মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া উপজেলার একটি গ্রাম বালিয়াটী। জেলা সদর থেকে ১৭ কিলোমিটার উত্তরে এই গ্রাম। পাঁচটি জমিদার বাড়ীর ধ্বংসাবশেষ বুকে নিয়ে আছে এ গ্রাম। একটি নিন্মবিত্ত সাহা পরিবার থেকেই বালিয়াটী জমিদার বংশের উদ্ভব।
অশীতিপর বিগত যৌবনা নারীকে দেখে কেউ কখনো বুঝতে পারেনা যৌবনে তার কত রূপ ছিল। বালিয়াটী ঠিক তাই। বালিয়াটী এখন অবেলা।
মহেশরাম সাহা নামের এক কিশোর নিত্যান্তই ভাগ্যের অন্মেষনে বালিয়াটী আসেন এবং জনৈক পানের ব্যবসায়ীর বাড়িতে চাকরি নেন। পরবর্তীতে ঐ বাড়ীরই মেয়ে বিয়ে করে শ্বশুরের সঙ্গে ব্যবসা করে প্রথম শ্রেনীর ব্যবসায়ী হন। তার ছেলে লবনের ব্যবসা করে আরো উন্নতি লাভ করেন এবং তিনি চার ছেলে জন্ম দেন। তাদের নাম আনন্দ রাম, দধি রাম,পন্ডিত রাম এবং গোলাপ রাম। এই চার ছেলে মিলেই বালিয়াটী গোলাবাড়ী, পূর্ববাড়ী, পশ্চিমবাড়ী, মধ্যবাড়ী ও উত্তর বাড়ী নামে পাঁচটি জমিদার বাড়ির সৃষ্টি করেন। আনুমানিক ১৭৯৩ খিষ্টাব্দে উক্ত চার ছেলের মাধ্যমেই জমীদার বাড়ীর গোড়াপত্তন হয়।
বর্তমানে যে প্রসাদটি "বালিয়াটি প্রাসাদ" নামে খ্যাত এটি কে বলা হতো পূর্ব বাড়ী। এদের রাজত্বকাল ছিল ১৭৯৩-১৯৪৮সাল পর্যন্ত। ১৯৪৮ সালে ইতি ঘটে তাদের জমিদারী। এখানে জমিদারী করতেন চারটি পরিবার বড় তরফ, মেঝ তরফ, নয়া তরফ এবং ছোট তরফ। বড় তরফের প্রধান জমিদার রাজচন্দ্র, মেঝ তরফের প্রধান জমিদার ঈশ্বর চন্দ্র, নয়া তরফের প্রধান জমিদার ভগবাদ চন্দ্র এবং ছোটতরফের প্রধান জমিদার ভৈরব চন্দ্র। পশ্চিম থেকে পূর্ব পযর্ন্ত যে চারটি সুবৃহত ও সৃদৃশ্য অট্রলিকা দাড়িয়ে আছে এ গুলো বড়, মেঝ, নয়া ও ছোট তরফ নামে জনশ্রুতিতে নিবন্ধ। ১৩০০ বঙ্গাব্দের ১লা বৈশাখ এই প্রাসাদে জমিদারগন প্রথম এ গৃহপ্রবেশ করেন বলে জানা যায়। ১৬.৪০ একর বিশাল এলাকা জুড়ে ছিল এই বাড়ীর অবস্থান। ৫.৮৮ একর জমির উপরে বড়ির মূল সৌধমালা। ১০.৫২ একর জায়গার মধ্যে ছিল বিশাল বাগান। সামনের চারটি প্রসাদ ব্যবহারিত হত ব্যবসায়িক কাজে। এই প্রসাদের পেছনের প্রাসাদকে বলা হয় অন্দর মহল সেখানে বসবাস করত তারা। ১৯৪৮ সালে জমিদাররা চলে যাবার পর এই প্রসাদে চলে লুটপাট। তখন বালিয়াটীতে একটি ক্লাব তৈরি করা হয় এতে কিছু হলেও কমেছিল লুটপাট। ১৯৮৭ সালে বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর অধিগ্রহন করেন এবং বর্তমানে এর সংস্কার কাজ চলছে।
বালিয়াটী জমিদাররা শিক্ষাক্ষেত্রে অনেক ভূমিকা পালন করেছেন- জমিদার কিশোরলাল রায় চৌধুরী ১১৮৮৪ খ্রিঃ ঢাকায় তৎকালীন চিত্তরঞ্জ এভিনিউতে বিখ্যাত জগন্নাথ কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৬ সনের ৯ জানুয়ারী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই ঢাকা জগন্নাথ কলেজে বক্তৃতা করেন। সেটি এখন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। এ ছাড়াও অনেক পাইমারি স্কুল একং হাই স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। ঢাকায় "ডায়মন্ড জুবেলি থিয়েটার" ওই জমিদারদের অর্থেই তৈরি হয়। এ রকম অনেক কৃত্তি আছে তাদের।
উণ্থান পতন পৃথিবীর চিরন্তন রীতি। বালিয়াটীর জমিদারদের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রক ঘটেনি। জমিদারগন একদিন এ গ্রাম সহ সন্নিহিত এলাকাকে শোষন করেছে, এলাকাবাসীকে অত্যাচার করেছে এবং বৃটিশের সরাসরি তবেদারী করেছে ১৭৯৩ সান থেকে জমিদারী প্রথা চালু হবার পর থেকে, সেই অত্যাচারী জমিদারদের সর্বস্তরের মানুষ আজ ধিক্কার দেয়। আবার এর মধ্যে কেউ কেউ আছে যাদের কথা মানুষ অতীব শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরন করেন।
তথ্য গুলো স্থানীয় পাকুটিয়া কলেজের অদ্যক্ষ "সমরেন্দু সাহা লাহোর" এর কাছ থেকে পাওয়া।