বাবা-মার সঙ্গে সন্তানের সুসম্পর্ক নিয়ে কুরআন এবং হাদিসে অনেক নির্দেশ ও নসিহত রয়েছে। কুরআনের এসব নির্দেশ ও হাদিসের নসিহত সন্তানের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তাওহিদের দায়িত্ব পালনের পরপরই বাবা-মার খেদমতের আহ্বান করা হয়েছে কুরআনে। হাদিসে পাকে প্রিয় নবি বাবা-মাকে জান্নাতের সঙ্গে তুলনা করেছেন। যারা বাবা-মার খেদমত করে তাদের সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারবে না। তাদের জন্য সুস্পষ্ট জাহান্নামের কথা বলেছেন বিশ্বনবি।
হুজুর ভাড়া করে এনে দোয়া করানো, কুরআন তেলাওয়াত করানো, খাবারের আয়োজন করা ইত্যাদি সমাজে এখন খুব প্রচলিত। কিন্তু নিজের মা বাবা'র সাথে সদাচরণ করে না। বাপকে গালিগালাজ করে ইনকাম করতে পারে না তাই, মা কে গালিগালাজ করে বাসায় কাজ করতে পারে না তাই। অথচ তিনি সমাজে বড় দানশীল ব্যক্তি। প্রতি দুই মাস অন্তর অন্তর খতমে কুরআনের আয়োজন করা হয় বাড়িতে। হুজুররা মন ভরে খেয়ে বড় বড় করে দোয়া যাতে পরিবারের সবার গুনাফ মাফ করে আল্লাহ তাদের জান্নাতুল ফেরদৌসের বাসিন্দা বানায়৷ অথচ ঘরেই নিজের বাবা মার সাথে অসদাচরণ করে। অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে।
আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-
وَقَضى رَبُّكَ أَلّا تَعبُدوا إِلّا إِيّاهُ وَبِالوالِدَينِ إِحسانًا إِمّا يَبلُغَنَّ عِندَكَ الكِبَرَ أَحَدُهُما أَو كِلاهُما فَلا تَقُل لَهُما أُفٍّ وَلا تَنهَرهُما وَقُل لَهُما قَولًا كَريمًا
বাংলা অনুবাদ : আর তোমার রব আদেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তাঁকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদাত করবে না এবং পিতা-মাতার সাথে সদাচরণ করবে। তাদের একজন অথবা উভয়েই যদি তোমার নিকট বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদেরকে ‘উফ’ বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না। আর তাদের সাথে সম্মানজনক কথা বল। [১৭:২৩] বনী-ইসরাঈল
একই সুরার অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা মাতা পিতার জন্য দোয়াও শিক্ষা দিয়েছেন।
وَاخفِض لَهُما جَناحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحمَةِ وَقُل رَبِّ ارحَمهُما كَما رَبَّياني صَغيرًا
বাংলা অনুবাদ :
আর তাদের উভয়ের জন্য দয়াপরবশ হয়ে বিনয়ের ডানা নত করে দাও এবং বল, ‘হে আমার রব, তাদের প্রতি দয়া করুন যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে লালন-পালন করেছেন’। [১৭:২৪] বনী-ইসরাঈল
হাদিসে রাসূল (সাঃ) এ ইরশাদ করেছেন
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘সে ক্ষতিগ্রস্ত হোক! সে ক্ষতিগ্রস্ত হোক! সে ক্ষতিগ্রস্ত হোক!সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন, কে সেই ব্যক্তি? হে আল্লাহর রাসুল! সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।তিনি উত্তরে বললেন, ‘যে ব্যক্তি তার পিতামাতা উভয়কে কিংবা তাদের একজনকে তাদের জীবদ্দশায় পেয়েছিলো কিন্তু (পিতামাতার খেদমত করে) জান্নাত অর্জন করতে পারলো না।’ (মুসলিম)
একদিন হজরত মুয়াবিয়া ইবনে জাহিমা আসসালামী (রাঃ) রাসুল (সাঃ)-এর খেদমতে হাজির হয়ে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি জিহাদ করতে ইচ্ছুক। এ ব্যাপারে আপনার পরামর্শ কী? জবাবে রাসুল (সাঃ) বললেন, তোমার মা আছেন? তিনি বললেন, আছেন। রাসুল (সাঃ) ইরশাদ করেন, মায়ের সেবায় নিয়োজিত থাকো, কেননা তার পায়ের নিচেই জান্নাত।
ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষের কাছে তার মা অতি মূল্যবান হয়ে থাকে। শুধু মানুষ কেন? পৃথিবীর প্রতিটি প্রাণীই তার মায়ের কাছে ঋণী। সে ঋণ শোধ করার কোনো উপকরণ আল্লাহপাক দুনিয়ায় সৃষ্টি করেননি।
ইসলাম মায়ের মর্যাদাকে মহিমান্বিত করেছেন। এ ব্যাপারে আল্লাহ কোরআনে বলেন
وَوَصَّينَا الإِنسانَ بِوالِدَيهِ حَمَلَتهُ أُمُّهُ وَهنًا عَلى وَهنٍ وَفِصالُهُ في عامَينِ أَنِ اشكُر لي وَلِوالِدَيكَ إِلَيَّ المَصيرُ
বাংলা অনুবাদঃ আমি মানুষকে তার মা-বাবার সঙ্গে (সদাচরণের) নির্দেশ দিয়েছি। তার মা কষ্টের পর কষ্ট ভোগ করে তাকে গর্ভে ধারণ করে। আর তার দুধ ছাড়ানো হয় দুই বছরে; সুতরাং আমার শুকরিয়া ও তোমার মা-বাবার শুকরিয়া আদায় করো(সুরা লুকমান : ১৪
একবার এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর কাছে এসে জিজ্ঞাসা করল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার কাছে কে উত্তম ব্যবহার পাওয়ার বেশি হকদার? তিনি বললেন, মা। লোকটি বলল, তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার মা। সে বলল, তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার মা। সে বলল, তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার বাবা- (বোখারি-মুসলিম)।
মায়ের ত্যাগের তুলনা হয় না: সন্তানের জন্য তুলনামূলকভাবে মা-ই বেশি ত্যাগ স্বীকার করেন। গর্ভধারণ, দুধপান, রাত জেগে সন্তানের তত্ত্বাবধানসহ নানাবিধ কষ্ট একমাত্র মা-ই সহ্য করেন। তা ছাড়া সন্তানের প্রতি মা-ই সবচেয়ে বেশি যত্নবান ও বেশি আদর-সোহাগ করে থাকেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুন, ২০২২ বিকাল ৩:৪২