এক
-হাই নিলয়।
-হাই। তুমিই তাহলে রুবি?
প্রশ্নটা শুনে রুবি অবাক হয়ে গেলো-
-মানে? এইটা আবার কেমন প্রশ্ন?
-না, মানে তুমি রুবি কিনা শিওর ছিলাম না।
-মানে! আমি কি প্লাস্টার সার্জারী করে এসেছি নাকি?
-না তা না। ব্যাপারটা হলো- কে যেন বলল তুমি ঢাকায় পড়াশুনা করছ। তাই আগে আরো তিনবার এখানে তোমাকে দেখে ও তোমার সাথে কথা বলিনি। ভাবলাম বোধ হয় হিলোসিনেশন হচ্ছে। তা কেমন আছো?
-ভাল। তুমি?
- এই তো দেখতেই পাচ্ছো। বেশ মোটাসোটা, হাসিখুশিময়। কি মনে হচ্ছে? বলেই নিলয় হা হা করে হেসে উঠে।
ওর এমন জবাব শুনে রুবি রীতিমত অবাক। কে বলবে এই সেই নিলয় যে প্রয়োজন ছাড়া কথা বলতো না। সবসময় একটা ভাব নিয়ে থাকতো। বেশ ব্যাক্তিত্ববোধ ও ছিল। অথচ এখন-- একটা মেয়ের সামনে-- হোক বন্ধু-- কিন্তু, আসলে ওদের বন্ধুত্বটা বা কতদিনেরই ছিল? রুবি আজ আসলেই অবাক হয়ে যাচ্ছে-
-তুমি অনেক চেইঞ্জ হয়ে গেছো।
-তাই নাকি? আসলে জীবন তো আর সবসময় একস্থানে থেমে থাকে না। তা তুমি ও কিন্তু কম না।
-কেমন?
-সবকিছু সবসময় বলা যায় না। ইদানিং এমনিতেই বেশি কথা বলি। যখন তখন যত্রতত্র যাকে তাকে বিরক্ত করি। এখন যদি সে সম্বন্ধে বলি তুমি হয়ত মাইন্ড করবে। তা কোন্ ডিপার্টমেন্টে আছো।
-সিইসি। তুমি?
-আরে আমার কথা বাদ দাও।এই আছি বিবিএ তে।তা এত দেরীতে ভর্তি হলে কেন?
-বুয়েটে দু'বার ট্রাই করলাম। তাই আরকি?
-তা এখানে কেন? এনএসইউ তে ভর্তি হলেই তো পারতে।
-আমাদের অত টাকা পয়সা কোথায়?
-হ্যা তোমরা- তোমরা তো এক্কেবারে---- নিলয় আবার আগের মত করে কথা বলছে। যেমন বলতো তিন বছর আগে-বেশ আপন একটা সুরে। কিন্তু হঠাৎ থেমে গেলো।
-তা আমরা কি?
- নাহ্। তা এখানে কি জন্যে? প্রাকটিক্যাল ছিল না কি?
-নায়াম।
-বাব্বা, বেশ আরবী শিখেছো দেখছি। তা এখন কি ক্লাশ আছে না বাসায় যাবে?
-বাসায় যাবো।
-চলো। আমি ও বাসায় যাবো।
-তোমার ক্লাশ নেই?
-না।
-তা এখানে দাঁড়িয়ে কেন?
-তোমার জন্য।
-মানে?
-আমি জানতাম তোমার এখানে ক্লাশ আছে এবং এখন তুমি বেরোবে। তাই দাঁড়িয়েছিলাম। যদিও তুমি যে তুমি তা জানতাম না। তবু দাঁড়িয়েছিলাম। যদি তুমি হও।
-মনে হচ্ছে আমার ক্লাশরুটিন মুখস্থ করে রেখেছো।
-মুখস্থ এবং পকেটস্থ উভয়ই করেছি।
-তা এত আগ্রহের কারণ?
-সব সময় সত্য বলা যায় না। পরে বলবো। এখন চলো।
রুবি অনুমান করতে চেষ্টা করে সত্যটা আসলে কি? হয়ত বুঝতে পারছে। কিন্তু আসলেই কি নিলয় ওকে ভালোবাসে। নাকি এটা একধরনের খেলা। বুঝতে পারছে না। আসলে নিলয়কে সহজে বুঝা যায় না। নইলে ওদের কি সুন্দর বন্ধুত্ব ছিল। হঠাৎ কোন কারণ ছাড়াই নিলয় কথাবার্তা বন্ধ করে দিল। এরপর ওকে দূরে দেখলেই সে রাস্তার উল্টো দিক দিয়ে হাঁটা শুরু করতো। তখন মনে হতো ওদের বন্ধুত্বটাই একটা খেলা ছিল। খেলা শেষ- সেটা ও ভেঙ্গে গেছে। নিলয় হয়তো আবার ও সেরকম কিছু করতে চাচ্ছে। তাই ওর কথা শুনে যতটা ভাল লাগছিল এখন তার দ্বিগুণ ভয় করছে। তবু ও -তবুও--
আসলে- আসলে রুবির আর কিছু ভাবতে ইচ্ছে করছে না। এ মূহুর্তে ওর পাশে নিলয় আছে এতেই ও ভরসা পাচ্ছে। ইচ্ছে করছে ওর বুকে মাথা হেলিয়ে দিতে।