাতে গেলাম মাজারের কাণ্ডকারখানা দেখতে। সাথে ছিলেন #তানভির ভাই। মানুষের ভিড়ে পা ফেলবার জো নেই। এত এত মানুষ! কী জন্য আসে তারা? সবাই তো আর আমাদের মত দেখতে আসে নি।
এমন কিছু বুড়ো দেখলাম__কবরে এক পা চলে গেছে এখনোবধি হুঁশ ফেরে নি। গরুর সিং নিয়ে কী সব আস্ফালন করছে! পোশাক পরেছে দৃষ্টিকাড়া। আরেক বুড়ো__ জৌলুশপূর্ণ পোশাক। লাল শালু। একদম হিন্দুদের ধূতি সদৃশ। হাতে একটা সন্যাসীদের বিশেষ চিহ্ন। মাথার চুল জটবাঁধা। দাড়িমোচ একাকার। আশ্চর্য, তানভির ভাই বললেন, এরা খায় কীভাবে? তার প্রশ্ন শুনে আমার মনে পড়ল রবিবাবুর কথা। আচ্ছা, তিনি তো কবি মানুষ ছিলেন। নামিদামি মানুষের সাথে তার ওঠাবসা ছিল। বিভিন্ন সভা-সেমিনারে যেতে হত। বলাই বাহুল্য যে, ভোজের আয়োজন হত। তো কবি মশাই কীভাবে খেতেন? বিশেষ করে তরল খাবার? আর যদি হয় ডাল, তাহলে? জানতে ইচ্ছে হয় খুব।
যাকগে, তো ওই পাগলগুলাই বা কী করে খায় এখন? সব মাজারেই এমন কিছু পাগলের আনাগোনা দেখি। পরিতাপের বিষয়, মানুষ কবে বুঝবে যে, এদের চলাবলা, ওঠাবসা, কাণ্ডকীর্তিই বলে দিচ্ছে যে, এরা সত্যপন্থী নয়। এই বাবা নামে নরক-কীটগুলো পরকালের মুক্তির কারণ হতে পারে না।
সময়ঃ এই রোদ এই বৃষ্টি দুপুর
তারিখঃ ০৪/০৯/১৬ ঈসাব্দ
স্থানঃ ফরিদাবাদ
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৪৩