মাহমুদ দারউইশ : শেষ আকাশের পর
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
মাহমুদ দারউইশ, ফিলিস্তিনীদের জাতীয় কবি, অজস্র ফিলিস্তিনীদের মত, হারিয়ে ছিলেন তার গৃহ, গ্রাম, শৈশব। হানাদার ইসরায়েলী সৈন্যরা তার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছিল তার স্বদেশ-মাতৃভূমি, পরিচয়। কিন্তু পরিচয় ও ভূমিহীন মাহমুদ দারউইশ দেখিয়েছেন একজন কবি, ভাষা-কবিতার মাঝে কিভাবে নির্মাণ করে নিতে পারে তার মাতৃভূমি-স্বদেশ পরিচয়, হারানো শৈশব ও মায়ের ভালবাসা। 'আমি ভূমির জন্য গান গাই না' একটি কবিতায় দারউইশ বলেছেন 'কারণ আমিই ভূমি'। অস্ত্রহীন ফিলিস্তিনী তরুণরা ইসরায়েলী সৈন্যদের রাইফেলের গুলি ও টেংকের গোলার মুখে ছুঁড়েছে নির্বাক পাথর। মাহমুদ দারউইশ দেখিয়েছেন নিরীহ ভাষা-কবিতা কিভাবে পরাজিত করে করে দিতে পারে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিধর পরাশক্তিকে। জিব-ছেড়া ফিলিস্তিনীদের চিৎকার ও বিজয়ী ভাষার নাম মাহমুদ দারউইশ। ফিলিস্তিনহীন পৃথিবীর মনিচিত্রে দারউইশের কবিতা লাল ফিলিস্তিন।
মাহমুদ দারউইশ জন্মগ্রহণ করেন, ১৯৪২ সালে, ফিলিস্তিনের এক অখ্যাত গ্রাম 'আল-বোরোতে'। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েলী সৈন্যদের ফিলিস্তিন দখলের সময়, এক ভয়াবহ রাতে আক্রান্ত হয় দারউইশের এই ছোট্ট গ্রামটিও। সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যায় দারউইশের পরিবার। ইসরায়েলী সৈন্যদের চোখ ফাঁকি দিয়ে তারা প্রায় ছত্রিশ ঘন্টা লুকিয়ে ছিলেন ক্ষেতের মাঝে। পরে শরণার্থী হয়ে আশ্রয় নেন লেবাননে। এক বছর পর, সাত বছর বয়সে, দারউইশ লেবাননের সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করেন ফিলিস্তিনে, তার হারানো জন্মভূমিতে। কিন্তু শিশু দারউইশ দেখলেন ইসরায়েলী গোলার আগুনে পুরে গেছে তার বাড়ি-গ্রাম্তফিলিস্তিনের মানচিত্র। দারউইশ লিখেছেন : 'এক রাতে আমার চাচা এবং একজন পথপ্রদর্শকের সাথে লেবাননের সীমান্ত দিয়ে আমি প্রবেশ করলাম ফিলিস্তিনে। সকালে উঠে দেখি আমি একটি ইস্পাতের দেয়ালের মুখোমুখি : আমি ফিলিস্তিনে। কিন্তু কোথায় আমার ফিলিস্তিন? আমি কখনো আমার বাড়িতে ফিরে যেতে পারিনি। প্রচন্ড কষ্ট নিয়ে আমি দেখতে পেলাম আমার গ্রাম বিধ্বস্ত-ভস্ম।'
ফিলিস্তিনের সন্তান মাহমুদ দারউইশ ফিলিস্তিনে প্রবেশ করেন অবৈধ অনুপ্রবেশকারী হয়ে। ১৯৬৯ সালে ইসরায়েলী কমিউনিস্ট পার্টির পত্রিকা 'জো হাদারেক'-এ এক সাক্ষাৎকারে দারউইশ বলেছেন : 'সেই একটি রাত সবাইকে শরনার্থী বানিয়ে দেয়... লেবনানে আমি শরনার্থী ছিলাম। ফিলিস্তিনেও আমি শরনার্থী হয়ে আছি।' এটা কোন কাব্যিক দীর্ঘশ্বাস ছিল না। ইসরায়েলী রাষ্ট্রের প্রথম আদমশুমারিতে যে সব ফিলিস্তিনী অন্তর্ভুক্ত হয়নি, নতুন ইসরায়েলী সরকার তাদেরকে পরিচয় পত্র দেয়নি। তাদের চিহ্নিত করে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী হিসেবে। ফলে দারউইশের মত অজস্র ফিলিস্তিনী নিজ জন্মভূমিতে হয়ে থাকে অবৈধ অভিবাসী।
লেবানন থেকে ফিরে আসার পর তার প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় 'দাইরুল আছাদ'-এ, আত্মপরিচয় গোপন করে। কারণ ইসরায়েলী সরকারের দৃষ্টিতে তিনি ছিলেন অবৈধ অভিবাসী। তিনি জানতেন ধরা পড়লে তাকে দেশ থেকে তাড়িয়ে দেয়া হবে। তার মাধ্যমিক শিক্ষা 'কাফার ইয়াসিফ' গ্রামে। মাধ্যমিক শিক্ষার পরই তিনি জড়িয়ে পড়েন নানা তৎপরতায়। তার জীবন হয়ে উঠে শুধু কবিতা লেখা এবং কবিতার মাধ্যমে লড়াই করা।
দারউইশ তখন এই বঞ্চনার বিরুদ্ধে লড়ায়ের পথ খুঁজছিলেন। এই সময় তিনি ইসরাইলী কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন এবং পার্টির পত্রিকার সম্পাদক হিসাবে কাজ শুরু করেন। সেই ফিলিস্তিনীদের মুক্তি সংগ্রামের একটি শক্তিশালী অস্ত্র হয়ে ওঠেছিল কবিতা। 'আমছিয়া' বা সান্ধ্য কবিতা পাঠ অনুষ্ঠানগুলোতে গ্রামে গ্রামে গিয়ে দারউইশ কবিতা পাঠ করতেন, যা ফিলিস্তিনীদের দারুণ প্রভাবিত করেছিল। ইসরাইলী সরকার শংকিত হয়ে পড়ে এবং তার আমছিয়াগুলোর উপর নিষেধাজ্ঞা জারী করে। সেই সময় ইসরাইলী সৈন্যরা সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত দারউইশকে গৃহবন্দী করে রাখত।
স্বাভাবিক কারণেই ইসরাইলে দারউইশের এই রাজনৈতিক তৎপরতা নির্বিঘ্ন হয় নি। ১৯৬১, ১৯৬৫, ১৯৬৭_ তে তিনি তিনবার জেলে গিয়েছিলেন। সত্তুরের দশকের শুরুতে তিনি বাইরুত চলে যান। ততদিনে কবি হিসেবে দারউইশ বেশ বিখ্যাত হয়ে ওঠেছেন। ১৯৭৭ সালে বের হয় তার বিখ্যাত জনপ্রিয় কাব্যগ্রন্থ 'আবিরুনা ফি কালামিন আবিরীন', যা ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল। এই সময় দারউইশ 'আল্লাজনাতুত্তানফিযা লি মুনাজ্জামাতিত তাহরীরির ফিলিস্তিনী'-তে যোগ দেন। এই প্রতিষ্ঠানে তিনি দীর্ঘদিন আরাফাতের ঘনিষ্ঠ সহচর হিসেবে কাজ করেছিলেন। ফিলিস্তিনী সরকার গঠন কালে আরাফাত তাকে সাংস্কৃতি কমন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব করেছিলেন। দারউইশ তা গ্রহণ করেন নি। দারউইশ বলেছিলেন, আমার একমাত্র আকাংখা বারুদের ধোঁয়া মুক্ত ফিলিস্তিনে বসে কবিতা লেখা। কিন্তু ১৯৯৩ সালে অসলো চুক্তির পর দারউইশ এই দল থেকে বের হয়ে যান। এরপর তিনি আরাফাতের সাথে আর কোনো সম্পর্ক রাখেন নি। তিনি প্রতিবাদ করে বলেছিলেন : 'এই চুক্তিতে ইনসাফ নেই, এই চুক্তিতে ফিলিস্তিনী পরিচয়ের ন্যুনতম অনুভূতি এবং তার ভৌগলিক অবস্থানের প্রতি কোনো ল্য রাখা হয় নি। এই চুক্তি ফিলিস্তিনীদের একটি যাযাবর জাতিতে পরিণত করবে।' তারপরও দারউইশ আরাফাতকে ভালবাসতেন। আরাফাতের মৃত্যুর পর এক সাক্ষাতকারে দারউইশ বলেছিলেন : 'পৃথিবীর কানে যারা 'ফিলিস্তিন' শব্দটি তুলেছেন আরাফাত তাদের অন্যতম। আরাফাত তার জীবনকে এর জন্য উৎসর্গ করে দিয়ে ছিলেন। আরাফাত কখনো নিজের জন্য বাঁচেন নি্ত আমি চাই আমার স্মৃতিতে আরাফাতের এই চিত্রটি জেগে থাক । আরাফাতকে আমরা খুব মিস করি কিন্তু আমরা আর কোনো আরাফাত চাইনা...'
দারউইশ ফিলিস্তিনী মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে মাঠে ছিলেন। তবে তিনি লড়েছেন ভাষা কবিতা দিয়ে। এই সময় দারউইশের কবিতায় একটি গুরুত্বপূর্ণ বদল ঘটে। তিনি, তার এর পূর্বেকার কবিতায় যে কাব্যিক জটিলতা ছিল তা থেকে ফিরে আসেন। তিনি দেখতে পান তার এই ধরণের কবিতাগুলো সাধারণ মানুষ-যোদ্ধারা বুঝতে পারে না। দারউইশ কবিতা লিখতে শুরু করলেন সরল ভাষায়, সহজ করে, যা বুঝতে পারে সাধারণ মানুষ, উদ্দীপ্ত করে সাধারণ মুক্তিসংগ্রামীদের। এই সংকলনের চোদ্দটি কবিতার তেরোটিই এই সময়, মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে অবস্থান কালে, লেখা।
নানা দেশ ঘুরে ১৯৯৪ সালে দারউইশ ফিলিস্তিনের রামাল্লায় ফিরে আসেন এবং ইসরায়েলী সৈন্যরা তাকে গৃহাবোরোধ করে রাখে। অবরোধ কালে দারউইশ নিরন্তর লিখেছেন, ইসরায়েলী সৈন্যদের বিরুদ্ধে লড়েছেন ভাষা-কবিতা দিয়ে। ২০০২ এর মার্চে বিখ্যাত কবি সাহিত্যিকদের একটি দল গৃহবন্দী দারউইশের সাথে সাক্ষাত করতে রামাল্লায় গিয়েছিলেন।
দারউইশ কবিতাকে গ্রহণ করেছিলেন শিশুকালেই। স্কুল জীবনে তিনি কাসিক আরবী কবিতার সবটুকু পড়ে ফেলেছিলেন। দারউইশ জীবনে প্রথম কবিতা পাঠ করেন নতুন ইসরায়েলী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রথম উদযাপন অনুষ্ঠানে। দারউইশ তখন স্কুলের ছাত্র। প্রধান শিকের নির্দেশে দারউইশ স্বরচিত কবিতা পাঠ করেছিলেন। তিনি বলেন 'সেখানেই জীবনের প্রথম বারের মত আমি মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়িয়ে কবিতা পাঠ করি। কবিতাটি ছিল এক ইহুদী বালকের প্রতি এক ফিলিস্তিনী বালকের আর্তনাদপূর্ণ আহ্বান। পুরো কবিতাটি আজ আর মনে নেই। তবে তার মূল ভাবনাটি ছিল এই : 'তুমি চাইলেই সোনালি রোদে খেলা করতে পার, তুমি চাইলেই পাও উজ্জ্বল পুতুল, কিন্তু আমার তা নেই। তোমার আছে ঘর, আমার কিছুই নেই। তোমার আছে উৎসব আর উদযাপন, কিন্তু আমি তার দেখা পাইনা। বল কেন আমরা একসাথে খেলতে পারি না? পরদিন ইসরায়েলী সামরিক সরকারের লোকেরা তাকে ডেকে নিয়ে শাসায়। তাকে বলা হয় 'যদি আর এই ধরণের কবিতা লেখ তো তোমার বাবার কাজ করতে যাওয়া বন্ধ করে দেয়া হবে।' দারউইশ লিখেছেন 'আমি বুঝতে পারিনি একটি কবিতা কেন এই সামরিক সরকারকে এমন ব্যতিব্যস্ত করে তুলল। সেই ছিল প্রথম ইহুদী সন্তান, যার সাথে আমার দেখা এবং কথাবার্তা। আমি খুব হতাশ হয়ে পড়ি, এই যদি হয় তাহলে ইহুদী বালকের সাথে কথা বলে আর কি লাভ হবে?'
লেনিন সাহিত্য পুরষ্কারসহ দারউইশ তার কাব্যকীর্তির জন্য অনেক পুরষ্কার পেয়েছেন। তবে তার সবচেয়ে বড় পুরষ্কার তার প্রতি ফিলিস্তিনীদের ভালবাসা। দারউইশ প্রধানত কবিতা লিখেছেন, লিখেছেন নিরবধি। বিপুল তার আলোচনা।
মাহমুদ দারউইশের পাঁচটি কবিতা
শেষ আকাশের পর
এই দুনিয়ায় আমাদের কোন জায়গা নেই এবং আমাদের হাশর-নশর হবে পথের শেষ প্রান্তে
সংকীর্ণ পথটা পার হওয়ার জন্য আমরা তখন খুলে ফেলব আমাদের হাত-পা
দুনিয়াটা আমাদের নিংড়াচ্ছে
আহা ! আমারা যদি হতাম পৃথিবীর গমদানা !
মৃত্যুর পর আবার জন্মাতাম বারবার,
দুনিয়াটা যদি হত আমাদের মা_ মমতাময়ী কোনো মা !
যদি আমরা হতাম পাথরের গায়ে আঁকা ছবি, একদিন যা বেড়ে ওঠবে আমাদের স্বপ্নের গর্ভে !
আয়না
- ওদের মুখগুলো চিনে রাখছি আমরা, প্রাণ রার শেষ লড়াইয়ে যাদের খুন করবে
আমাদের শেষ ব্যক্তিটি
আমরা কেঁদেছি তাদের শিশুদের উৎসবে
চিনে রাখছি সেই মানুষদের,
শেষ প্রান্তের জানালা দিয়ে যারা ছুড়ে ফেলে দিবে আমাদের শিশুদের
আর এই সব আয়নাগুলোকে ঝুলিয়ে রাখবে আমাদের নত্র।
শেষ প্রান্তগুলো পার হয়ে যাওয়ার পর কোথায় যাব আমরা ?
শেষ আকাশের পর কেথায় উড়বে চড়ুইরা ?
শেষ বাতাস বয়ে যাওয়ার পর কোথায় ঘুমাবে গাছেরা ?
লাল ধুঁয়া দিয়ে আমরা লিখে দিব আমাদের নাম
আমাদের মাংসে আবার ভরে উঠব্তেতাই কেটে দিব সংগীতের হাত
এখানে আমরা মারা যাব, এখানে... পথের শেষ প্রান্তে ...
এখানে, কিংবা এখানে, আমাদের খুন বুনে দিবে জলপাই গাছ।
যখন শহীদরা ঘুমাতে যাবে
শহীদরা ঘুমাতে যাবে যখন, আমি তাদের পাহারা দিব
প্রফেশ্যানাল রুদালীরা যেন ওদের ঘুম বিঘি্নত করতে না পারে
ওদের বলব : তোমরা জেগে ওঠবে মেঘ-গাছ এবং বালি-মাটির এক মাতৃভূমিতে।
খোদার শুকরিয়া, এখন ওদের আর কোনো ভয় নেই, ওরা নিরাপদ,
ও'রা আর কখনো অবিশ্বাস্য কোনো ঘটনা হবে না, বা কসাইখানার সারপ্লাসভ্যালু।
আমি কিছু সময় চুরি করি, ওরা যাতে আমাকে
সময়ের কাছ থেকে চুরি করে নিতে পারে। আমরা সবাই কি শহীদ ?
কানে কানে বলব : বন্ধুরা ! কাপড় শুকানোর দড়ির জন্য একটা দেয়াল রেখে যাও
আর গানের জন্য একটি রাত।
কথা দিচ্ছি, আমি তোমাদের নামগুলো টানিয়ে রাখব, যেখানে তোমরা চাও।
এখন টক আঙ্গুরের মইয়ের উপর ঘুমিয়ে থাক কিছুণ
আমি পাহারা দিব তোমাদের স্বপ্নগুলো,
তোমাদের দেহরীদের ছোরা এবং মাথা নিচে দিয়ে থাকা আসমানী কেতাবগুলো থেকে।
যার কোনো গান নেই, তোমরা হও তার গান, এই সন্ধ্যায় যখন তোমরা ঘুমাতে যাবে
শোন ! তোমরা জেগে ওঠবে মাতৃভূমির মাটিতে,
যাকে ওরা চড়িয়ে দিয়েছে এক পাগলা ঘোড়ার পিঠে
ওদের কানে কানে বলব : বন্ধু ! তোমরা আর হবে না আমাদের মত
... প্রতিদিন সকালে আমরা জেগে ওঠি অজানা এক মঞ্চের ফাসির রজ্জু হয়ে।
ওরা আমার মরণ কামনা করে
ওরা সবসময় আমার মরণ কামনা করে। কারণ আমি মরলেই তারা বলতে পারবে : ওতো আমাদেরই একজন ছিল, আমাদের পরে লোক।
আমি সেই পদধ্বনিগুলো শুনছি। বিশ বছর ধরে ওরা রাতের দেয়ালে করাঘাত করছে। ওরা আসে কিন্তু দরজা খুলে না। তবে আজ তারা ভিতরে ঢুকবে। ওদের মধ্যে থেকে তিনজন এগিয়ে আসবে : একজন কবি, একজন খুনী আর একজন পাঠক। ্ত'তোমরা মদ পান করবে?' আমি জিজ্ঞেস করলাম। 'অবশ্যই' তারা বলল। 'কখন তোমরা আমাকে গুলি করবে?' আমি জিজ্ঞেস করলাম। তারা উত্তর দিল 'একটু অপো কর'। তারা পানপাত্রগুলো সাজিয়ে রেখে জাতীয় সংগীত গাইতে শুরু করল। আমি বললাম 'আমাকে কখন খুন করতে শুরু করবে?' তারা বলল 'শুরু করে দিয়েছি তো!' ... 'তুমি আত্মাকে জুতো দিলে কেন?' 'যেন সে মাটিতে হাঁটা-হাঁটি করতে পারে' আমি বললাম। তারা বলল 'তুমি কেন সাদা কবিতা লিখেছ, মাটি তো কালো !'। আমি উত্তর দিলাম 'কারণ ত্রিশটি সমুদ্র বয়ে গেছে আমার হৃদয়ের উপর দিয়ে।' তারা বলল 'তুমি কেন ফরাসী ওয়াইন পছন্দ কর?' আমি বললাম 'কারণ সবচেয়ে রূপসী নারীটি আমার অধিকারেই আসা উচিৎ...' তুমি কেমন মৃত্যু চাও?' 'নীল, ছাদ থেকে চুয়ে চুয়ে পড়া নত্রের মত।' 'তোমরা আরো মদ চাও?' তারা বলল : 'অবশ্যই'। আমি বললাম : তোমাদের কাছে আমার একটি অনুরোধ, তোমরা আমাকে খুন কর ধীরে.. ধীরে.. ধীরে-ধীরে, আমি লিখব আমার শেষ কবিতাটি, আমার হৃদয়ের বধূর উদ্দেশ্যে। কিন্তু তারা হেসে উঠবে। ওরা ঘর থেকে আর কিছুই নিবে না। চুরি করে নিবে সেই শব্দগুলো আমি যা বলব আমার হৃদয়ের বউকে...।
বিনামূল্যের মৃত্যু
আমার মাংসে শরৎ আসে কমলার লাশের মত
বালি মাখা এবং পাথরের আঘাতে টেপখাওয়া তামার চাঁদের মত
এবং পুরুষ হৃদপিণ্ডের মত আমার বুকে ঝড়ে পরে শিশুরা
আহারে ! আমার চোখের কপালেই পড়ল পৃথিবীর সব জমাটবদ্ধতা... সব কিছু বলা যায় না...
তাজা রক্তমাখা উত্তলিত হাতগুলো আমাকে ডাকে : আস !
আরো উপরে ওঠে যাও, মেহদী পরা সূর্যের চিবুক পর্যন্ত
আর তোমাদের মরাদের কবর দিও না... তারা থাক আলোর মিনার হয়ে
আমার গলা কাটা রক্তগুলোকে এভাবেই থাকতে দাও...
এই তাজা রক্ত বিদ্রোহীদের গোধূলী বেলার কথা মনে করিয়ে দিবে
শূন্য প্রান্তের বুকে বসে থাকা সবুজ পাহাড়ের প্রতিপ হয়ে থাকবে
আর কবিদের বল না আগাছার বাচ্চাদের মৃতু্যগাঁথা গাইতে।
শৈশবের সবচেয়ে বড় গুণটা কি জান ?
- শৈশব সবসময় গোত্রের নিরাপত্বার জন্য হুমকি হয়ে থাকে,
আমি তাদের বলি রক্ত আর জুলুমের বুকের দুধ খেয়ে বেড়ে ওঠা এক নতুন ইতিহাসের কথা
শাবাশ জল্লাদ ! শাবাশ !
সুরমাচোখা কিশোরীটাকে খুন করে ও তার বেণীর গরম চাদরটা ছিনিয়ে নেয়
মারহাবা ! মারহাবা গ্রাম বিজয়ী... মারহাবা শৈশবখুনী !
হে নিষ্ঠুর কুফুরী ! ... কবরের কপালে আছে শুধু শেকল বাঁধা হাত
আর অনেক গভীরে চলে যাবে আমার আর এতীমদের চারার শেকড়গুলো
আমাদের চারা... আমরা যারা এখনো বেঁচে আছি ...
হে উত্তলিত বাহু ! আমাদের গান গাওয়া শেখাও
আমরা যারা এখনো বেঁচে আছি ... শেকল আর দু:খ মুক্ত স্বাধীন আলো ও শব্দের মত
হে নিষ্ঠুর কুফুরী !
কবরের কপালে আছে শুধু কড়া পরা হাত... !
এই ধরনের গানে
এই ধরনের গান দিয়েই কি কোনো নাইটের বুকের উপর স্বপ্ন বিছিয়ে দিব?
আর ছিনিয়ে নিব তার শেষ শার্টটা, বিজয়ের স্মারক এবং শেষ দুয়ারের চাবি ?
যাতে আমরা প্রথম সমুদ্রে ঢুকতে পারি ?
তোমাকে সালাম হে পথিক ! যে তুমি ঘর ভালবাস, যে তোমার কোনো বাড়ি নাই
সালাম তোমার পদযুগলে/রাখালরা নিশ্চই বালির উপরে তোমার চোখের অশ্রুর চিহ্ন খুজে পাবে না,
সালাম তোমার দুই বাহুতে/এখান থেকেই আবার উড়বে কাতা পাখীরা
সালাম তোমার দুই ঠোঁটের উপর/নামাজ আবার রুকু দিবে শস্যক্ষেতের উপর
কি বলব আমরা তোমার চোখের অঙ্গারকে ?
তুমিহীনতা কি বলবে তোমার মাকে ?
- ও কূপে ঘুমিয়ে আছে ?
কি বলবে যোদ্ধারা ?
- আগষ্ট মাসে আমরা শব্দের মেঘ জয় করেছি ?
জীবন কি বলবে মাহমুদ দরবেশকে ? - জন্মেছ.. প্রেম করেছ.. অনেক কিছু জেনেছ
এবং যাদের তুমি ভালবাসবে তারা সবাই নিহত হয়েছে ?
এই ধরনের কোনো গানের বুকেই কি স্বপ্ন বিছিয়ে দিব, বিজয় সাজ আর শেষ দুয়ারের চাবি নিয়ে বের হব,
চিরদিনের জন্য আমাদের কানের উপর এই গানের দুয়ার বন্ধ করে দেওয়ার জন্য ?
কিন্তু আমরা আবার জন্ম নিব .. বেঁচে উঠব.. কারণ জীবনের একমাত্র অর্থ জীবন।
১০টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
স্মৃতিপুড়া ঘরে
বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।
দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন
গরমান্ত দুপুরের আলাপ
মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন
রাজীব নূর কোথায়?
আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন
=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=
©কাজী ফাতেমা ছবি
মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।
হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।
ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন