somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

** শিকার B-) ** [ (প্রায়) থ্রিলার গল্প B-) :)]

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ১২:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাস জার্নি জিনিসটাই বোরিং । আমার মত অসামাজিক টাইপ মানুষদের জন্য তো অবশ্যই ।
গান শোনো আর ঘুমাও । বাস এ পাশের যাত্রী যদি হয় বাঁচাল,তাহলে তো কথাই নেই । কেউ কেউ
আবার ঘুমের মধ্যে গায়ের উপর ঢলে পড়ে! অসহ্য!
ইদানিং আবার মলম পার্টি নামে কিছু বিশ্রি চোরের আবির্ভাব হয়েছে । বাস যাত্রা এখন আর নিরাপদ নয় :।
আমি চট্টগ্রাম এর বাস এ উঠেছি ঢাকা আসার জন্য । বাস কিছুক্ষণের মধ্যে ছাড়বে ।
এখন বাজছে ১১ টা পঞ্চাশ । রোজার দিন ধীরে যায় । রাত খুব তাড়াতাড়ি চলে যায় । অনেকক্ষণ ধরেই বসে আছি ।
আজকের রাত অত দ্রুত কাটছে না । নিজের পছন্দমত একটা সিট নিয়েছিলাম ।
ভাগ্য ভাল !আমার পাশের সিট এ কেউ এখনো বসে নাই । ভাল। না বসলেই ভাল ।
আমার সাথে একটা ফুটবল । (যদিও আমি ফুটবল খেলি না । একটা সময় দেখতাম খুব।
ক্লাব ফুটবল নিয়ে আড্ডাও দিতাম বন্ধুরা মিলে। )আর আছে আমার ব্যাগটা।
ব্যাগ ভর্তি জিনিস পত্র । আর সাথে বেশ কিছু টাকা । ভালোয় ভালোয় ঢাকা গেলে বাঁচি । ঢাকায় গিয়েই...
চিন্তায় ছেদ পড়ল । এক জন বেঁটে খাঁটো লোক আমার পাশের সিট এ বসার জন্য এল। আমি আবার জানালার পাশে বসি না ।
লোকটার জন্য আমার ফুটবলটা কোলে নিয়ে জায়গা করে দিলাম। লোকটা জানালার পাশের সিটে গিয়ে বসল।
মেজাজটাই গরম হয়ে গেল । ডিসগাস্টিং !একে দেখেই মলম পার্টি বলে মনে হয়!লোকটি আমার দিকে তাকিয়ে একটু হাসার চেষ্টা করল ।
আমি ভদ্রতা রক্ষা করলাম না । হাসির উত্তর না দিয়ে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলাম । লোকটি অপমানিত হয়েছে কিনা জানি না । হলেই ভাল । আর কথা বলবে না !
লোকটি একটু ঢেলান দিয়ে বসল । বসেই জানালাটা লাগিয়ে দিল!
আমার জানালার পাশে বসায় সমস্যা হয় । কিন্তু তাই বলে লোকটা জানালাটা বন্ধ করে দেবে?!
ডিসগাস্টিং !
বাস ছেড়ে দিল । বাস ধীর গতিতে এগুতে লাগল । রিক্সাগুলো ও যে! কোন নিয়ম মানে না !জ্যাম লাগিয়ে রাখে!
চট্টগ্রামের এই রোডগুলায় এত বেশি ট্রাক! রাতের বেলায় ও জ্যাম হয়। জ্যাম একদম ভাল লাগে না । ইদানিং অবশ্য কিছুই ভাল লাগে না !
বেশ কিছুটা সময় পরে বাস গতি পেল । এখন বেশ টান মেরে চলবে ।

লোক টা কথা বলার জন্য বেশ উশ খুশ করছে বোঝাই যাচ্ছে ! আমি মুখ ও ফিরালাম না তার দিকে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনতে লাগলাম । অনেকক্ষণ কেটে গেল ।
পাশের লোকটি তার হাতে রাখা ছোট ব্যাগ থেকে একটা খেজুঁর এর প্যাকেট বের করল। রমজান মাসে খেজুর
খাওয়াটা স্বাভাবিক । তাই বলে শুধু খেজুঁর ?! সে প্যাকেট থেকে বের করে গাপাগাপ খেতে লাগল ! যেন এগুলা মুড়ি :P!
দুটো আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললেন ভাইজান খাবেন নাকি? আমি ইচ্ছে করে মুখে বিরক্তির চিহ্ন ফুটিয়ে তুললাম ।
লোকটা মনে হয় বুঝতে পারল ।
"ওকে ভাইজান! অপরিচিত মানুষের কাছ থেকে বাস এ কিছু না খাওয়াটাই উচিত। তাই বলে আমরা সামাজিক মানুষ ।
কিছু সাধা সাধি না করলে চলে?সামনেই তো বাস থামবে । ঐ খানের হোটেল থেকে কিছু খেয়ে নিতে পারবেন । " এক টানে কথা গুলো বলে গেল । এর পর খ্যক খ্যাক করে হাসতে লাগল ।
আমি যেন জানি না আর! এই সব লোক কেন যে এত কথা বলে!
"ইদানিং আবার বিশাল সমস্যা শুরু হইছে!" এ তো দেখি মহা যন্ত্রণা এই লোকের থামার কোন লক্ষণ নাই !
আমি এই বার অবশ্য একটু ভদ্রতা করলাম । "কি সমস্যা?"
"ইদানিং এক টাইপের ডাকাইত বাস আক্রমণ করতাছে!"
"কি টাইপ?" আমিও অবশ্য কিছু কিছু শুনেছি পুরোটা জানার দরকার আছে। এই সব বাচাঁলরা এইগুলা আবার ভালো জানে । যদিও যা বলে তার
অনেকাংশই বানোয়াট । তবে শুনে রাখা ভাল ।
"এরা ড্রাইবারের সাথে চুক্তি কইরা রাখে! একটু সুনসান জায়গা দেইখা বাস "সোলো" করে । এর পর ডাকাইতরা উঠে ।
কালা কাপড়ে মুখ ঢাকা ডাকাইত। ভাব দেখায় ড্রাইবারগো লগে কোন কিস্যু নাই! আসলে অরাই নাটের গুরু । এর পর তো সব নিয়া যায় । চোখে ..."
"ব্যস ব্যস! আর বলতে হবে না । বুঝতে পেরেছি । "গপ্পো মারার আর জায়গা পায় না! তবে কাছা কাছি কিছু একটা আমিও শুনেছি ।
"আসলেই ডরের কথা ।" এই বলে সে পেয়ারা বের করল । খেজুর অলরেডি শেষ করে ফেলেছে । "ভাইজান পেয়ারা খাইবেন ? আমার মায় দিছে!"
"না ভাই । কিছু মনে করবেন না ।" এই বলে আমি আমার ব্যাগে রাখা জুসের বোতলটা বের করলাম । "যেই কথা বললেন গলা শুকায়া গেছে! "
লোকটা হে হে করে হাসল । "খেজুর খায়া আমার গলাডাও শুকায়া গেছে । একটু দিবেন নাকি?"
আমি দিলাম । এতই যখন পরোপকারী স্বভাব তার! "দুই ঢোক ভাই । আমি বাইরের জিনিস খাই না তো! এই জুসটাই ভরসা "
"আইচ্ছা আইচ্ছা!" লোকটা এই বলে একটু হেসে বোতলটা নিয়ে খাওয়া শুরু করল । দুই ঢোক ই খেল সে! তবে বেশ বড় বড় ঢোক!
"ধন্যবাদ ভাই ।"
"ওয়েলকাম " বলে আমি মুখটা আটকালাম । নিজে খেলাম না ।
লোকটা বলল "পেয়ারাটা নিতে পারতেন ভাই । শুধুই একটা ফল ।" বলে একটু হাসল । "আমি অবশ্য খাই না " ।
আমি আবারো বললাম "না ভাই!অনেক ধন্যবাদ!"
লোকটা জানালার দিকে তাকানো শুরু করল । এর পর বলল "কী ব্যাপার! এত ঘুম ধরল হঠাত কইরা?!!"
আমি একটু মুচকি হাসলাম । লোকটি বুঝতে পেরেছে কি ঘটেছে! সে কিছু বলার আগেই ঢলে পড়ল ।
আমি অন্য যাত্রীদের দিকে তাকালাম কেউ খেয়াল করল কিনা । সবাই ঘুমে ঢলে পড়ছে অথবা গান শুনছে চোখ বন্ধ করে ।
তার পর লোকটার ছোট ব্যাগটি চেক করা শুরু করলাম ।
ভেতরে দেখি অনেক মানিব্যাগ! এই লোক দেখি আমার মতই "শিকারী"!!
এর পেয়ারায় শিওর ঘুমের ঔষধ মেশানো আছে ! যাই হোক চট্টগ্রাম আসার সময় ও দান মারলাম আমি । যাবার সময় ও! তাও আবার চোরের উপর বাটপারী! ফুটবল টা পায়ের কাছে ছিল লাথি মেরে ভেতরের দিকে ঠেলে দিলাম । আগের "শিকার"এর ফুটবল ছিল এটা ।
ছেলেটার জন্য একটু আফসোস হইছিল পরে । কিন্তু এইবার খুব ভালো লাগছে! গর্বে আমার বুক ফুলে যাচ্ছে । সব রুল ফলো করে "শিকার" করেছি । জানালার পাশে বসা যাবে না । রাস্তার শুরুতেই কিছু খেতে সাধা যাবে না । সাথে এমন কিছু রাখতে হবে যাতে দেখে নির্দোষ মনে হয় (যেমন ফুটবল!)। মাঝপথে সবাই যখন ঘুমে ব্যস্ত তখন ই কাজ করতে হবে!আমি তো বস ! ভাবতে লাগলাম ।
মানিব্যাগ গুলো থেকে টাকা বের করে আমার ব্যাগে ঢুকাচ্ছিলাম । হঠাৎ মনে হল গাড়ি স্লো হয়ে গেছে । সামনের দরজা দিয়ে কেউ ঢুকল বলে
মনে হল! লাইট নেভানো ছিল । তবুও বুঝতে অসুবিধা হচ্ছিল না লোক গুলোর মুখে মুখোশ ছিল । মুখোশটা কি কালো?


আমার প্রথম ফিনিশড (প্রায়) থ্রিলার । খুব অল্প সময়ে লিখেছি । অপরিণত হাতের লিখা সন্দেহ নেই । ভুল গুলো ধরিয়ে দিলে আগামীতে ভাল লিখার ইচ্ছে রাখি ।


ছবি কৃতজ্ঞতা
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ৩:১৮
২৯টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

×