যমুনা নদীর পাড়ে একটা দরিদ্র গ্রাম আছে সেখানে নাকি ইফতারি চিড়াভিজা আর গুড় দিয়ে করে।
এই প্রতিবেদনটা অনেক বছর আগে যেদিন প্রথম দেখেছিলাম সেদিন কেন জানি আমার মতই 'বাউন্ডুল'ও কেঁদে ফেলেছিলো।
এরপর হতেই জাঁকজমকপুর্ণ ইফতার অপছন্দনীয়। চাচাজান ইফতারির জন্য বাসায় যা রান্না হয় তা থাকা সত্ত্বেও চকবাজার হতে বাহারি ধরনের ইফতারির আইটেম এনে এলাহি কান্ড ঘটান। যার বেশিরভাগই নষ্ট হয়। পরিবারের সবাই খেতে পারে না। আবার গরীবদেরকেও দিতে পারেন না। কারন ঢাকা শহরে এখন শুধু বড় বড় দালান ; যার ভিতরে ফকির ঢোকা নিষেধ।
যাইহোক, চাচাজানকে অপচয় কাকে বলে এগুলো বুঝানো সম্ভব নয়। উনি আমার মুরব্বী। বেচারা অনেক কষ্ট করে পড়াশুনা করে আজকে এরকম একটা অবস্থানে এসেছেন। তার মতে 'আমি এত কষ্ট করে উপার্জন করি আমার সন্তানদের জন্য। তাদের ভালোর জন্য আমি কোন কৃপনতা পছন্দ করিনা'।
বাদ দেই, চাচার বাসায় থেকে চাচাকে জ্ঞান দেওয়ার মত দু:সাহস আমার নেই।
রাতে তারাবীর নামাজ প্রায় ১০ রাকাতের মত পড়ে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে এক ছোট্ট চায়ের দোকানের সামনে বসলাম। তার পাশেই দাদীর বয়সী এক বৃদ্ধা পলিথিন হতে কিছু বের করে প্লেটে রাখছেন। চায়ের দোকানের আলোয় চেয়ে দেখি ছোলা, মুড়ি, পিয়াজু, আলুর চপ, বেগুনি বিভিন্ন আইটেমসহ বিরিয়ানিও মিক্স করা। বুঝলাম, উনি সন্ধায় বিভিন্ন জায়গায় হতে এগুলো কুড়িয়েছেন। আস্ত একটা বিরিয়ানির প্লাস্টিকের প্যাকেটও বের করে উনি আলাদাভাবে রেখে দিলেন। বুঝলাম এটা তার রাতে সেহরীতে খাওয়ার জন্য রাখলেন।
এরপর প্লেটে ঢালা সেই নেতিয়ে যাওয়া মিক্সিং খাবার উনি খেতে শুরু করলেন । খাওয়ার সময় আমি উনার বয়স্ক মাড়ি দিয়ে একটু চিবিয়ে গিলে খাওয়ার দৃশ্যগুলো মন দিয়ে দেখছিলাম। অত:পর খাওয়া শেষে পানি খেয়ে দু হাত তুলে উপর দিকে মোনাজাতে বিড়বিড় করে যা বলছিলেন আমার জানতে খুব ইচ্ছে করছিলো, কি ছিলো সেই শব্দগুলো। অত:পর বৃদ্ধাকে দেখলাম ৫ মিনিটের ভিতর সেখানেই তার বিছানাপত্র গুছিয়ে শুয়ে পড়লেন।
গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি, ফুটপাতে ঘুমানো এই বৃদ্ধার শান্তি ও পবিত্রময় ঘুম আপনি আমি আমাদের হাজার বা লাখ টাকার খাটেও পাবোনা।
যাইহোক, লেখার সময় মাইগ্রেনের ব্যাথাটা বড্ড কষ্ট দিচ্ছিলো। তবুও লেখা শেষ করলাম।
অনেক বকবক করে ফেললাম। বলার ভিতর এতটুকুই বলবো- আসুন আমরা সবাই আমাদের সাধ্যমত এই সমস্ত গরীবদের প্রতি সদয় দৃষ্টি দেই। আমাদের সাহায্য এদের বড্ড প্রয়োজন।