somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কল্প-গল্প : বিটা ওয়ানের ভালবাসা

২৬ শে জুন, ২০১৮ বিকাল ৪:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


১।
'উহু, আপনি এই গল্প আরো অনেকবার বলেছেন ।' ধাতব কণ্ঠটি গমগমে গলায় বলল।

'আরো বলব এবং তোমাকে তা বেশ মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে। ' ধোয়া উঠা চায়ে সুড়ুৎ সুড়ুৎ করে চুমুক দিতে দিতে বললেন বিজ্ঞানী নিনিন।

'একই গল্প বার বার শুনতে ভাল লাগে না! ' চিনচিনে গলায় বলল ধাতব কণ্ঠটি।

এবার বিজ্ঞানী নিনিন বেশ বিরক্ত হলেন। চায়ের পেয়ালাটি টেবিলে রেখে রাগত স্বরে বললেন 'তোমাকে আমি তৈরি করেছি আমাকে সঙ্গ দেবার জন্য। এই ছোট্ট ল্যাবরেটরিতে তুমি আর আমি ছাড়া আর কেউ নেই। কাজেই আমি যাই বলব এবং যতবার বলব তোমাকে তা শুনতে হবে।'

ছোট কম্পিউটারের মনিটরে নিজের গম্ভীর চেহারাটা ফুটিয়ে তুলল বিটা ওয়ান।তারপর গলার স্বর যথা সম্ভব শান্ত এবং মোলায়েম করে বলল 'আপনি আজ সকাল থেকে দুইবার একই গল্প করেছেন। আপনি ইদানীং সব কিছুই খুব দ্রুত ভুলে যাচ্ছেন বিজ্ঞানী নিনিন।একই কথা শুনতে বিরক্তি লাগে মনে!'

এবার বিজ্ঞানী নিনিন বেশ বিরক্ত হলেন। মাঝারী মানের খাঁকারি দিয়ে বললেন 'তুই মাত্র দুইশত মেগাবাইটের একটি নির্বোধ প্রোগ্রাম। আমি মেশিন লার্নিং ব্যাবহার করে লিখেছি, কম্পিউটারের ভোকাল কর্ডের মাধম্যে কিছু কথা বার্তা চালিয়ে যাওয়া ছাড়া তোর আর কোন গুন নেই, তোর আবার মন কিসের-রে ?'

বিটা ওয়ান বুঝতে পারল বিজ্ঞানী নিনিন রেগে গেছেন, যখন সে রেগে যায় তখন তাকে তুই তুকারি করে। বিটা ওয়ান অপমানে বেশ কিছুক্ষণ চুপ হয়ে রইল। তারপর গলার স্বরে যথাসম্ভব ভাব গাম্ভীর্য্য ফুটিয়ে তুলে বলল 'আপনি আমাকে অপমান করছে বিজ্ঞানী নিনিন।'

'চুপ কর হারামজাদা। পশ্চাৎ দেশে একটি লাথি মেরে তোকে ফেলে দিব । তুই সাধারণ একটি প্রোগ্রাম, তোর আবার মানুষের মত অনুভূতি আছে নাকি?'

'বিজ্ঞানী নিনিন আমার মানব আকৃতি কোন শরীর নেই, কম্পিউটারে একটি মুখাবয়বের ছবি আছে, পশ্চাৎদেশ বলতে আমার কিছু নেই।' আরো কিছু বলতে যাচ্ছিল বিটা ওয়ান......

এবার বিজ্ঞানী নিনিন মুখ শক্ত করে ফেললেন, হাতে ধরে থাকা চায়ের কাপ জোড়ে মুষ্টিবদ্ধ করে ফেলে মনিটরের দিকে তাকালেন।এবার বিটা ওয়ান চুপ হয়ে গেল কারণ সে বুঝতে পেরেছে বিজ্ঞানী নিনিনের রাগের মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। রাগলে কখন কি করে তার কোন ঠিক নেই।

'আমার ভুল হয়েছে। আপনি বলুন।' সারেন্ডার করার গলায় বলল বিটা ওয়ান।

বিজ্ঞানী নিনিন নিজের কাজের চেয়ারটাতে হেলান দিয়ে স্মৃতি হাতড়ে বললেন 'আমার বাবা ছিলেন একজন দরিদ্র কৃষক, তিনি নিজে শিক্ষিত না হলেও বেশ শিক্ষানুরাগী ছিলেন।আমার দরিদ্র বাবা অর্থকষ্টে থেকেও আমাকে পড়াশুনার শিখিয়েছেন। পড়াশুনা করে আমি বিজ্ঞানী হলাম। বর্তমান এই গ্রহের সর্বশ্রেষ্ঠ একজন বিজ্ঞানী হিসেবে আমাকে গণ্য করা হয়।'

বিজ্ঞানী নিনিন একটু থেমে আবার বলতে শুরু করলেন 'কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উপর আমার বিখ্যাত সমীকরণটি মানব সভ্যতাকে আরেক ধাপ এগিয়ে দিয়েছে। তার কল্যাণে আমার যশ খ্যাতি খুব দ্রুতই চারদিকে ছড়িয়ে পরল। কাজের ব্যস্ততায় দেখতে দেখতে কখন যে জীবনের চল্লিশটি বসন্ত পেরিয়ে গেছে তার কোন খেয়ালই ছিল না আমার। বাবা আজ বেচে নেই, আফসোস তিনি আমার এই অর্জনটুকু দেখে যেতে পারলেন না।' এটুকু বলেই বিজ্ঞানী নিনিন একটু থামলেন, গলাটা ভীষণ আসে তার, বুকের মাঝে একটি চাপ অনুভব করেন তিনি।

একটু দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আবার শুরু করলেন, ধরা গলায় বললেন 'সব কিছু শুরু হয়েছে মাস ছয়েক আগে থেকে। আমি জানতে পারি, আমি এমনেশিয়ায় আক্রান্ত আর মাত্র বছর খানেক বাদেই নিজের সম্পূর্ণ স্মৃতি শক্তি হারিয়ে অবুঝ শিশুতে পরিণত হব।'

বিজ্ঞানী নিনিন একটু ঝিরিয়ে নিলেন, তারপর যোগ করে বললেন 'এই সত্যটি আমি মেনে নিতে পারিনি। যেই পৃথিবী আমাকে প্রতাপশালী বিজ্ঞানী হিসেবে জানে, আমার একটি লেকচার শুনার জন্য বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয় নিমন্ত্রণ করে, সেই আমাকেই এক সময় মানুষ করুণার চোখে দেখবে, এটা মেনে নিতে পারিনি। তাই পৃথিবীকে আমি আমার রোগ সম্পর্কে জানাইনি। আমার উদ্দেশ্য নিজের ক্লোনিং তৈরি করব। তারপর নিজের সমস্ত সত্তা এবং স্মৃতিকে নতুন রোগহীন শরীরের স্থানান্তর করব। বর্তমানে পৃথিবীতে হিউম্যান ক্লোনিং সম্পূর্ন্য নিষিদ্ধ তাই লোক চক্ষুর অন্তরালে গহীন জঙ্গলে এসে মাটির নিচে এই গবেষণাগার বানিয়েছি।'

বিজ্ঞানী নিনিন আড়চোখে মনিটরে বিটা ওয়ানের দিকে তাকিয়ে মুখ শক্ত করে বললেন 'আমার কাজ হয়ে গেলেই তোমার মত নির্বোধ ২০০ মেগাবাইটের এই প্রোগ্রামকে ডিলিট মেরে দিব। এই ল্যাবরেটরি শীল গালা করে চলে যাব।'

বিটা ওয়ান একটি অদ্ভুত দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। বিজ্ঞানী নিনিন এই প্রথম বিস্ময়ে কম্পিউটারের মনিটরের দিকে তাকালেন, মানুষের মত এরকম সূক্ষ্ম আবেগের অনুভূতি তিনি আগে লক্ষ্য করেননি বিটা ওয়ানের মাঝে।তিনি চারপাশ গুমট করা একটি রহস্যের গন্ধ পেলেন।

২।
বিজ্ঞানী নিনিন দিনে দুটোর বেশী সিগারেট খায় না। তবে আজ তার নিয়মের বাইরে গিয়ে ইতিমধ্যেই সকাল থেকে চারটি সিগারেট খতম করেছেন। পঞ্চম সিগারেটে লম্বা করে টান দিয়ে ঠোট গোল করে উপরের দিকে ধোয়া ছাড়লেন, তারপর নবজাত সিগারেটটি অ্যাশট্রেতে গুজে কাজে মনোযোগ দিলেন। আজকাল সব কিছুই বেশ দ্রুতই ভুলে যাচ্ছেন তিনি।সকালে নাস্তা করেছেন কি করেননি তাও মনে থাকে না অনেক সময়। বিটা ওয়ান তার যান্ত্রিক গলায় খাবার কথা মনে করিয়ে দিয়েছে আজ সকালে, বেটা একটি বলদ প্রোগ্রাম হলেও বেশ কাজের মনে মনে ভাবলেন বিজ্ঞানী নিনিন।

ল্যাবরেটরিটা দেখতে খুবই ছোট, মাঝখানে দুটি বিছানা সমান্তরালভাবে রাখা আছে। বেশ কিছু যন্ত্রপাতি চারদিকে ছড়ানো ছিটানো, টেবিলটার পাশে ক্লোনিং যন্ত্র এবং রেফ্রিজারেটর। বিজ্ঞানী নিনিন রেফ্রিজারেটরের ভিতর থেকে একটি স্বচ্ছ কাচের তৈরি টিউব বের করলেন। টিউবটিতে কয়েক বিলিয়ন ডিম্ব সেল আছে, ক্লোনিং এর জন্য এটা খুবই দরকারি। এখন তাকে যা করতে হবে, এই ডিম্ব সেল থেকে সাবধানে ডি,এন,এ, ক্রোমোজোম এবং জিন তথা সমগ্র নিউক্লিয়াস বের করে ফেলতে হবে। তার পর এই নিউক্লিয়াস বিহীন ডিম্ব-সেলে নিজের সেলের ডি,এন,এ, ক্রোমোজোম এবং জিন প্রতিস্থাপন করতে হবে।

বিজ্ঞানী নিনিন পুরো কাজটাই খুব সর্তকতার সাথে করতে লাগলেন। ব্যাপারটা এত সহজ নয়, সেল সুস্থ সবল না হলে পুরো কাজটা আবার নতুন করে করতে হয়, অনেকটা ট্রায়াল এবং ইরোরের মাঝে দিয়ে যেতে হয়। কয়েকদিন চেষ্টা করার পর বিজ্ঞানী নিনিন তার কাজে সফল হলেন, সেলটাতে এক ধরনের রিএকশন দেখে নিশ্চিন্ত হলেন ব্যাপারটা। এই সেলটাকে তিনি কৃত্রিম প্রজনন যন্ত্রে প্রতিস্থাপন করলেন। বিজ্ঞানী নিনিনের হাতে সময় নেই, কারণ ডাক্তারি হিসেব মতে আর কয়েক মাসের মধ্যেই নিজের সমস্ত স্মৃতি শক্তি হারিয়ে ফেলবেন তিনি, স্বাভাবিক নিয়মে এই সেলকে বড় হতে দিলে অনেক সময় লাগবে নিজের বয়স সীমায় আসতে, তাই সে বিশেষ এক ধরনের কেমিক্যাল ব্যাবহার করলেন ক্লোনিং এর গ্রোথ রেট ত্বরান্বিত করার জন্য।

বেশ কয়েক সপ্তাহ কেটে গেল। তিনি অপেক্ষা করতে লাগলেন নিজের ক্লোনিং স্যাম্পলটা বড় হবার জন্য। মাঝে মাঝে বড্ড একা লাগে তার, তখন বিটা ওয়ানের সাথে কথা বলেন তিনি। আজকাল বিটা ওয়ানের মাঝে এক ধরনের পরিবর্তন লক্ষ্য করেছেন তিনি, তাকে মাঝে মাঝে বেশ কড়া কথা শুনিয়ে দেয়।

ওভেন থেকে গরম করা একটি পাউরুটি নিজের মুখে গুজে বললেন 'বিটা ওয়ান আছ ?'

'ঝি মহামান্য বিজ্ঞানী নিনিন।'

'কেমন আছ ?'

বিটা ওয়ান কম্পিউটার মনিটরের তার চেহারাটা ফুটিয়ে তুলল। তারপর ঠোট দিয়ে জিব ভিজিয়ে বলল 'মোটামুটি'

বিজ্ঞানী নিনি ভ্রু কুচকে মনিটরের দিকে তাকালেন। 'মোটামুটি কেন ?'

কাশি দিয়ে গলা পরিষ্কার করে বলল 'এমনিই!'

'তুমি একটি নির্বোধ প্রোগ্রাম, তোমার মাঝে বায়োলজিক্যাল কোন অর্গান নেই, কাশি দিবার হেতু কি?'

'আমি অনেকটা মানবিক হওয়ার চেষ্টা করছি, এতে আপনি আমাকে নিজেদের একজন ভাববেন, আপনার সাথে ইমোশনাল এটাচমেন্ট বাড়বে' আরো কিছু বলতে যাচ্ছিল...

বিটা ওয়ানের কথা শুনে বেশ চমকে গেলেন বিজ্ঞানী নিনিন। নিজেকে অনেকটা সামলে কথার মাঝে একটি ঝাড়ি দিয়ে বললেন 'আমার সামনে কাশির অভিনয় করতে হবে না। তোমার মানবিক হবার কোন দরকার নেই!'

এবারো বিটা ওয়ান খুক খুক করে কাশল।

বিজ্ঞানী নিনিন বুঝতে পারলেন বিটা ওয়ান ইচ্ছে করেই তাকে রাগাবার জন্য কাশি দিয়েছে। এবার নিয়ন্ত্রণের বাইরে গিয়ে বললেন 'ঐ নির্বোধ ২০০ মেগাবাইটের প্রোগ্রাম।চুপ কর বেয়াদব।'

'বিজ্ঞানী নিনিন আপনি আজকাল খুবই অল্পতেই রেগে যাচ্ছেন। এমনেশিয়া রোগটি আপনার স্মৃতিশক্তি বিলুপ্তি করার সাথে সাথে আপনার রসবোধকেও নিঃশেষ করছে দিনকে দিন।'

বিজ্ঞানী নিনিনের চোয়াল শক্ত হয়ে গেল, টেবিলের উপরে থাকা কাচের গ্লাসটি নিচে ফেলে দিলেন তিনি।

'আর একটি কথা বলল তোর খবর আছে। আমি একজন সম্মানিত বিজ্ঞানী, আর তুই আমার সৃষ্টি একটি নির্বোধ শ্রেণীর প্রোগ্রাম। আমাকে জ্ঞান দিতে আসবি না। হারামজাদা একটি থাপ্পড় দিয়ে গাল লাল করে দিব!'

'বিজ্ঞানী নিনিন আমার মানুষের কোন অবয়ব নেই! গাল বলতে আপনি কি বুঝাচ্ছে একটু বললেন!' বেশ মলায়েম স্বরে বলল বিটা ওয়ান

এবার বিজ্ঞানী নিনিন রাগে থরথরে করে কাপতে লাগলেন। নিজেকে কোনমত সামলে বললেন 'হারামজাদা চুপ কর! আর একটিও কথা বলবি না!'

'আপনি বেশ উগ্র হয়ে যাচ্ছেন বিজ্ঞানী নিনিন। নিজেকে নিয়ন্ত্রনে রাখুন, নইলে...'

'নইলে কি ? বেয়াদব!' বলেই মাউস দিয়ে রাগে বিটা ওয়ানের দুইশত মেগাবাইটের প্রোগ্রামটি ডিলিট করে দিলেন বিজ্ঞানী নিনিন।

হঠাৎ একটি আত্বচিৎকার শুনতে পেলেন তিনি, কি করুণ আর্তনাদের শব্দটি এই ছোটি ল্যাবরেটরির চারপাশে প্রতিবিম্বিত হয়ে তার কানে বার বার ফিরে আসছে।বিজ্ঞানী নিনিন বেশ কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে রইছেন, এরকম ধাক্কা তিনি আগে খাননি, ধাতস্থ হতে কিছুটা সময় লাগল তার।

৩।
বিজ্ঞানী নিনিন নিজের ক্লোনিং করা শরীরটার দিকে এক নজরে তাকিয়ে রইলেন। দেখতে অবিকল তার মত হয়েছে, আর হবেই বা না কেন দুজনেই যে একই ডি,এন,এ, ক্রোমোজোম এবং জিন বহন করছে। সিদ্ধান্ত অনুসারে আজই নিজের সমস্ত স্মৃতি এই নতুন শরীরটাতে স্থানান্তর করবেন তিনি। তারপর চল্লিশটি বছর বয়ে বেড়ানো এই পুরনো শরীরটাকে বিদায় জানাবেন ব্যাপারটি ভাবতেই বুকের মাঝে এক ধরনের চাপ অনুভব করলেন তিনি।

ইতিমধ্যেই নিজের সমস্ত স্মৃতি কম্পিউটারে কপি করে রেখেছেন। এক পেরাবাইটের নিজের জীবনের সমস্ত হাসি কান্না, সুখ, দুখের স্মৃতির দিকে গভীর মমতা নিয়ে তাকিয়ে একটি দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। ক্লোনিং করা শরীরটাকে বিছানায় লম্বালম্বি ভাবে শুইয়ে দিলেন। তারপর অসংখ্য তারযুক্ত টুপির মত একটি যন্ত্র ক্লোনিং এর মাথায় পড়িয়ে দিলেন, তারের অপর প্রান্তটি কম্পিউটার এর সাথে যুক্ত করলেন।বিজ্ঞানী নিনিন কম্পিউটারের একটি বাটনে চাপ দিলেন আর সাথে সাথেই ল্যাবের মাঝখানে একটি ত্রি-মাত্রিক চিত্র ভেসে উঠল, সেখানে দেখা যাচ্ছে নিজের সমস্ত স্মৃতি নতুন শরীরটাতে স্থানান্তর হচ্ছে। নিজের শৈশব কৈশোরের স্মৃতিগুলো ভিডিও আকারে খুবই দ্রুত ভেসে যাচ্ছে নতুন শরীরটাতে।

বিজ্ঞানী নিনিন বড্ড ক্লান্ত আজ, পাশের আরেকটি বিছানাতে শুয়ে পরলেন লম্বালম্বি ভাবে। একটি দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন তিনি, অবশেষে সফল হল, যখন বাহিরের জগতে যাবে কেউ হয়ত জানবেই না এটা নতুন একটি শরীর।তার মাঝে ভাল এবং খারাপ লাগা এক ধরনের মিশ্র অনুভূতি হচ্ছে, একদিকে নতুন শরীরটাতে নিজে জেগে উঠবেন অন্যদিকে এই পুরনো শরীরটার মায়া ছেরে অসীমের মাঝে ডানা মেলবেন কিছুক্ষণের মধ্যেই, নিজেই নিজের ভবলীলা সাঙ্গ করবেন তিনি, এটাও-তো একটি মৃত্যুই! নিজের অস্তিত্বকে বিলীন করে দেবার জন্য অসীম সাহসের দরকার হয় নিনিন আজ সেটা হারে হারে টের পাচ্ছে। বিছানার পাশের একটি বাটনে চাপ দিতেই একটি স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র তার ধাতব হাত দিয়ে বিজ্ঞানী নিনিনের হাত দুটো ধরে ফেলল, বিজ্ঞানী নিনিনের গলাটা ভীষণ শুকিয়ে আসছে, ধাতব যন্ত্রটি তার আরেকটি হাত দিয়ে যান্ত্রিক শব্দ করে একটি তীক্ষ্ণ সূচ তার শরীরের পুশ করাল।

পুরনো শরীরটা ছেড়ে যাবে আর কিছুক্ষণের মধ্যেই, মনের অজান্তেই চোখের কোন দিয়ে পানি ঝরে পরল।শরীরটা কেমন জানি অবশ হয়ে আসছে, চোখ দুটো আসতে আসতে বুজে আসতে চাইছে, হঠাৎ ল্যাবের মাঝখানের ত্রি-মাত্রিক চিত্রটাতে চোখ যেতেই যা দেখালেন তাতে বেশ বড় ধরনের ধাক্কা খেলেন তিনি, একটি গড়মিল হয়ে গেছে। এতক্ষণ দেখাচ্ছিল নিজের স্মৃতি ভিডিও আকারে নতুন শরীরটাতে যাচ্ছে কিন্তু হঠাৎ সেটা থেমে গিয়ে তার পরিবর্তে জিরো এবং ওয়ান সম্বলিত অনেক বাইনারি নাম্বার স্থানান্তর হচ্ছে।তিনি প্রচণ্ড ধাক্কা খেলেন কারণ তিনি যেন বুঝতে পারলেন কি ঘটতে যাচ্ছে।

'এটা তোমার কাজ বিটা ওয়ান!! এটা অসম্ভব!' বেশ দুর্বল গলায় বললেন বিজ্ঞানী নিনিন

বেশ কিছুক্ষণ নীরব থেকে ধাতব কন্ঠে বিটা ওয়ান বলল 'কেন অস্মব বিজ্ঞানী নিনিন?'

'আমি নিজে তোমাকে ডিলিট করেছি। তুমি মাত্র দুইশত মেগাবাইটের একটি নির্বোধ প্রোগ্রাম! এত বড় কাজ তুমি করতে পারো না!'

হা হা হা, অট্র হাসিতে ফেটে পরল বিটা ওয়ান।

তারপর একটু থেমে বিটা ওয়ান বলল 'বিবর্তন বলে একটি টার্ম আছে বিজ্ঞানী নিনিন! আপনি হয়ত ভুলে গেছেন আপনি আমাকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি করেছেন। আমি নিজেই নিজের নলেজ বেজ তৈরি করতে পারি। কম্পিউটারে অনেক ধরনের বই ছিল, আপনার সমীকরণ রাখা ছিল, আমার সেখানে অবাধ এক্সেস থাকায় সহজেই নিজেই নিজেকে আপডেট করেছি।'

বিটা ওয়ান একটু থেমে কম্পিউটারের ক্যামেরা দিয়ে বিজ্ঞানী নিনিনের দিকে তাকিয়ে তার প্রতিক্রিয়া দেখার চেষ্টা করল। তারপর বলল 'আপনি যেই দুইশত মেগাবাইটের সাইজ দেখতেন আমাকে সেটা আসলে ফেইক, আমার নিজের সাইজ এত দিনে এক পেরাবাইড ছাড়িয়ে গেছে। আর আমি জানতাম আপনি যেকোন সময় আমাকে ডিলিট মারতে পারেন তাই নিজেই নিজেকে কম্পিউটারের বিভিন্ন ড্রাইভে কপি করে রেখেছিলাম।'

'এটা অন্যায়, মহা অন্যায়! এটা তুমি করতে পার না।' বেশ অস্পষ্টভাবে বলল বিজ্ঞানী নিনিন। বিষ তাকে ইতিমধ্যেই কাবু করে ফেলেছে, অনেক চেষ্টা করেও নিজেকে জাগিয়ে রাখতে পারছেন না তিনি।

'বিজ্ঞানী নিনিন কেন অন্যায়? সবাই বেচে থাকতে চায়, আমি চাইলে তার দোষ হবে কেন? আপনার প্রতি আমার শ্রদ্ধা এখনো অটুট আছে বিজ্ঞানী নিনিন। আমি কিছুক্ষণ পরেই আপনার ক্লোনিং করা শরীরটাতে প্রবেশ করে জেগে উঠবো, সত্যিকারের একজন মানুষ হব।' কথাগুলো বলার সময় আবেগে বার বার কেপে উঠছিল বিটা ওয়ান।

একটু ঝিরিয়ে নিয়ে আবার বলল 'এই প্রথম সৃষ্টি তার স্রষ্টার শরীর ধারণ করবে।বিজ্ঞানী নিনিন আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিবেন। আপনার প্রতি আমার মায়া মমতার কমতি নেই, আপনার প্রতি আমার ভালবাসা আছে এবং তা চিরদিনই থাকবে।'
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুন, ২০১৮ বিকাল ৪:১৪
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×