১৩/০৮/১৩
পরিকল্পনা মাফিক সকাল ৮:৩০ এ বেরিয়ে পড়লাম। কিছু দূর যাবার পর পড়ল পেনাডং পাড়া। ওখান দিয়ে নেমে গেলাম রেমাক্রি খাল এ। এর ধার দিয়ে হাটা শুরু করলাম। গাইড এর পরামর্শ মতো এক জায়গাতে এসে খালটা পার হতে গেলাম। আমাদের একজন ছিল ওভার স্মার্ট, সবার আগে পার হতে গিয়ে স্রোতে ভেসে যাচ্ছিলেন। গাইড সাঁতরে তাকে ধরেন।
ছবিঃ নাফাখুম যাবার পথ।
এর পর আবার হন্টন । ২-৩ বার খালের এইপার ঐপার করে পৌঁছে গেলাম কাঙ্ক্ষিত নাফাখুম।
এই ট্র্যাকটা অনেক সহজ, যারা পাহাড়ে ঘুরাঘুরি করেন তারা তেমন ক্লান্ত হবেন না। খুবই সুন্দর লাগলো । বর্ষাকাল বলে অনেক পানি। এত ঝক্কি ঝামেলা, কষ্ট মনে হল সার্থক হয়েছে। গাইড নাফাখুম এর নিচে এইপাড় ঐ পাড় এ মোটা দড়ি বেঁধে দেয়াতে ঐ পাড়ে যাইতে পারলাম। ঝরনা খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হল। পিয়াস তার ভারি সরির নিয়া, সাঁতার না জেনে, দড়ি ধরে যেভাবে পার হল। সত্যিই অবাক হইছিলাম। প্রথমে জঙ্গি পার হতে চায় নি, কিন্তু আমাদের দুইজন কে ঐ পাড়ে দেখে আর থাকতে পারনি। গেঞ্জি খুলে, দড়ি ধরে চলে এলো।
ছবিঃ জঙ্গি (সালেহ জাহাঙ্গীর) এর উল্লাস।
রাতে বারবিকিউ হবে, তাই মুরগী কিনতে আমি আর মং হাই সেং গেলাম উপরে দিকের উহ্লাচিং পাড়াতে। এই পাড়াতে ১৫ টার মতো ঘর আসে। দেখলাম এখানে EU আর Danida এর অর্থায়নে UNDP প্রজেক্ট এ কৃষকদের জন্য মাঠ স্কুল আছে। মানুষের মতো মুরগীর ঘর গুলো ও মাচার উপর। মং এর হাতে পানির বোতল দেখে সবাই মারমা ভাষাতে কি জানি জিজ্ঞাসা করতে লাগলো। বুঝি না। পরে মং বলল আমি মদ কিনব কিনা জিজ্ঞাসা করছিল। কেউ মুরগী বিক্রি করতে চাইছিলনা। একটা ঘরে শেষে রাজি হল কেজি প্রতি ২৫০ টাকা দিতে হবে। ২ টা কিনলাম। সমস্যা হল পাড়াটাতে যেতে খাল পার হতে হই যেখানে বুক সমান পানি। মুরগী কিনে আসার সময় উশটা খেয়ে বুড়া আঙ্গুলের চামড়া ছিঁড়ে যায়।
ঝরনার পাড়ে আসে দেখি আরও ২-৩ গ্রুপ এসে গেছে, কেউ আবার গান ও গাইছে। ভালো তো ভালো না। ঝরনার সাথে গান ফ্রী। আবাক হবার ব্যাপার হইতাসে ৩-৪ নারী ও এই বর্ষাকালে নাফাখুম দেখতে চলে এসেছেন। ভেবেছিলাম আমাদের অনেক তেল। বুজলাম তেল ওয়ালা মানুষের অভাব নাই।
ঝরনার উপরের খালে গোসল সেরে আবার রওনা দিলাম একই পথে। মুরগী নিয়া ফিরতে একটু ঝামেলাই হল। পথে একটা মুরগীকে অসুস্থ মনে হল, তাই আল্লাহ্র নাম নিয়ে জবেহ করে দিলাম। এই অভিজ্ঞতা আর হয় নি। ফিরতে ফিরতে ৫ টা বাজল। গপাগপ করে অনেক ভাত খেলাম, ডাল, ভাত, ডিম, ভর্তা যে অনেক মজার খাবার তা আবার বুজলাম। সন্ধ্যার পর বারবিকিউ এর আয়োজন। আমাদের জঙ্গির এই ক্ষেত্রে লিডার। এক হাতে ই সব সামলাল। আমি আর পিয়াস কিছু সাহায্য করলাম। জাকির ভাই কিছু টা সাহায্য করার চেষ্টা করছিলেন। জাকির ভাই কিন্তু চশমাটা আর একবার হারাইছিলেন। রাত ১২ খাওয়া শেষে আবার ঘুম।
১৩/০৮/১৩
সকাল ৮:৩০ টায় নৌকা ছাড়ার কথা। কিন্তু তুমুল বৃষ্টি শুরু হওয়াতে কিছুক্ষন অপেক্ষা করলাম কমার জন্য। একটু ধরে আসলে ৯:৩০ তে ফিরতি যাত্রা শুরু করলাম। সাঙ্গুর পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়াতে রেমাক্রিখুম ভালো লাগছিল না। অন্য ট্রাভেলারদের ছবি দেখেছিলাম, তখন অনেক সুন্দর ছিল। রাজা পাথর এলাকা যখন পার হচ্ছি তখন প্রচণ্ড বৃষ্টি। বড় বড় কয়েকটা পাথর দেখা যাচ্ছিল। বৃষ্টির জন্য এই জায়গার কোনও ছবি আমরা তুলতে পারিনি। পথে তিন্দু তে ৩০ মিনিট বিশ্রাম।
ছবিঃ যখন তিন্দুকে বিদায় দিচ্ছি।
ব্লগার দুখি মানব এর কল্যাণে তিন্দু খুব বিখ্যাত হইয়া পড়েছে। ভালো ই লাগলো। তবে দুখি মানব যখন গিয়াছেন তখন মনে হয় আরও সুন্দর ছিল। বেশি টুরিস্ট আসাতে এইটা এখন বাণিজ্য/রেস্ট গ্রাম হয়ে পড়েছে মনে হয়। এরচে নাফাখুম এর উপরের দিকের উহ্লাচিং পাড়াটা বেশি সুন্দর মনে হয়েছে। সাঙ্গুর তীব্র স্রোতে ভাটিতে যাবার সময়ও থ্রিল। ১১:৩০ এ পৌঁছে গেলাম থানছি। ১২ টায় বান্দরবন এর বাস। এইদিকে কোন হরতাল নাই। থানছি- বান্দরবন জার্নিটা এবার আরও দুর্দান্ত। কারন মেঘের মধ্য দিয়ে বাস চলেছে। মেঘ গুলো এমন ভাবে পাহাড় গুলকে পেঁচিয়ে ধরেছে যেন সাদা তুলা দিয়ে মুড়ানো ...। উপমা আর খুঁজে পাই না।
ছবিঃ মেঘ সব সময় মাথার উপর থাকে না!!!
চিম্বুক পর্যন্ত সর্বদা মেঘের উপরে ই ছিলাম। বান্দরবন পৌছা লাম ৪:৩০ এ। ঢাকা বা চট্টগ্রাম এর কোন গাড়ি নাই। আমরা ৩ জন হোটেল জামান এ গেলাম। আমি আর জঙ্গি ২ জনে ৩ জনের ভাত খেয়ে ফেললাম। গরুর মাংস আর ইলিশ এত ভালো হয়েছে যে না খেয়ে উপাই নাই। সন্ধ্যার পর বান্দরবন থেকে কেরানি হাট একটা বাস এ। কেরানি হাট থেকে কর্ণফুলী ব্রিজ মাইক্রোতে। তারপর CNG তে বাসাতে চলে এলাম।
আমাদের ৩ জনের গড়ে ৩৬০০ টাকা খরচ হয়েছে এই ট্যুর এ। ৭ জনের গ্রুপ না হলে আরও খরচ বাড়ত। সবচেয়ে ভালো গ্রুপ ৬ জনের। গাইড এর সাথে দরাদরিটা ভালো ভাবে করতে হবে বর্ষাকালে না যাওয়াই ভালো। কিছু দরকারি মোবাইল নম্বরঃ উ সেং নু ( মং হাই সেং এর ভাই) : ০১৫৫৯২৮৯৬৩৫ , অং থোই চিং ( যার ঘরে ছিলাম) : ০১৫৫৪৫৫৬৩৫৭, উ চো মং (মারমা নৌকা চালক) : ০১৫৫৭১৯৬৪৫২। যারা ওইদিকে যাবেন এক সপ্তাহ আগে যোগাযোগ করুন কারন পাহাড়ে অনেক সময় নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না। বাঙালি গাইড পরিহার করতে চেষ্টা করুন। মামুন, আবুল হোসেন খুব পরিচিত বাঙালি গাইড। শুধু নাফাখুম পর্যন্ত যেতে বাঙালি গাইড আপনার কাছে ১৭০০ টাকা দাবি করবে আর পাহাড়িরা ৫০০ টাকা। অনেক সময় দেখা যায় বাঙালি গাইড ছাড়া নৌকা ভাড়া পাওয়া যায় না। সেক্ষেত্রে উ চো মং কে ফোন করতে পারেন। গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা, হুটহাট ছবি তুলবেননা। বিস্কুট, চিপস এর প্যাকেট যেখানে সেখানে ফেলবেন না।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ৮:২২