somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ত্রিপলীর ইহুদীরা

০৩ রা আগস্ট, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ত্রিপলীর ইহুদীরা

"মূল : যিয়াদ আলী
অনুবাদ : ফায়সাল বিন খালিদ




ইহুদী লাউ

পশ্চিম ত্রিপলিতে বিভিন্ন প্রকারের সবজী পাওয়া যায়। তার অন্যতম লাউ, নানা প্রকার ও নামের লাউ। যেমন : লাল লাউ, বেটে লাউ। কোন কোন অঞ্চলে লাউকে বলা হয় আছালিয়া। মিশরীরা লাউকে বলে কুছা। তখন ত্রিপলীতে বিশেষ এক ধরনের লাউ পাওয়া যেত। তার আকৃতি ছিল লম্বাটে। কখনো কখনো তা বাঁকাও হত। এই লাউ ছিল সবচেয়ে সস্তা। স্থনীয় লোকজন এই লাউকে বলত ইহুদী লাউ।
ইহুদী লাউ কেন ? কারণ, স্থানীয় লোকজন বলে, এই লাউ সবচেয়ে বেশী খেত ইহুদীরা। ইহুদী লাউ ছিল ইহুদীদের সবচেয়ে পছন্দের তরকারী। তাছাড়া স্থানীয় ইহুদীদের সাথে, বিশেষত ইহুদী মেয়েদের সাথে, এই লাউয়ের অনেক চরিত্রগত ও গুণগত মিল পাওয়া যায় : যেমন ইহুদী মেয়েরা ছিল ইহুদী লাউয়ের মত সস্তা, বক্র, শ্লীম। নগ্ন ঘুড়ে বেড়ানো ইহুদী বাচ্চা মেয়েগুলোকে অনেকটা এই লাউয়ের মতই দেখাতো।
ইহুদী লাউ বৃত্তান্ত সম্পর্কে পশ্চিম ত্রিপলীর সাধারণ স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে যতটুকো জানা যায় তা হচ্ছে ইহুদীরা এই লাউ খুব পছন্দ করত। সস্তা ইহুদী লাউ ছিল তাদের সবচেয়ে পছন্দের এবং নিত্যদিনকার বাঁধা তরকারী। কিন্তু ইহুদীদের এই লাউ প্রেমের সাথে যে তখন বিশ্বব্যাপী চলতে থাকা ইহুদীদের নিজস্ব ভূমি ও রাষ্ট্র গঠনের পরিকল্পনার সাথে গভীর যোগাযোগ ছিল সেটা স্থানীয় লোকজনের জানার কথা না। ইহুদী লাউ যে জায়োনিষ্ট লাউও সেটা তারা বুঝতে পারেন নি।
কীভাবে ? আমার মায়ের মুখে শুনেছি : ইহুদীরা বাজার করার সময় ইহুদী দোকানী ছাড়া অন্য কারো কাছ থেকে সদাই করত না। এবং তারা এক বিশেষ পদ্ধতিতে সদাই করত। তারা অধিকাংশ সময় ইহুদী লাউয়ে-র মত সস্তা সবজি কিনত। এবং দরাদরি করি প্রয়োজনীয় সবজি খরিদ করা পর তারা পুরো লাউটা নিত না। তার যতটুকো প্রয়োজন কেটে ততটুকো নিয়ে বাকি অংশ রেখে যেত। এর পর অন্যান্য ইহুদী খরিদদার এসে অনুরূপ বাজার দামে লাউ কিনে প্রয়োজন পরিমাণ নিত এবং বাকি টুকো রেখ যেত দোকানীর নিকট।
দিন শেষে দোকানী, প্রথম খরিদদার যে টাকা দিয়ে ছিল তা নিজের জন্য রেখে (তাতেই সে তার মূলধন ও লাভ দুটিই পেয়ে যায়) পরবর্তী খরিদদারদের দেওয়া বাকি টাকাগুলো একটি বিশেষ ব্যাংক-এ জমা রাখত। ওই ব্যাংককে ওরা বলত জেল আবীব বাঙ(তেলআবীব)।

ইহুদী গায়ীকা খানাফির

ত্রিপলীর সংগীত চর্চার খ্যাতি অনেক পুরোনো। সংগীত পুরান ত্রিপলীর লোকাল সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। তখন ত্রিপলী ছিল নানা গোত্র, সমপ্রদায়, ধর্মের সম্মেলনে মুখরিত। যাদের অন্যতম ইহুদী সমপ্রদায়। স্বাভাবিকভাবেই ত্রিপলীর সংস্কৃতি, বিশেষত সংগীত চর্চায় স্থানীয় ইহুদীরাও অংশ গ্রহণ করেছিলেন এবং তাতে তাদের অবদানও আছে। তখন কয়েকজন ইহুদী গায়ীকা খুব খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। তাদের অন্যতম মালু খানাফির।
ত্রিপলী তখন বিশ্বব্যাপী মূল ধারার ঘটনাবলী থেকে কিছুটা বিচ্ছিন্ন জীবন যাপন করছিল। তাই তার সংস্কৃতি, সংগীত এবং গায়ক গায়ীকাদের খ্যাতি ত্রিপলী পেরিয়ে বেশী দূর ছড়াতে পারে নি। কিন্তু সেই দিনগুলোতে আশেপাশের অন্যান্য আরব অঞ্চলের কয়েক জন স্থানীয় গায়ক বেশ খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। সেই সময় আরব দেশগুলোতে যে সব ইহুদী গায়ক-গায়ীকা বিখ্যাত ছিলেন তাদের অন্যতম তিউনিসের রাউল জোরনো। মুসলমানীর অনুষ্ঠানে গান করার ক্ষেত্রে রাউলের জুড়ি ছিল না। তার কয়েকটা গানের কলি খুব প্রসিদ্ধ ছিল, মানুষের মুখে মুখে ঘুড়ে বেড়াত। উদাহরণত :

"হাজাম ! খাতনা করাও আমার সন্তানকে"
মিশরী গায়কদের মধ্যে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ ছিলেন দাউদ হাসানী। সিরিয়ার কয়েকজন ইহুদী গায়ক-গায়ীকাও প্রায় আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। ইরাক এবং আশাপাশের অন্যান্য অঞ্চলের গায়ক-গায়ীকাদের নামও আমরা শুনতে পেতাম।
কিন্তু ত্রিপলীর গায়ক-গায়ীকাদের খ্যাতি সীমাবদ্ধ ছিল পুরান ত্রিপলী এবং আশাপাশের শহরগুলোর মাঝেই।
খানাফির শব্দের অর্থ নাক। সম্ভবত নাক বড় হওয়ার কারণে তার নাম হয়ে গিয়েছিল খানাফির। খানাফিরের নিজস্ব গানের দল ছিল। একজন তবলাবাদক, বাশীবাদক, গিটার বাদক এবং গায়ীকা খানিফর নিজে-- তার গানের দল ছিল এই চার সদস্যের। তাদের নিয়ে তিনি বিভিন্ন উৎসব, পালা, সমাবেশে গান করে বেড়াতেন। তিনি সাধারণত গান করতেন ইহুদীদের জীবনের নানা বিষয় নিয়ে এবং ইহুদীরাও মুগ্ধ হয়ে, ভীড় করে তার গান শুনতে আসত। বিশেষত বুখা-র (এক জাতীয় স্থানীয় মদ) সান্ধ্য পান বা রাত্রি পানের অনুষ্ঠানে খানাফির যখন গান করতেন তখন তার গান শোনার জন্য প্রচুর মানুষ সমাবেত হত।
এই সব গানের অনুষ্ঠানগুলো হত খোলা মাঠে বা বাড়ির আঙ্গিনায়। মানুষজন বাড়ির ছাদে চড়েও গান শুনত। কোন কোন উৎসব উপলক্ষ্যে তারা খেজুর পাতা দিয়ে এক ধরনের ছোট ছোট কুটির বানাত। তাতে হত গানের অনুষ্ঠান। সমাবেত কণ্ঠে তারা গাইত :

"ধৈর্য্য তুমি থাক সূচের চোখে
তোমার পিছনে ছুটে জীবনকে করেছি ধূসরিত "

খানাফির কিছু কিছু গান রচনা করতেন এবং গাইতেন বিশেষ এক উদ্দেশ্য সামনে রেখে। স্থানীয় লোকজন তখন তার মর্ম ধরতে পারে নি। যেমন তার একটি গান ছিল এমন :

"তৈরী হও জাহাজে চড়ার জন্য
একাকী এই বিরান মরুতে পড়ে থেক না যেন !!"

তখনকার বিশ্বব্যাপী ইহুদীদের যাবতীয় তৎপরতার কেন্দ্রে ছিল "হিজরত "প্রতিশ্রুত ভূমিতে প্রত্যাবর্তণ। ইহুদী সংগঠনগুলো, পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে থাকা ইহুদীদেরকে প্রতিশ্রুত ভূমিতে সমাবেত করতে এবং তার উদ্দেশ্যে সফরে উৎসাহিত করার জন্য সম্ভাব্য যাবতীয় পদ্ধতি ব্যাবহার করেছিল। এই কাজে তারা শিল্পকেও নিয়োগ দিয়েছিল। সম্ভবত আমাদের গায়ীকা খানাফিরও এই দায়িত্ব পেয়েছিলেন। গানে গানে তিনি ইহুদীদের বলে বেড়াতেন : যাত্রার জন্য প্রস্তুতি নাও, জাহাজে চাড়ার জন্য তৈরি হও, অন্যথায় এই বিরান চড়ে একাকী পড়ে থেকে আজীবন আফসোস করে কাটাবে...
কিন্তু, প্রতিশ্রুত ভূমি ফিলিস্তিনে পৌঁছার পর খানাফিরের স্বপ্ন ভঙ্গ হল। খনাফির দেখলেন, বুঝতে পারলেন তিনি যেই পুণ্যভূমি, ইহুদীরাজের স্বপ্ন দেখেছিলেন তার সাথে এর কোন মিল নেই। হতাশ খানিফর বেঁকে বসলেন, ইহুদী সংগঠনগুলোর সাথে কাজ করতে অস্বীকার করলেন, ত্রিপলীতে ফিরে আসতে চাইলেন এবং স্বাভাবিকভাবেই নিহত হলেন ত্রিপলীর গায়ীকা খানাফির। কে বা কারা তার খাবারে বিষ দিয়ে ছিল।
তেলআবীব পৌঁছার পর যে কয়জন ইহুদী ইটালী ফিরে আসতে পেরেছিলেন তাদের কাছে শোনা যায়, ফিলিস্তেন পৌঁছে হতাশ খানাফির বলেছিলেন :
"ত্রিপলীর রাস্তায় রাস্তায় হেঁটে হেঁটে ভুট্রা সিদ্ধ খাওয়া আমার নিকট ইসরাঈল ও তার সব কিছু থেকেও অনেক প্রিয়।"

অস্থায়ী আবাস

সেই সময়ের ত্রিপলীর ইহুদী বাড়ীগুলোর একটি অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে তার যে কোন স্থানে একটি বড়, চোখের পড়ার মত ফাঁটল দেখা যায়।
ওরা কখনো তার মেরামত করে না, বরং সচেতনভাবেই সেটা এই অবস্থায় রেখে দেয়।
কেন ? কারণ এর মধ্য দিয়ে ওরা নিজেদের মনে সবসময় এই ভাবনাটা জাগুরূক রাখে যে, এটা তাদের স্থায়ী আবাস নয়। এখানে তারা থাকছে অস্থায়ীভাবে। সময় হলে তাদের ফিরে যেতে হবে প্রতিশ্রুত ভূমিতে।



নিষ্ঠুরতা

হালু নামে আমাদের এক ইহুদী প্রতিবেশীনী ছিল। মহিলা ছিল খুবই নিষ্ঠুর কিসিমের, পুরুষ মার্কা স্বভাবের। তার জ্বীব ছিল খুবই ধারালো, মুখ যেন কঠিন সব গালাগালীর অফুরন্ত খনি।
কোন কারণে মেয়ের উপর ক্রদ্ধ হলে নেচে-কুদে চেচামেচি করে পাড়া মাথায় তুলে ফেলত। মেয়েকে সে এই বলে শাপ দিত :
"ইয়াজআলাকা আরুছা ফী বুরিম
ওয়া হাজ্জালাতান ফী বিসাহ "
অর্থাৎ ঈশ্বর তোকে শোক সভার নব বধু এবং উৎসব সভার তালাকপ্রাপ্তা বধু বানিয়ে দিক। অর্থাৎ সে তার মেয়েকে এই বলে অভিশাপ দিত যে, অন্যের আনন্দে ও হবে দু:খিত, অন্যের দুখের সময় আনন্দিত। এ থেকে ওদের কঠোর মানসিকতা কিছুটা আন্দাজ করা যায়।
তবে শেষে এই মহিলা বেচারীকে অনেক ভোগান্তি সহ্য করতে হয়েছিল। যখন ইহুদীরা ত্রিপলী ছেড়ে "প্রতিশ্রুত ভূমিতে "পারি জামাতে লাগল। তখন তাকে নেয়া হল না। তাকে ও তার সাথে তার ছেলেকে এখানেই থেকে যেতে হল।
কারণ তার ছিল যার রোগ। প্রত্যাবর্তনের দায়িত্বশীল ইহুদী সংগঠনগুলো এই যাতীয় কোন রোগীকে প্রতিশ্রুত ভূমির উদ্দেশ্যে যাত্রা করা কাফেলায় নিত না।


কালিমায়ে শাহাদাৎ

প্রসুতী নারীর প্রসব বেদনা ওঠলে ইহুদী নারীরা তার মুখের সামনে একটি কাচের কৌটা ধরে বলত : দুর্ভাগিনী কালামায়ে শাহাদাৎ বল, বল
"আমি সা দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই
আমি সা দিচ্ছি মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল "
সে তা বলার সাথে সাথে তারা শিশিটা ভাল করে বন্ধ করে দূরে ছুড়ে ফেলে দিত। তারা এই প্রথা পালন করত এই বিশ্বাস থেকে যে, গর্ভের ইহুদী সন্তান যখন তার মাকে এই সাক্ষ্য দিতে শুনবে যে, মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল, তখন সে অস্থির হয়ে সে গর্ভ থেকে পালাতে চাইবে। এর ফলে গর্ভপাত সহজ হয়ে যাবে।
এই আচরণের আরেকটা বাস্তব ফায়দা ছিল। ইহুদী নারী বাধ্য হয়ে কালিমা পড়া এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল এই সা দিলে তার মধ্যে এক ধরনের তীব্র অনুশোচনা ও অপরাধ বোধ তৈরী হয়। যার ফলে তার ভেতরে প্রসব বেদনা সহ্য করার মত অদম্য এক শক্তি জন্ম নেয়।
মুহাম্মাদ নামটার প্রতিই ইহুদীদের প্রচণ্ড বিদ্বেষ-ঘৃণা আছে। কোন কারণে এই শব্দটার উচ্চারণ করতে হলে তারা মুহাম্মাদ বলে বলত "মুহামহাম", স্থানীয় ভাষায় যার অর্থ নোংরা। আমি এই গল্প শুনিছি আমার খালার কাছ থেকে। তার এক নি:সন্তান ইহুদী পরশিনী ছিল। সে খালার ছেলে মুহাম্মাদকে নিজের ছেলের মত আদর করত। সে খালাকে বলেছিল অন্যান্য ইহুদী নারীরা মুহাম্মাদকে "মুহামহাম" বলে ডাকে।

শনির জন্য মাতম

ইহুদীদের শোক প্রকাশের নিজস্ব পদ্ধতি আছে। নিজেদের কেউ মারা গেলে ত্রিপলির ইহুদী সমপ্রদায় বিশেষ এক ধরনের বিলাপ-মাতম করে তার জন্য শোক করত। শনিবার ইহুদীদের কাছে একটি শুভ দিন। তাদের বিশ্বাস শনিবার হচ্ছে ঈশ্বরের বিশ্রাম দিবস। ছয় দিনে পৃথিবী সৃষ্টি করার পর ক্লান্ত ঈশ্বর এই দিন বিশ্রাম নিয়েছিলেন। তাই এই দিনটি শুভ দিন।
শনিবারে মৃত্যু শুভ লক্ষণ। তাই কেউ যদি শনিবারের পর মারা যেত তারা তার জন্য বিশেষভাবে শোক করত। তারস্বরে চিৎকার করে মাতম করত :

"হায় হায় দুর্ভাগা ...
তোমার মৃত্যু হল শনিবারের পর ..."

স্থানীয় দুষ্ট ছেলেরা কোন ইহুদী দেখলে, তাদের মাতম অনুকরণ করে এই গান গেয়ে ভেঙ্গাত। ইহুদী পল্লীগুলোতে ছিল নানা মাতম দল। কেউ মারা গেলে বিলাপ বিশেষঙ্গ পেশাদার মাতমকারী এই নারীদের ভারা করে নিয়ে যাওয়া হত। এমনকি ইহুদী সমপ্রদায়ে মাতম এক সময় বেশ লাভজনক পেশা হয়ে দাঁড়ায়। এই কাজে তুর্কী বংশদ্ভুত ইহুদী নারী বেশ খ্যাতি লাভ করে ছিলেন।

প্রভাত প্রার্থনা

সাকালে ঘুম থেকে উঠার পর ইহুদীদের সর্বপ্রথম কর্মটি ছিল আরবদের ধর্ম এবং পুর্বপুরুষদের গোষ্ঠী উদ্ধার করা। আরবদের ধর্ম এবং পুর্বপুরুষদের অভিশাপ দিতে দিতে সকালে তারা কাজে বের হত।
পথ চলার সময়, বিশেষত একা হলে, ইহুদীরা গা বাঁচিয়ে চলে। কারো সাথে ঝগড়া বা তর্কে জাড়াতে চায় না। কিন্তু মাঝে মাঝে আরবদের অভিশাপরত পথচারী ইহুদীর সাথে কোন আরবের দেখা হয়ে যায়। কিন্তু সে ক্ষিপ্ত হয়ে তার সাথে ঝগড়া শুরু করলে সাথে সাথে ইহুদী চুপসে যায়। শান্ত নিরীহ ভাব করে নিচু স্বরে বলে : আরে ভাই আমি তো অলুণে এই সকালটাকে অভিশাপ দিচ্ছিলাম।
এই ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময় শান্তভারসাম্য ভাবের কারণে তৃতীয় পথচারীর বিচারের কাছে ইহুদীটি জিতে যায়, দোষী সাব্যস্ত হয় উত্তিজ চেচামেচী করতে থাকা আরব।

ইহুদীর ঠকবাজি

সকালে দোকানে যাওয়ার সময় ইহুদী দোকানদার পিছনের পকেটে করে কিছু টাকা দিয়ে যায়। দোকান খুলে হাসি মুখে খরিদ্দারদের স্বাগত জানায়, মিষ্টি ব্যাবহার করে :
"আরে আরে মনিব আসুন
মালিকান যে ! আসুন, আসুন !"
দামদরের সময় খরিদ্দার কিছুটা দাম কমাতে বললে দোকানদার ঈমানের কছম খেয়ে বলে যে, পরিচিত খদ্দেরের খাতিরে সে লোস দিয়ে বিক্রি করছে :
"আল্লাহর কছম, ঈশ্বরের শপথ
দশ টাকা পিছনে রেখে বিক্রি করছি "
এভাবে সে তার ঈশ্বরের সাথেও ঠকবাজি করে। বাসা থেকে আসার সময় আসলেও সে তার পাজামার পিছনের পকেটে দশ টাকা নিয়ে বের হয়েছে।

তৈল গোসল

ত্রিপলীতে ইহুদীরা ছিল সংখ্যালঘু। তাই তারা নিজেদের নিরাপত্ত্বার ব্যাপারে সবসময় শংকিত ও সচেতন থাকত। তারা নিজেরা একা একা থাকত। নিজেদের মাঝে বংশ সংরক্ষণ করত। অন্য কোন সমপ্রাদায়ের সাথে বিয়ে জাতীয় কোন স্থায়ী সামাজিক সম্পর্কে জড়াত না। কোন ইহুদী মেয়ে যদি কোন আরব ছেলে বিয়ে করত তাহলে তারা বেশ কঠোরতার সাথে তার মোকাবেলা করত। সেই মেয়েকে একঘরে সামজচ্যুত করে দেওয়া হত। কোন ইহুদী তার সাথে আর কোন সম্পর্ক রাখত না।
তারা বেশ চতুরতার সাথে আরবদের মাঝে এই ধারণা ও প্রথা ছড়িয়ে দিয়ে ছিল যে, ইহুদী মেয়ের সাথে অপকর্ম করলে পবিত্র হতে হবে তেল দিয়ে গোসল করে। পানি দিয়ে গোসল করলে সে পাক হতে পারবে না।
এই প্রথা প্রচলিত হওয়ার পর আরব ছেলেরা আর ইহুদী মেয়েদের সাথে সম্পর্ক পাতাতে সাহস করত না। কারণ সেই সময় তেল খুব দুর্লভ এবং মূল্যবান ছিল। মানুষ খাওয়ার জন্যই তেল পেত না।

সোনালী প্রভাত

সোনার সবচেয়ে খাঁটি ও নিষ্ঠাবান উপাসক হচ্ছে ইহুদীরা। সোনা হচ্ছে তাদের অজীবনের চোখের মণি।
ওরা সবসময় চেষ্টা করে সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর যার উপর চোখ মেলবে, যে জিনিসটা সর্বপ্রথম দেখবে তা যেন সোনা হয়। অধিকাংশ ইহুদী বাড়িতে সবসময় দুটি সোনার পাত থাকে। সকালে ঘুম থেকে ওঠার তারা সাথে সাথে চোখ মেলে না। চোখ বুজে থেকে তার স্ত্রীকে বলে সেই পাত দুটো নিয়ে আসতে। স্ত্রী তা এনে তার চোখের সামনে ধরলে সে সোনার উপর চোখ মেলে। এভাবে দিনের শুরু হয় "সোনালী প্রভাত "দিয়ে, যা তাদের নিকট খুবই সুলক্ষণের ব্যাপার। এভাবে তাদের দিনের শুরুটা যেন হয় সোনা দর্শন করে সেই ব্যাপারে তারা সবসময় সচেষ্ট থাকত। এমনকি রাতে যদি প্রাকৃতিক প্রয়োজনে বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন হত তাহলে তারা স্ত্রীর হাত ধরে চোখ বন্ধ করে প্রয়োজন সেরে আসত।

ইহুদীর কৃপণতা

ইহুদীদের কৃপণতা প্রায় প্রবাদতুল্য। কাথিত আছে এক আরব বণিক বড় এক ইহুদী ব্যবসায়ীর আথিত্য গ্রহণ করেছিলেন। নানা আলোচনার পর আরব বণিক তাকে তার ব্যবসার শরীক বানানোর অনুরোধ করলেন। তিনি বললেন তার জন্য যে পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করতে হয় তিনি তা করবেন। প্রস্তাব শোনে ইহুদী ব্যবসায়ী চুপ করে ভাবতে লাগলেন। তখন আরব দেয়াশলাইটের কাঠি জালিয়ে সিগারেট ধরাচ্ছিলেন।
তাই দেখে ইহুদী সাথে সাথে বলে উঠল :
নাহ তোমাকে আমার শরীক বানানো যাবে না, তোমাকে দিয়ে ব্যাবসা হবে না।
হতবাক আরব জিজ্ঞেস করল, কেন ?
কারণ তুমি অপব্যায়ী, তোমার সামনে জালানো আগুন থাকতে তুমি নতুন কাঠি জেলে সিগারেট ধরাচ্ছ।

পুরুষ নয়

ইহুদী নারীরা ইহুদী পরুষের সামনে খোলামেলা থাকতে লজ্জা বোধ করে না। হঠাৎ কোন পুরুষ এসে পড়লে কোন মেয়ে যদি কিছুটা হতচকিত অপ্রতিভ হয়ে ওঠে তাহলে অন্যান্য মেয়েরা বলে ওঠে :
আরে এ তো কোন পুরুষ নয়
এ তো ইহুদী।


হারায়েমী ও রসুন

খাবারের বিখ্যাত ত্রিপলী এবং ত্রিপলীর প্রসিদ্ধ কিছু খাবার মূলত ইহুদীদের আমাদানী করা। এই সব ইহুদী খাবারের নামগুলো অদ্ভুত অদ্ভুত। যেমন বিশেষ এক ধরনের মাছ ভুনাকে ওরা বলে "হারায়েমী" মানে হারাম। সুস্বাদু এই তরকারীটি রান্না করা রসুন দিয়ে। ইহুদী জাতী রসুন খুব পছন্দ করে এটা সাবার জানা। অধিকাংশ খাবারেই তারা রসুন ব্যাবহার করে থাকে।
আরেকটি বিখ্যাত ইহুদী খাবার "ফাসুলিয়া" যা পাঠা বা গরুর ভূড়ি দিয়ে রান্না করা হয়। যে সব এলাকায় সাধারণ শ্রমিকদের আনাগোনা বেশী যেমন, মিনা, নতুন বাজার, সেখানে বেশ কয়েকটি ইহুদী রেস্তোরাঁ বেশ নাম করেছিল। এই সব রেস্তোরাঁয় বেশ সস্তায় খাবার পাওয়া যেত।
তাজিন মাথার মাংস বা খুরা দিয়ে রান্না করা তাজিনের মত ত্রিপলীর অনেক প্রসিদ্ধ খাবারের আমদানিকারী স্পেন থেকে আসা ইহুদীরা।
এই সব সুস্বাদু খাবার গুলো যেন আরবরা না খায় এবং এই সব সস্তা রেস্তরার সুযোগ যাতে শুধু ইহুদী শ্রমিকরা নিতে পারে, তাই মুসলমানরা অপছন্দ করে-- এমন সব শব্দ দিয়ে তারা তাদের খাবার ও রেস্তরার নাম রাখত। যেমন" হারাম "।


ইহুদীর সংগ্রাম

কোন ইহুদী মারা গেলে তার নিকট জনেরা বিকট স্বরে তার জন্য বিলাপ করে। সুর করে তার জীবন কথা বলতে থাকে, গুণগায় গায় এবং জীবৎ কালে তার সংগ্রামী জীবনের সংগ্রামী কাহিনীগুলো উল্লেখ করে। তবে যে ভাষায় তারা বিরত্বগাথা গায় এবং বিরত্বের নমুনা হিসেবে যে সব বিষয় উল্লেখ করে তা খুবই হাস্যকর। যেমন মৃতের সামনে বসে তারা এই বলে বিলাপ করে :
ইয়ামা লাদিন মিন শিআবিন
ইয়ামা নাবিহিন মিন কিলাবিন
অর্থাৎ সে বিরত্বপূর্ণ সংগ্রামী এক জীবন যাপন করে গেছে। কুকুরের তাড়া ও ঘেউ ঘেউ অগ্রাহ্য করে বিভিন্ন স্থানে ঘুড়ি বেড়িয়েছে। আরও অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে কোন কোন বিলাপ সংগীতে তারা বলে :
ইয়ামা বাআ’ মিন কিরওয়াতিন
ইয়ামা যালবাহা মিন আরাবিয়াতিন
অর্থাৎ হায় আফসোস তোমার জন্য, আরব নারীদের ছলনা ও প্রতারণার মধ্যে তোমাকে জীবন যাপন করতে হয়েছে। -- এই হচ্ছে ইহুদী পুরুষের বিরত্ব-সংগ্রামের নমুনা।

তুষ


কৃপণতা স্বভাব থেকে ইহুদীদের মাঝে একটি ভাল গুণ জন্ম নিয়ে ছিল : তারা তুচ্ছ তচ্ছতর জিনিসগুলো সংরণ করে রাখত, বৃথা যেতে দিত না। তাকে কোন না কোন কাজে ব্যাবাহর করত। "ইশ্বরের নেয়ামত "নামে একটি ধারণা তাদের মনে বদ্ধমূল ছিল, যার মূল কথা : দুনিয়ার যাবতীয় জিনিস ঈশ্বরের নেয়ামত। মানুষের উচিৎ সেগুলো হেফাজত করা, তার কিছুই যেন নষ্ট না হয় তার প্রতি ল্য রাখা। উদাহরণত, আটা চালার পর চালনির উপর যে সামান্য তুষ থেকে যায়, ইহুদী গৃহিনী তাও সংরণ করে রাখত। তাদের কাছে তা পুড়িয়ে ফেলা মানে আল্লাহর নেয়ামতের সাথে কুফুরি করা।
তুষ না থাকলে আরব গৃহিনীরা, চুলায় আগুন জালাতে ইহুদী পরশিনীর সাহায্য নিতে দেখা যেত।
গর্ভপাত কালে কোন নারীর খুব যন্ত্রণা হতে থাকলে তা লাঘবের জন্য ইহুদী নারীরা তার সামনে উচ্চ স্বরে এই প্রার্থনা করত :
ঈশ্বর তুমি তুষ পুড়ানো অপব্যায়ী মুসলমানটাকেও সুস্থ রেখেছ ওকে সস্থ করবে না ?
১৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×