somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাল্টিকের পাড়ে নববর্ষ ..... ..... ..... (শেষ পর্ব)

০৭ ই জানুয়ারি, ২০০৮ সন্ধ্যা ৭:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

.
.
.

পর্ব ১
পর্ব ২
পর্ব ৩


নতুন বছর শুরু হয়ে গেছে .. আমার দোস্তরা এক অপরকে জড়িয়ে ধরে নববর্ষের উইশ করতে লাগল। জীলন আমাকে জড়িয়ে বললো
- দুস্ত তোরে আমি অনেক পছন্দ করি, এই কথাডা তোরে আগে কখনো কওয়া হয় নাই। এই নতুন বছর থিকা তোর জীবনের প্রতিটা মুহূর্ত আনন্দে কাটুক।
ডেমিয়েন জড়িয়ে বললো -
- তুই আমার ভাই ঠিকাছে !! আজকের থিকা তোর সমস্যা আমারও সমস্যা বুঝলি ?
আমি নিজেই আবেগাপ্লুত হয়ে গেলাম আমার ভিনদেশী দোস্তদের কথা শুনে।
সুসান এসে বললো -
- এইবার দেশে গেলে অবশ্যই আমার জন্য একটা শাড়ি নিয়া আসবি কথা দে ।
আমি কথা দিতেই আশকা, কামিলা, ক্যারোলিনাও এসে একই আব্দার করলো । কি আর করা !! "আই এ্যাম টু ইয়ং টু সে নো টু এ ওমেন"

জিবি পাভেল ডেমিয়েন টমেক মিলে আর্থারকে শূন্যে ছুড়ে লুফোলুফি করতে লাগলো..এরপর শুরু হলো বালুতে গড়াগড়ি, একজনকে বালুতে ফেলে সবাই একে একে ঝাপিয়ে পরে তার ওপর। দেখতে দেখতে সবাই বালুতে গড়াগড়ি শুরু করলো মেয়েরাও রেহাই পেল না। ফটাস করে একটা শব্দ শুনলাম, টমেক শ্যাম্পেনের বোতল খুলে সবাইকে শ্যাম্পেনে গোসল করিয়ে দিলো। আমি ছবি তুলছিলাম । জিবি আমাকে দেখিয়ে বললো -
- ঐ ব্যাটারে ধর , ওরে বালুতে চুবা ।
বলার সাথে সাথে ৩/৪ জন মারমুখি ভাবে আমার দিকে এগিয়ে আসতেই আমি কাতর স্বরে বল্লাম -
- আমারে মাফ কর , আমার লগে অনেক জরুরি জিনিস আছে , এই দেখ আমার হাতে ক্যামেরা, পকেটে পাসপোর্ট, টি আর সি কার্ড, মোবাইল, আইপড, মানিব্যাগ, ক্রেডিট কার্ড .. হুলুস্থুলের ভিতরে কখন কোনটা হারাই !
ভেবেছিলাম ওদের দিলে একটু রহম হবে , আমি কিছু বোঝার আগেই দোস্তরা আমার পকেট থেকে সবকিছু বের করে বললো -
- এডি অখন আমগো জিম্মায়, সুসান রে দিতাসি রাখতে, এইবার ক তোর আর কোন সমস্যা আছে বালুতে চুবানি খাইতে !!
বলেই আর দেরি করলো না জাপটে বালুতে ফেললো আমাকে। কানে , মাথায়, মুখে বালুতে মাখামাখি। আমার শখের জ্যাকেট, ইস্ত্রি করা নতুন জিন্স বালুতে ঢেকে গেল। ফুটবল খেলায় একজন গোল দিলে বাকিরা যেমন খুশীতে একে একে ঝাপিয়ে পড়ে নিচের প্লেয়ারটাকে আলুভর্তা বানায় সেরকম অবস্থা। বালুতে মাখামাখির এক পর্যায়ে 'নিরব ঘাতক' ব্রোদের ঘোষনা দিলো -
-এখন যুদি কেউ ''নাঙ্গু বাবা' হইয়া সাগরে ডুব দিয়া আসতে পারস তারে নগদ এক বোতল শ্যাম্পেন উপহার দেয়া হইবো।
'তারছিড়া' মিখায়েল সবার আগে ফটাফট ওর শরীর থেকে সব খুলে ফেললো (আন্ডু ছাড়া)। সবাই মিলে না ধরলে মিখায়েল ঠিকই সাগরে ঝাপায় পড়তো । সবাই মিখায়েল কে আটকালো কারন টেম্পরেচার তখন -৪ , আর বাল্টিক হচ্ছে পৃথিবীর অন্যতম ঠান্ডা সাগর। ব্রোদের হতাশ কণ্ঠে বললো -
- আমগো মধ্যে তাইলে বাপের বেটা কেউ নাইক্কা !! বরই আফসোস

দৌড়ঝাপ, মারামারি, বালু ছোড়াছুড়ি এগুলো করে রাত ২টা বাজলো। সাগর পাড়ে একটু দুরে কনসার্ট হচ্ছিলো , আমার দোস্তরা দুইভাগ হয়ে গেল একভাগ বাসায় যেতে চাচ্ছে (এদের মধ্যে বেশীরভাগই মেয়ে) আরেক ভাগ কনসার্টে যাবার পক্ষে, ভোটাভুটি হলো কনসার্ট পার্টি জিতলো, ছুটলাম সবাই কনসার্টে। গানের ভাষা বুঝিনা তাতে কি! বন্ধুদের সাথে লাফালাফি করলাম ঠিকমতই। ঝিরিঝিরি তুষার পড়লো মাঝে কিছুক্ষন , পাশে দাড়নো পাভেল কে বল্লাম -
- দুস্ত তুষার পড়া শুরু হইসে লও ফুটি
- আরে ব্যাটা এইডা হইলো উত্তর ইউরোপ এইখানে তুয়ার পড়বো নাতো কি সরবত পড়বো !! লাফাইতাসোস লাফাইতে থাক , তুষারের গুল্লি মার ।

গানবাজনা শেষ হলো রাত ৩টায়, জনস্রোত মেট্রো ধরতে হাটা দিলো স্টেশনের দিকে,আমরাও ভীড়ের সাথে হাটছি ঠিক তখনই খুব ক্ষীন ভাবে কানে এলো হেমন্তের গলা "জুঁথি বনে ঐ হাওয়া করে শুধু আসা যাওয়া....এই মেঘলা দিনে একলা ঘরে থাকে নাতো মন...." চমকে উঠলাম আমি, গানের উৎস খুজতে লাগলাম পাশে অনেকগুলো দোকান অন্যপাশে অনেকগুলো ছোট জাহাজ যেগুলো এখন রেঁস্তোরা হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। আমি পাগলের মত বোঝার চেষ্টা করছি গানটা কোথায় বাজছে, আমার বন্ধুরা সব চলে যাচ্ছে, আমি একবার ডানে যাচ্ছি একবার বাঁয়ে যাচ্ছি আমাকে ঠেলে মানুষের ভীড় সামনে যাচ্ছে, অনেক খোঁজার পরও পেলাম না।

সদলবলে হোস্টেলে ফিরে এলাম, মিখায়েলের রুমে এসে দেখি একটা ছেলে মিখায়েলের বিছানায় নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে, কেউ চেনে না এটা কে। মিখায়েল ডাকদিয়ে বললো-
- ঐ হালা তুই কেডা !!
ছেলেটা ঘুমের ঘোরে কি সব বললো বুঝলাম না। অনেক ডাকাডাকির পরও ছেলেটা উঠলো না। মিখায়েল বললো
- হালায় ঘুমাক, কালকা সকালে হালারে সিস্টেম করতাসি খাড়া । আমরা সবডি স্লিপিং ব্যাগে ঘুম দেই আয় ।
আমাকে বললো -
- দুস্ত তুমার স্লিপিং ব্যাগে শুইতে অসুবিধা নাই তো !!
বললাম -
- জিন্দিগিতেও শুই নাইক্কা, তয় শুইতে পারুম অসুবিধা হইবো না ।

ভোর ৫টায় ক্লান্ত শরীর নিয়ে জীবনে প্রথম স্লিপিং ব্যাগের ভেতর ঢুকে ঘুমালাম। নিজেকে কুরিয়ারের প্যাকেট মনে হচ্ছিলো।

(আরো দুদিন ছিলাম রুসটকে, বহু ঘটনা ঘটসে ঐ দুই দিন। ভেবেছিলাম পুরো ট্যুরের কাহিনি লিখবো, সবাইরে আর বিরক্ত করতে ইচ্ছা করতাসেনা । সবকিছুরই একটা সীমা আছে, লেখা শুরু করসি বইল্লা থামার নাম নিমু না এইডা ঠিক না। এখানেই সমাপ্তি দিলাম......... )
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মার্চ, ২০০৯ রাত ১১:২৩
১৭টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগ লিখেছি: কথাটার পরে ভাসছে ১১ বছর ১১ মাস... কথাটা

লিখেছেন আবু ছােলহ, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৮

ব্লগ লিখেছি: কথাটার পরে ভাসছে ১১ বছর ১১ মাস... কথাটা

গুগল থেকে নেয়া ছবি।

সামুতে মাল্টি নিক নিয়ে অনেকেই কথা বলেন। অনেকের কাছে মাল্টি যন্ত্রণারও কারণ। শুধু যন্ত্রণা নয়, নরক যন্ত্রণাও... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×