আগের পর্ব
Click This Link
কিষাণীর স্মৃতি থেকে-২
তোরা যে যা বলিস ভাই
আঠারো বছর বয়সের একটি মেয়ে যখন পরিবারের শাসন বারণ এর বেড়াজালের গন্ডি পেরিয়ে স্বাধীনতার স্বাদ উপভোগ করার পথে পা রাখলো, তখন তার চোখে মুখে শুধু বিস্ময় আর মুগ্ধতা। অজানাকে জানার আনন্দ।
মেয়েটি চঞ্চল, প্রানোচ্ছল,অস্থির: সিনিয়রদের সাথে বেশ ভাব, বান্ধবীদের সাথে বন্ধুত্বের বাইরেও একটু যেন মাতব্বরী ভাব।
ছেলেটি ভীষণ দুষ্টু, প্রাণবন্ত, উচ্ছল, বোহেমিয়ান এবং অসম্ভব মেধাবী। সহপাঠি এবং সিনিয়রদের সাথে তার সহজ স্বাভাবিক সম্পর্ক। যে কোন কঠিন বিষয় অল্প সময়ে বুঝে যেত। দুষ্টুমি, খুনসুটিতে সারা ক্লাশ মাতিয়ে রাখতো। গলা ছেড়ে ভুল সুরে গান গাইতো, চিৎকার করে আবৃত্তি করতো। আঁতেল টাইপের বন্ধুদের নাস্তানাবুদ করতো। সহজ, সাবলীল, প্রানবন্ত এই ছেলে টি আমার সব কাজের সাথী হয়ে থাকছে এতে আমি খুউব খুশি ছিলাম। এত ভাল ছাত্র হওয়া সত্ত্বেও শুধুমাত্র অস্থিরতার জন্য তার ভাল রেজাল্ট হতো না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরুতে আমার পড়ার চেয়ে ঘুরে বেড়ানোর দিকেই বেশী ঝোঁক। নবীনদের আগমন উপলক্ষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখা, নদীর পাড়ে ঘুরে বেড়ানো এসবই হল মূল কাজ। উপরন্তু এখানকার পড়াশোনার স্টাইল SSC, HSC র মত না। কাজেই ক্লাশের পড়া, assignment, peridical পরীক্ষা র মাথামুন্ডু কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। এহেন অবস্থায় নীরস assignment এর ভুতটিকে নিয়ে আমার যখল বেহাল অবস্থা তখন ত্রাণকর্তার মত আবির্ভৃত হলো বন্ধুটি, যে আমার পাশে বসে ক্লাশ করে, পাশাপাশি রোল। কিভাবে, কোন কাগজে, কোন স্টাইলে assignment করতে হয় আমাকে বুঝিয়ে দিল, বেশ বুঝতে পারলাম ও আমাকে একসাথে assignment করতে না ডাকলে আমার নাকানি চুবানির একশেষ হতো! অবশ্য আমি বিজ্ঞ বিজ্ঞ ভাব নিয়ে বসেছিলাম, যেন আমি সব বুঝি, ওরা বলল তাই অগত্যা ওদের সাথে বসলাম।
মনে মনে আমি তো আকাশের চাঁদ হাতে পেলাম, বুঝলাম সে সিনিয়রদের কাছ থেকে এগুলো আগেই জেনে নিয়েছে; উদাসীন আমি যার কিছুই করিনি। আমি কি আর তাকে ছাড়ি, আঠার মত লেগে রইলাম; কে জানতো তাকে ছাড়া আমার আর চলবেই না! শুরু হল আমাদের একসাথে পড়াশোনা।
আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় একটি মেয়ে চাইলেই যা খুশী করতে পারে না। ইচ্ছে মতো একা একা ঘুরতে পারবে না, সমাজের চোখরাঙানী এড়াতে তার অতি অবশ্যই একজন সংগী লাগবে। চোখেমুখে অনাবিল আনন্দ আর বিপুল বিষ্ময় নিয়ে আমি যা দেখতে চাই, উন্মোচন করতে চাই, সে জন্য আমার একজন সাথী লাগবে।আমি বেশ বুঝলাম আমার অতিব ভাল বান্ধবীরা আমার এহেন এডভেন্চার এ কাজে আসবে না। অগত্যা বোহেমিয়ান এই বন্ধুটি হলো আমার ভরসা। যখন তখন, যেখানে সেখানে ঘুরে বেড়াতে তার কোন ক্লান্তি নেই। আর যায় কোথায়, আমার দুটো মানিকজোড় হয়ে সারাদিন ক্লাশের ফাঁকে ফাঁকে এবং শেষে সারা ক্যাম্পাস এর এমাথা ওমাথা!
মাঝে মাঝে ও হলে আমাকে ডাকতে এলে হাতে করে ফুল নিয়ে আসতো। আমার সিনিয়ির রুমমেট এর প্রশ্ন ফুল কে দিল? আমি বল্লাম বন্ধু দিল। সিনিয়র কপাল কুচকালেন, বল্লেন হুম, শুধু বন্ধুতো মনে হয় না! এভাবে ই কিন্তু সব হয়। আমি অতি কনফিডেন্ট, বলি কিচ্ছু হবে না।
বাকী টা পরবর্তীতে.................
পরের পর্ব
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ বিকাল ৪:২০