সরাসরিই বলি, হেফাজতের মামুনুল হক তবুও ধর্মীয় নিয়মের একটা ফাঁক খুঁজে বের করে বা আবিষ্কার করে একাধিক শাদিতে শামিল হয়েছিলেন। বসুন্ধরার সোবহান আনভীর তো ফাঁকা ফাঁকির মধ্যে যানই নাই। সময় নষ্ট। অ্যাকশন অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন।
মামুন সাব তাও ধর্মটাকে একটু মর্যাদা দিয়েছিলেন, বলেছিলেন ইনি আমার দ্বিতীয় স্ত্রী। সরাসরি অনৈতিকতা থেকে যথাসম্ভব হেফাজতে থাকতে চেয়েছিলেন। অনেক সাফাই গেয়েছিলেন, ফেইসবুকে, সাংবাদিক সম্মেলনে, মিটিংয়ে, আলোচনা সভায়। বিপর্যস্ত হয়েছিলেন, ভেঙে পড়েছিলেন। রুহানি সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন।
আমাগের সোবহান আনভীর সাব এসবের ধারেকাছেও যান নাই।
কেন যাবেন? উনার কি দাড়ি আছে? পায়জামা পাঞ্জাবি পড়েন? বিদেশি আরবিতে কথা বলতে পারেন? এতিমখানা, লিল্লাহ বোর্ডিং চালান? কোরান থেকে ধুম ধাম আয়াত ছাড়েন? মোল্লাদের ব্যাবসা করেন?
না।
তাহলে তিনি কী করেন?
৪২ বছরের সোবহান সাব আমাদের মাতৃভাষা বাংলায় কথা বলেন। ফোনে Dictionary of Slang থেকে দমে দমে উদ্ধৃতি দেন। ঘরে বিদুষী স্ত্রী রাখেন আবার বাইরে চপল কিশোরী প্রেমিকা পোষেন। দুই চার আনা সমাজসেবা করেন। পত্রিকা বের করেন, লেখক, সাংবাদিক, সংস্কৃতি সেবীদের পৃষ্ঠপোষকতা করেন।
তিনি কিন্তু বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করেন না!
এহেন প্রগতিশীল লোকের কাছে তো গ্রামীণ সোনারগাঁওয়ের রিসোর্ট ফিসোর্ট jurassic বিষয়। আর প্রাণী পুষতে হলেতো খাঁচা লাগবেই। মা লক্ষীর ভাড়ার উনার। খাঁচা মাচা আমাদের মতো কাঁচা বাঙালির কাজ। তাই উনি একটি আস্ত বালাখানাই ভাড়া নিয়ে নিলেন। উনার প্রেমিকা একা থাকেন, মাসে ভাড়া এক লক্ষ এগারো হাজার টাকা।
ব্রেশ, ব্রেশ, ব্রেশ।
এবার বোবায় ধরা সংবাদমাধ্যমের মজাটা দেখুন।
হেফাজতের মামুনুল সাবকে ২৪ ঘন্টায় যেভাবে ছিড়ে খেয়ে ফেলা হয়েছিল সোবহান সাবের ঘটনায় সেসব দূরে থাক, স্যারের নাম পর্যন্ত আসলো না, ছবিও হয়ে গেল ঝাপসা! কী তামশা! আল্লাহকে ডাকে মামুনুল আর কারামত দেখায় আনভীর!
এর উপরে চলছে মিডিয়ার ভিকটিম ব্লেইমিং।
মেয়েটা খারাপ, অতি লোভী, ভেবেছিল বসুন্ধরার বউ হবে, আরাম আয়েশ উপভোগ করছিল, ভেবেছিল দান মেরেছে, রাজত্ব ও রাজপুত্র দুটোই একসাথে; আরে ওয়াহ!
রাজপুত্রের যা ভাষা শুনলাম! সে তুলনায় মুনিয়াকে বরং আমার যথেষ্ট সভ্য মনে হয়েছে। ভদ্র মনে হয়েছে। গালাগালির তুবড়ির মধ্যেও মেয়েটি তার দ্বিগুন বয়সী পশুটিকে আপনি করেই সম্বোধন করে যাচ্ছিল। পরিস্কার বুঝা যায়, অল্প বয়সী মেয়েটিকে আনভীর ধনীর কৌশলে পরাস্ত করেছিল। করায়ত্ত করেছিল।
কিন্তু সংবাদমাধ্যমের এই দ্বিচারিতা কেন? সৎ সাংবাদিকতাকে বলি দিচ্ছেন কোন স্বার্থে? মামুনুল কান্ডে না হয় সরকারি ভয় ছিল কিন্তু সোবহান আনভীর কান্ডে কীসের ভয়? নাকি নারায়ণ দা'র ব্যাপার স্যাপার?
আমরা কি তার কিছুটা আঁচ করতে পারি?
বসুন্ধরা গ্রুপ বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এক ব্যবসায়ী সাম্রাজ্য। কী নেই তাদের? আছে দৈনিক কালের কন্ঠ, বাংলাদেশ প্রতিদিন, দ্য সান। অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা নিউজ ২৪, নিউজ ২৪ নামের টিভি চ্যানেল, এফএম রেডিও ক্যাপিটাল আছে। রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় বসুন্ধরার চেয়ে বড় আর কে আছে? তার অন্যসব ব্যাবসার মধ্যে শিপিং, বিমান পরিবহন, সিমেন্ট, বিদ্যুৎ, পানি, খাদ্য - বাদ নেই কিছু আর। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও কি আছে? জানি না। ফোনে সোবহান আনভীরের ভাষা শুনে মনে হয়েছে নেই।
হুমম। তো এখান থেকে ঘৃত-দধি খুব আসে বুঝি? মাখনটা, কলাটা না চাইতেই হাজির হয়ে যায়? পৌঁছে যায় বাহারি সব ক্রিমের প্যাকেট? মেরুদন্ডের নেহারি বুঝি খুব মজার কিংবা লোভের পায়েস?
বসুন্ধরার মালিক পরিবারটির হাত রক্তে রঞ্জিত হয়েছে আগেও। ২০০৬ সালে বসুন্ধরারই পরিচালক হুমায়ুন কবীর সাব্বিরকে ছাদ থেকে ফেলে হত্যা করা হয়েছিল। আত্মহত্যা বলে চালাতে চেয়েও টেকাতে পারেননি চাক্ষুষ সাক্ষী থেকে যাওয়াতে। কিন্তু আমির আদমি। ২১ কোটিতে রফা হয়েছিল তৎকালীন hair gel মাস্টার 'we are looking for সত্রুজ' খ্যাত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাবরের সাথে।
২০১১ সালে সেই মামলার পাঁচ আসামীই (আনভীরের ভাই সানবীর সহ) বেকসুর খালাস পেয়ে যায়। কারণ হলো, পাপিয়া ও রাত্রি নামের প্রধান সাক্ষী দুই তরুণীকে রাস্ট্র পক্ষ বিচারের দিন কৌর্টে হাজির করতে অলৌকিকভাবে 'ব্যর্থ' হয়। বিচারক মোতাহার হোসেন আর অধিকতর তদন্তে সময় নষ্ট না করে তার রায়ে বলেন, "রাষ্ট্রপক্ষ বস্তুনিষ্ঠ, প্রকৃত ও বাস্তব সাক্ষী উপস্থাপনে ব্যর্থ হওয়ায় পাঁচ আসামির সবাইকে বেকসুর খালাস দেওয়া হলো"।
আসামীরা উল্লসিত হলো। তাদের পরিবারে বয়ে গেল আনন্দ ঝড়। নিহত সাব্বিরের পরিবারের গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়লো অশ্রু। হ্যা বিচার তো একটা হয়েছে। ন্যায় বিচার হয়েছে কি? তাই মুনিয়ার ঘটনাটির কী হতে পারে সে সম্পর্কে একটু কল্পনার আশ্রয় নেয়াটা হয়তো বাড়াবাড়ি হবে না।
মুনিয়া বিনা প্ররোচনায় আত্মহত্যা করেছে বলে প্রতিষ্ঠা পেতে পারে। বলা হবে, আনভীর সম্পর্ক ছিন্ন করতে চাওয়ায় মুনিয়া অবসাদে ভুগছিল। ৫০ লক্ষ টাকা, যা গত দুই বছরে বিভিন্নভাবে মুনিয়ার পেছনে খরচ হয়েছিল তা 'ঝগড়ার বশবর্তীতে' ফেরত চাওয়ার কারণে হতাশা কাজ করছিল। অথবা, ৫০ লক্ষ টাকা বিভিন্ন সময়ে মুনিয়া তার পরিবারকে সাহায্য করার জন্য আনভীরের কাছ থেকে নিয়েছিল। ইত্যাদি, ইত্যাদি। তবে আশা করা যায় যে বসুন্ধরা দেশের সেরা law firm নিয়োগ দিবে এবং তার দুঁদে উকিলরা আরও সৃষ্টিশীল কারণ এনে হাজির করবেন, এবং বিচারক মহোদয়ও convinced হবেন।
একটি পত্রিকায় দেখেছিলাম মুনিয়ার বয়স বলেছে ২১। উচ্চমাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত একটি বালিকার বয়স তো এতো হবার কথা নয়। তবে কি শুরু হয়ে গিয়েছে আসামী রক্ষা প্রকল্প?
এই প্রকল্পে লেনদেন কতো কোটির হবে বলা যাচ্ছে না কিন্তু আমি নিশ্চিত সংখ্যাটি ১০০ কোটির আশেপাশেই থাকবে। ২০-৫০ কোটি আজকাল কোনও টাকা? সংখ্যাটিতে টাকার ডায়নোসর শাহ আলমের সমস্যা হওয়ার কথা না।
দেখা যাক কী হয়।
এরই মধ্যে বাজারে একটি ধারণা বেশ জনপ্রিয় হয়েছে, যে, সোবহান আনভীর যদি আজকে উনার পশ্চাতে বিষ লাগিয়ে ঘুমান তাহলে আগামীকালের মধ্যেই সব সাংবাদিক মারা যাবেন।
এর গূঢ় রহস্য আছে, হয়তো আপনারা বুঝেছেন। তবে আমার কাছে এটাকে অত্যন্ত ত্রুটিপূর্ণ যুক্তি বলে মনে হয়েছে, বরং আমি তো দেখি, সোবহান আনভীরের রসালো শিশ্নের স্বাদনে সাংবাদিকতার স্বাদ যন্ত্র বিহ্বল হয়ে পড়েছে। যারা এর স্বাদ এখনো গ্রহণ করেননি, তাদের পশ্চাতে আনভীরের বিষাক্ত ফলার উপর্যুপরি আঘাতে মুখে ফেনা উঠে যাওয়া কি আপনি দেখতে পাচ্ছেন না?
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে এপ্রিল, ২০২১ সকাল ১১:২৪