BANGLADESH নামটির পূর্ণ রূপটি কী? B=Blood (রক্তে) A=Achieve (অর্জিত) N=Noteworthy (স্মরণীয়) G=Golden (সোনালী) L=Land (ভূমি) A=Admirable (প্রশংসিত) D=Democratic(গণতান্ত্রিক) E=Evergreen (চিরসবুজ) S=Sacred (পবিত্র) H=Habitation (বাসভূমি) বাংলা অর্থগুলোকে একসাথে করলে হয় -রক্তে অর্জিত স্মরণীয় সোনালী ভূমি প্রশংসিত গণতান্ত্রিক চিরসবুজ পবিত্র বাসভূমি ! লক্ষ্য করুন প্রশংসিত গণতান্ত্রিক চিরসবুজ পবিত্র বাসভূমি !
বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে প্রায় বেয়াল্লিশ বছর। একটা দেশের প্রকৃত সমৃদ্ধির জন্য এটা হয়ত খুব বেশি একটা সময় নয়। তথাপি নানান প্রতিকূলতা এবং সমস্যার মধ্যে দিয়ে আমরা ধীরে ধীরে সামনে এগিয়ে যাবার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি, যার প্রধান কৃতিত্ব এই দেশের খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের। জাতি হিসেবে আমরা সবসময় চেয়েছি আমাদের দেশে একটি সুষ্ঠ গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় থাকুক, কেননা একটি সুষ্ঠ গণতান্ত্রিক পরিবেশ ছাড়া দেশের মানুষের সত্যিকারের ভাগ্য উন্নয়ন করা সম্ভব নয়। ১৯৯০ সালে স্বৈরাচার বিরোধী আনন্দোলন এবং তার পতনের পর থেকে এই দেশে গণতন্ত্রের সুবাতাস বইতে শুরু করে এবং আমরা কিছুটা হলেও এর সুফল ভোগ করতে শুরু করি। যদিও গণতন্ত্রের বিকাশ একটি চলমান প্রক্রিয়া, এতে দীর্ঘ সময় লাগে। কিন্তু তা সত্ত্বেও বিগত বছরগুলোতে আমরা বেশ ভালোই সফলতা অর্জন করেছি যা কিনা একজন বাংলাদেশী হিসেবে আমাদেরকে কিছুটা হলেও মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সাহায্য করেছে।
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা লক্ষ্য করেছি, সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের দেশের গণতন্ত্র একটি কঠিন সময় পার করছে। বিরোধী দলের উপর ক্ষমতাসীন দলের অন্যায় আচরণ চিরকালই ছিল এবং বাংলাদেশে প্রেক্ষাপটে এটা বেশ স্বাভাবিক একটি ঘটনা হিসেবেই বিবেচিত। কিন্তু আমরা খুব আতংক এবং গভীর হতাশার সাথে লক্ষ্য করেছি, বর্তমানে এই ধারা বা চর্চাটি খুব বিপদজনক ও নেক্কারজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে যা কোন ভাবেই কাম্য বা সমর্থনযোগ্য নয়। এমনকি বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে আমাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম- বর্তমানে মানুষের স্বাধীন মত প্রকাশের অন্যতম প্রধান একটি ক্ষেত্র। খুব স্বাভাবিক ভাবেই আমরা আশা করতে পারি, মত প্রকাশের এই সুযোগ একটি সার্বজনীন ব্যাপার। অর্থাৎ এখানে নারী পুরুষ বলে কিছু নেই। একজন মানুষ বা সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহারকারী হিসেবে আপনি আপনার মতামত এখানে তুলে ধরতে পারেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে আমাদের সমাজে এই মতপ্রকাশের সুযোগটি সার্বজনীন নয়।
একজন নারী হিসেবে যদি প্রশ্ন করি, আমাদের দেশে মেয়েদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা কত খানি? আমি বলব, নাহ! মেয়েরা এখন আমাদের দেশে মত প্রকাশের ক্ষেত্রে পূর্ণ স্বাধীনতা অর্জন করে নি। দুঃখজনক-ভাবে এই পুরুষ শাসিত সমাজে মেয়েদের মতপ্রকাশ, “তুমি এতোগুলো পচা, আমার টিপ হারিয়ে গিয়েছে, বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছে করছে, ফুচকা খেতে ইচ্ছে করছে” ইত্যাদি বিষয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ আর আমরা এই সব দেখতেই ভালোবাসি আর সত্যি বলতে এমন মত প্রকাশ করাই বুঝি নিরাপদ। রক্ষণশীল সমাজে বেড়ে উঠা একজন মেয়ে যখন তার মনের ভেতর জমে থাকা কথাগুলো যখন বলার চেষ্টা করে তখনই অজানা এক আশংকায় সে কিছুটা কেঁপে উঠে, লাঞ্ছিত হবার ভয় তাকে থামিয়ে দেয়। এই দেশে একজন নারী যখন কোন একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক পক্ষ অবলম্বন করে মত প্রকাশ করে তখন তার অবস্থা হয়ে উঠে দুর্বিষহ। সামাজিক ভাবে হেয় করার পাশাপাশি নোংরা অশালীন কথার আক্রমণে তার মানসিক সামাজিক জীবন বিপন্ন করে তোলা হয়।
কারা করেন এই কাজ? খুবই দুঃখজনক এবং হতাশার সাথে বলতে হয়, আমাদের দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের সমর্থকরাই এই কাজগুলো করে থাকেন। কারো ক্ষেত্রে হয়ত বেশি, বা কারো ক্ষেত্রে হয়ত কিছুটা কম। বর্তমান সময়ে একজন জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী একটি নির্দিষ্ট দলের হয়ে রাজনৈতিক মত প্রকাশ করেছেন। একজন স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক মতামত বা দৃষ্টিভঙ্গি থাকা দোষের কিছু নয় বরং এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তার ক্ষেত্রে কি হলো, সামাজিক মাধ্যম জুড়ে তাকে নিয়ে নোংরামি শুরু হয়ে গেল। তাকে সামাজিক ভাবে, ব্যক্তিগত ভাবে হেয় করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এই দেশে কবরী, মমতাজ, তারানা হালিম প্রভৃতি নারীর যে অধিকার ন্যান্সিও ঠিক তেমন অধিকার। করবী, মমতাজ, তারানা হালিমকে কি তাদের রাজনৈতিক অবস্থান, মত প্রকাশের জন্য হেনেস্তা হতে হয়েছে? আমার জানা মতে হয় নি। তাহলে বিরোধী মত প্রকাশ করার জন্যই কি তাকে এত নোংরা ও অশালীন কথা দ্বারা আক্রমণ করা হচ্ছে? নাকি তিনি নারী বলেই তাকে আক্রমণ করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। কেননা, গায়ক আসিফও তো একটি নির্দিষ্ট দলের সমর্থক, নেতা বা কর্মী। কই তাকে তো কেউ কিছু বললেন না?
এখন প্রশ্ন হচ্ছে এইগুলো কি সঠিক দৃষ্টান্ত? আমরা কি আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে এই সব দৃষ্টান্তের জন্য লজ্জিত হব না? এই ধরনের নোংরা আচরণ একজন অশিক্ষিত মানুষ করলে সেটাকে হয়ত অশিক্ষার দোহাই দিয়ে মেনে নেয়া যায়, কিন্তু যারা এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহারকারী তারা তো শিক্ষিত, তাদের এই কুরুচিপূর্ণ কাজ কি কোন ভাবে সমর্থনযোগ্য? শুধু মাত্র আমার পছন্দের দল না করার কারনে আমি কি একজন শিল্পীকে তার প্রাপ্য সম্মানটুকু থেকে বঞ্চিত করতে পারি?
হ্যাঁ, হয়ত আমরা পারি। কিন্তু মনে রাখবেন, স্বাধীন মত প্রকাশের অপরাধে একটি মেয়েকে লাঞ্ছিত করার জন্য আপনাকে শিক্ষিত ও সভ্য মানুষ কুলাঙ্গার হিসেবেই চিহ্নিত করবে। একজন কুলাঙ্গার নারী অবমাননা করবেন, এটাই নিপাতনে সিদ্ধ। যদি সময় থাকতে আপনি এর প্রতিবাদ না করতে পারেন তাহলে নিজেকে কুলাঙ্গার হিসেবে পরিচয় দিতে প্রস্তুত থাকুন। এই দেশ এবং জাতি তার কুলাঙ্গারদের কখনও ক্ষমা করে না ।
ইরিশ জাকের , আসিফদের রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বের জন্যে বা নিজ নিজ পছন্দের দল সমর্থনের জন্য লাঞ্ছিত হতে হয়না। আর ন্যান্সি একজন নারী শিল্পী বলে তাকে তার পছন্দের দল সমর্থন ও স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য লাঞ্ছিত হতে হয়।
সত্যি সেলুকাস !! বড়ই বিচিত্র এই দেশের মানুষের ( সকলের না ) মানসিকতা।
পোস্টটি উৎসর্গ করছি আমার প্রিয় ব্লগার কাল্পনিক ভালোবাসা ভাইয়াকে
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১:৫২