প্রথমেই বলি এইটা আমার প্রথম লেখা। ব্লগে ভ্রমন কাহিনি দেখলেই আমি গোগ্রাসে গিলে ফেলি আর বুকে চিনচিনে ব্যথা অনুভব করি। কম বেশি ঘুরাঘুরি আমিও করি। কিন্তু কখনো লিখিনি। তাই চেষ্টা করছি কাউকে চিনচিনে ব্যথা দেয়া যায় কিনা। গত ২ বছর যাবত থানছি দিয়ে ট্র্যাকিং যাবার প্ল্যান করি আর আজাইরা কারনে বাতিল হয়। আমি, পিয়াস আর জঙ্গি ৩ জন শেষ পর্যন্ত টিকে রইলাম এই প্ল্যান এ। আরও ২-৩ কে বলেছিলাম কিন্তু ওরা পারেনি। প্ল্যান ছিল ঈদ এর পরদিন বেরিয়ে পড়ব, দেখি কতদূর যাওয়া যায়। ঈদ হল ৯ তারিখ তাই আমাদের যাত্রা শুরু হল ১০ তারিখ এ। বলে রাখা ভালো আমাদের সবার বসবাস চট্টগ্রাম এ।
১০/০৮/১৩
বাসা থেকে বের হবার কথা ৬ টাতে ঘুম থেকে উঠলাম ৬:১৫ তে। পিয়াসকে ফোন করলাম ও বের হবার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমি ৬:৩৫ এ GEC মোড়ে। পিয়াস CNG পেয়ে যাওয়াতে আমাকে তুলে নিল। ৭:১০ এ বহদ্দার হাট বাস টার্মিনাল । জানতাম পূর্বাশা, পুরবানি বাস চট্টগ্রাম থেকে বান্দরবন যায়। টার্মিনাল দেখি একটা পূর্বাশা বাস ছাড়ছে। তাড়াতাড়ি টিকেট কেটে উঠে পরলাম। চট্টগ্রাম থেকে বান্দরবন এর ভাড়া ১২০ টাকা/ সিট। আমাদের আর একজন (জঙ্গি) কেরানি হাট থেকে উঠবে এইটা কন্টাক্টর কে বলে রেখেছিলাম। ৭:৩০ এ রওনা দিয়ে ৯ টা বাজে কেরানি হাট আর ৯:৪৫ এ বান্দরবন পৌঁছে গেলাম। দ্রুত চলে গেলাম থানছি বাস স্ট্যান্ড। যারা কখনও এই দিকে আসেন নি তাদের জন্য বলছি থানছি আর রুমা বাজার এর বাস একই জায়গা থেকে ছাড়ে। যেহেতু ঈদ এর পরদিন তাই গাড়ি সংখ্যা ও কম। এই বাস গুলো সিট ফিলআপ হলেই ছাড়ে। কিছু বিস্কুট, ঔষধ কিনলাম। বাসা থেকে কিছু না খেয়েই বের হয়েছি তাই এইখানে কলা, বিস্কুট, চা দিয়া নাস্তা সারলাম। ১০:৪৫ এ থানছির উদ্দেশে রওনা হলাম। বান্দরবন থেকে থানছির দূরত্ব ৮০ কি মি আর ভাড়া ২০০ টাকা/ সিট। ঢাকা – চট্টগ্রাম হাইওয়ে এর হোটেল নুরজাহান এর মতো এই রাস্তাতে চিম্বুক রেস্তোরাঁ তে ১০ মিনিট বিরতি। পথে বলি পাড়া নেমে আনারস খেয়েছিলাম। দুর্দান্ত মিষ্টি। এই দিকে এলে অবশ্যই খাবেন।
৩:১৫ এ পৌঁছে গেলাম থানছি। থানছিতে ঢোকার আগে এখন ব্রিজ হয়েছে। যারা আগে গিয়াছিলেন তারা নৌকা দিয়া সাঙ্গু পার হতেন। ব্রিজ এর অপর প্রান্তটাই থানছি বাস টার্মিনাল।
প্রথমে গেলাম রেস্ট হাউস এ। ৩ জনের জন একটা রুম ভাড়া করে বাজার এ গিয়ে খাওয়া দাওয়া করলাম। রেস্ট হাউস এ একরাত এর জন্য ৫০০ টাকা ভাড়া দিতে হয়েছে। আগে অনেকে আরও কম ভাড়া দিয়ে থেকেছেন। তবে ব্যাপারটা মুলামুলি করে ঠিক করতে হয়।
বাজার এ গিয়ে জানলাম পুলিশ অনুমুতি দিলে ও BGB দিচ্ছে না। তবে একটা গ্রুপ পারমিশন নিয়া আজকে গেছে। রুমা দিয়া কয়েক বার ঢুকলে ও থানছি দিয়া প্রথম বার। তাই গাইড নিয়া প্যাঁচাল শুরু হল। ব্লগের ভ্রমন গল্পের কারনে ট্র্যাক গুলা আমার মুখস্তই ছিল। আমার প্লান ছিল থানছি-নাফাখুম- অমিওখুম ( হামিয়াখুম) – সাতভাইখুম- পদ্মমুখ- থানছি। কিন্তু বর্ষাকালে পানি বেড়ে যাওয়াতে গাইড পদ্মমুখ ঝিরি দিয়া আসতে রাজি না। তাই ভাবলাম তাজিং ডং দিয়া ফিরব কিনা। থানা থেকে অনুমুতি পাওয়া গেল। কিন্তু BGB অনুমুতি দিচ্ছিল না। বলে সকালে আসেন, পানি কমলে যাবেন।
ক্লান্ত পিয়াস
বাজার থেকে পাহাড়ে হাটার স্যান্ডেল, টর্চ লাইট, দড়ি কিনলাম। পিয়াসের পা বেশী বড় তাই তিন দোকান ঘুরতে হল। রাতের খাওয়া শেষে রেস্ট হাউস ফিরে দেখি আমাদের সাথে বাস এ আসা আর এক গ্রুপ পরদিন ফেরত যাবার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। আমরা অবশ্য আমাদের সঙ্কল্পে স্থির, যাবই যাব। রাতে ওদের সাথে কার্ড খেলে, কিছু সময় গ্যাজর গ্যাজর করে দিলাম এক ঘুম।
চলবে-
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৩:০৭