একটা মুভিতে হিরো ভালো রোমান্স করে, ডান্স করে, মানুষকে হেল্প করে, গুন্ডাদের সাথে ফাইট করে, কিন্তু একটা স্কুলপড়ুয়া ছেলে এতকিছু রেখে হিরোর স্টাইলে সিগারেট জ্বালিয়ে ফ্যাশন দেয়। কারণ অন্য কাজগুলোর থেকে এটা সহজ! ঠিক এইভাবে এন্টিহিরোকে দেখে সহজে রাগ, ক্রোধ, প্রতিশোধ চর্চার মাধ্যমে ইয়ং জেনারেশন আইন ভাঙতে ইনফ্লুয়েন্সড হবে বলে অ্যানিম্যাল মুভিকে ক্রিটিক ও সামাজিক চিন্তাকারীরা এক্সেপ্ট করতে চায়নি ।
সিনেমাকে এত সিরিয়াসলি নেবার কি আছে?
আপনি বলতে পারেন হলিউডের অনেক মুভি-সিরিজেই তো লীড রোল ভায়োলেন্স দেখায়, তাহলে অ্যানিম্যালের সমস্যা কি? সিনেমা তো বিনোদন! স্কুল কলেজ থাকতে এখন সিনেমা দেখে লেসন নেওয়া লাগবে? আমরা কি হরর/স্ল্যাশার মুভি দেখিনা? তাহলে কেন অ্যানিম্যাল নিয়ে হিপোক্রেসি করছি? আসলে সিনেমা দেখে শিক্ষা নেবার এরকম কোনো বাঁধাধরা নিয়ম কেউ করেনি। তবে খেয়াল করলে দেখবেন, জনরা অনুযায়ী রাইটার-ডিরেক্টররা ক্যারেক্টারদের মাঝে একটা কোড বা এথিক্স বজায় রাখে।
এর কারণ সৃষ্টির শুরু থেকে সাহিত্য ও সিনেমার একটা উদ্দেশ্য ছিল। তা হলো পাঠক ও দর্শকদের গুড মেসেজ দেওয়া। সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি প্রসার হবার পর সকল ধরনের মানুষকে আকর্ষণ করতে কমার্শিয়াল এলিমেন্ট ও এন্টারটেইনমেন্ট ঢুকানো হয়েছে। কিন্তু দেখবেন ঘুরে ফিরে বেশিরভাগ সিনেমাতেই মূল চরিত্র দিয়ে অন্যায় ও অপরাধ দমন করা দেখানো হয়। মূল চরিত্রের একটা বাউন্ডারি থাকে। চাইলেই টাকার জোরে যেকোনো প্লেসে গিয়ে যাকে তাকে খুন করা যায় দেখালে ওই বাউন্ডারিটা থাকেনা।
‘অ্যানিম্যাল’-এর আসল সমস্যা কোথায় ছিলো?
অ্যানিম্যালের সমস্যা ছিল ‘পোয়েটিক জাস্টিসে’-এর মোটিফ তৈরিতে। হলিউডের ভায়োলেন্ট মুভি-সিরিজে হিরো, ভিলেন বা এন্টিহিরো অনেক খুন করতে পারে। কিন্তু শেষে এমোশোনাল সাপোর্টের মাধ্যমে তাদের পারপাজকে জাস্টিফাই করেনা। রাইটাররা তাদের ন্যারেশন দিয়েই কোনো একটা পার্টে বুঝিয়ে দেয় তারা ভূল ছিল। প্রতিশোধের স্পৃহা তাদের হারানো জিনিস ফিরিয়ে আনেনি। তারা একসময় সব ভায়োলেন্স বাদ দিয়ে দেয় বা বাদ দিতে না পারলে নিজেকে স্যাক্রিফাইস করে দেয়। আগের চেয়ে দুর্ধর্ষ হয়ে উঠে না।
অনেক সময় এন্টিহিরো সমাজের ভাল চাইতে পারে। কিন্তু তার ‘ওয়ে অব অপারেশন’ ঠিক ফেয়ার হয়না বলে তাকে সাপোর্ট করা হয়না। যেমনঃ এভেঞ্জার্সের এন্টিহিরো থানোস ইউনিভার্সকে টিকিয়ে রাখতে অর্ধেক মানুষ ভ্যানিশ করতে চেয়েছিল। তার পারপাজ ভালো ছিল। তাইনা? কিন্তু অধিকাংশ মানুষ সাপোর্ট করেছে মুভির হিরোদের। কারণ তারা মানুষদের জীবন নষ্ট না করে সলুশন চেয়েছে। তারা নিজেদের জীবন স্যাক্রিফাইস করে অন্যদের বাঁচিয়েছে। রাইটাররা অনেক কিছু ভেবেই তাদের ক্যারেক্টার এভাবে ডিজাইন করেছে।
প্রকৃত সিনেমা ও সাহিত্য কেমন হয়?
সিনেমা বা সাহিত্যের মেইন পারপাজ হলো নিজের ভূলের রিয়েলাইজেশন এনে ভালো কাজে উৎসাহিত করা। এখানে প্রটাগনিস্ট নিজে একটা ভূল করে। এরপর তার খারাপ কনসিকোয়েন্স আসার পর স্ট্রং হয়ে প্রবলেম ফিক্স করে। বড় রাইটার ও ডিরেক্টররা সবসময় হিরোর মাঝে গুডউইল দিয়ে তাকে উইন করায় । এর কারণ তারা চায় যারা প্রটাগনিস্টের সিচুয়েশনের সাথে নিজের মিল পাবে, তারা যেন কন্ট্রোলের বাইরে না যায়।
আপনাদের হয়তো মনে আছে জোকার মুভি রিলিজের পর আমেরিকার কিছু জায়গাতে জরুরি অবস্থা জারি করা লেগেছিল। কারণ মানুষ আবেগি, তাই স্টোরিটেলিংয়ে এমোশোনাল সাপোর্ট পেলে খুব সহজেই হিরো, এন্টিহিরো বা ভিলেনের চিন্তায় প্রভাবিত হয়ে যায়। মজার বিষয় হলো, আমার আশেপাশের সবচেয়ে বদরাগী, ওভার এক্সাইটেড ও ডমিনেটিং মানুষেরাই অ্যানিম্যাল মুভি পছন্দ করেছে দেখলাম! তারা জাস্ট মজার জন্য দেখে ভূলে গিয়েছে নাকি দেখে নিজের জন্য আরো মোটিভেশন নিয়েছে কেউই জানেনা!
‘অ্যানিম্যাল’-এর ডিরেক্টরকে নিয়ে কি বলবো?
এনিমালের ডিরেক্টর সন্দ্বীপ রেড্ডি ভাঙা, যার আরেকটা ভায়োলেন্ট সিনেমা অর্জুন রেড্ডি! নামের মিল দেখে মনে হচ্ছে নিজেকেই পোর্ট্রে করার চেষ্টা করছে! জোকস অ্যাপার্ট, সামনে তার আরো অনেক ভায়োলেন্ট মুভি আসছে। লোকটা বুঝে গেসে তার অনেক দর্শক আছে। বিশেষ করে সমাজের একটা তরুণ শ্রেণী গঠনমূলক ভাবে না। জাস্ট নিজের জীবন উপভোগ করে, মুভিতে তারা অ্যাকশন, ভিএফএক্স এগুলোই দেখে মজা পায়। তারা গল্পের ডিপে প্রবেশ করেনা। অ্যানিম্যালের মত মুভি তাদের বোরিং লাইফে ভিন্নতার ছোঁয়া দেয়। তাই ডিরেক্টর অবশ্যই ব্লকবাস্টার সব মুভি নিয়ে আসবে।
For Any Consultation
BM Khalid Hasan
Creative Writer | Director | Presenter
Mail: [email protected]
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ১১:৫৫