somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গুজব ঠেকাতে সতর্ক পাহারায় থাকুন - ওবায়দুল কাদের

০৯ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১২:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়,

আসসালামু আলাইকুম।

আশা করছি এই কঠিন দুর্যোগপূর্ণ সময়ে আপনি ঘরে থাকছেন এবং বিশ্রামে থাকছেন।

গুজব সম্পর্কিত আপনার সাম্প্রতিক একটি সাবধান বাণী প্রথম আলো মারফত আমাদের নজরে এসেছে। এ বিষয়ে দু একটি কথা বলতে চাই।

মহোদয়,

অনুগ্রহ করে একটা উদাহরণ দিয়ে বলবেন কি, আমরা করোনা নিয়ে ঠিক কোন গুজবটা ছড়াচ্ছি?

দু-একটা উদাহরণ পেলে বুঝতে সুবিধা হোত।

আপনি স্বাস্থ্যগত কারণে বা যে কারণেই হোক আজকাল প্রচুর বেফাঁস, অযৌক্তিক, ও বালখিল্য কথা বলে ফেলছেন। হতে পারে ফোকাসটা আর আগের মত ধরে রাখতে পারছেন না, অসংলগ্নতাও চলে এসেছে ফলশ্রুতিতে, কিন্তু অন্য সরকারি স্বাস্থ্যবানদের ও একই দশা কেন?

আপনারা কাজ ফেলে গুজবের পেছনে দৌড়াচ্ছেন কেন?

জানুয়ারি ৭ এ চীনে প্রথম রেজিস্ট্রার্ড করোনা রোগীটির কথা জানা গেল। ২১ এ জানুয়ারিতে ধরা পড়ল তাইওয়ান ও থাইল্যান্ডে, ২৫ এ জানুয়ারিতে মালয়েশিয়া, নেপালে। ২৭ এ জানুয়ারিতে শ্রীলঙ্কায়, ৩০ এ জানুয়ারিতে ইন্ডিয়ায় পাওয়া গেল করোনা রোগী।

আমাদের দেশে প্রথম রেজিস্ট্রার্ড করোনা রোগীটির কথা জানলাম মার্চ ৮ এ।

প্রশ্ন হোল, জানুয়ারি ৭ থেকে মার্চ ৮, এই দুটো মাস আপনারা কী করেছেন? আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে যে এই দুমাসে কোনও করোনা রোগী আমাদের দেশে আসেনি।

এসব দেশে বাংলাদেশিদের চিকিৎসা, ব্যাবসা, চাকরি, শিক্ষা, ও ভ্রমণ সংক্রান্ত কাজে হরদম যাতায়াত অথচ সরকারের কোন সতর্কতামূলক পদক্ষেপ বা প্রস্তুতি নজরে বা খবরে আসেনি দীর্ঘ দুই মাসেও।

আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রী কি এই খবরগুলো জানতেন না? কেন জানতেন না? এটা কি উনার কাজের jurisdiction এর মধ্যে পড়ে না? আর যদি জেনে থাকেন তাহলে উনি কী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন আমাদের নিরাপদ রাখার জন্য?

উনি কি সরকারের উচ্চ পর্যায়ে অবহিত করেছিলেন? উনি কি দুর্যোগ ব্যাবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সাথে কথা বলেছিলেন? জরুরী কোন মিটিং ডেকেছিলেন? সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন? আদৌ কোন প্রস্তুতি নিয়েছিলেন?

আমরা যতদুর জানি বা জেনেছি এসব কিছুই তিনি করেন নি।

মন্ত্রণালয় ব্যাস্ত ছিল মুজিববর্ষের বছরব্যাপী কার্যক্রম চুড়ান্ত করা নিয়ে আর স্বাস্থ্য ভবনে তখন মুজিববর্ষের ডিজিটাল কাউন্টডাউন উদ্বোধন নিয়ে ব্যাস্ত ছিলেন এর কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ।

ক্ল্যাপ, ক্ল্যাপ, ক্ল্যাপ।

আপনারা যে এই ভাইরাসের তথাকথিত স্বপ্নে দেখা ইন্টারভিউতেই ভরসা রেখে বসেছিলেন সেটা বেশ বুঝা যায় যখন ফেব্রুয়ারি ১০ এ প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রীপরিষদ বৈঠকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের যুবাদের বিশ্বকাপ জয় মুজিববর্ষের শ্রেষ্ঠ উপহার বলে উল্লাস ও সন্তোষ প্রকাশ করেন।

করোনা কি তাহলে মুজিববর্ষের গজব? এটা ও তো মুজিবর্বষেই এলো।

মহানুভব,

বিশ্ব অত্যন্ত ক্রিটিকাল একটা সময় পার হচ্ছে। উন্নত ও উন্নততর দেশগুলোর স্বাস্থ্য ও সামাজিক ব্যাবস্থা ভেঙে পড়ছে। জনপদ শ্মশানে পরিনত হচ্ছে, নগর কবরস্থানের রুপ ধারণ করছে। ভিন্নমতের সকল রাজনৈতিক কর্মী ও দল এক হয়ে এই দুর্দশা থেকে মুক্তির উপায় খুঁজছে। শুদ্ধাচারে ব্রতী হচ্ছে।

আর আপনি এখনো মানুষকে 'দায়ীত্ব ও কাণ্ডজ্ঞানহীন' উপাধি দিচ্ছেন। একটি প্রস্তাবের বিরোধিতায় একজন সম্মানিত নাগরিক কে 'দিশেহারা রাজনীতিক', 'অর্বাচীন', 'গণিতে অদক্ষ' অভিধায় অভিহিত করে নিজেরই অসংলগ্ন প্রলাপ ও ব্যার্থতার বেসামাল বহিঃপ্রকাশ এর প্রমাণ দিচ্ছেন না কি?

সারা বিশ্বে সকল মানুষ একযোগে যখন এই সংকট মোকাবেলায় এক প্লাটফর্মে দাঁড়িয়েছে তখন আপনারা ছিদ্রান্বেষনকেই প্রশান্তির আলোকচ্ছটা জ্ঞান করছেন।

জনগণ সরকারকে আস্থায় নিতে পারছে না।

তাঁরা ভাবছে সরকার মিথ্যা বলছে, তথ্য গোপন করছে। সরকার গার্মেন্টস মাফিয়াদের কাছে গৃহবন্দী হয়ে আছে, ঠিক সিদ্ধান্ত ঠিক সময়ে নিতে পারছে না, তেলা মাথায় তেল দিচ্ছে। জনগণকে পেটাচ্ছে, সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে। মন্ত্রী যন্ত্রীরা নিয়ন্ত্রণহীন বৈষম্যমূলক আচরণ করে যাচ্ছে, জিহবা নিয়ন্ত্রণে নিতে পারছে না।

একজন, দুজন, বা পাঁচজন মানুষ মিথ্যা বলতে পারেন। জনগণ কিন্তু মিথ্যা বলে না। চাইলে সেই পাঁচজন মানুষকে হত্যা, গুম, বা বোকা বানিয়ে রাখা যায়, জনগণকে কিন্তু মিথ্যা গেলানো যায় না। দেশি বিদেশি পত্র পত্রিকা খুললেই মানুষের চিন্তার রিফ্লেকশনের ভুড়ি ভুড়ি নজির পাওয়া যায়।

অথচ আপনি আমাদের বলছেন আমরা নাকি গুজব ছড়াচ্ছি!

মহাশয়,

গুজব গুজব করে তো আপনারাই গুজবের গুজব ছড়িয়ে দিচ্ছেন। নাকি এটা আপনাদের কোনও রাজনৈতিক কৌশল?
হিটলারের প্রপাগান্ডা মন্ত্রী গোয়েবলসের দুটি অমর উক্তি খুব প্রাসঙ্গিক মনে হচ্ছে। তিনি বলেছিলেন, "If you repeat a lie often enough, people will believe it, and you will even come to believe it yourself"। অর্থাৎ 'তুমি যদি একটি মিথ্যা প্রায়শই বলতে থাকো তাহলে মানুষ তা বিশ্বাস করবে, এমনকি তুমি নিজেও একসময় সেটাই সত্যি বলে বিশ্বাস করতে শুরু করবে'। দ্বিতীয় উক্তি, "A lie told once remains a lie, but a lie told a thousand times becomes the truth"। অর্থাৎ, 'একটি মিথ্যা যদি একবার বলা হয় তাহলে তা মিথ্যাই থেকে যায়, কিন্তু একটি মিথ্যা যদি হাজারবার বলা যায় তবে সেই মিথ্যাটিই সত্যি হয়ে যায়।

কিন্তু দেশ যেহেতু পাঁচজন মানুষে তৈরি না বরং গণমানুষে তৈরী তাই এই সংকট থেকে পরিত্রাণের জন্যে বালখিল্যতাপূর্ণ বাগাড়ম্বর বা ছিদ্রান্বেষন পরিহার করে জিহবাকে সংযত করতে হবে। Disaster Management কে সুসংহত করার সময় এখন। জনগণকে দেশাত্মবোধে উজ্জীবিত করার সময় এটা। একটা যুদ্ধ চলছে সারা বিশ্বব্যাপী। আপনি যতই শক্তিসালী হন না কেন এই যুদ্ধ আপনি একা লড়তে পারবেন না। তুমি-আমি'র বিভাজন থেকে বের হয়ে আসতে হবে। দেশটা আপনার একার না। দেশটাকে বাঁচাতে এখন সততা ও একাত্মতা প্রয়োজন। পরশ্রীকাতরতা না।

মনে রাখবেন, Your leadership has failed. Now salvage some decency. সরকার হিসেবে নিজের কাজটাতো ঠিক মতো করুন।

বাই দ্য ওয়ে, যেসব ভুতপ্রেত বারবার আপনাদের ভোট দিয়ে ক্ষমতায় বসায় তাদের কিন্তু কাজের কাজ কিছু করতে দেখছি না, শুনছিও না।

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের জীন দুটোই বা কোথায়?

মনটা আজ অবসাদগ্রস্থ বিড়ালের মত নির্জীব।

আপনিও অসুস্থ মানুষ। খুব সাবধানে থাকবেন। ঘর ছেড়ে কিন্তু একটুও বের হবেন না। আপনি নিজেকে হয়ত অনেক শক্তিশালী ভাবেন ডা: শেঠি কিন্তু তা মনে করেন না।

আল্লাহ ভরসা।

ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৪:১৪
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মানুষের জন্য নিয়ম নয়, নিয়মের জন্য মানুষ?

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৭



কুমিল্লা থেকে বাসযোগে (রূপান্তর পরিবহণ) ঢাকায় আসছিলাম। সাইনবোর্ড এলাকায় আসার পর ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকালেন। ঘটনা কী জানতে চাইলে বললেন, আপনাদের অন্য গাড়িতে তুলে দেওয়া হবে। আপনারা নামুন।

এটা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটা গাছ কাঠ হলো, কার কী তাতে আসে গেলো!

লিখেছেন নয়ন বড়ুয়া, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:০৬



ছবিঃ একটি ফেসবুক পেইজ থেকে

একটা গাছ আমাকে যতটা আগলে রাখতে চাই, ভালো রাখতে চাই, আমি ততটা সেই গাছের জন্য কিছুই করতে পারিনা...
তাকে কেউ হত্যা করতে চাইলে বাঁধাও দিতে পারিনা...
অথচ... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। কালবৈশাখী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৪



গত পরশু এমনটি ঘটেছিল , আজও ঘটলো । ৩৮ / ৩৯ সে, গরমে পুড়ে বিকেলে হটাৎ কালবৈশাখী রুদ্র বেশে হানা দিল । খুশি হলাম বেদম । রূপনগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×