somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মোদী ঢেউয়ের ধাক্কা কোথায় কতটা লাগতে পারে

০৩ রা মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আগামী এপ্রিল-মে মাসজুড়ে ভারতের পরবর্তী লোকসভা নির্বাচন। এই নির্বাচনে সে দেশের ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) বিজয়ী হয়ে কেন্দ্রে সরকার গঠন করতে পারলে তাতে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে গুজরাটের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদরভাই মোদীভাই’র নাম ঘোষণা করা হয়েছে। প্রাইমিনিস্টেরিয়েল ক্যান্ডিডেট হিসেবে মোদীকে হাইলাইট করার জন্য দলের পক্ষে বিজেপি’র নির্বাচনী প্রচারণা কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবেও তাকে মনোনীত করা হয়েছে। তাই প্রচার কাজে তিনি বিগত দু’মাস যাবত ভারতের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত চষে বেড়াচ্ছেন।

ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস এবং বিজেপি সর্বভারতীয় প্রধান দু’টি দল। কংগ্রেস মধ্যপন্থী বটে, কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষতার ধারক বলে ধারণা করা হয়। অন্যদিকে, সার্বিকভাবে প্রণীত নীতি এবং দলীয় নেতৃত্বেবর্গের কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে বিজেপিকে বরাবরই ডানপন্থী এবং হিন্দুত্ববাদী দল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাই নরেন্দ্র মোদীর নির্বাচনী প্রচারণায় তার দলীয় নীতিই প্রাধান্য পাবে, তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। তাছাড়া রাজনীতিবিদ হিসেবে নরেন্দ্র মোদী বিজেপি’তে রাষ্ট্রীয় শ্যামসেবক সংঘ (আরএসএস)-এর প্রতিনিধিত্ব করছেন। উল্লেখ্য, আরএসএস হচ্ছে- কট্টর হিন্দুত্ববাদী একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। হিন্দু জনগোষ্ঠীকে ঐক্যবদ্ধ এবং হিন্দু পুরুষদের চরিত্র গঠনে তাদেরকে প্রশিক্ষণের লক্ষ্যে ১৯২৫ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর একটি শিক্ষামূলক সংগঠন হিসেবে এর আত্মপ্রকাশ ঘটে। আরসএসএ-এর ভাবধারায় প্রথমে ১৯৫১ সালে ‘ভারতীয় জন সংঘ’, ১৯৭৭ সালে সমনমাদেরকে নিয়ে ‘জনতা পার্টি’ এবং ১৯৮০ সালে ‘ভারতীয় জনতা পার্টি’ নামে রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশলাভ করে।

ঐতিহাসিকভাবে ধর্মীয় লেবাসে ‘হিন্দু’ এবং ‘মুসলমান’ হিসেবে দ্বিজাতি-তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে খণ্ডিত ভারতবর্ষের রাজনীতিতে সর্বত্র ধর্ম এবং সাম্প্রদায়িকতার প্রভাব বিস্তার ছিল অবধারিত। সে কারণে আরএসএস-এর উত্তরাধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠাপূর্বকাল হতেই বিজেপি’র রাজনীতিতে ধর্মীয় এবং সাম্প্রদায়িক নীতি অনুসৃত হতে দেখা যায়। এই নীতির উপর ভর করেই বিভিন্ন সময়ে বিজেপি ভারতের রাষ্ট্র, সরকার এবং কেন্দ্রীয় ও বিভিন্ন প্রাদেশিক আইনসভায়, সব মিলিয়ে এক কথায় সে দেশের রাজনীতিতে এই দলের প্রভাব প্রটকভাবে লক্ষণীয়। প্রভাবের এই ধারায় বিভিন্ন সময়ে দল, সরকার এবং আইনসভার নেতৃত্বে বিজেপি’তে কতিপয় সহজাত ব্যক্তিত্বের আর্বিভাব ঘটতে দেখা যায়- যার সর্বশেষ সংযোজন হচ্ছেন নরেন্দ্র মোদী।

২০ বছর বয়সে সংসারবিবাগী নরেন্দ্র মোদী দীর্ঘ ১৭ বছর আরএসএস-এর কঠোর নিয়মানুবর্তীতার মধ্য দিয়ে নিজেকে সাচ্চা হিন্দুত্ববাদী হিসেবে গড়ে তুলেন। তাই ১৯৮৭ সালে আরএসএস-এর প্রতিনিধি হিসেবে বিজেপি’র রাজনীতিতে তার অন্তর্ভুক্তি ঘটে। এখানে পূর্বালোচনায় এ বিষয়টি স্পষ্ট যে, প্রতিষ্ঠাগতভাবে এই রাজনৈতিক দলে আরএসএস-এর প্রভাব অত্যন্ত প্রকট। তাই সরাসরি রাজনীতিতে নেমেই আরএসএস-এর প্রভাবের বিশেষ সুবিধাটি মোদী সদ্ব্যবহার করতে থাকেন। তাছাড়া ১৯৯১ ও ১৯৯২ সালে পরপর দুই বছর বিজেপি’র ‘রাষ্ট্রীয় একতা যাত্রা’য় তার কর্মদক্ষতা, বিভিন্ন রাজ্যে দলকে সংগঠিত করতে দেয়া দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করা, প্রথমে দলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক ও পরে কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক হিসেবে যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখা এবং নিজ প্রদেশ গুজরাটে দলীয় প্রতিদ্বন্দ্বীদেরকে একে একে কোনঠাসা করার মধ্য দিয়ে ক্রমান্বয়ে মোদী রাজনীতির পাদপ্রদীপে চলে আসেন।

আরএসএস-এর ভাবধারার রাজনীতিতে ঝানু খেলোয়ার নরেন্দ্র মোদী নিজেকে ২০০১ সালের ৭ অক্টোবর গুজেরাটের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগদান করতে বিজেপি’র কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে এক রকম বাধ্য করেন। এর পর আর তাকে ফিরে তাকাতে হয়নি, আজঅবধি তৃতীয়বারের মত তিনি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। অবশ্য নিজস্ব কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন সময়ে তিনি দেশ-বিদেশে হয়েছেন আলোচিত, সমালোচিত । মোদীর বরাবর অস্বীকার করা বা বিচারিক আদালতে প্রমাণিত না হওয়া সত্ত্বেও ২০০২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি সংঘটিত গুজরাটের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার জন্য তাকে দায়ী করা হয়ে থাকে। ঐ দাঙ্গার জের ধরে তাকে মুখ্যমন্ত্রীর পদ পর্যন্ত ত্যাগ করতে হয়। তবে ঐ বছরই প্রাদেশিক নির্বাচনে বিরতিহীন সাম্প্রদায়িক প্রচারাভিযান চালিয়ে ১৮২ আসনের মধ্যে ১২৭টিতে জিতে পুনরায় গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হন তিনি। দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে হিন্দুত্ববাদীতা থেকে নিজেকে ক্ষাণিকটা গুটিয়ে এনে নরেন্দ্র মোদীকে নিজ প্রদেশের সার্বিক উন্নয়নে মনোনিবেশ করতে দেখা যায়। এতে একের পর এক সফলতাও পেতে থাকেন তিনি। বেসরকারি, ব্যক্তি ও বিদেশিদের বিনিয়োগে আকৃষ্ট করে কৃষি, শিক্ষা, প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন, সমাজের সুবিধাবঞ্চিত ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে বিশেষ সুবিধাদানের মধ্য দিয়ে নরেন্দ্র মোদী গুজরাটকে অচিরেই সর্বভারতীয় উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে দাঁড় করাতে সক্ষম হয়েছেন বলে জানা যায়। অন্যদিকে ২০০৬ এবং ২০০৮ সালে পাকিস্তানী জিহাদীদের কর্তৃক পার্শ্ববর্তী মহারাষ্ট্রের রাজধানী এবং ভারতের বাণিজ্য রাজধানী বলে খ্যাত মুম্বাইয়ে হামলার পর জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সে দেশের কেন্দ্রীয় সরকার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থ হয়েছে বলে মোদী কঠোর সমালোচনা করেন। এরই মধ্যে ২০০৭ সালের জুলাই মাসে অনুষ্ঠিত গুজরাটের প্রাদেশিক নির্বাচনে ১৮২ আসনের মধ্যে ১২২টিতে জয়লাভ করে তিনি তৃতীয়বারের মত মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হন। নিজ প্রদেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখে চিরশত্রু পাকিস্তানের জিহাদীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মোদী কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি অনবরত চাপ সৃষ্টি করতে থাকেন। তার অব্যাহত চাপ ও দাবির মুখে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার এক পর্যায়ে প্রাদেশিক সরকারের তত্ত্বাধানে পাকিস্তানের সাথে গুজরাটের ১,৬০০ কিলোমিটার বিশাল সমুদ্র-সীমানায় উচ্চগতিসম্পন্ন ৩০টি সার্ভেইল্যান্স বোট পাহারার অনুমতিদানে বাধ্য হয়। অন্যদিকে ২০০১ সালে ভারতীয় পার্লামেন্ট এলাকায় হামলা পরিচালনায় নেতৃত্বদানকারী আফজাল গুরুর ফাঁসির দাবিতে সোচ্চার থাকেন মোদী। অবশেষে ভারতের রাষ্ট্রপতি কর্তৃক প্রাণভিক্ষা নাকচ হলে ২০১৩ সালের ৯ ডিসেম্বর আফজালের ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়- প্রকান্তরে যা মোদীর অব্যাহত দাবির পরিপ্রেক্ষিতেই সম্পন্ন হয়েছে বলে তার সমর্থকরা মনে করেন।

এ ভাবেই আঞ্চলিক এবং ভারতের কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারলাভের কারণে স্বদল ও বিরোধী দল- এই উভয় পক্ষের প্রতিদ্বন্দ্বীদের থেকে নরেন্দ্র মোদীকে প্রথম থেকেই সে দেশের প্রধানমন্ত্রী পদের দৌঁড়ে যোজন দূরত্বে এগিয়ে থাকতে দেখা যায়। ফলে বিজেপি’র বাঘা-বাঘা সব নেতারা তার কাছে হার মানতে বাধ্য হন। অন্যদিকে, সম্ভবত মোদী-ইমেজের কারণেই কর্মী ও সমর্থকদের জোর দাবির মুখেও উদীয়মান নেতা রাহুল গান্ধীকে প্রধানমন্ত্রী পদে নাম ঘোষণা করতে কংগ্রেস সাহস পর্যন্ত দেখায়নি। সব মিলিয়ে নির্বচানের আগেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মোদীর ভাগ্য সুপ্রসন্ন বলে প্রতীয়মান। তাছাড়া একাধিক জরিপের ফলাফলে মোদীর পাল্লাই ক্রমশ ভারী থেকে ভারীতর হতে দেখা যাচ্ছে।

ভারতের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হতে মোদীর পালে যখন এতোটাই জোর হাওয়া বইছে, তখন নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি বিজেপি’র গতানুগতিক ধারা থেকে বেরিয়ে এসে সর্বভারতীয় উন্নয়নের স্লোগান তুলে এবং ভূ-আঞ্চলিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখার অঙ্গীকারের এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন বলে আশা করা গিয়েছিল। কিন্তু আরএসএস এবং বিজেপি’র চিরাচরিত নীতি থেকে নরেন্দ্র দামোদরভাই মোদীভাই সরে আসতে পারেননি বলেই বাস্তবে মনে হচ্ছে।

ভারতের বিভিন্ন রাজ্যভেদে নির্বাচনী জনসভায় মোদীর বক্তব্যে ভিন্নতা থাকবে সেটিই স্বাভাবিক। কারণ বিশাল ঐ দেশের এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্য নানান দিক দিয়ে বৈপরিত্যে ভরপুর। তাই নির্বাচনে ভোট টানার ক্ষেত্রে রাজ্যের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দেওয়াই স্বাভাবিক। তা সত্ত্বেও প্রচারণার প্রথম থেকেই প্রায় প্রত্যেক রাজ্যেই মোদীর নির্বাচনী বক্তব্যে কোনও না কোনওভাবে হিন্দুত্বববাদীতার ছোঁয়া, প্রকান্তরে মুসলমানবিদ্বেষী এবং পাকিস্তানের প্রতি আক্রমণাত্মক মনোভাব পরিলক্ষিত হয়। সেই দৃষ্টিকোন থেকে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী রাষ্ট্রগুলোতে নির্বাচনী জনসভায় মোদী কী ধরণের বক্তব্য রাখেন তা নিয়ে সর্বমহলে বিশেষ কৌতুহল দেখা দেয়। বিশেষ করে অনেকটা অস্বাভাবিক পরিবেশের মধ্য দিয়ে বিগত ৫ জানুয়ারি বাংলাদেশ জাতীয় সংদদের নির্বাচন অনুষ্ঠানের পর কৌতুহলের মাত্রা অনেকটাই বেড়ে যায়। কারণ এই নির্বচানে ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন শক্তিধর দেশগুলোর নামামুখী ভূমিকা লক্ষ্য করা গেছে। তাই নিকট প্রতিবেশি হিসেবে বাংলাদেশ বিষয়ক নীতির ক্ষেত্রে ভারতে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার এবং ভবিষ্যতে নির্বাচনে বিজয়ী হওয়া সাপেক্ষে বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারের ভূমিকার মধ্যে কতটা তফাৎ হতে পারে মোদীর দেয়া বক্তব্য থেকে সে ব্যাপারে আগাম একটি ধারণালাভ করা যেতে পারে। এরই এক পর্যায়ে বিগত ৫ ফেব্রুয়ারি কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডের উপচেপড়া জনসভায় মোদী ভাষণ দেন। এরপর তিনি গত ২২ ফেব্রুয়ারি আসামের রামনগরে আরেকটি অনুরূপ জনসভায় ভাষণ দেন। দু’টি জনসভাতেই তার ভাষণে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ উঠে আসে। তবে ভাষাগত এবং অর্থগতভাবে দু’টি জনসভার ভাষণ বিপরীতমুখী। কলকাতার ভাষণে মোদী বলেন- “বাংলাদেশ থেকে ভারতে অবিরাম অনুপ্রবেশকারীরা ভারতীয়দের জীবিকা 'ছিনতাই' করছে। বাংলাদেশ থেকে যেভাবে মানুষের স্রোত আসছে তাতে মানুষ উদ্বিগ্ন; সে আসামে হোক কিংবা পশ্চিমবঙ্গে হোক। সম্পদ ভোগের এবং উন্নয়ন সুবিধা নেয়ার অগ্রাধিকার সেই দেশের মাটির সন্তানদের। কিন্তু বাংলাদেশিরা তাতে ভাগ বসাচ্ছে। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গবাসী বাংলাদেশিদের এই ভারতমুখি প্রবাহের কারণে বেশি ক্ষতির শিকার হচ্ছে। একটি দেশের নাগরিকদেরই সেই দেশের সম্পদ এবং চাকরির উপর একচ্ছত্র অধিকার থাকা উচিত নয় কি? ভারতের সম্পদ এবং উন্নয়ন সুবিধা ভোগের অধিকার ভারতীয়দের বেশি নয় কি? কিন্তু আজ কি হচ্ছে? বাংলাদেশিরাই বেশি লাভবান হচ্ছে। তাহলে আমাদের তরুন যুবকরা কোথায় যাবে? ভারতের দরিদ্র মানুষদের সন্তানরা কোথায় যাবে?”

অন্যদিকে আসামের জনসভায় নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাওয়া কেবল হিন্দুদের স্বার্থ দেখবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। এ ব্যাপারে তিনি বলেন- “আমরা ক্ষমতায় আসা মাত্র বাংলাদেশ থেকে ভারতে আসা হিন্দু অভিবাসীদের জন্য তৈরি ডিটেনশন ক্যাম্পগুলো তুলে দেওয়া হবে। অন্য দেশগুলোতে নিপীড়নের শিকার হওয়া হিন্দুদের প্রতি আমাদের কর্তব্য আছে। তারা কোথায় যাবে? ভারতই তাদের একমাত্র গন্তব্য। আমাদের সরকার তাদের প্রতি নিপীড়ন অব্যাহত রাখতে পারে না। আমরা তাদের এখানে জায়গা করে দেব। এর মানে এই নয় যে শুধু আসামকেই বাংলাদেশ থেকে আসা হিন্দুদের বোঝা বহন করতে হবে। তেমনটি হলে আসামের প্রতি অন্যায় হবে। সারা দেশেই তাদের পুনর্বাসন করা হবে এবং তাদের নতুন জীবনের নিশ্চয়তা দেওয়া হবে। আগে পাকিস্তান থেকে হিন্দুরা গুজরাট ও রাজস্থানে এসেছিল। অটল বিহারী বাজপেয়ী তার আমলে বিশেষ কর্মসূচি নিয়ে তাদের বিভিন্ন জায়গায় পুনর্বাসন করেছিলেন। ভোট ব্যাংকের রাজনীতি করতে গিয়ে আসাম সরকার হিন্দু শরণার্থীদের মানবাধিকার হরণ করেছে। বাংলাদেশ থেকে দুই ধরনের মানুষ আসামে আসে। একদলকে আনা হয় ভোট বাড়ানোর জন্য ষড়যন্ত্রমূলকভাবে। আরেক দল নিজ দেশে নির্যাতনের শিকার হয়ে আসে। যাদের ভোট বাড়াতে আনা হয়, তাদের পুশব্যাক করা উচিত। দ্বিতীয় কারণে যারা আসে তাদের এখানে জায়গা দেওয়া উচিত। আসাম হচ্ছে বাংলাদেশের পাশে। আর গুজরাট হচ্ছে পাকিস্তানের পাশে। আসাম বাংলাদেশের হাতে নাজেহাল হয়, আর আমি পাকিস্তানকে নাজেহাল করে ছাড়ি। আপনাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে আপনারা বাংলাদেশি হয়রানি সহ্য করবেন নাকি এর একটা বিহিত করবেন। আমি আপনাদের কাছে জবাব চাইতে এসেছি। আমার উপর আস্থা রাখুন। আমরা ক্ষমতায় আসার সাথে এসব সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করব এবং সবার জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত কর”।

এ সব উস্কানিমূলক এবং ব্যাঙ্গাত্মক বক্তব্য বিজেপি তথা নরেন্দ্র মোদীর ভোট ব্যাংকের পাল্লা ভারি করতে সহায়ক হতেই পারে। অন্যদিকে, বাংলাদেশ থেকে কোনও হিন্দু অভিবাসী ভারতে গিয়ে থাকলে তারা আশ্বস্তও হতে পারেন বটে, কিন্তু তার দেয়া বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নিরন্তর ঝুঁকিতে থাকা দেড় কোটি হিন্দু জনগোষ্ঠীর ভাগ্যে কী হতে পারে এবং কংগ্রেসের প্রতি কটাক্ষ করে ভোট ব্যাংক বাড়ানোর বিষয়ে কোনও বিশেষ সম্প্রদায় বা ধর্মের লোকজনকে ‘পুশব্যাক’ করার ঘোষণা দেওয়ার প্রশ্নগুলো গুরুতর হয়ে দাঁড়াতে পারে। এসব বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি উভয় দেশের একটি সম্প্রদায়কে প্রলুব্ধ করেছেন, পক্ষান্তরে অন্য সম্প্রদায়কে কটাক্ষ বা ভর্ৎসনা করেছেন বলে স্পষ্টত প্রতীয়মান হচ্ছে। তাছাড়া, মোদীকে একদিকে ‘আসামকে বাংলাদেশের হাতে নাজেহাল হয়’ বলে উসকানিমূলক বক্তব্য দিতে, অন্যদিকে পাকিস্তানকে নাজেহাল করার বাহবা কুড়াতে দেখা যায়। তার এসব বক্তব্যে সৃষ্ট ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়ায় নতুনভাবে স্ব-স্ব দেশে দুর্বল জনগোষ্ঠীর বিপন্ন হওয়ার বিষয়টি উড়িয়ে দেয়া যায় না।

সব মিলিয়ে ২২ ফেব্রুয়ারি আসামে দেয়া নরেন্দ্র মোদীর ভাষণের প্রতিক্রিয়া এবং ভারতের আসন্ন নির্বাচনে বিজেপি বিজয়ী হলে সে দেশের প্রধানমন্ত্রী পদে তার আসীন হওয়ার মধ্য দিয়ে ‘মোদী ঢেউয়ের’ ধাক্কা কোথায় কতটা লাগে তা দেখার বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছে।
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×