আব্দুল হান্নান
পিতা : মৃত আঃ রাজ্জাক
গ্রাম : মানাউরা
ডাকঘর : সালুটিকর বাজার
থানা : গোয়াইনঘাট
জেলা : সিলেট
ভারতীয় নং- ২২৮৭০
গেজেট নং- ২২৪৫
জাতীয় পত্রিকা নং- ২০৭
মুক্তিবার্তা নং- ০৫০১১১০৩১১
উনি একজন মুক্তিযোদ্ধা । নিজের চাচীকে চোখের সামনে ধর্ষিত হতে দেখেছেন এবং সেই চাচী তারপর আত্মহত্যা করেছেন । তারপর মাত্র ১৭বছর বয়সে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন । তখন তিনি ১০ম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন । পাকিদের নির্যাতন সহ্য না করতে পেরে যুদ্ধের ময়দানে নামেন । বিনিময়ে এই লোকটা তার নিজের বাড়ি ছাড়া সব হারালেন । সেসাথে তার ১০একর জায়গা দখল হয়ে যায় । কারণ উনার বাড়িতে আগুন দেয় পাকবাহিনী । উনার জায়গার সব দলিল জ্বলে যায় । কোন রাজাকার জায়গা দখল করেনি । সুযোগ সন্ধানীদের দখলে চলে যায় । উনার এলাকার প্রভাবশালী রাজাকার টুনু মিয়া ও গনি মিয়া পালিয়ে যায় এলাকা থেকে এবং স্বাধীনতার ১৫বছর পর নিজেদের এলাকায় ফিরে আসে ।
এই মহান মুক্তিযোদ্ধাকে আমার বন্ধুর বাবা আশ্রয় দেন এবং তিনি তাদের গাড়ি চালান । ৫৫ বছর বয়সী হান্নান ভাইয়ের কাছে যেদিন আমি শুনি পাক এবং রাজাকারদের নির্যাতনের ঘটনা তখন থেকে একটা জিনিস বুঝি ওরা মানুষ না । তাই কাউকে যদি ওদের পক্ষ নিয়ে কথা বলতে দেখি তখন মেজাজ ঠিক রাখতে পারিনা । গালি চলে আসে । এজন্য আমি অনুতপ্ত নই । আমি গালি দিবো ।
উনার মুখে শোনা মা-বোনদের নির্যাতনের কিছু চিত্র তুলে ধরি ।
“৩০/৩১ মার্চ ১৯৭১, ৫০-৬০ জন পাকিস্তানী সৈন্য ৪জন রাজাকার নিয়ে আমার গ্রাম মানাউরাতে আসে । ওদের দেখে যারা পেরেছে পালিয়ে ঝোপ-জঙ্গলে চলে যায় । মহিলাদের এক লাইনে দাঁড় করায় । বয়স্কদের সরিয়ে দিয়ে যুবতী এবং সুন্দরীদের সবার সামনে ধর্ষন করে । আমার আপন চাচীকেও ওরা ধর্ষন করে । আমি শুধু ঝোপের আড়াল থেকে দেখেছি । কিছু করতে পারিনি । তারপর সুন্দরী মেয়েদের ধরে নিয়ে যায় ক্যাম্পে । আমার চাচী আত্মহত্যা করেন ঐদিনই । তারপর আর নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি । প্রতিশোধ নেয়ার জন্য যুদ্ধে অংশগ্রহণ করি । ”
তারপর হান্নান ভাই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে । ছাতকের হাদা টিলা ক্যাম্প দখল করে মুক্তিবাহিনী জুলাই মাসে । সেই যুদ্ধ লাগাতার ১১দিন চলে । সেখানের একটা অমানবিক ঘটনা শুনুন উনার মুখে ।
“আমার খুব কষ্ট হয় এই দিন । আমরা হাদা টিলা ক্যাম্প দখল করার পর একটা তালাবদ্ধ ঘর ভেঙে পাই ২০০-২৫০ মেয়ে । সবাই উলঙ্গ । অনেকেই রক্তাক্ত । প্রায় সবারই মাথার চুল কেটে ফেলেছে অথবা ছোট করে ফেলেছে । আমাদেরকে দেখে মেয়েরা একজন আরেকজনের পেছনে লুকানোর চেষ্টা করেছে । আমরা মুক্তিরা গায়ের জামা,গামচা ছুড়ে দেই ওদের দিকে । তারপর এদেরকে ভারতের হাসপাতালে পাঠানো হয় চিকিৎসার জন্য । সেদিনের পর থেকে আমাদের মাথায় একটা জিনিস ঢুকে আর কোন পাকিস্তানী আত্মসমর্পন করলেও বাঁচতে দিব না । মেরে ফেলবো । আমি এমন মহিলার লাশও দেখেছি যাকে তিন টুকরা করা হয়েছে । মাথা এক জায়গায় । দুই পা দুই জায়গায় বুক পর্যন্ত । স্তন বেয়নেট দিয়ে কেটে ফেলছে ।”
এসব ঘটনা হান্নান ভাই যখন আমাকে বলছিলেন তখন আমি চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি । উনিও । এরকম অনেক ঘটনা উনি বলেছেন আজ থেকে দেড় বছর আগে । আমি তখন অন্য নিকে লিখতাম । উনাকে নিয়ে আমি লিখতে চেয়েছিলাম অনেক আগেই । কিন্তু পারিনি । এবার বাসায় গিয়ে উনার স্বাক্ষর নিলাম যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই ফর্মে । উনি স্বাক্ষর তো দিলেনই । সেসাথে একটা প্যাড নিয়ে গেলেন । আফসোস একজন মুক্তিযোদ্ধা স্টেনগানের পরিবর্তে কলম নিয়ে নেমে গেলেন আরেক যুদ্ধে । এই যুদ্ধেও যেন তিনি জয়ী হন সেই কামনা করি ।
এসব ঘটনা শোনার পর ব্লগে যেসব রাজাকার ও পাকিস্তানের সমর্থনকারী দেখি তখন গালি না দিয়ে পারি না । ওদের মা-বোনকে যদি এভাবে কেউ ধর্ষন করতো এবং তারপর স্তন কেটে ফেলতো তখনও কি তারা তাদেরকে সমর্থন করবে ????