প্রথম পর্ব
প্রতিটা মানুষের জীবনে বিয়ে একটি স্বপ্নের নাম। সবাই অনেক স্বপ্ন নিয়ে প্রেপারেশন নেই। নতুন জীবন, নতুন স্বপ্ন, নতুন একজনকে সারাজীবনের জন্য আপন করে মনের যত্মে আগলে রাখতে হবে। একটা মেয়ের জন্য আরো বেশি আনন্দের আবার অনেক বেশি কষ্টের। ছোট থেকে যাদের সাথে বড় হওয়া, যাদের হাত ধরে এতদূর আসা, যারা হাটতে শিখিয়েছে, কোলে করে আদর যত্ন করে রেখেছে। এখন সবাইকে ছেড়ে চলে যেতে হবে অন্য এক জগতে, সবাই অচেনা, অজানা সবাই, কেমন হবে তারা, কেমন ব্যবহার করবে৷ একটা মেয়ের জন্য যেমন খুশির, তেমন কষ্টেরও....
"সারা" কিছু দিন আগে বিয়ে হয়েছে তার
রান্নাঘরের দরজায় এসে শাশুড়িকে ভেতরে দেখে থমকে দাঁড়িয়ে গেলাে সারা। ভেতরে ঢুকবে কি ঢুকবে না এই দ্বিধা ঘন্দ্বে পড়ে গেলাে সে। বিয়ের দেড় মাস পেরিয়ে গেলেও এখনাে সে ঠিক মানিয়ে নিতে পারেনি শ্বশুরবাড়ির সবার সাথে। বাবা-মা আর দুই ভাইবােনকে নিয়ে ছােট পরিবার ছিল তাদের। খুব আদর যত্নে রেখেছিল তার মা বাবা। কিন্তু এখন বিশাল বড় যৌথ পরিবারে। যদিও শবশুরবাড়ির সবাইকে খুব ভালােই মনে হয়েছে তার কাছে কিন্তু সবাই যেন কেমন নিজের মত থাকতে পছন্দ করে। নিজের কাজ নিজে করে, সব কিছুতে যেন নিজের নিজের ব্যাপারটা আছে। তাই কি করবে, তাদের সাথে কেমনে মিশবে, কি করণীয় তার ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না সারা। বড় জা অন্তরাকে রান্নাঘরের দিকে আসতে দেখে হে সালাম দিলাে সারা। সালামের জবাব দিয়ে জা হেসে বলল
-তুমি এখানে দাঁড়িয়ে আছ যে?
-মা নাস্তা বানাচ্ছেন সাহায্য করতে যাবাে ভাবছিলাম।
-অন্তরা হেসে বলল, সকালের নাস্তা মা নিজ হাতে বানান ছেলেদের জন্য। এই বাড়ির মা ভক্ত ছেলেরা সবাই দিনে শুরু মায়ের হাতের খাবার খেয়ে করতে চায় তাে সেজন্য। আমি বাগানে যাচ্ছি গাছে পানি দেবাে, চলে তুমিও। জা'য়ের পেছন পেছন সারাও বাগানে গেলাে।
কিছুক্ষণ চুপ থেকে অন্তরা হেসে বলল, কিছু বলছে না যে? তােমাদের ভ্রমণ কেমন হল কিছুই তো জানালে না।
-সারা লজ্জায় মুখ লুকিয়ে হেসে বলব, জী ভাবী ভালাে হয়েছে। আচ্ছা ভাবী এই বাগানের সব ফুল বেগুনী কেন?
-ভাবী হেসে বলল, কারণ এটা তােমাদের বড় ভাইয়ার ব্যক্তিগত বাগান।
-সারা দুষ্টুমি করে বলল, ভাইয়ার বুঝি বেগুনী রং খুব পছন্দ?
-অন্তরা হেসে বলল, উহু আমার বেগুনী রং খুব পছন্দ। বাগানের আদর-যত্ন উনিই করেন সাধারণত। উনি শহরের বাইরে গিয়েছেন তাই আমি করছি। তোমার কথা বলাে কেমন লাগছে বাড়ির সবাইকে?
-জী ভালাে।
-আচ্ছা সারা বলতো আমাকে, তােমাকে খুব আপসেট কেন দেখাচ্ছে। অবশ্যই প্রথম প্রথম সবারই এমন হয়। পুরোপুরি নতুন একটা পরিবেশ, নতুন লােকজন, নতুন সম্পর্কের ভিড়ে নিজেকে মানিয়ে নিতে না পারাটাই স্বাভাবিক।
-আচ্ছা ভাবী আপনারও কি এমন হয়েছিল?
-হুম...তবে আমাকে মা খুব সাপাের্ট করেছেন পরিবারের প্রতিটা বিষয়ে। ইনশাআল্লাহ। দেখবে তােমাকেও করবেন। শাশুড়ি বৌয়ের সমস্যার সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে কমিউনিকেশন গ্যাপ। একে অন্যেকে বুঝতে হলে, জানতে হলে কথা বলতে হবে, সময় দিতে হবে তাইনা। আলহামদুলিল্লাহ! আমাদের শাশুড়ি খুব ভালো মনের মানুষ, উনি উনার সব কথা যেমন বুঝিয়ে বলেন, ঠিক তেমনি আমাদের সবার কথাও মন দিয়ে শোনেন এবং বােঝার চেষ্টা করেন।
হ্যা মার সাথে আমার যখনই কথা হয়েছে খুব ভালাে লেগেছে। আমাকে যেদিন দেখতে গিয়েছিলেন মা সেদিন বলেছিলেন, নিজ জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে জেনেছি ও বুঝেছি যে, বিয়ে কোন রূপকথার কাহিনী না। আর যদি হয়ও বা সেই কাহিনীতে একটা হলেও জীন থাকে। আর সেই জ্বীনের সাথে লড়াই করে চলতে হয় সংসারের পথে। কথাটা আমার ভীষণ ভালাে লেগেছিলাে।
-অন্তরা হেসে বলল, মা সত্যিই অনেক সুন্দর কথা বলেন। সংসারের মূলমন্ত্র গুলাে আমি মার কাছেই শিখেছি। আমার কি মনেহয় জানাে? একজন শাশুড়ি যদি তার দীর্ঘ জীবনের সাংসারিক অভিজ্ঞতা গুলাে তুলে দেন পুত্রবধূর হাতে, এরচেয়ে বড় দোয়া আর কিছুই হতে পারে না সেই পুত্রবধূর জন্য।
সত্যিই অনেক সহজ হয়ে যেতাে তাহলে সংসারের সবকিছু জানা ও বােঝা।
-হুম...ভেবে দেখাে কত চমৎকার হতাে যদি বিয়েতে অন্যান্য সবকিছুর সাথে প্রতিটা মেয়ের জন্য তার | শাশুড়ির সাংসারিক অভিজ্ঞতার একটা প্যাকেজ দেবারও প্রচলন থাকতাে। তাতে পরিবারের প্রতিটা সদস্য সম্পর্কে বেসিক ধারণা নিয়ে জীবনের নতুন সফর শুরু করতে পারতে প্রতিটা মেয়ে। চলার পথটা অনেক সহজ হতো, অনেক সুন্দর হতো তাইনা সারা৷
-সারা হেসে ভাবীকে বলল, আপনিও অনেক সুন্দর করে কথা বলেন ভাবী। সত্যি যদি এমনটা হতো।
-হেসে, এই কথাশুলাে মা আমাকে বলেছিলেন আমার বিরের পর। কারণ মার বিরের পর মাকে অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। মা নাকি তখনই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে কষ্ট উনি করছেন উনার ছেলের বৌদেরকে কখনােই এমন কষ্ট সহ্য করতে দেবেন না। যাইহেক, আমি চাই আমার নত তুনিও এস কথা মার কাছ থেকেই জানাে। তবে কি জানাে?
-কি ভাবী?
-মার সংসার জীবনের অভিজ্ঞতাকে উপহার স্বরপ না পেলে আমিও তাে জীবনের শেষ প্রান্তে পরে বুঝতাম যে, ছােট ছােট ত্যাগ জীবনকে করে তােলে স্বপ্নিল। শুধুমাত্র জানা না থাকার কারণে ত্যাগ গুলো আমরা করতে পারি না, যারফলে বেশির ভাগ সময়ই স্বপ্নিল করে সাজাতে পারিনা জীবনটাকে।
-আপনার কথা শুনে আমার মনে আশার প্রদীপ জ্বলে উঠেছে ভাবী। আমার দৃঢ় বিশ্বাস ছােট ছােট ত্যাগের মাধ্যমে জীবনকে স্বপ্নিল করে গড়ে তােলার প্যাকেজ আমি পেরে বাবে, ইনশাল্লাহ।
-হেসে, ইনশাআল্লাহ। তুমি যাও সবাইকে নাস্তার জন্য ডাকো। আমি মার কাছে যাচ্ছি.. চলবে.......
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মে, ২০২১ রাত ১০:১৪