somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ওয়াশিংটন ডিসি'র আকাশে শাদা কালো রোদ-৩

১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


১…
সন্ধ্যে বেলায় ল্যাব থেকে বাসায় ফিরেই দেখি দরজার উপর নোটিস টাঙ্গানো। ক্লান্ত শরীরে টাঙ্গানো অবস্থায় পড়া শুরু করলাম। পড়তে নিয়েই চক্ষু চড়কগাছ! “এই বাসার অধমবাসি, বাসার সামনের পেভমেন্টে সলিড ওয়াস্ট ডাস্টবিন সময়মতো রাখা হয়নি কিংবা খালি বিন টেক ব্যাক করা হয়নি তাই আপনাকে ৭৫ ডলার জরিমানা দিতে হবে। এই নোটিস প্রাপ্তির ১৪ দিনের মধ্যে না দিলে সমপরিমাণ জরিমানা সহ ব্লা ব্লা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে”। ইনভেস্টিগেটর অনুগ্রহ করে ডাস্টবিনের ছবিও সাথে এটাচ করে দিয়েছে আমাদের জ্ঞ্যাতার্থে। আহা! সময় মতো বিন তুলতে ভুলে যাওয়ায় মাশুল টা একটু কমই হয়ে গেছে...

২...
আমার ল্যাবমেট দেখি একদিন একটা এক্সপেরিমেন্ট করার মাঝখানে হটাৎ ভোঁ দৌড়- থার্ডফ্লোর থেকে রাস্তায়। ফিরে এলে জিজ্ঞেস করলাম তুমি এমনভাবে মাঝখানে দৌড় দিলে কেন? হাঁপাতে হাঁপাতে বললো- গাড়ির পার্ক রিনিউ করাতে গেছি। কিন্তু লাভ হলোনা। গিয়ে দেখি ২৫ ডলার ফাইনের টিকেট ধরিয়ে দিয়েছে। মাত্র একমিনিট লেট করেই ২৫ ডলার! জিজ্ঞেস করলাম-অন্যান্য দিন কিভাবে রিনিউ করো? ও বলে আমার ফোনে একটা এ্যাপ আছে যা দিয়ে আমি অটো রিনিও করাতে পারি। আমি আজ ফোন ফেলে এসেছি তাই এখন ২৫ ডলার গুনতে হবে! বললাম , যাক বাবা! গাড়ি নাই তো টেনশন ও নাই। ও হেসে বলে- পরশু আমি ২০০ ডলারের টিকেট পেয়েছি, বাসায় ছবি সহ পাঠিয়ে দিয়েছে। ফ্লোরিডা এভেন্যিউ তে সেইবেলা স্পীড লিমিট ছিলো ৩৫ মাইল পার আওয়ার আর আমার গাড়ির স্পীড ছিলো ৪০ মাইল পার আওয়ার; তাতেই এক্সকিউজ করলোনা! ড্রাইভিং ইন ডিসি রিয়েলি সাক্স...আমি বললাম – হোয়্যাই ডোন্ট ইউ ওপেন এ ফিক্সড একাউন্ট ফর ইয়োর কার সো দ্যাট ইউ ক্যান পে ইয়োর ফাইনস্ অটোমেটিক্যালি ? ও হেসে বলে—আমিও তাই ভাবছি হাহ হা হা…

৩…
আমার ক্লাসমেট ক্লাসে বসে রাগে গরগর করছে। জিজ্ঞেস করলাম –ইভান তোমাকে আজ এমন দেখাচ্ছে কেন? আর ইউ ওকে? ও বলে- আর বলোনা! আজ ভোর পাঁচটায় বের হয়েছি বাসা থেকে।ভেবেছি রাস্তা খালি থাকবে তাই আরলি পৌছে যাবো ডিপার্টমেন্টে। তুমিতো জানোই ম্যারিল্যান্ড থেকে ডিসিতে আসতে সকাল বেলা কেমন ট্র্যাফিক হয় রাস্তায়। তো রাস্তা খালি ছিলো দেখে দু’কানে হেডফোন দিয়ে গান শুনতে শুনতে আসছি, হটাৎ দেখি পেছনে পুলিশ আমাকে গাড়ি থামানোর ইশারা দিচ্ছে। গাড়ি থামিয়ে বললাম –আমি তো স্পীড লিমিটের অনেক নিচে ড্রাইভ করছি—তুমি আমাকে থামতে বললে কেন? পুলিশ সাহেবে বলল- আপা, আপনি দু’কানে হেডফোন দিতে পারবেননা। অনলি এক কানে হেডফোন এলাউড। আপাতত ৫০ ডলার জরিমানার টিকেট দিলাম! হ্যাভ এ গুড ডে! ইভান ঘানার মেয়ে, তবে এই দেশে আন্ডার গ্র্যাড করাতে নিয়ম কানুন ভালোই জানে। সে চিৎকার করে বলে , আমি কাল কোর্টে যাবো... শালারে আমি এক টাকাও দিবোনা...

৪.
আপাতত শেষের ঘটনাটা আমার নিজের। গত ডিসেম্বরে ক্রিসমাসের ছুটিতে জ্বর বাধিয়ে বসলাম। তিনদিন অপেক্ষার পর যখন দেখি জ্বর কমার লক্ষণ নেই, ভাবলাম ডাক্তার দেখাই। এইদিকে ইউনিভার্সিটির হেলথ সেন্টারও বন্ধ । কিন্তু ওয়েব সাইটে নোটিস দেয়া—এই সময়ে যদি কারও অসুখ বিসুখ হয় তবে সে যেন ইউনিভার্সিটির হসপিটালে এমার্জেন্সিতে দেখায়। তবে তার আগে যেন একজন নার্সের সাথে কথা বলে নেয়—এই নাম্বারে... ।দিলাম ফোন। এক মহিলা খুব বিরক্তি সহকারে ফোন রিসিভ করে বললো তুমি হসপিটালে যাও। এমার্জেন্সিতে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম-দ্যাখো আমি এই ইউনিভার্সিটির গ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্ট। ইউনিভার্সিটির হেলথ সেন্টার বন্ধ থাকাতে আমাকে এইখানে আসতে বলা হয়েছে। তো আমি এইখানে ডক্টর দেখালে আমার ইন্সুরেন্স কাভার করবে কীনা? রিসিপসনিষ্ট মহিলা হাসি মুখে জিজ্ঞেস করলো তোমার আইডি কার্ড আছে সাথে? দিলাম। ও কিচ্ছুক্ষন কি চেক করে বললো- হ্যা, কাভার করবে। তুমি নিশ্চিন্তে ডক্টর দেখাও। ডক্টর কী সব হাবিজাবি টেষ্ট শেষে বললো তোমার আপার রেস্পিরেটরি ট্র্যাক এ কিছু ইনফেকশন দেখা যাচ্ছে তো আমি এন্টিবায়োটিক দিচ্ছি, তিন দিনেই সুস্থ্য হয়ে যাবে। ঠিক ঠিক তিন দিন পর সুস্থ্য হয়ে মনে মনে ভাবছিলাম, আহা! যাক এমন এক দেশে আসলাম- যেইখানে পৃথিবীর সেরা চিকিৎসার সুযোগ নিতে পারবো। কী চমৎকার! সেই ভাবনার রেশ কাটতে সময় লাগেনি। সপ্তাহ খানেক পেরুতেই একদিন বাসায় চিঠি এলো আমার ইন্সুরেন্স থেকে। তাতে লিখা—তোমার ফাইল ঘেটে আমাদের মনে হয়েছে তোমার অসুখটা লাইফ থ্রেটেনিং না যা এমারজেন্সি তে যাওয়ার মতো তাই আমরা তোমার ৬৭১ ডলারে বিল টা অত্যন্ত দুঃখের সাথে ডিনাই করছি। তুমি এই সিদ্ধান্তের বিপক্ষে আপীল করতে পারো ১৮০ দিনের মধ্যে।
হোয়াট দ্যা হেল!! ৫ মিনিট দেখলো তাতেই ৬৭১ ডলার? মনে মনে প্রমাদ গুনলাম। শালার হেলথ সিস্টেম অব এমেরিকা! এর চেয়ে আমার দেশেই ভালো। যে মহিলার সাইন ছিলো চিঠিতে তাকে কড়া ভাষায় লিখলাম একখানা ই-মেইল। বললাম, ফাইজলামি পাইসো? আমি কি স্ব-ইচ্ছায় এমার্জেন্সি তে গেছি? স্টুডেন্ট হেলথ সেন্টার বন্ধ ছিলো দেখে ওদের ওয়েবসাইটের কথা মত হসপিটালের এমার্জেন্সিতে গেছি। শখ করে কেও এমার্জেন্সিতে যায় নাকি? ওয়েব পেইজের স্ক্রিণশটও পাঠিয়ে দিলাম। সেই সাথে বললাম- তোমরা যদি এইটা পে না করো দ্যান আমি অন্য কোম্পানিতে সুইচ করার কথা ভাববো। দেখি ৩-৪ সপ্তাহ কোন রিপ্লাই নাই। অবশেষে গত পরশু সকালে মেইল পেলাম—মি. আহাম্মক ...।, গ্রেট নিউজ! আমরা তোমার বিলটা প্রথম বারের মত কনসিডার করছি। এনজয় আওয়ার সার্ভিসেস... ব্লা ব্লা ব্লা... ভাবলাম, এই জন্যই প্রেসিডেন্ট ওবামা তার হেলথ রিফর্ম নিয়ে এতো জটিলতায় পরে গেছেন। এই সব প্রাইভেট ইন্সিওরেন্সগুলো কোন ভাবেই চায়না হেলথ সেক্টরটা সরকারী খাতে চলে যাক। লাভের হিসাবের খাতাটা যে না হলে চুকে যাবে…
৯টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×