somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়: নির্মমতা ও ক‍াপুরুষতার গল্প

০৮ ই আগস্ট, ২০১০ বিকাল ৪:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত দিনগুলো যেভাবে চলছিল ঠিক একই ভাবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২তারিখ সকালটা শুরু হলো। কেঊবা বর্ধিত ফির জন্য বাড়তি টিঊশনির খোঁজে, কেউবা পারসেন্টেসের জন্য ক্লাস করা, কেউবা রাজপথে ‌আন্দোলনে, কেউবা পরীক্ষ‍া বা প্র্যাকটিক্যাল ক্লাসের জন্য ক্যাম্প‍াসে বের হচ্ছে। এবং গত কয়েকটি দিনের মত বাম দলের আপুরা নিচ হতে ডাকতে লাগল মিছিলে যাবার জন্য।ফিন্যান্সে পড়ুয়া মেধাবী ছাত্রী লাকীও প্রস্তুতি নিচ্ছিল। ও বেচারীর পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যাবে যদি বর্ধিত ফি বাস্তবায়ন হয়। আপুদের ডাকে সাড়া দিয়ে সেও যাবে আন্দোলনে। সঙ্গে পাশের রুমের সিনিয়র আপুটি সহ। আপুদের রুমে রুমে গিয়ে ডাক‍াডাকি, “আপনারা কি চান না এই আন্দোলন সফল হোক?তবে কি ক‍াপুরুষতা দেখাচ্ছেন?”.....।সুতরাং এতদিন যারা শুধুমাএ ক্লাস বর্জন করে আসছিল তারাও রওনা দিল ‘ডাক‍াডাকি’ ওয়‍ালা আপুদের নেতৃত্বে।

এদিকে ছাএ নামধারী মুখে কালো কাপড় বাধা কিছু ছেলে সাইজ করা লাঠি নিয়ে চাকসু ভবন ও আই টি ভবন ভাঙচুর শুরু করেছে। অল্প সংখ্যক পুলিশ তাদের বাধা দেবার নির্বুদ্ধিতা(!) করল না। বরং বলতে লাগল, “আচ্ছা আপনাদের ভার্সিটি আপনারা ভাঙেন। আমরা কিছু করব না।” -“হ্যাঁ, খবরদার কিচ্ছু না,চুপ দাড়িয়ে থাক্ নইলে মার খাবি...।” বলতে বলতে পিছন থেকে পুলিশকে আক্রমণ। পিটাতে পিটাতে পার্শ্ববতী খাদে ফেলে দিল। আক্রমণের খবর শুনে বাড়তি পুলিশ ব্যাটিলিয়ন চলে এল। মুহুর্তেই টিয়ার সেল, রাবার বুলেট এবং লাঠিচার্জে ছেয়ে গেল গোটা ক্যাম্পাস।

অন্যদিকে ছাত্রী হল হতে রওনা দেওয়া মেয়েরা কিছু বুঝে উঠার আগে পুলিশ ওদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। যারা ডেকে নিয়েছিল এ সময় তারা যেন ভ্যানিশ হয়ে গেল।তিনটি ছাত্রী হলের এমন কোন রুম নেই যে কোন মেয়ে আহত হয়নি।এমত অবস্থায় ব‍াকি যারা হলে ছিল বান্ধবীদের বাঁচাতে এসে তারাও মার খেল।আর ক্লাসরত পরীক্ষ‍ারত শিক্ষক ছাএ- ছাত্রীরা তো ডিপার্টমেন্টে আটকা পড়ে আছে।প্রাণের ভয়ে উভয়ে বেঞ্চের নিচে আশ্রয় খুঁজছিল কাঁচ ভাঙা বৃষ্টির মাঝে।

“এমন বিভীষিকা জনমেও দেখিনি।এটা কি মুক্তিযুদ্ধ....” বলতে বলতে আহত ছাত্রী প্রবেশ করছিল হলের ভিতর।চবির মেডিকেল সেন্টার হতে আসা দুজন ডাক্তার হিমশিম খাচ্ছিল আহতদের শুশ্রুষা দিতে দিতে।বি.বি.এর একটি আপু ভাঙা হাত পা নিয়ে কাতরাচ্ছিলেন এবং ভিসিকে গালাগাল ও বদদোয়া দিচ্ছিলেন।আল্লাহ তো মজলুমের দোয়া ফেলেন না।
এতদিন মিডিয়া গুলো ছিল নিশ্চুপ।যথারীতি ‘জঙ্গল’-ওয়ালা ভার্সিটির খবর জাতি খুব কমই শুনতে পায়।অবহেলিত এই ভার্সিটির রিপোর্ট প্রকাশে মিডিয়া আবারও পরিচয় দিল তারা কত পরাধীন।অথচ ‍সিন্ডিকেট মিটিংয়ের আগেই “অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ.....”ব্রেকিং নিউজে এসে গেল!
ছেলেদের হলে পুলিশ প্রবেশের পথে জনৈক হলের প্রভোস্ট বাধা দিলে তাতে চরম অপমানিত হতে হল। পুলিশ অফিসার ধাক্কা দিয়ে ফেলে বীরদর্পে হলে প্রবেশ করল।অতপর গণ গ্রেফতার।কোতোয়ালি থানায় নেওয়া হলে সুপারিশ কৃতদের আলাদা করা হল।দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকা ক্ষুধার্ত ক্লান্ত ছাত্র পেল কানের নীচে প্রচন্ড ঘুষি আর পানি চাওয়ার বদলে পেল বুটের আঘাত।সাথীদের সামনে এক ১জন ছাএকে নির্মমভাবে পেটানো হচ্ছিল। ইতিমধ্যে চারজন কালো বোরখা পরা মানুষকে নিয়ে আসা হল দোষীদের নাম তালিকা ভুক্ত করতে।কিন্তু তাদের পুরুষালি আঙ্গুল ইঙ্গিত করছিল যারা সকাল হতে ছিল তাদের দিকে।অথচ পাশেই বসে আছে পুলিশকে পেটানো ছাত্রটি।এভাবে কিছু নির্দিষ্ট ছাত্র দোষী সাব্যস্ত হল।আর দোষীরা পার পেয়ে গেল। অভিজ্ঞতা বর্ণনা করছিল সেদিনের আটক হওয়া জনৈক ছাত্র।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ সেপ্টেম্বরের ১৬তারিখ পর্যন্ত।হয়ত এর মাঝে শরীরের ক্ষত শুকিয়ে যাবে।কিন্তু মনের ক্ষত? পাবলিক বলছে আমরা নাকি ৩০ টাকার জন্য আন্দোলন করেছি, নিজেদের সম্পদ ভেঙেছি।তাদের বলতে চাই আমরা শুধু একটু সুলভ উপায়ে শিক্ষা গ্রহণ করতে চেয়েছি।ছাএ নামধারী যারা এসব কুকর্ম করেছে তাদেরকে প্লিজ আলাদা করে রাখুন।কেন আমরা চাইব নিজেদের সম্পদ ভাঙতে?ভিসি মহোদয় সামান্য সহানুভূতি প্রকাশ করলেন না ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি।তার অভিভাবকত্বে বাবা-মা এখানে দিয়েছিল তাদের স্নেহের সন্তানদের।বিনিময়ে কি পেল?জানি না আমাদের ভিসির এমন ক‍াপুরুষতার পিছনে কারণ কী?কিসের লোভে কী উদ্দেশ্যে তিনি এমন ব্যবহার করতে পারলেন আমাদের সাথে।পুরো জাতির সামনে ছোট করা হলো আমাদের।এখানে সবাই সবার স্বার্থ নিয়ে ভেবেছে,মাঝখানে আমরা সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা হয়রানি এবং ‍অপূরণীয় ক্ষতির শিকার হলাম।
এই ক্ষত শুকাবে তো?
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যমদূতের চিঠি তোমার চিঠি!!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:০৮

যমদূতের চিঠি আসে ধাপে ধাপে
চোখের আলো ঝাপসাতে
দাঁতের মাড়ি আলগাতে
মানুষের কী তা বুঝে আসে?
চিরকাল থাকার জায়গা
পৃথিবী নয়,
মৃত্যুর আলামত আসতে থাকে
বয়স বাড়ার সাথে সাথে
স্বাভাবিক মৃত্যু যদি নসিব... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×