somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খইয়া ছড়া ঝর্নার খোঁজে একদিন।

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২৭/০৯/১৩
এ বারের গন্তব্য খইয়া ছড়া ঝর্না। প্ল্যান ছিল ২৬ তারিখে যাব। ২৫ তারিখ রাতের ৩টা বাজে সাগর ম্যাসেজ পাঠাল কাল ঢাকা থেকে বড় বস আসবে, তাই সে যেতে পারবেনা। সকালে প্ল্যান পরিবর্তন করে ম্যাসেজ পাঠালাম 2moro যাব। এই ম্যাসেজটা ইয়ো স্টাইলে লেখাটাই ভুল ছিল। পরদিন সকাল ৭:১৫ তে আমি অলংকার মোড়ে, সফি ভাই আসলেন ৭:৪৫ এ। কিন্তু সাগর তো ফোন ধরে না। আমরা দুজন তারে ফেলে চলে যাব ভাবছিলাম। শফি ভাই শেষ বারের মত ফোন করলেন, সাগর ফোন ধরে বলে, সে ঘুমাচ্ছিল। সে নাকি ম্যাসেজ এর 2moro বলতে পরশুদিন মানে ২৮ তারিখ ভেবেছে। যাহোক ও CNG নিয়ে ৮:২৫ এ অলংকার পৌঁছে। আমরা চট্টগ্রাম- বারইয়ার হাট এর “চয়েস” নামের বাস এ উঠে পড়লাম। বাস ভাড়া ৮০ টাকা/ প্রতিজন। ৮:৩৫ বাস ছড়ল। মাঝ রাস্তাতে বাস এর চাকা পাংচার, চাকা পালটিয়ে বড়তাকিয়া (জায়গাটা মিরসরাই এর আগে) পৌঁছাতে পৌঁছাতে বাজলো ১০:৩০। বড়তাকিয়া বাজারের পরেই হাতের বামে পড়বে খইয়া ছড়া হাই স্কুল। আমরা স্কুলের সামনেই নামলাম। আমদের পিচ্চি গাইড তারেক কে ফোন করে স্কুলের সামনে আসতে বলি। অপু নজরুল নামের এক ব্লগারের কাছ থেকে তারেক নামের ছেলেটির ফোন নাম্বার পেয়েছিলাম। স্কুলের বিপরীতে হাইওয়ে রোডের পূর্ব দিকে একটা রাস্তা গেছে। আমাদের যাত্রা শুরু হবে এই রাস্তা দিয়ে। আমরা বড়তাকিয়া বাজার থেকে হালকা নাস্তা করলাম। ২ বোতল পানি আর ২ ডজন কলা কিনলাম। ঘড়িতে বাজে ১১:৩০। আমরা যে রাস্তা দিয়ে হাঁটা শুরু করলাম ওটা একটা গ্রামের মধ্য দিয়ে গেছে, গ্রামটার নাম পূর্বখইয়া ছড়া গ্রাম। কিছুক্ষণ পর আমরা রেল লাইন পার হলাম। পাহাড়ের পাশের এই গ্রাম গুলোতে শিম চাষ ভালই হয়।শিম গাছের সাপোর্ট হিসেবে বাসের কঞ্চি দেয়া হয়। কৃষক থেকে আমরা ৩ টা বাসের কঞ্চি ধার নিয়ে ছিলাম। পরে আসার পথে ফেরত দিয়ে দিয়েছি। আরও কিছদুর যাবার পর রাস্তা শেষ, আমরা হাঁটা ধরলাম ঝিরি পথে। মূলত এই ঝিরি পথ থেকে আপনার ভাল লাগতে শুরু করবে। আমরা ফুলপ্যান্ট ছেড়ে থ্রীকোয়ার্টার প্যান্ট পরে নিলাম।


ছবিঃ ছড়ার পথ।

কিছুদূর হাঁটার পর আবার মাটির রাস্তা। পাহাড়ি পথে যা হয় আরকি। মাঝে মাঝে কিছু বাড়ি পড়ছে। পার্বত্য জেলা আর এই জায়গার মধ্যে তফাত হচ্ছে, এই বাড়ি গুলো। এগুলো বাঙ্গালিদের বাড়ি, আর পার্বত্য জেলা গুলোতে মাচার উপর পাহাড়িদের বাড়ি। মাঝে মাঝে কয়েকজন কে দেখলাম মুলিবাঁশ কেটে, বোঝা বেঁধে পিঠে করে নিয়ে আসছে। একজন কে দেখলাম ছড়ার পানিতে মাছ ধরছে।


ছবিঃ ছড়াতে মাছ শিকার

দারুন সবুজ গাছ গাছালি। তবে ট্র্যাকটা একটু পিচ্ছিল বেশি, বৃষ্টি হওয়াতে মনে হয়। কিছুটা উপরে উঠার পর, ছড়ার পানির পরিমান বাড়তে লাগল। সেই সাথে সৌন্দর্যও বাড়তে লাগল।


ছবিঃ সবুজের মাঝে বন্ধু সাগর



মোটামুটি ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিট হাঁটার পর, পানি পতনের শব্দ কানে আসতে লাগল। একটু পরেই দেখা পেলাম কাঙ্ক্ষিত খইয়া ছড়া ঝর্না। এইটা একদম নিচের ঝর্না। দুর্দান্ত সুন্দর। ঘর হতে দুপা ফেলিয়া... ব্যাপারটা আমার জন্য আক্ষরিক হয়ে উঠল। আমরা যে কলা আর পানি এনেছিলাম, এইখানে তা সাবাড় করলাম।


ছবিঃ প্রথম ঝর্না

সর্বমোট ৪ টা ঝর্না আমরা দেখেছি। ধারা মূলত একটাই । প্রথমটা দেখার পর, ঝর্নার বাম পাশ দিয়ে উপরে উঠার রাস্তা আছে। এতক্ষণ, তেমন কোন পাহাড়ে উঠতে হয়নি। কিন্তু এই রাস্তাটা বেশ খাড়া। আমাদের মধ্যে শফি ভাইয়ের মনে হচ্ছিল বারটা বেজে গেছে। ১২০ ফুটের মত উঠে আবার ২০ ফুটের মত নামলে দেখা পেলাম দ্বিতীয় ঝর্নার।


ছবিঃ দ্বিতীয় ঝর্নাতে বন্ধু সাগর

এই ঝর্না দেখে আবার ৪০ ফুটের মত উঠলাম। এরপর দেখা পেলাম তৃতীয় ঝর্নার।


ছবিঃ তৃতীয় ঝর্না

অনেকের মতে তৃতীয় ঝর্নাটা সবচেয়ে সুন্দর। আমার অবশ্য প্রথমটা বেশি ভাল লাগে। শফি ভাই আর উপরে উঠার সাহস করলেন না। আমি আর সাগর দমার পাত্র নই। তারেকের দেখান পথে খুব সহজে আরও উপরে প্রায় ৫০-৬০ ফুট উঠে গেলাম। এই ক্ষেত্রে, কিছু জংলী লতার সাহায্য পেলাম। টারজান আর বেয়ার গ্রাইলস (Man Vs Wild) কথা মনে পরে গেল। তৃতীয় ঝর্নার গা ঘেঁষে আপনাকে উপরে উঠতে হবে। তৃতীয় ঝর্নাটা ৩ স্টেপের। প্রতিটা স্টেপ আমরা রেস্ট নিয়ে আরও কাছ থেকে ঝর্নার সৌন্দর্য দেখতে লাগলাম। তৃতীয় ঝর্নার সর্বচ্চ স্টেপ এ উঠার পর দেখা পেলাম চতুর্থ ঝর্নার।


ছবিঃ চতুর্থ ঝর্না

কিছুক্ষণ ওখানে কাটিয়ে, নিচের দিকে নামা ধরলাম। তৃতীয় ঝর্নার নিচে নেমে, ওখানে ভিজলাম। তৃতীয় থেকে সরাসরি প্রথম ঝর্নাতে নামা যায়। আমরা ঐ রাস্তাটাই ফলো করলাম। প্রথম ঝর্নাতে নেমে অনেকক্ষণ গোসল, দাপাদাপি করলাম। আমরা মোটামুটি ৩ ঘণ্টার মত সবগুল ঝর্না দেখেছি। আবার ফেরার পালা। যেখান থেকে ঝিরি পথ শুরু তার কিছু টা পরে গ্রামের মধ্যে একটা CNG পেয়ে যাই। ৮০ টাকা ভাড়াতে আমাদের বড়তাকিয়া বাজার নামিয়ে দেয়। ওখানে পৌঁছে “গ্রাম বাংলা” নামের কুমিল্লার একটা বাস পেয়ে যাই। এই বাস ৯০ টাকা/ প্রতিজন হিসাবে ভাড়া রেখেছে। ৪:৪০ রওনা দিয়ে ৬ নাগাদ "এ কে খান" পৌঁছে যাই। রাতে শাফি ভাইয়ের বদান্যতায় জম্পেশ খাওয়া দাওয়া হয়। আগামী মাসে একটা বড় ট্যুরের আগে একদিনের এই শর্ট ট্যুর দারুন হল।
তারেকের মোবাইল নাম্বার ০১৮৩২৫৮৬৭৬৭। যারা সাহায্য নিতে চান তারা স্কুল ছুটির দিনে যেতে হবে। অথবা ওকে আগে ফোন করে অন্য কাউকে ঠিক করে দিতে বলুন। টিপস ২০০-৩০০ এর মধ্যে রাখুন। ঝর্নার নিচে বিস্কুটের প্যাকেট পেয়েছিলাম যা খুবই বিরক্তিকর। প্যাকেট গুলো দয়া করে নিজেদের সাথে নিয়ে আসবেন।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:২৫
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×