দেড় কোটি বিপন্ন মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে
আলোচনার সূত্রপাত করা যাক এভাবে- ফেসবুকের বদৌলতে দেশের উত্তরাঞ্চলের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া দেশের সবচেয়ে উপদ্রুত এলাকার এক শ্রীমানের সাথে সম্প্রতি আমার পরিচয় ঘটে। বিগত ১২ ডিসেম্বর রাতে যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়ার পর ঐ শ্রীমান ১৩ ডিসেম্বর উক্ত শিক্ষককে এভাবে লিখে একটি মেসেস ইনবক্সিং করে: “স্যার, আমাদের এলাকায় খুব বিপদ । জানি না কখন আমাদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয় । রাত হলে ঘুম আসে না । আমাদের জন্য একুট দোয়া করবেন । জেলার সব থেকে ডেয়ারিং জায়গায় আমরা থাকি। এ এলাকায় পুলিশ ঢুকতে পারে না। পুরো এলাকা জামায়াতের নিয়ন্ত্রণাধীন। তারা আমাদের অনেক আত্মীয়-স্বজনের বাসা জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দিয়েছে । এখান থেকে আমাদের অনেক লোকজন অন্যত্র পালিয়ে গেছে । এখানে সেনাবাহিনীর কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা ছাড়া কোনো সমাধান হবে না । কী যে হবে! কপালে যা আছে তা মেনে নেয়া ছাড়া আমাদের কিছুই করার নাই! আপনিও সাবধানে থাকবেন, স্যার ।” উক্ত শিক্ষক মেসেজটি আমাকে ইনবক্সিং করেন। তার সাথে যোগাযোগ করে শ্রীমানের মোবাইল ফোন নম্বর নিয়ে তার সাথে কথা বলি। সে তখন বিশ্বাবিদ্যালয়ের হলে অবস্থান করছিল, আমাকে জানালো- গত দুই দিন ধরে তার পরিবারের সাথে কোনো যোগাযোগ নেই । মা-বাবা কী অবস্থায় রয়েছেন তা জানা নেই বিধায় কাঁদো-কাঁদো কণ্ঠে চরম উদ্বিগ্নতা প্রকাশ করছিল । সরকারের প্রতি অনুরোধ জানালো- অনতিবিলম্বে তাদের উপদ্রুত এলাকায় যেন কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় । ১৫ ও ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যবর্তী রাত থেকে ঐ জেলায় যৌথবাহিনী অপারেশন শুরু করে । সেখানকার অবস্থা জানার জন্য ১৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় শ্রীমানকে ফোন করি । ক্ষীণ কণ্ঠে সে জানোলো- অনেক চড়াই-উৎরাই পেড়িয়ে অতি সন্তর্পণে ঐ দিন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাড়ি পৌঁছেছে । বাড়ি আসার সময় সারাপথ জামায়াত-শিবির জঙ্গিদের ভয়ে থাকতে হয়েছে । যৌথবাহিনীর অভিযানে কিছুটা স্বস্তি প্রকাশ করলেও মোটেও উদ্বিগ্নহীন মনে হয়নি তাকে । সে জানালো- জামায়াত-শিবিরের জঙ্গি ক্যাডার বাহিনী পুরো এলাকায় এমন ত্রাস অবস্থা সৃষ্টি করে রেখেছে যে, সেখানে সাধারণ মানুষ অসহায় । আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষে প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছাতে না পারার কারণে জঙ্গি বাহিনীর সদস্যদের সেখানে পালিয়ে থাকতে কোন অসুবিধা হচ্ছে না । তাছাড়া জঙ্গিরা শক্তিশালী মোবাইল যোগাযোগ-নেটওয়ার্ক গড়ে তুলে আগে থেকেই এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় তাদের সহযোগীদেরকে সাবধান করে দেয় । ফলে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী কোনো উপদ্রুত এলাকায় পৌঁছানোর পূর্বেই তারা সটকে পড়ে, আবার আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী চলে যাবার সাথে-সাথে জড়ো হয়ে তাণ্ডব শুরু করে দেয়। ১৭ এবং ১৯ ডিসেম্বর শ্রীমানের সাথে আবার কথা বলি । সে জানায়- প্রত্যন্ত এলাকার অবস্থা থমথমে। কেউ কোনো কথা বলছে না । যৌথবাহিনী রাস্তা দিয়ে আসা-যাওয়া করছে বটে, কিন্তু সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা জঙ্গিদের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার কোনো ভরসা পাচ্ছে না। কারণ, আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষে সার্বক্ষণিকভাবে প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থান করা সম্ভব নয় । অন্যদিকে জঙ্গিরা নিজস্ব গোয়েন্দা বাহিনী সৃষ্টি করে ধর্মীয় সংখ্যালঘুসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকজনের চলাফেরা ও কর্মকাণ্ডের সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর রেখে যাচ্ছে । তাতে এলাকার লোকজনের ভীতসন্ত্রস্ততা মোটেও কাটছে না । তাই তারা গ্রাম ছেড়ে কিছুটা নিরাপদ শহরে গিয়ে বসবাস শুরু করছেন। অত্যাচারিত হয়ে কেউ দেশান্তরিত হওয়ার চেষ্টা করছেন কিনা তা জানতে চাইলে শ্রীমান জানালো এখনো তেমনটি কাউকে করতে দেখা না গেলেও সবারই মন ভেঙ্গে গেছে । ভবিষ্যতে কী হবে তা নিয়ে সবাই চরম উদ্বিগ্ন এবং তারা যে কোনো সময় যেখানেই নিরাপদ বলে মনে করবেন ও সুযোগ পাবেন সেখানেই চলে যাবেন বলে মনস্থির করেছেন । তাদের সবার বিনিদ্র রজনী কাটে, ঘরে-বাইরে হাতের মুঠোয় প্রাণ নিয়ে কোনো রকমে বেঁচে থাকতে হচ্ছে। মোবাইলে এসব আলাপ করার সময় ক্ষীণকণ্ঠে সে বারবার আমাকে অনুনয়ের সুরে বলছিল- ‘আমাকে খুব সাবধানে আপনার সাথে কথা বলতে হচ্ছে, তা আপনি বুঝতে পারছেন । দয়া করে আমার নাম প্রকাশ করবেন না, আমার এলাকার নামও না’। কোনো নাম প্রকাশ করা হবে না বলে তাকে আশ্বস্ত করলাম। সে প্রশ্ন করলো- ‘আমাদের কী অপরাধ’? আমি তার ঐ প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে পারিনি । কারণ এ প্রশ্ন কেবলমাত্র উপদ্রুত ঐ বিশেষ এলাকার এক শ্রীমানের নয়, গোটা দেশের প্রায় প্রতিটি শ্রীমানের। তাই সার্বিক পরিস্থিতির আলোকে এই প্রশ্নের সাথে দেশের সকল রাজনৈতিক দল, সরকার, ধর্মীয় সংখ্যাগুরু জনগণ, দেশ-বিদেশের মানবাধিকার সংস্থা, কূটনৈতিক কোর, উন্নয়ন সংস্থা, জাতিসংঘ, দেশি-বিদেশি মিডিয়া, বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী, টকশো-বক্তা প্রমুখের নিকট অতিরিক্ত কতিপয় জ্ঞাতব্য বিষয় ও জিজ্ঞাস্য উপস্থাপন করছি।
এই ভূ-অঞ্চলে সভ্যতা বিকাশের গোড়াপত্তনকারী এবং হাজার-হাজার বছর ধরে বসবাসকারী উন্নত বিশাল এক জনগোষ্ঠী দিনদিন বিপন্ন থেকে বিপন্নতর হচ্ছে । মূলত বিগত শতাব্দির চল্লিশের দশকে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারতবর্ষ বিভাজনকে কেন্দ্র করে তাদের এই বিপন্নতার সূত্রপাত ঘটে। ভারতীয় উপমহাদেশের তৎকালীন রাজনীতিবিদদের ধর্মীয়, আঞ্চলিক, সম্প্রদায় ও গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্ব, কূটচাল ও ক্ষমতালিপ্সার মদমত্ততায় ঐতিহাসিক ভুল সিদ্ধান্তের বলি বর্তমান বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু এই জনগোষ্ঠী- যাদের মধ্যে প্রায় ৯৯% হিন্দু ধর্মাবলম্বী, বাকিরা বৌদ্ধ এবং খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী । দ্বিজাতি তত্ত্বের কুফসল পাকিস্তান নামক একটি আস্বাভাবিক রাষ্ট্রে রাতারাতি তারা সবাই আপনাআপনিই অবাঞ্ছিত বনে যান। কারণ ধর্মভিত্তিক ঐ তত্ত্বের একমাত্র ব্যাখ্যা হচ্ছে- পাকিস্তান কেবলমাত্র মুসলমানদের জন্য সৃষ্ট একটি রাষ্ট্র। ফলে ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট থেকে রাতারাতি অন্য জাতি-ধর্মের বিশাল জনগোষ্ঠী নিজভূমে পরবাসী হয়ে পড়েন । বাধ্য হয়ে লক্ষ-লক্ষ সংখ্যালঘু মানুষ দেশান্তরিত হতে শুরু করেন। আর যারা চৌদ্দ পুরুষের ভিটেমাটির মায়া কাটিয়ে দেশান্তরিত হতে চাননি তাদেরকে জোরপূর্ক বিতারণের পর্ব শুরু হয়। এ প্রক্রিয়ায় তৎকালীন সরকারের সরাসরি মদদ ও নিষ্ক্রিয়তায় এ অঞ্চলের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর ক্রমাগত অত্যাচার, নির্যাতন ও হামলা পরিচালনাসহ একাধিক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ফলে তাদের অধিকাংশই দেশত্যাগে বাধ্য হন। ব্যাপক এই দেশত্যাগের ফলে এক সময়ের পূর্ব বাংলা, পরবর্তীতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সংখ্যা ২৩ বছরে (১৯৪৭ – ১৯৭০) অর্ধেকে নেমে আসে, অর্থাৎ এ দেশের মোট জনসংখ্যায় তাদের হার ৩০% থেকে হ্রাস পেয়ে ১৫% হয়ে যায়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর কেবলমাত্র ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সালের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত সংখ্যালঘুদের দেশান্তরের ধারায় চ্ছেদ পড়ে। এই সময়কালে রাষ্ট্রীয় উদার ও অসাম্প্রদায়িক নীতি এবং সে অনুযায়ী সরকার ও প্রশাসন পরিচালিত হবার ফলে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তাবোধ জাগ্রত হয় বিধায় তাদের দেশান্তরিত হওয়া সাময়িকভাবে নিবৃত হয় । কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জনককে নৃশংসভাবে হত্যার মধ্য দিয়ে এই রাষ্ট্রের চরিত্র ১৮০ ডিগ্রী ঘুরিয়ে দিয়ে পাকিস্তানী ভাবধারায় দেশ পরিচালনা শুরু হয় । ফলে পুনরায় এ দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা পুনরায় হুমকির মুখে পড়ে এবং নবপর্যায়ে তাদের দেশত্যাগ শুরু হয়। নব্বই দশকের প্রথম দিকে ভারতের বাবরি মসজিদে হামলা ও তা ধ্বংসের খেসারত দিতে হয় বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদেরকে । তাদের উপর তৎকালীন সরকারের প্রচ্ছন্ন সমর্থনে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী হামলা, অত্যাচার ও নির্যাতন পরিচালিত হওয়ার ফলে স্বাধীনতার পর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা দেশত্যাগ করেন । ১৯৯৬ – ২০০১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা কিছুটা স্বস্তিতে থাকলেও ২০০১ সালের ১ অক্টোবর নির্বাচনের পর তাদের উপর নেমে আসে মধ্যযুগীয় রর্বরতা । উক্ত নির্বাচনে বিজয়ী বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের নেতা-কর্মীরা সংখ্যালঘুদের উপর সর্বৈব অত্যাচার, নির্যাতন ও নিপীড়ণ পরিচালনা করে । ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও উপাসনালয় ভাংচুড়, অগ্নিসংযোগ ও লুটতরাজ, শারীরিক হামলার মাধ্যমে যখম ও হত্যা, নারী ধর্ষণ, জোরপূর্বক ধর্মান্তর ও বিয়ে, জায়গা-জমি দখল, মিথ্যা মামলা ইত্যাদি এমন কোনো অমানবিক ও পাশবিক নির্যাতন নেই যা সংখ্যালঘুদের উপর পরিচালনা করা হয়নি। এসব নারকীয় ঘটনাবলী বন্ধে কোনো প্রকার পদক্ষেপ গ্রহণ না করে, বরঞ্চ মৌন সম্মতি জানিয়ে ঐ জোটনেত্রী বিজয়োত্তর দোয়া কামনায় ওমরাহ্ হজ্জ্ব পালনার্থে সৌদি আরব গমন করেন । আর তার দলের তৎকালীন মহাসচিব সে সময় বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচারিত সংখ্যালঘুদের দেশত্যাগের খবরের ব্যাপারে এই বলে মন্তব্য করেন- “কেউ যদি তাদের কৃতকর্মেবর দায়ে ভয় পেয়ে দেশ ছেড়ে চলে যায় তাতে সরকারের কী করার থাকতে পারে”! জোট, দল এবং সরকারের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের এ ধরণের বক্তব্যে আস্কারা পেয়ে তৎকালীন চার দলীয় জোটের নেতা-কর্মীরা প্রশাসন এবং আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর নীরব সমর্থনে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর টানা পাঁচ বছর অত্যাচার, নির্যাতন ও হালমা অব্যাহত রাখে । সংখ্যালঘুরা শুধু পড়ে-পড়ে মার খেতে থাকেন । ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি জরুরি অবস্থা ঘোষিত হলে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের মাত্রা কিছুটা হ্রাস পায় । এরপর ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার গঠন করলে তাদের উপর নির্যাতন সাময়িকভাবে বন্ধ হলেও তা বেশি দিন স্থায়ী হয়নি । দল-বেদলের ধর্মীয় মৌলবাদী এবং সাম্প্রদায়িক শক্তি অল্প কিছুদিনের মধ্যে সুযোগ পেলেই নানা অযুহাত ও কৌশলে সংখ্যালঘুদের উপর হামলা শুরু করে । দুঃখজনক হলেও সত্য, মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক দলের নেৃতত্বে সরকার পরিচালিত হলেও সংখ্যালঘুরা হামলা থেকে রেহাই পাননি । দেশের সকল প্রান্তে রয়ে-রয়ে হামালা পরিচালি হতে থাকে । তবে গেল বছর (২০১৩) ২৮ ফেব্রুয়ারি অন্যতম যুদ্ধাপরাধী দুর্ধর্ষ ও কুখ্যাত দেইল্যা রাজাকারের ফাঁসির রায় ঘোষিত হওয়ার পর সংখ্যালঘুদের উপর দেশব্যাপী একযোগে সবচেয়ে বড় হামলা পরিচালিত হয় । সেই থেকে অদ্যাবধি প্রতিনিয়ত দেশের কোনো না কোনো স্থানে তাদের উপর হামলা চলে আসছে । তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলনরত বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট বিভিন্ন কর্মসূচি পালনকালে তাদের উগ্র এবং সন্ত্রাসী কর্মীবাহিনী সংখ্যালঘুদের উপর হামলে পড়ছে । কোথাও-কোথাও আবার সরকার সমর্থক সন্ত্রাসীরাও এ ধরণের হামলা পরিচালনা করছে । বিগত ২৫ নভেম্বর দশম নির্বাচনের তফসিল ঘোষিত হওয়ার পর ১৮ দলীয় জোটের আন্দোলনের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে-সাথে তাদের জঙ্গি কর্মীবাহিনী কর্তৃক সংখ্যালঘুদের উপর হামলার মাত্রাও বৃদ্ধি পেতে থাকে। বিশেষ করে জামায়াত-শিবির দেশের সর্বত্র সংখ্যালঘুদের উপর হামলা পরিচালনা করতে থাকে । বিগত ১২ ডিসেম্বর অন্যতম যুদ্ধাপরাধী মিরপুরের কসাই নামে পরিচিত কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর হলে জঙ্গিদের হামলার মাত্রা তীব্রতর হয় । ১৬ ডিসেম্বর থেকে দেশের বিভিন্নস্থানে যৌথবাহিনীর অভিযান সত্ত্বেও এসব হামলা অব্যাহত থাকে । সবশেষ খবর হচ্ছে- ২৬ ডিসেম্বর থেকে ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত থেকে নির্বাচনকালীন স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সেনাবাহিনী মাঠে থাকছে । তা সত্ত্বেও সংখ্যালঘুরা ভরসা করতে পারছেন না যে, তারা নির্বাচনের আগে, নির্বাচনের দিন এবং নির্বাচনের পর দীর্ঘদিন বা অব্যাহতভাবে সাম্প্রদায়িক অপশক্তির হামলা থেকে রেহাই পাবেন কিনা ।
ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর চলমান হামলার কিয়দ খবর হাতেগোনা কয়েকটি প্রিন্ট ও ওয়েব মিডিয়ায় আংশিক এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় কদাচিৎ প্রচারিত হতে দেখা যায় । অথচ প্রতিদিন দেশের কোথাও না কোথাও তারা পড়ে-পড়ে মার খাচ্ছেন, তাদের ঘরবাড়ি, ব্যবসা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, নারীদেরকে ধর্ষণ ও জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত ও বিয়ে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে । এই জনগোষ্ঠীকে দেশের সৃষ্ট প্রতিটি সংঘাতময় ঘটনায় মূল লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হচ্ছে । তাদের সংখ্যা কম করে হলেও দেড় কোটি । কারণ ২০১১ সালের সর্বশেষ আদমশুমারির পরিসংখ্যান আনুযায়ী বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা মোট জনসংখ্যার ৯.৬% । তাতে বর্তমানে এ দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি বলে হিসাব করলেও মোদ্দাভাবে সংখ্যালঘুদের সংখ্যা ১ কোটি ৫৩ লক্ষাধিক । প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বিশ্বের ১৯৩টি দেশের মধ্যে মাত্র ৬৪টি দেশে দেড় কোটির অধিক করে জনসংখ্যা রয়েছে, আর বাকি ১২৯টি দেশের প্রত্যেকটির জনসংখ্যার চেয়ে বাংলাদেশের এই বিপন্ন জনগোষ্ঠীর সংখ্যা অধিক । অথচ বিশাল এই জনগোষ্ঠীর বিপন্নতা, অর্থাৎ বিশ্বের সম্ভাব্য সর্ববৃহৎ ‘এথনিক ক্লিনজিং’ নিয়ে দেশ-বিদেশের সংশ্লিষ্ট কোনো মহল থেকে কোনো প্রকার কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে, বা তেমন কোনো আলাপ-আলোচনা করছে বা ভূমিকা রাখছে বলে দৃশ্যমান নয় । এইসব মহল যা নিয়ে ব্যস্ত তা হচ্ছে- নির্বাচন আর নির্বাচন, অর্থাৎ এ দেশের নির্বাচন কবে কীভাবে হবে, নির্বাচনে কারা অংশগ্রহণ করলেন কি না করলেন, কতজন বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হলেন, কীভাবে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা যায়, নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে কীভাবে বিবাদমান দুই পক্ষকে সমঝোতায় আনা যায় ইত্যাদি নিয়েই তারা প্রাণান্ত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ।
এভাবে যারা বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য অহর্নিশি প্রচেষ্টারত, তাদেরকে বলতে শোনা যায়- অতীতে, বিশেষ করে ১৯৯১, ১৯৯৬ (জুন), ২০০১ এবং ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়েছিল বিধায় দেশ-বিদেশে সেসব নির্বাচন কমবেশি প্রশংসিত হয়েছিল ও গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছিল । কিন্তু, তাদেরকে কখনো এ কথা বলতে শোনা যায় না যে, ঐসব প্রায় প্রত্যেকটি নির্বাচনের আগে-পরে এ দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর কমবেশি হামলা হয়েছে এবং কোনো-কোনো নির্বাচনের পর তা কয়েক বছর পর্যন্ত অব্যাহতভাবে চলেছে। তা’হলে বর্তমানে যারা অনুরূপ একটি নির্বচান অনুষ্ঠানের ব্যাপারে স্বোচ্চার রয়েছেন- তারা কি কোনো গ্যারান্টি দিতে পারবেন যে, নির্বাচনের আগে-পরে এ দেশের সংখ্যালঘুদের উপর কোনো প্রকার হামলা হবে না বা ‘এথনিক ক্লিনজিং’ হবে না ? অন্যদিকে নির্বাচন সংক্রান্ত যাবতীয় ব্যাপার নিয়ে সবাইকে উচ্চকিত হতে দেখা গেলেও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার ব্যাপারে তাদের মুখ থেকে টুশব্দটি পর্যন্তে শোনা যাচ্ছে না কেন ? কোনটি বড়- সকলের অংশগ্রহণে সবার নিকট গ্রহণযোগ্য নির্বাচন, নাকি দেড় কোটি মানুষের নিরাপত্তা ?
তাই সব মিলিয়ে বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে বিবাদমান পক্ষগুলোর মধ্যে যে সমঝোতার কথা বলা হচ্ছে, তার অন্যতম প্রধান শর্ত হতে হবে এ দেশের দেড় কোটিরও অধিক ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা বিধানের বিষয়টি । এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট সকল মহলকেই স্বোচ্চার হতে হবে, নিশ্চয়তা দিতে হবে এবং সমঝোতার স্মারক এমনভাবে প্রণীত হতে হবে- যাতে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা বিধানের শর্তাবলী মেনে চলতে বাধ্য থাকবেন এবং যারা সেসব অমান্য করবেন তাদের জন্য বিশেষ আদালতে আইনগতভাবে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে । ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা বিধানে আরোপ্য শর্তাবলী প্রণয়নের লক্ষ্যে সুপ্রীম কোর্টের একজন বিচারপতির নেতৃত্বে একটি ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করতে হবে । এই কমিটিতে সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান, সরকার, সংসদ, রাজনৈতিক দল, দেশ-বিদেশের মানবাধিকার সংগঠন, জাতিসংঘ ইত্যাদির প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত থাকবেন ।
নির্বাচন ৫ জানুয়ারি, নাকি সমঝোতার ভিত্তিতে অন্য কোনো তারিখে অনুষ্ঠিত হবে, অথবা ৫ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও পরবর্তীতে সমঝোতা বা অন্য যে কোনোভাবেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক না কেন বাংলাদেশের দেড় কোটি সংখ্যালঘু মানুষ আর যেন কোন প্রকার হামলা, অত্যাচার, নির্যাতন ও নিপীড়ণের শিকার না হন তা নিশ্চিত করতে হবে । কারণ, নির্বাচনের চেয়ে দেড় কোটি বিপন্ন মানুষের নিরাপত্তা বড় !
আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন
মসজিদ না কী মার্কেট!
চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷
আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন
আকুতি
দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন
ক- এর নুডুলস
অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।
ক
একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন
স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু
২-১ : আলিফ-লাম-মীম
আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন