গত দিনগুলো যেভাবে চলছিল ঠিক একই ভাবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২তারিখ সকালটা শুরু হলো। কেঊবা বর্ধিত ফির জন্য বাড়তি টিঊশনির খোঁজে, কেউবা পারসেন্টেসের জন্য ক্লাস করা, কেউবা রাজপথে আন্দোলনে, কেউবা পরীক্ষা বা প্র্যাকটিক্যাল ক্লাসের জন্য ক্যাম্পাসে বের হচ্ছে। এবং গত কয়েকটি দিনের মত বাম দলের আপুরা নিচ হতে ডাকতে লাগল মিছিলে যাবার জন্য।ফিন্যান্সে পড়ুয়া মেধাবী ছাত্রী লাকীও প্রস্তুতি নিচ্ছিল। ও বেচারীর পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যাবে যদি বর্ধিত ফি বাস্তবায়ন হয়। আপুদের ডাকে সাড়া দিয়ে সেও যাবে আন্দোলনে। সঙ্গে পাশের রুমের সিনিয়র আপুটি সহ। আপুদের রুমে রুমে গিয়ে ডাকাডাকি, “আপনারা কি চান না এই আন্দোলন সফল হোক?তবে কি কাপুরুষতা দেখাচ্ছেন?”.....।সুতরাং এতদিন যারা শুধুমাএ ক্লাস বর্জন করে আসছিল তারাও রওনা দিল ‘ডাকাডাকি’ ওয়ালা আপুদের নেতৃত্বে।
এদিকে ছাএ নামধারী মুখে কালো কাপড় বাধা কিছু ছেলে সাইজ করা লাঠি নিয়ে চাকসু ভবন ও আই টি ভবন ভাঙচুর শুরু করেছে। অল্প সংখ্যক পুলিশ তাদের বাধা দেবার নির্বুদ্ধিতা(!) করল না। বরং বলতে লাগল, “আচ্ছা আপনাদের ভার্সিটি আপনারা ভাঙেন। আমরা কিছু করব না।” -“হ্যাঁ, খবরদার কিচ্ছু না,চুপ দাড়িয়ে থাক্ নইলে মার খাবি...।” বলতে বলতে পিছন থেকে পুলিশকে আক্রমণ। পিটাতে পিটাতে পার্শ্ববতী খাদে ফেলে দিল। আক্রমণের খবর শুনে বাড়তি পুলিশ ব্যাটিলিয়ন চলে এল। মুহুর্তেই টিয়ার সেল, রাবার বুলেট এবং লাঠিচার্জে ছেয়ে গেল গোটা ক্যাম্পাস।
অন্যদিকে ছাত্রী হল হতে রওনা দেওয়া মেয়েরা কিছু বুঝে উঠার আগে পুলিশ ওদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। যারা ডেকে নিয়েছিল এ সময় তারা যেন ভ্যানিশ হয়ে গেল।তিনটি ছাত্রী হলের এমন কোন রুম নেই যে কোন মেয়ে আহত হয়নি।এমত অবস্থায় বাকি যারা হলে ছিল বান্ধবীদের বাঁচাতে এসে তারাও মার খেল।আর ক্লাসরত পরীক্ষারত শিক্ষক ছাএ- ছাত্রীরা তো ডিপার্টমেন্টে আটকা পড়ে আছে।প্রাণের ভয়ে উভয়ে বেঞ্চের নিচে আশ্রয় খুঁজছিল কাঁচ ভাঙা বৃষ্টির মাঝে।
“এমন বিভীষিকা জনমেও দেখিনি।এটা কি মুক্তিযুদ্ধ....” বলতে বলতে আহত ছাত্রী প্রবেশ করছিল হলের ভিতর।চবির মেডিকেল সেন্টার হতে আসা দুজন ডাক্তার হিমশিম খাচ্ছিল আহতদের শুশ্রুষা দিতে দিতে।বি.বি.এর একটি আপু ভাঙা হাত পা নিয়ে কাতরাচ্ছিলেন এবং ভিসিকে গালাগাল ও বদদোয়া দিচ্ছিলেন।আল্লাহ তো মজলুমের দোয়া ফেলেন না।
এতদিন মিডিয়া গুলো ছিল নিশ্চুপ।যথারীতি ‘জঙ্গল’-ওয়ালা ভার্সিটির খবর জাতি খুব কমই শুনতে পায়।অবহেলিত এই ভার্সিটির রিপোর্ট প্রকাশে মিডিয়া আবারও পরিচয় দিল তারা কত পরাধীন।অথচ সিন্ডিকেট মিটিংয়ের আগেই “অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ.....”ব্রেকিং নিউজে এসে গেল!
ছেলেদের হলে পুলিশ প্রবেশের পথে জনৈক হলের প্রভোস্ট বাধা দিলে তাতে চরম অপমানিত হতে হল। পুলিশ অফিসার ধাক্কা দিয়ে ফেলে বীরদর্পে হলে প্রবেশ করল।অতপর গণ গ্রেফতার।কোতোয়ালি থানায় নেওয়া হলে সুপারিশ কৃতদের আলাদা করা হল।দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকা ক্ষুধার্ত ক্লান্ত ছাত্র পেল কানের নীচে প্রচন্ড ঘুষি আর পানি চাওয়ার বদলে পেল বুটের আঘাত।সাথীদের সামনে এক ১জন ছাএকে নির্মমভাবে পেটানো হচ্ছিল। ইতিমধ্যে চারজন কালো বোরখা পরা মানুষকে নিয়ে আসা হল দোষীদের নাম তালিকা ভুক্ত করতে।কিন্তু তাদের পুরুষালি আঙ্গুল ইঙ্গিত করছিল যারা সকাল হতে ছিল তাদের দিকে।অথচ পাশেই বসে আছে পুলিশকে পেটানো ছাত্রটি।এভাবে কিছু নির্দিষ্ট ছাত্র দোষী সাব্যস্ত হল।আর দোষীরা পার পেয়ে গেল। অভিজ্ঞতা বর্ণনা করছিল সেদিনের আটক হওয়া জনৈক ছাত্র।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ সেপ্টেম্বরের ১৬তারিখ পর্যন্ত।হয়ত এর মাঝে শরীরের ক্ষত শুকিয়ে যাবে।কিন্তু মনের ক্ষত? পাবলিক বলছে আমরা নাকি ৩০ টাকার জন্য আন্দোলন করেছি, নিজেদের সম্পদ ভেঙেছি।তাদের বলতে চাই আমরা শুধু একটু সুলভ উপায়ে শিক্ষা গ্রহণ করতে চেয়েছি।ছাএ নামধারী যারা এসব কুকর্ম করেছে তাদেরকে প্লিজ আলাদা করে রাখুন।কেন আমরা চাইব নিজেদের সম্পদ ভাঙতে?ভিসি মহোদয় সামান্য সহানুভূতি প্রকাশ করলেন না ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি।তার অভিভাবকত্বে বাবা-মা এখানে দিয়েছিল তাদের স্নেহের সন্তানদের।বিনিময়ে কি পেল?জানি না আমাদের ভিসির এমন কাপুরুষতার পিছনে কারণ কী?কিসের লোভে কী উদ্দেশ্যে তিনি এমন ব্যবহার করতে পারলেন আমাদের সাথে।পুরো জাতির সামনে ছোট করা হলো আমাদের।এখানে সবাই সবার স্বার্থ নিয়ে ভেবেছে,মাঝখানে আমরা সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা হয়রানি এবং অপূরণীয় ক্ষতির শিকার হলাম।
এই ক্ষত শুকাবে তো?