দুপুর ২টা বেজে ৩২ মিনিট। টরন্টোর অন্যতম ব্যাস্ত এক হাসপাতালের ওয়েটিং রুমে অপেক্ষা করছি। ওয়েটিং রুমের বিশাল স্ক্রিনে দেখাচ্ছে উনত্রিশ জন এখনো অপেক্ষারত। এই দেশের চিকিৎসা সেবা আমার পছন্দ হয় না। মনে হয় দেশে ভাল ছিল। টাকা দিয়ে ভাল চিকিৎসা পাওয়া সহজ। এইদেশে মেডিকাল ইন্স্যুরেন্স ছাড়া আমার প্রতিবার বাংলাদেশি টাকায় সত্তর হাজার টাকা গোনা লাগে। মাঝে মাঝে মনে হয় চিকিৎসা দেশে গিয়েই করাই কিন্তু ব্যাথাটা আর সহ্য করতে পারলাম না।
মানুষের যখন বিপদ আসে তা একেবারে সব একসাথে আসে বলে শুনেছি। আমার শারীরিক অবস্থা, দেশে জনৈক আপনজনের মৃত্যুর সাথে লড়াই আর প্রাক্তনের বিয়ে- এগুলো তো বিপদ বলেই মনে হচ্ছে। বিপদের সাথে যে দুঃখ গুলো আসে, এই কষ্টগুলোতো একই রকম অনুভূত হছ্ছে।
সেদিন বলছিলো ও আমাকে, বিয়ে করে ফেলছে শীঘ্রই। প্রথমে কাবিন। তারপর ওয়ালিমা। এরপর বউকে নিয়ে ছোট ভাড়া বাসাটায় উঠে পড়বে। ওদের ছোট্ট টোনাটুনির সংসার। বাসাটা ছোট হলেও নাকি অনেক খোলামেলা। আধুনিক সব সুবিধা আছে।
আমার ভাবনাগুলো কেমন যেন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে, অবাধ্য হয়ে উঠছে। ভাবতে চাইছিনা তবুও ভাবাচ্ছে যে ওই বাসায় তো আমার থাকার কথা ছিল। সকাল সকাল উঠে কাজে বেরিয়ে পড়তে তুমি। আমি বারান্দায় বসে ঊদাস দুপুরে আনমনা হয়ে মেঘেদের দেখতাম, ভেবে আকুল হতাম কখন আসবে তুমি। সন্ধ্যায় যখন বাড়ি ফিরতে, আমায় জড়িয়ে চুমু খেতে, খুনসুটি করতে চাইতে। আর আমি বলতাম আগে খেয়ে দেয়ে বিশ্রাম করো ঠাকুর! আমিতো আর চলে যাচ্ছিনা! তোমার জন্যই তো আমার সব। তুমি এসব শুনে মুচকি হাসতে, ভাবতে মেয়েটা কখনো বদলাবে না। খাবার টেবিলে তোমার পাতে মাছের বড় টুকরাটা তুলে দিতাম জোর করে, তুমি বাধ সাধতে বরাবরের মত। আমি ভাব করতাম আমার মাছ বড় বিশ্রী লাগে খেতে। তুমি বুঝতেনা তোমার যত্ন নেয়াটাই যে আমার সবচাইতে বড় তৃপ্তি, ওটা তো মাছ-মাংসে নেই। তুমি খেতে আর আমি তোমায় দুচোখ ভরে, মন ভরে কেবল দেখতাম আর দেখতাম আর অবাক হতাম এত সুখও কি কারো কপালে থাকতে পারে?! খাওয়া শেষে দুজন দুটো চায়ের কাপ নিয়ে চলে যেতাম দখিনের বারান্দাটায়। ধোঁয়া ওঠা গরম চায়ে চুমুক দিতে দিতে তোমার সারা দিনের জমে থাকা সব গল্প শুনতাম। তোমাকে হাসতে দেখে আমার সারা দিনের ক্লান্তিগুলো কোথায় যেন উবে যেত। রাতে বাতিটা নিভিয়ে দিয়ে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়তাম তোমার বুকে। তোমার বুকের ভেতরের ধুকপুক আওযাজটা কেমন যেন ছন্দময়, ঘুম পাড়িয়ে দিতো আমায়। গভীর ঘুমে তলিয়ে যেতাম আমি এক বুক আনন্দ নিয়ে।
স্বপ্নেরা সত্যি খুব সুন্দর হয়। জেগে উঠলেই যত সব বিপত্তি। কিন্তু জেগে থাকাটাই যে জগৎের নিয়ম যা ভাঙার সাধ্য বিধাতা কাউকে দেননি, যেমন দেননি নিয়তি বদলে ফেলবার ক্ষমতা।
তুমি অনেক ভাল থেকো প্রিয়তম। এ জীবনে আমার হলে না। পরের জনমে আকাশ হয়ো প্রিয়, আমি পাখি হয়ে ছুঁয়ে যাবো তোমার সাদা মেঘে ঢাকা সীমাহীন নীল দিগন্ত।
-+-+-+-+-+-+-+-+-+-+--+-+-+-+-+-+-+-+-+-
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুলাই, ২০২৩ ভোর ৪:৪৫