somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

৭১ এর যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য তৈরি আইন কোনো সভ্য সমাজেই চলতে পারে না

১৬ ই এপ্রিল, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন ও এ আইনের অধীনে গঠিত ট্রাইব্যুনাল, তদন্ত সংস্থা ও আইনজীবী প্যানেলের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন দেশের শীর্ষ স্থানীয় আইনজীবী ও আইনজীবী সংগঠনের নেতারা। তারা বলছেন, ১৯৭৩ সালের সংশোধিত এ আইনে দেশের সর্বোচ্চ আইন-সংবিধান, সর্বোচ্চ আদালত এবং মানবাধিকার ও নাগরিকদের মৌলিক অধিকারের অস্তিত্বকে অস্বীকার করা হয়েছে। শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বের কোনো সভ্য সমাজে
এ ধরনের জংলি আইন তৈরির নজির নেই।

আজ সকালে হোটেল শেরাটনে ন্যাশনাল ফোরাম ফর প্রটেকশন অব হিউম্যান রাইটস আয়োজিত এক সেমিনারে সাবেক বিচারপতি এবং আইনজীবীরা এ অভিমত ব্যক্ত করেন।

তারা বলেন, দেশে কোনো সামরিক সরকার কিংবা বিগত জরুরি অবস্থার সরকারের তৈরি করা জরুরি বিধিমালায়ও মৌলিক ও মানবাধিকারের বিষয়গুলো সুরক্ষিত ছিল। আইনের বিভিন্ন ধারা উল্লেখ করে তারা বলেন, এ আইনের প্রতিটি ধারা সংবিধান, দেশে প্রচলিত ফৌজদারি কার্যবিধি এবং সাক্ষ্য আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এ আইন বাংলাদেশকে বিপর্যয় ও বিশৃঙ্খলার দিকে নিয়ে যাবে।

বক্তারা বলেন, ১৯৭৩ সালে মূল যুদ্ধাপরাধী হিসেবে চিহ্নিত ১৯৫ জন পাকিস্তানি নাগরিকের বিচারের জন্য এ আইন তৈরি করা হয়েছিল। তাদের ছেড়ে দেয়ার কারণে ৩৭ বছর পর এখন আর এ আইন কার্যকর নয়।

জাতিসংঘ স্বীকৃত আন্তর্জাতিক আদালত ও বাংলাদেশ সরকারের তৈরি করা আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের তুলনামূলক পার্থক্য তুলে ধরে বক্তারা বলেন, শুধু আন্তর্জাতিক শব্দটি ছাড়া এখানে কোনো কিছুতেই মিল নেই। জাতিসংঘ বা আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহ we‡k^i বিভিন্ন দেশ থেকে অভিজ্ঞ, দক্ষ ও নিরপেক্ষ বিচারকদের তালিকা করে তাদের মধ্য থেকে নির্বাচনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের বিচারক নিয়োগ করে থাকে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের এটাই হচ্ছে জাতিসংঘ স্বীকৃত পদ্ধতি।

অপরদিকে বাংলাদেশের বর্তমান সরকার তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্যই গোঁজামিল দিয়ে আইন তৈরি করে শাসক দলের ব্যক্তিদের দিয়ে ট্রাইব্যুনাল, তদন্ত সংস্থা ও আইনজীবী প্যানেল গঠন করেছে। সরকারের মন্ত্রী ও শাসক দলের শীর্ষ নেতারা বিচারের আগেই ফাঁসির দড়ি প্রস্তুত করার ঘোষণা দিয়ে বস্তুত প্রহসনের বিচারের ইঙ্গিত দিয়েছেন। এটা হলে ২৬ হাজার আইনজীবী সংবিধান ও আইনের শাসন সমুন্নত রাখতে মাঠে নামবে।

আজ সকালে হোটেল শেরাটনে অনুষ্ঠিত এ সেমিনারে বক্তব্য রাখেন জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক আদালতের সাবেক বিচারক ও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি বিচারপতি টিএইচ খান, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ও সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি মো. আবদুর রউফ, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির বর্তমান সভাপতি এডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ও জাতীয় সংসদের সাবেক স্পিকার ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার এমপি, বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দিন আহমাদ, সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক, ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট জয়নুল আবেদিন, ব্যারিস্টার মাহবুউদ্দিন খান এমপি প্রমুখ। এছাড়াও অনুষ্ঠানে সাবেক এটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার এজে মোহাম্মদ আলী ও ব্যারিস্টার ফিদা এম কামালসহ চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট আইনজীবী সমিতিসহ জেলা আইনজীবী সমিতির প্রতিনিধিরা সংহতি প্রকাশ করে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ন্যাশনাল ফোরাম ফর প্রটেকশন অব হিউম্যান রাইটস-এর সদস্য সচিব এডভোকেট মুহাম্মদ তাজুল ইসলাম।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিচারপতি টিএইচ খান বলেন, বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের মাধ্যমে প্রকৃত আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। এখানে একমাত্র আন্তর্জাতিক শব্দ ছাড়া আর কিছুতেই মিল নেই। মূল কথা হচ্ছে কিসে আর কিসে- ধানে আর তুষে, কোথায় লন্ডনের লিভারপুল আর কোথায় বাংলাদেশের ফকিরাপুল। জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আর বাংলাদেশ সরকারের গঠন করা আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে দিন আর রাত এবং আকাশ আর পাতাল। আন্তর্জাতিক আদালতের বিচারকদের নিয়োগ হয় সারা বিশ্ব থেকে অভিজ্ঞ ও দক্ষ জজদের সমন্বয়ে। আর আমাদের দেশে আইন ও আদালতটি করা হয়েছে এমনভাবে যেন মনে হচ্ছে, যিনি ছেলের মা তিনিই মেয়ের মা। এ অবস্থায় বিবাহ আইন সম্মত হবে না। বাংলাদেশে যে ট্রাইব্যুনাল আইন করা হয়েছে তার প্রতিটি ধারাই সংবিধান ও মানবাধিকার এবং দেশের প্রচলিত আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এ ধরনের আইন কোনো সভ্য সমাজেই চলতে পারে না। এ আইনটি যে পড়বে, সহজেই আইনের দুর্বলতা ও কালো ধারাগুলো বুঝতে পারবে। সরকারের মন্ত্রী ও নেতারা বলছেন, তারা সাজা দেবেনই। কেউ কেউ বলছেন ফাঁসির দড়ি কিনে রেখেছেন। এ অবস্থায় বিচারের নামে যে প্রহসন হবে, সেটা বুঝতে বাকি নেই।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, মরহুম শেখ মুজিবই ১৯৫ জন মূল যুদ্ধাপরাধীকে ক্ষমা করে আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন বিলুপ্ত করে গেছেন। কাজেই কোনো সহযোগীর বিচার করতে হলে ওই অপরাধে আওয়ামী লীগ ও শেখ মুজিবেরই বিচার হতে হবে আগে। এছাড়াও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের যদি উদ্যোগ নিতেই হয়, তাহলে রক্ষীবাহিনী ও তাদের নেতাদের বিচার হতে হবে। তাদের হাতেই দেশের হিন্দু, মুসলমান নির্বিশেষে দেশের নাগরিকরা সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হয়েছিলেন। তিনি বলেন, আমরা আইনজীবীরা আইনের শাসনের পক্ষে। সরকার আইনের আওতায় যে কোনো অপরাধীর বিচার যে কোনো সময় করতে পারে। কিন্তু সেটা জঙ্গল আইন ও সংবিধান পরিপন্থী আইন দিয়ে করতে গেলে প্রতিরোধ করা হবে।

ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার বলেন, আইনটির প্রতিটি ধারাই মানবাধিকার ও সংবিধানের পরিপন্থী। এ আইনের বিচার করা যাবে না। গায়ের জোরে বিচার করতে গেলে উল্টো বিচারের উদ্যোক্তারাই আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াবেন। এটি নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কেননা, কোনো জঙ্গল বা কালো আইন দিয়ে বিচার করা আদালতের কাজ নয়।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই এপ্রিল, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:১২
১৮টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আরো একটি সফলতা যুক্ত হোলো আধা নোবেল জয়ীর একাউন্টে‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪০



সেদিন প্রথম আলো-র সম্পাদক বলেছিলেন—
“আজ শেখ হাসিনা পালিয়েছে, প্রথম আলো এখনো আছে।”

একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আজ আমি পাল্টা প্রশ্ন রাখতে চাই—
প্রথম আলোর সম্পাদক সাহেব, আপনারা কি সত্যিই আছেন?

যেদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১১

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

ছবি এআই জেনারেটেড

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ প্রতিবাদের ভাষা নয় কখনোই
আমরা এসব আর দেখতে চাই না কোনভাবেই

আততায়ীর বুলেট কেড়ে নিয়েছে আমাদের হাদিকে
হাদিকে ফিরে পাব না... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×