খালেদার গাড়ি বহরে হামলাকারীদের মধ্যে দৈনিক দিনকালে ঝানু সাংবাদিকদের সূত্রে একজনের রাজনৈতিক পরিচয় উদ্ধার করা গেছে। তিনি মেয়র পদপ্রার্থী আনিসুল হকের মিছিলের পঞ্চাশ টাকা আর বিরিয়ানির ভাড়ায় খাটা কর্মী। জনসংযোগে নামা আনিসুল হকের সাথে একটা সেলফি তোলার জন্য যখন পিছু পিছু আগাচ্ছিল, সেই মুহূর্তেই ছবিটি তোলা হয়। এই ছবিটির কথা মাথা থেকে বাদ দিলে খালেদা জিয়ার কাফেলায় হামলার বিষয়ে আমরা আরো কিছু কারন সম্বন্ধে সচেতন হতে পারবো । যে কারণগুলোতে এবং যাদের দ্বারা খালেদা জিয়ার গাড়ি-কাফেলায় হামলা হতে পারে তা একে একে উল্লেখ করছি-
১. হরতাল-অবরোধের (পেট্রলবোমা প্র্যাকটিসের) দিনগুলোতে এই কাওরান বাজারের খেটে খাওয়া ভুক্তভোগী লোকগুলো খালেদা জিয়াকে হাতের নাগালে পেয়ে সাধুবাদ জানানোর লোভ সামলাতে পারেনি। এটা তাদের কাজ হতে পারে।
২. ১৩০ জন পুড়ে কয়লা হওয়া হতভাগ্যের আত্মীয় স্বজন হতে পারে এরা। নতুবা সাবেক এক প্রধানমন্ত্রীর গাড়ী বহরের মধ্যে হামলা চালানোর মতো এক ক্ষ্যাপাটে হবেন কেন তারা।
৩. এরা জামাত-শিবিরের লোক হতে পারে। 'শহীদ' কাদের মোল্লা এবং 'শহীদ' কামারুজ্জামানের 'শাহাদাত বরণের' পর এরা বুঝে গিয়ে রাজনৈতিক মিত্র হিসেবে বিএনপির ভূমিকা শেরে বাংলার মাঠে আ্যাম্পায়ার এনামুল হকের চেযে বেশি কিছু নয়। তাই বিএনপির নেতাকর্মীরাও যেন তাদের পিতৃঅভাবের মতো মাতৃঅভাব অনুভব করতে পারে সেই উদ্দেশ্যে হামলা করেছেন।
৪. শরীয়ত মোতাবেক পরিচালিত ইসলামিক দল-আনসারুল্লাহ বাংলা টিম এর সদস্যরা এই কাজ করে থাকতে পারেন। বেআব্রু বসন, পার্লার মালিশ চুল, শিফন স্বচ্ছ্ব শাড়ি, পরপুরুষ সাথে নিয়ে এই সিক্সটিনাইন মহিলাকে (শুভ জন্মদিন খালেদা জিয়া) সূরা আল ইমরান মাথায় উঠে গিয়েছিল তাদের। লোন মুজাহিদদের ভাইবারে ডেকে নিয়ে এই হামলা চালিয়েছে তারা।
৫. কাওরান বাজারের প্রভাবশালী বিক্রেতা মতিউর রহমান এবং আনিসুল হক এই কাণ্ডটি ঘটিয়েছেন। তাদেরকে এ কাজের জন্য রিমান্ডে নেওয়ার আহবান জানাই। তাদের হাত এর পিছনে থাকার যে সম্ভবনাগুলো রয়েছে-
ক. খালেদা জিয়া এগারটায় ঘুম থেকে উঠেন। তাই আনিসুল হকের ভোর রাত থেকে শুরু করে সকাল নয়টা-দশটা পর্যন্ত দেওয়া সেলফি-স্ট্যাটাস কিছুই দেখেন না তিনি। তার প্রতিক্রিয়ায় একটা চাপা ক্ষোভ কাজ করছে ছোট গদ্যের জাদুকর আনিসুল হকের মধ্যে।
খ. বাংলা কম বোঝেন বলে খালেদা জিয়া দেশের একমাত্র ফটোশপ প্রযুক্তি সম্বলিত প্রথম আলোর কলাম বাদ দিয়ে ডেইলি স্টার পত্রিকাটি পড়েন, মতিউর রহমানের মধ্যেও এর প্রতিক্রিয়া একটা চাপা ক্ষোভ কাজ করে।
গ. আরাফাত কোকো ব্যতিত খালেদা জিয়ার পরিবারের আর কেউ 'কিশোর আলো' পত্রিকাটি পড়তেন না। তারেক রহমানের মাঝে আলো প্রবেশ করতে না দেওয়ার জন্য মতিসুল ক্ষ্যাপ্পা ছিলেন খালেদা জিয়ার উপর। তারই ফলশ্রুতি ২০ এপ্রিলের এই ন্যাক্কারজনক হামলা।
ঘ. প্রথম আলোর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইবার বাড়ানোর উদ্দেশ্যে নিয়োগকৃত ফ্রিল্যান্সারদের কুকর্ম এটি।
ঙ. অস্পষ্ট ক্ষোভ, চাপা দুঃখ, পাতলা রাগ ইত্যাদি ইত্যাদি।
৬. চলমান এইচ.এস.সি-র কোমলমতি শিক্ষার্থীদের দুষ্টমতির ফল হতে পারে এটি। পরীক্ষায় প্রিপারেশন খারাপ থাকার কারণে অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে এই কুকর্মটি সাধন করতে পারে তারা। এফবিআইয়ের রিপোর্টে জানা যায়, খালেদা জিয়ার বাড়ির সামনে বালুর ট্রাক আর ইটের ট্রাক রাখার দুর্বুদ্ধি কোন এক এস.এস.সি শিক্ষার্থীর মাথা থেকে বেরিয়েছিল।
৭. 'কাওরান বাজার ট্রাক মালিক সমিতি'- হরতাল অবরোধের সত্তর-আশি দিন পেট্রোলে পুড়ে কয়লা হওয়ার পরে তারা আশায় রয়েছিলো তাদের জন্য নতুন কোন চমক হয়তো আসছে। চমক আসল- কিন্তু তাদের প্রতিপক্ষে বাসের পক্ষ হয়ে। বিএনপির নব্য-শুক্রাণু তাবিথ 'বাস' মার্কায় নির্বাচনের মাঠে নামলেন। এটাকে তাদের জন্য অত্যন্ত অপমানজনক হিসেবে ঠাহর করে প্রতিবাদে নেমে এসেছেন 'কাওরানবাজার ট্রাক মালিক সমিতি'। গতকালকের প্রতিবাদটি এসেছে তাদের তরফ থেকেই।
৮. 'কাওরান বাজার বাস মালিক সমিতি'- হরতাল অবরোধে বাস পুড়িয়ে আর বোমা মেরে আবার বাস মার্কায় নির্বাচনে নামার জন্য সাধুবাদ জানাতে বাস মালিক সমিতির সদস্যরা কাওরান বাজারে যায়। সেখানে কিছু ভুল বোঝাবুঝি দরুণ সৃষ্ট ঘটনাকে আওয়ামী সমর্থিত মিডিয়া 'হামলা-টামলা' বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। ঘটনা যাই হোক- 'কাওরান বাজার বাস মালিক সমিতি'কে এই কাজের জন্য দায়ী করা যেতে পারে।
৯. মার্ভেলের এভেঞ্জারস-২ ছবির প্রমোশনের মহরতের অংশবিশেষ গতকালকের কাওরান বাজারে সংঘটিত এই ন্যাক্কারজনক কাজটি। ছবিটি প্রিমিয়ারে মুক্তির প্রাক্কালে দর্শক আকর্ষণের নানা ধরনের ফন্দি-ফিকিরের একটি গতকালকের কাওরান বাজারের ঘটনাটি। ঘটনা সংঘটনের পর স্কারলেট জোহন্সসনের অনেকগুলো উত্তেজিত পোস্টার পরে থাকতে দেখা যায় কাওরান বাজারের এখানে সেখানে।
১০. মজা লস? পেইজের এডমিন (চৌধুরী সাহেব) ও তার ভক্তসাহেবানরা ঘটিয়েছে এই কাজ। অনেকগুলো মোটিভ কাজ করছে পিছনে। একটি হলো, রাজনৈতিক শত্রুতা, মজা লসের এডমিন শেখ কামালের বোজম ফ্রেণ্ড। দ্বিতীয় কারণ, তারা এস্টাবলিশ করতে চেয়েছেন একটি উদাহরণ রেখে, মজা লস যেমন ছবি ধরে ধরে সবাইকে চিহ্নিত করেছেন, আজকে তারা না থাকলে এই কাজটি কে করবে? আরেকটি কারণ, পুঞ্জিভূত ক্ষোভ-গোস্যা, রাগ, দুঃখ, বেদনা, গরমে ঠান্ডা ডায়রিয়া ইত্যাদি।
১১. 'বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা পরিষদ'- টানা ৫০-৬০ দিনের হরতালে ফজিলত বুঝে গিয়েছেন তারা। তাই আরেকটি '২০ এপ্রিল' সংঘটনের মধ্যে দিয়ে হরতালকে কোমা থেকে বের করে নিয়ে আসার জন্য এই হীন অপকর্মটি করেছেন তারা।
১২. 'নিখিল বাংলাদেশ কেরাণীগঞ্জ- শফিউর ফারাবি মুক্তি পরিষদ'; ফারাবির মুক্তির দাবিতে নকশাল পন্থীদের মতো করে বোমা-পটকা-ইট-পাটকেল দিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করতে চেয়েছিল তারা।
১৩. জনৈক পাকিস্তানি ক্রিকেট ভক্তরা হতে পারেন হামলাকারি। পাকিস্তানের পর পর দুই দফায় লজ্জাজনক হারের কারণে তৈরী হওয়া পুঞ্জিভূত ক্ষোভ থেকে তারা এই হামলা চালিয়েছেন। টার্গেট হিসেবে খালেদা জিয়াকে বাছাই করার কারণ- পাকিস্তানের আদি ও অকৃত্রিম বন্ধু (মতান্তরের বান্ধবী) হওয়া সত্বেও বাংলাদেশকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তিনি।
১৪. 'সামাজিক ইভটিজিং' প্রচলনকারী সচেতন যুব-সমাজও হতে পারে। খালেদা জিয়ার বেআব্রু বেশভূষণ দেখে সামাজিক ইভটিজিং-এ ব্রত হয় তারা ২০০১ সালের প্রথমার্ধে। দীর্ঘ এক যুগেরও পর তাকে হাতের নাগালে পেয়ে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে খালেদা জিয়ার ডান হাত - বাম হাতের সাথে মতানৈক্য হওয়ার দরুণ এই গিয়ানজাম।
১৫. 'ইফাদ পানি' এবং 'এন.এইচ.এস. ইট প্রস্তুতকারি' প্রতিষ্ঠানের যৌথ উদ্যোগের ফলাফল হতে পারে এটি। বিপনন বিজ্ঞাপনের নানা প্রস্তুতিতে জনমত যাচাই আর গুণাগুণ পরীক্ষার অংশ হিসেবে ইট প্রস্তুতকারি প্রতিষ্ঠান ইট সরবরাহ এবং ইফাদ পানি- প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানটি খালি পানির বোতাল সাপ্লাই দিয়েছে। তাদের মালিকদের আইনের আওতায় আনা হোক।
১৬. শহীদ কামারুজ্জামানের জৈষ্ঠ্য পুত্র ওয়ামি। কামারুজ্জামানের শাহাদাত বরণের সময় দ্বিতীয় ঘনিষ্ঠ মিত্র বিএনপিকে কাছে পাওয়া যায় নি। তাই প্রথম ঘনিষ্ঠ মিত্র বার্গম্যানকে নিয়ে এই হামলা চালাতে পারে সে- যথেষ্ট জোরালো মোটিভ কাজ করছে এর পিছনে।
১৭. বাংলাদেশ পোল্ট্রি শিল্প সমিতি ও ডিম ব্যবসায়ীদের প্রতিবাদের ফলাফলও হতে পারে এটি। চলতি সপ্তাহে ডিমের দাম এক টাকা বেড়েছে। আসন্ন রোজায় আরো এক টাকা বাড়লে ভোক্তা নেমে আসবে অর্ধেকে। তাই হরতাল-অবরোধ-পেট্রোলের জন্মদাত্রী হিসেবে তাকে চিহ্নিত করা হয়েছে এর নিরাময়ের জন্য।
১৮. পেট্রোল মালিক, আমদানিকারক, রপ্তানিকারকেরা। সম্ভবত ভুল বোঝাবুঝির ফল। গেল বেশ কিছুদিন যাবৎ পূর্বের মত যথেষ্ট পরিমাণ পেট্রোল বিক্রি হচ্ছে না। তার কারণে তৈরী হওয়া পূঞ্জিভূত ক্ষোভ-গোস্যা ইত্যাদি থেকে এই ঘটনাটি ঘটেছে।
১৯. ইসলামের ইজারাদার খালেদা জিয়াকে কতল করার উদ্দেশ্যে নাস্তিক-মুরতাদেরা এই অপকর্মটি ঘটিয়েছে।
২০. সাধারণ পাবলিক।