somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প : ব্রেইন ডেথ

১৬ ই অক্টোবর, ২০১১ রাত ১১:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মিলনের এত সকালে ঘুম ভাঙ্গে না।কি কারণে জানি আজ ভেঙ্গে গেল।ঘুমে ঢুলু ঢুলু চোখে দেখল পাঁচটা পঁয়ত্রিশ বাজে।

আবার ঘুমাবে কি না এই নিয়ে সে ঘুমের ঘোরেই চিন্তা করতে লাগল।আজ আই সি ইউ তে ডিউটি আটটা থেকে।এখন ঘুমালে যদি সকালে উঠতে দেরি হয়ে যায়।ওই দিন পাঁচ মিনিট এদিক সেদিক হয়েছিল বলে ইন চার্জের কাছে কি ঝাড়িটাই না খেতে হয়েছিল।নাহ,ঘুমানো যাবে না।আড়মোড়া ভেঙ্গে মিলন উঠে বসল।

ক্যান্টিনে বসে যখন সে চা খাচ্ছে,তখন সার্জারি ডিপার্টমেন্টের শরিফ এসে পাশে বসল।মিলন হাসি মুখে বলল,কি শরিফ,কি খবর?কাল রুটিন ও টি কয়টা পর্যন্ত চলল?"শরিফ হাসি মুখে বলল,"আরে বস,আপনি ইভিনিং শেষে যাওয়ার পর আরো অনেকগুলো কেস হল।প্রায় তিনটা পর্যন্ত ও টি চলেছে।শেষ দিকে তো সমর দা অ্যানেস্থেসিয়া দিতেই চাইছিলেন না।"

মিলন মনে মনে হাসল।এই হল তার প্রফেশনের আজীবন সমস্যা।রাত গভীর হলে আর অ্যানেস্থেসিয়া দিতে ইচ্ছে করে না।সে তার নিজের মধ্যে জিনিসটা লক্ষ্য করেছে।এর কি কারণ হতে পারে?মিলন নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করল।

"থাক,শরিফ...যাই।"মিলন উঠতে উঠতে বলল।"কোন ও টি তে ডিউটি আজ,ভাই?"শরিফ চায়ে চুমুক দিল।"আজ ওটিতে না,আই সি ইউ তে ডিউটি"মিলন দরজার দিকে পা বাড়াল।

পিপ পিপ করে শব্দ হচ্ছে,তো হয়েই যাচ্ছে।মিলন মনিটরের দিকে তাকালো।এই রোগীটা গত কয়েকদিন ধরে পড়ে আছে।ব্রেইন ডেথ হয়ে গেছে,শুধু ক্ষমতাধর আত্মীয়স্বজনের অনুরোধে ভেন্টিলেটর খুলে দেয়া যাচ্ছে না।কি যে ভাবে মানুষগুলো?তাদের কয়েকবার ডেকে এনে বোঝানো হয়েছে,লাভ হয় নি।এই বেডটা খালি হলে অন্য রোগী এনে রাখা যেত।বেঁচে যেতে আরো কয়েকটি প্রাণ।মিলন মনে মনে ওই বেডের আধমরা বুড়োটাকে কিছুক্ষণ ধমকাল।

আবার পিপ পিপ...পিপ পিপ...নাহ,আর পারা গেল না।মিলন উঠে রোগীটার বেডের কাছে গেল।কাল মোটা মত একটা লোক,মুখে খোঁচা খোঁচাপাকা দাড়ি।মিলন তার কলিগদের কাছে শুনেছে,এই বেটা স্থানীয় এম পি র ফুপাত ভাই,নিজেও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিল।"কি চেয়ারম্যান,সারা জীবন কয় মন গম সরাইছেন?"মিলন মনে মনে হেসে উঠল।

নাহ...এভাবে কতক্ষণ বসে থাকা যায়?মিলন ব্যাগ থেকে বই বের করল।পড়তে ইচ্ছা করছে না যদিও,তাও যদি সময়টা একটু কেটে যায়।পাতা উলটে পালটে ব্রেইন ডেথ চ্যাপ্টারে চোখ আঁটকে গেল।সব কিছুই পড়া আছে,শুধু এক্সামিনারদের সামনে গেলে মাথা ব্ল্যাঙ্ক হয়ে যায়।ইশ...কবে যে পোস্ট গ্র্যাজুএশনটা কমপ্লিট হবে?মিলনের দীর্ঘশ্বাস আরো দীর্ঘতর হল।

"কি অ্যানেস্থেটিস্ট সাহেব,কেমন আছেন?"মিলন ভূত দেখার মত চমকে উঠল।কে কথা বলল?নার্সেস স্টেশনের দিকে তাকালো,নাহ ওখানে তো কেউ নেই।একটু আগেই তো সিস্টার তার পারমিশন নিয়ে বাইরে গেল।রোগীদের বেডের দিকে তাকালো,নাহ ছয়টি অথর্ব প্রাণ যন্ত্রের জঞ্জালে শুয়ে আছে।মেশিনে শব্দ হচ্ছে বিপ...বিপ...।মিলনের মুখে একটু মুচকি হাসি খেলা করে গেল।চেয়ারম্যান সাহেবকে নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করায় তার হ্যালুছিনেশন হচ্ছে।হায় রে চেয়ারম্যান,মরার পরও আমজনতারে ভয় দেখাস?মিলনের হাসি আরেকটু প্রসারিত হল।

মিলন আবার বইতে ফিরে গেল।বিপ বিপ বিপ বিপ...চলছে তো চলছেই।মিলন বইয়ের ভিতর ঢুঁকে গেল।ব্রেইন ডেথের পড়াগুলো আজ কেমন নতুন নতুন ঠেকছে?চেয়ারম্যান সব উলটে পালটে দিয়ে গেল নাকি? "কি অ্যানেস্থেটিস্ট সাহেব,কেমন আছেন বললেন না?"মিলনের চিন্তা হঠাৎ করে স্থাণু হয়ে গেল,এবার সরাসরি বেড নাম্বার চারের শুয়ে থাকা চেয়ারম্যানের দিকে তাকাল।নাহ,নিথর দেহ তো ওভাবেই পড়ে আছে।"আমাকে দেখবেন না,আপনার আর আমার মাঝে টেলিপ্যাথ হচ্ছে।দেখার উপায় নেই।"এইবার মিলন খেয়াল করল,কথাগুলো শুনতে পাচ্ছে সে সরাসরি মস্তিষ্কের ভেতরে,মনে হচ্ছে কেউ একজন তার অডিটরি কর্টেক্সে বসে কথা বলছে।

"শুনুন,ডাক্তার সাহেব,নিজে কোন কথা বলবেন না,আমাকে অনুভব করতে চেষ্টা করুন।নিজে তো অনেক রোগীর প্রেশার মেপেছেন,নিজের বিপি টা মাপা হয়েছে কখনো?আপনার সেকেন্ডারী হাইপারটেনশনে ভুগছেন কয়েক বছর ধরে।ভাবছেন যে আমি এসব কথা কিভাবে বলছি?কারণ আমি আপনার মস্তিষ্ককে ব্যবহার করতে পারছি।"মিলন কি করবে বুঝতে পারছে না।সে দর দর করে ঘামতে লাগল।

"হাইপারটেনশন থাকার কারণে আপনার ব্রেইনের রক্তনালিকার অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস হয়ে গেছে।কিছুক্ষণ আগে আপনার আপনি যখন আমার দেহের পাশে দাড়িয়ে চিন্তা করছিলেন,ঠিক তখনই একটি বড় রক্তনালিকায় ওই অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস প্লাক খসে গিয়ে ব্লাড ক্লট তৈরি হওয়া শুরু হয়ে গেছে।আর কিছুক্ষণের মধ্যেই আপনার ব্রেইনের একটা বড় অংশে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে।আপনার সময় আছে মাত্র চার মিনিট।"

মিলন কুল কুল করে ঘামতে লাগল।কি করবে সে বুঝতে পারছিল না।কিছুক্ষণের মধ্যেই তার বমি বমি লাগতে শুরু হল।অনেক কষ্টে সে দরজার দিকে এগুতে লাগল।তার পা মেঝের সাথে যেন কেউ পেরেক ঠুকে আটকে দিয়েছে।বুকের উপর যেন কেউ হিমালয় পর্বত ফেলে দিয়েছে।কিছুক্ষণের মধ্যেই তার শ্বাস বন্ধ হয়ে আসল,এক গভীর শূন্যতা এসে তাকে চেপে ধরল।ধীরে ধীরে মিলনের দেহখানি নিথর হয়ে গেল।

নার্স এসে যখন মিলনকে আবিষ্কার করল,তখন সে দেহে আর প্রাণ নেই।নার্স দৌড়ে গিয়ে অন্যান্য ডাক্তারদের খবর দিল।আই সি ইউ ইনচার্জ দীর্ঘ সময় সি পি আর দিতে থাকলেন।অবশেষে মুখের ঘাম মুছে কলিগদের দিকে তাকিয়ে বললেন,"সব শেষ।ব্রেইন ডেথ হয়ে গেছে।"
১৭টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তোমাকে লিখলাম প্রিয়

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০২ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০১


ছবি : নেট

আবার ফিরে আসি তোমাতে
আমার প্রকৃতি তুমি,
যার ভাঁজে আমার বসবাস,
প্রতিটি খাঁজে আমার নিশ্বাস,
আমার কবিতা তুমি,
যাকে বারবার পড়ি,
বারবার লিখি,
বারবার সাজাই নতুন ছন্দে,
অমিল গদ্যে, হাজার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

×