
নব্বইয়ের দশক থেকেই দেশে জঙ্গিবাদের প্রসার দেখা যাচ্ছিল। তবে এই জুলাই থেকে বেশ কয়েকজন জঙ্গি গ্রেপ্তারের পর থেকে তা নতুন মাথা ব্যাথার কারন হয়ে দাড়িয়েছে। এর আগে দরিদ্র ও কম শিক্ষিতদের মধ্যে জঙ্গিবাদের প্রসার দেো গেলেও এখন শিক্ষিত এবং অবস্থাপন্ন ঘরের তরুণেরা এর সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। এসব জঙ্গিগোষ্ঠীর কার্যক্রম বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ধর্মকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা দিয়ে তরুণদের একটি অংশকে বিভ্রান্ত করে উগ্রপন্থায় আনা হচ্ছে
জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদের নিয়ে গড়ে উঠেছিল জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয় (পূর্বাঞ্চলীয় হিন্দের জামাতুল আনসার) নামে নতুন জঙ্গি সংগঠন। যেখানে জেএমবি, নব্য জেএমবি, হিজবুত তাহরীরের সদস্যরা রয়েছেন। ২০১৭ সালে জঙ্গি সংগঠনটি প্রতিষ্ঠার দুইবছর পর এই নামকরণ করা হয়।
তরুণদের জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করে নতুন এই সংগঠনে ভেড়ানোর চেষ্টা শুরু হয়েছে। তাদের পরিকল্পনায় কতজন তরুণ উদ্বুদ্ধ হয়ে এই দলে ভিড়েছে সেই সম্পর্কে সু-নির্দিষ্ট তথ্য জানা না গেলেও ঘর ছাড়া তরুণদের ভোলার চরাঞ্চলে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল বলে জানা গেছে।
সম্প্রতি জঙ্গিবাদে জড়িয়ে কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বাড়ি ছেড়ে যাওয়া চারজনসহ মোট সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। বাহিনীটি জানিয়েছে, গ্রেপ্তার হওয়া সবাই ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ নামে একটি নতুন জঙ্গি সংগঠনের সদস্য।
সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী জঙ্গীবাদে জড়িয়ে ১৯ জেলা থেকে ঘর ছেড়েছে ৫৫ জন। তাদের মধ্যে ৩৮ জনের নাম ঠিকানা প্রকাশ করেছে র্যাব। এ তরুণরা পার্বত্য এলাকার দুর্গম পাহাড়ী অঞ্চলে বিচ্ছিন্ন সংগঠনের অধীনে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। তরুণদের সাধারণত বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। বিভিন্ন সশস্ত্র সংগ্রামে ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে তৈরি করা হচ্ছে তাদের। এ তরুণরা হিজরতের নামে ঘরছাড়া হচ্ছে।
তাদের অনেকের পরিবার জানে তারা বিদেশে এবং বাবা-মায়ের কাছ থেকে অর্থও নিচ্ছে। গ্রেফতারকৃত তরুণরা কেউ জঙ্গীবাদে উদ্বুদ্ধকারক, কেউ জঙ্গী সংগঠক, কেউ আশ্রয়দাতা। কেউ আবার অর্থ সংগ্রহকারী, কেউবা আবার উগ্রবাদী কার্যক্রমে অর্থ সরবরাহ করত। অর্থাৎ নব্য জঙ্গীরা মূলত টিমভিত্তিক হয়ে কাজ করত এবং এখানে একজনের কাজ থেকে অন্যজনের কাজ সম্পূর্ণ আলাদা।
তবে জঙ্গীবাদে যে সকল ছেলেমেয়ে জড়িয়ে পড়ছে তারা কিন্তু একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সংগঠনে সম্পৃক্ত হয়। সাধারণত মতাদর্শ, অনুপ্রেরণা, তত্ত্বাবধান, সংস্থা ও যৌক্তিকতাÑ এই পাঁচটি নির্দেশকের মিশেলে একজন নব্য প্রার্থী জড়িয়ে পড়ে জঙ্গীবাদে। কাজেই একটি প্রক্রিয়া ও সময়ের ব্যবধানে নতুন ছেলেমেয়েরা জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়ছে।
সে কারণেই অভিভাবকদের ছেলেমেয়েদের ব্যাপারে ব্যাপক নজরদারির প্রয়োজন রয়েছে। ছেলে কার সঙ্গে মিশছে, রাতে বাসায় কখন ফিরে আসছে, কোন কারণে ব্যক্তিগতভাবে হীনমন্যতায় ভুগছে কিনা, এ বিষয়গুলো অবশ্যই অভিভাবকদের নজরে রাখতে হবে। করোনাকালীন দেখেছি মানসিক অবসাদগ্রস্ততায় অনেক শিক্ষার্থী বিভিন্নরকমের অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে। এ অপকর্মের বিস্তার জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসবাদেও সম্পৃক্ত হয়েছে।
ঘর থেকে পালিয়ে জঙ্গীবাদে এক অশনি সঙ্কেত কারন জঙ্গীবাদের ভয়াবহতা বাংলাদেশ দেখেছে। বাংলাভাই আব্দুর রহমানের নেতৃত্বে সারাদেশে অসংখ্য মানুষের ওপর অমানবিক নির্যাতনের চিত্র-প্রতিচিত্র সংবাদমাধ্যমের পাতায় উঠে এসেছে। নির্দ্বিধায় বলা যায়, সাধারণ কিছু জঘন্য প্রকৃতির লোক ছাড়া কেউই জঙ্গীবাদকে সমর্থন করে না। এক শ্রেণীর প্রতিক্রিয়াশীল রাজনীতিবিদ রয়েছে যারা জঙ্গী ও সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসতে চায় কিংবা রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী হতে চায়।
প্রত্যেক পরিবারে এ ব্যাপারে আলোচনা করে তরুণদের এ সংক্রান্ত বিষয়ে সচেতন করে তুলতে হবে। প্রত্যেক এলাকায় কমিউনিটি পুলিশিং সিস্টেমকে ব্যাপকভাবে কার্যকর করতে হবে, যার মাধ্যমে সকল এজেন্টকে একত্রিত করে জঙ্গীবাদের বিষবাষ্পকে চিরতরে উৎখাত করতে হবে বাংলাদেশ থেকে।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে নভেম্বর, ২০২২ সকাল ৭:২৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



