১২/০৮/১৩
সকালে ঘুম থেকে উঠে, ব্যাগ গুছিয়ে সোজা গেলাম বাজার এ। নাস্তার পর গাইড বলল আর একটা ৭ জনের গ্রুপ ২ ঘণ্টার মধ্যে আসছে, আমরা ওদের সাথে মিলে গেলে দুই গ্রুপ এর লাভ হবে। আসলে যে গাইড এর ই বেশি লাভ এইটা আর বিশদ না বললে ও চলে। মনে হচ্ছিল ঝামেলা হবে। সেটাই হল। ১১ টা নাগাদ যখন ঐ গ্রুপ আসলো , দেখি আরও ৩-৪ গ্রুপ ও হাজির। আমাদের ঐ গ্রুপ এর সাথে গাইড এর মুলামুলি টিকল না। আমরা দুই গ্রুপই গাইড পরিবর্তন করলাম। রওনা দেয়ার কথা সকাল এ আর এখন দুপুর। মেজাজ এমন খারাপ হল, পারি না গাইড টাকে ধরে পিটাই।
এইদিকে আর এক কাহিনি ঘটে গেছে বাজার এ। এক নৌকা চালক BGB কমান্ডারের মেহমান নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। ঐ লোক টুরিস্ট নিতে চায়, লাভ যেহেতু বেশি। BGB এর লোক ক্ষেপে যায়, আর নির্দেশ দিলো তার মেহমান এর নৌকার আগে কোনও নৌকা যাবে না। কি আর করা রাজার কথাই আইন। আমরা যারা আছি তাদেরকে প্রত্যেক কে অঙ্গীকার নামা লিখতে হল যে, আমাদের নিষেধ করা সত্ত্বেও, স্বঞ্জানে রেমাক্রি যাচ্ছি। আমাদের শারীরিক ও আর্থিক ক্ষতি হলে তার দায় আমার নিজের। মাস তিনেক আগে নাফাখুমে একজন টুরিস্ট মারা যায়। তাই বর্ষাকালে এই ট্র্যাক নিষিদ্ধ ছিল। একবার তো তাজিং ডং এর উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছিলাম। আবার ফেরত এলাম কারন জঙ্গি প্রথমবার এইসব পাহাড়ে এসেছে আর আমাদের সাথে আসা আর এক গ্রুপ এর অর্ধেক বান্দরবন এ ফিরে যাচ্ছে। তবে তাড়াহুড়া করে ঐ ট্র্যাক এ না যাওয়াটা অনেক ভালো হয়েছে সেটা বুজেছি পরে। হতাশ হয়ে ভাবছিলাম এইবার কি থানছি থেকে ফিরতে হবে!
অবশেষে ৪ টা বাজে BGB এর মেহমান আসে এবং তারা রেমাক্রি এর উদ্দেশে রওনা দেয়। আরও একবার BGB এর খাতাতে নাম এন্ট্রি করে নৌকাতে উঠলাম। থানছি-রেমাক্রি নৌকা ভাড়া ২৫০০ টাকা। এইখানে পুরান ঢাকা থেকে আসা ৪ জনের গ্রুপ (যাকির, সুমন, আমিত, প্রশান্ত) এর সাথে মিলে ৭ জনের গ্রুপ হলাম। নৌকাতে উঠার পর বলে ডিজেল নাই। অগ্রিম টাকা দিয়া ডিজেল আনালাম, ৫:৩০ নৌকা ছাড়ল।
তারপর ও ভালো লাগছিল যে থানছি থেকে বের হতে পেরেছি। পুরা একটা দিন নষ্ট হল। আবার প্ল্যান পরিবর্তন করলাম , ভাবলাম রেমাক্রি-নাফাখুম- অমিওখুম ( হামিয়াখুম) – সাতভাইখুম যাব আর একই পথে ফিরব।
কিছুক্ষন চলার পর স্রোতের বেগ টের পেলাম। বর্ষায় ভরা সাঙ্গুতে। তিন্দুর কিছুটা আগে একটা জায়গা মাঝি আমাদের নামিয়ে দিলো।
এখানে নদীটা সরু হয়ে গিয়াছে তাই স্রোত অনেক বেশি। আমরা পাথর পেরিয়ে নৌকায় উঠলাম।
একটু যাবার পর যাকির ভাই বলল উনি অতিরিক্ত চশমা টা পাথুরে পথে ফেলে আসেছেন। আবার ওখানে ফিরলাম। ভাগ্য ভালো যে ওটা পাওয়া গেছিল। কিন্তু অনেক সময় গেল, সন্ধ্যা হয়ে আসাতে যাবার পথে তিন্দু নামিনি। যখন রাজা পাথর এলাকা পার হচ্ছিলাম তখন প্রায় সন্ধ্যা। রাজা পাথর এলাকা এর পরেই একটা বাঁক আছে যেখানে ভয়ংকর তীব্র স্রোত। পাড়ে নামার ও জায়গা নাই। নৌকার দুলুনিতে পানি ঢুকে পড়ে অনেক খানি। যদিও ৭ জনের কেউ ই কোনও আওয়াজ করেনি। কিন্তু সবাই বেশ ভয় পেয়ে যায়। এই তীব্র স্রোতে সাতারের কোনও খাওয়া নাই। এর পরের পথটুকু সহজে পার হয়ে গেলাম। কিন্তু অনুভব করলাম কেন সবাই বর্ষাকালে আসতে নিষেধ করে। যখন রেমাক্রি খাল পার হচ্ছিলাম তখন অন্ধকার। পাহাড়ে রাত তাড়াতাড়িই নামে। ৮ টার দিকে রেমাক্রি পৌঁছে গেলাম।
আমরা উঠলাম অং ঠোই চিন এর ঘরে। মং হাই সেং ছিল দোভাষী , ছোট ছেলে। আবার প্ল্যান পরিবর্তন করলাম । ভরা সাঙ্গু দেখে কেবল নাফাখুম দেখে এই সফর শেষ করিতে মনস্থ হলাম। ভালো দিকটা হল আজ আবহাওয়া ভালো ছিল। খাওয়া দাওয়া শেষে মাচার ঘরে ঘুমিয়ে পড়লাম।
যে মাচার ঘরে ছিলাম।
পাহাড় থেকে রেমাক্রি পাড়া।
ছবি দুইটা পরদিন তোলা।
চলবে-