somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি সন্ধ্যা অথবা রাত !

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১২:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


একটা বাসেরও দেখা নেই । রাত বলতে গেলে মাত্র সোয়া নয়টা । ঢাকা শহরে রাত নামে ১১ টার পর । অথচ এই কুড়ি, পঁচিশ মিনিটে নিপুন একটা বাস ও পায়নি বাড়ি ফেরার জন্য । বাস স্ট্যান্ডে একা দাঁড়িয়ে কিছুক্ষন পর পর লাল রঙের বাসটা আসছে কিনা দেখছে সে । সত্যি বলতে গেলে বাস আসছেনা বলে তার খারাপ যতটা লাগছিল তার থেকে বেশি খারাপ লাগছিল আশেপাশের লোকগুলোর চোখ । এরা কি চোখ দিয়ে বুকে,পেছনে তাকিয়ে যৌন সুখ পায় ! ঈশ্বর ই জানেন বোধ হয় । এইভাবে কেউ কারো দিকে কিভাবে এতক্ষন তাকিয়ে থাকে নিপুন ভাবতে পারছেনা । আচ্ছা কোন দিক দিয়ে কি তার গা দেখা যাচ্ছে নাকি ! কথাটা মনে পড়তেই অল্প একটু ঝুঁকে শাড়ির বাঁ পাশ দিয়ে তাকাল । নাহ, কিচ্ছু দেখা যাচ্ছেনা । কিন্তু সে যাই হোক, এই একই জায়গায় সে আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারবেনা । আরেকটু সামনে এগিয়ে পুরনো বটগাছটার নিচে দাঁড়ানোই ভালো হবে ভেবে হাঁটতে শুরু করল সে । এগোতেই সেই লাল বাসটার দেখা মিলল । হঠাৎ পাশ দিয়ে একটা কালো রঙের বাইক যেতে দেখল, একটুর জন্য নিপুনের সঙ্গে ধাক্কা লাগল না । খুব জোর একটা ধমক দেয়ার আগেই একজনের কথা শুনতে পেল ।
‘তুই যা, আমি ওকে নামিয়ে আসছি’ ।
‘পারবি নাকি?’
‘একশবার পারব, ও রাজি হলে অবশ্যই পারব’
নিপুন বুঝল ওকে নিয়েই এসব কথা হচ্ছে । সুতরাং এখানে ধমক দিয়ে ওদেরকে তার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ দেয়া মানে খাল কেটে কুমির আনা বাগধারার সঠিক প্রয়োগ করা হবে । এমন সময় লাল বাসটা দরজা বন্ধ করে ঈগলের মত উড়ে গেল । মন মেজাজ দুটোই এতক্ষনে খারাপ হয়ে গেল । সামনে হাঁটতে যাবে এমন সময় পেছন থেকে ডাক শুনল ।
‘যাবে আমার সঙ্গে?’
নিপুন এক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে পেছনে ফিরে ওদের উদ্দেশ্যে বলল, ‘সম্বোধনটা আপনি হল না কেন? আমি তো আপনাদের চেয়ে বয়সে বড় হতে পারি ।’
এই মুহূর্তে যেটা করল সেটার জন্য নিপুন মোটেই প্রস্তুত ছিলনা । সে এভাবে কখনো অপরিচিত কারো সঙ্গে কথা বলেনি ।
‘সরি বলা যায় কিন্তু বলছিনা, বরং শুধরে নিচ্ছি । আমি আপনাকে লিফট দিতে চাই । দেখুন আমি জানি আপনি কি কি এক্সকিউজ দিতে পারেন । আমি অপরিচিত, আপনার পেছনে কথা বলেছি যেটাকে লোকে এক কথায় ইভটিজিং বলে, আমি খারাপ ছেলে ও হতে পারি । কিন্তু দেখুন আমার সঙ্গে গেলে আপনার কোন ক্ষতি হবেনা, সে নিশ্চয়তা আমি দিতে পারি ।’
এতক্ষন যে ছেলেটা হড়বড় করে কথা বলছিল তাকে এক কথায় সুদর্শন বলা যায় । হালকা কোঁকড়ানো চুল, মুখে দাঁড়ি গোঁফের দিকে তাকালেই বোঝা যায় কিছুক্ষন আগে সেগুলো কেটে ফেলা হয়েছে । জিনস প্যান্টের সঙ্গে হাতাওয়ালা স্ট্রাইপ সোয়েটার পরা । বাতাসে মিশে থাকা সুন্দর মিষ্টি গন্ধটা যে ওর গা থেকেই আসছে সেটা মোটামুটি নিশ্চিত নিপুন । ছেলেটি যে অপরিচিতা একটি মেয়েকে এমন প্রস্তাব দিতে পারে এটা নিপুন কিছুতেই ভাবতে পারছেনা । শুধু দিলে কোন কথা ছিলনা কিন্তু তার সঙ্গে যেসব কথা বলেছে সেগুলো ভাবতে ভাবতে নিপুনের “না” বলার শক্তিটা ভোঁতা হয়ে যাচ্ছে । কিন্তু নরম হলে চলবে না কিছুতেই, ছেলেটি খারাপ তো হতেই পারে । কয়েকদিন আগে মার পাশে বসে একটা বিদেশী সিরিয়ালে সে দেখেছিল একটি ছেলে আগ বাড়িয়ে একটি মেয়েকে লিফট দেয়ার নাম করে অন্য জায়গায় নিয়ে গিয়ে অজ্ঞান করে দিয়েছিল । সতর্ক হল নিপুন ।
‘কি ব্যাপার, এতক্ষন ধরে এই কথাটাই ভাবছেন নাকি সঙ্গে আরও কিছু ! টিভি তে দেখা কোন ঘটনা ও কি এর সঙ্গে মেলাচ্ছেন নাকি !’ ছেলেটি বলল ।
এবার আর তার না বলার শক্তিটুকু রইল না । কোনকিছু না বলে চুপচাপ বাইকের পেছনে উঠে বসল সে । পরনের শাড়ি টার দিকে তাকাল এবার, খুব একটা পুরনো হয়নি । মাত্র কদিন আগে দেশী একটা দোকানে গিয়ে শাড়িটা কিনেছিল । কিন্তু এই মুহূর্তে শাড়িটাকে খুব বেমানান মনে হল । এমন দামি বাইকের পেছনে এমন সাধারণ শাড়ি টাকে মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছিল তার । ছেলেটি তার দিকে একটু ফিরে তাকিয়ে বলল, ‘আমি অরুণ ।’ একটু মুচকি হেসে বলল
‘আমার সঙ্গে বাইকে উঠতেই আপনি অনেকক্ষণ ভেবেছেন তাই নাম জিজ্ঞেস করে আপনাকে ২য় বার আর ভাবাতে চাইলাম না ।’
নিপুন শুধু একবার গলা নামিয়ে বাড়ির ঠিকানাটি বলেছিল তারপরে সারা রাস্তা দুজনে আর একটি কথাও হয়নি । পুরো ঘটনাটি তার কাছে স্বপ্ন স্বপ্ন মনে হচ্ছিল । এমন করে কোন অপরিচিত ছেলে তার সঙ্গে কথা বলেনি । ১ম সাক্ষাৎটা যে এমন নাটকীয় হতে পারে এমন ধারণা তার কখনো ছিলনা । নাটক, সিনেমায় এটা খুব স্বাভাবিক হলেও মানুষের জীবনে এমন ঘটনা মোটেও স্বাভাবিক নয় । তাহলে যে মানুষ বলে নাটক, সিনেমা মানুষের জীবনের ই গল্প, এটা সত্যিই !!! সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে কখন বাড়ির সামনে চলে এসেছিল বুঝতেই পারেনি ও । নিপুন পরিচয় আর বাইকের ঘটনার ঘোর কাটিয়ে তখনো স্বম্বিত ফিরে পাচ্ছিলনা । এক দৌড়ে বাড়িতে এসে ঢুকল । পেছন থেকে মা চিৎকার করে কিছু যেন বলছিল কিন্তু তার কানে ঠিকঠাক ঢুকছিল না । এতক্ষনে মনে পড়ল, ছেলেটিকে তার নাম বলাটাই হয়নি শেষপর্যন্ত । কিন্তু তাকে দেখে এমন অসাড় হয়ে গেল কেন ! বাইকের ধাক্কায় দু’একবার ওর গায়ের সঙ্গে মৃদু ধাক্কা লেগেছিল, আড়ষ্ট হয়ে আরও সরে বসেছিল নিপুন । নিজের ঘরে এসে শাড়ি ছেড়ে বাইরে বের হতে হতে শুনল মা কারো সঙ্গে কথা বলছে । এই সময়টায় বাবা বাড়ি থাকেনা, আত্মীয় স্বজন কারো আসার কথাও ছিলনা । নিপুন বসার ঘরে যা দেখল তাতে তাকে সজ্ঞানে ফিরতে বাধা দিল আরও কয়েক মুহূর্ত । মা তাকে দেখেই হেসে উঠেছিল,
‘শুনলাম, অরুণের সঙ্গেই বাড়ি ফিরেছিস ? আমি আর তোর বাবা গত সপ্তাহে তোর মিমি খালার বাসায় গিয়ে ওকে দেখলাম । অনেক ছোটবেলায় দেখেছিলাম তারপর ও সুইজারল্যান্ডে চলে গিয়েছিল । তোর বাবা ওকে দেখেই তোর জন্য মনস্থির করে ফেলেছিল । তার মানে এই নয় যে তোর উপর আমাদের মতামত জোর করে চাপিয়ে দিচ্ছি ! তোর নিজের মত করে ভেবে জানাস ।’
নিপুনের চিবুক তখন গলায় এসে মিশেছে, গলা দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছেনা । কান থেকে ধোঁয়ার মত গরম হাওয়ার মিশেলে কিছু একটা বের হচ্ছে, রক্তের সঞ্চালন হঠাৎ করে বেড়ে গেছে । মা এক মুহূর্ত থেমে বসার ঘর থেকে বের হয়ে গেল, যাওয়ার সময় হয়ত নিপুনের লাল হয়ে যাওয়া নাক মুখের দিকে তাকিয়েছিল, কিছু বুঝতে পেরেছিল কিনা কে জানে !
মা বের হয়ে যেতেই অরুণ কাছে এসে নিপুনের দিকে হাত বাড়িয়ে বলল, ‘আপনি নিপুন ।’
নিপুন একটু ইতস্তত করে ওর দিকে তাকিয়ে মুখ নামিয়ে ফেলল, ‘সম্বোধনটা তুমি হল না কেন? আমি আপনার চেয়ে বয়সে ছোট হব হয়ত !’
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×